একুশে পা (Ekushey Paa) : 02
তাকে খুব মন দিয়ে পথ চলতে হবে…এবং …এবং
ইমন হাসছিল। খুব যে খুশির হাসি তা নয়। আবার নিছক সামাজিকতার হাসিও না। দুটো মিলিয়ে। হাসলে ইমনের মুখের মধ্যে একটা চাপা আভা বিদ্যুতের মতো যাওয়া-আসা করে। ত্বকের নিচে একটা মৃদু হলুদ বাল্ব জ্বলে ওঠে। এরা তাকে চিনে ফেলেছে। সেকেন্ড ইয়ারের উশ্রীদি, মণিদীপাদি প্রথম চিনল। তারপর সেকেন্ড ইয়ারের অনেকেই এক এক করে তার আশে-পাশে দাঁড়িয়ে গেল। আসলে উশ্রীদি আর মণিদীপাদি দুজনেই খেলে। শখের খেলা হলেও, মোটামুটি নিয়ম করে যায় ওয়াই. ডবলু, সি. এ. তে, ওয়াই, এম. সি. এ তেও। ইমনকে খেলতে দেখেছে। নইলে কে আর কাকে চিনছে?
‘তুই আই মুখার্জি না? এই দ্যাখ মণিদীপা কাকে ধরেছি।’
ইমন নিঃশব্দ হাসি হাসছে। সে এই ধরনের উত্তেজনা ছড়াতে মোটামুটি অভ্যস্ত।
‘নাম কিরে তোর? কাগজে খালি আই. মুখার্জি, আই মুখার্জি লেখে।’
‘ইমন।’
‘ইমন! ফ্যানটাসটিক! এবারেও চ্যাম্পিয়ন হবি তো?’
‘হ্যাঁ। ইমন সাদাসিধে ভাবে বলল।
‘হ্যাঁ? কী সঙ্ঘাতিক কনফিডেন্স রে! এরকম ছেলে সেজে আছিস কেন?’
‘সুবিধে হয়।’
‘আয় এক হাত খেলি। ও বিল্ডিংএ যেতে হবে।’
ইমনের ইচ্ছে নেই। বলল, ‘পরে হবে।’
উশ্রীদি বলল, ‘সংযুক্তা পানিগ্রাহীর সঙ্গে আলাপ হলেই যদি বলিস, একটু নাচুন তো দেখি! নাচবে!’
মণিদীপা বলল, ‘তাই তো! খুব ডাঁটিয়াল না কি রে তুই!’
‘যা ভাবেন।’
ডাঁটিয়াল ভাবলেও কিছু আসে যায় না তোর?’
ইমন ডাইনে বাঁয়ে মাথা নাড়ল।
‘আশ্চর্য মেয়ে তো তুই। দাঁড়া তোকে ছাড়ছি না। এই কঙ্কণা, গোপা, চল এ মেয়েটাকে ক্যানটিনে ধরে নিয়ে যাওয়া যাক।’
ইমন রাজি হল। কেননা সে ক্যানটিনে যাবার কথাই ভাবছিল। ভীষণ খিদে পেয়েছিল। ভীষণ খিদে পায়।
ক্যানটিন অন্য বিল্ডিং-এ। ফ্রেঞ্চ টোস্ট খেলো দুটো, বেশ বড় এক খণ্ড পুডিং। প্রথমে সে রাজি হয় নি তাকে খাওয়ানের প্রস্তাবে, বলেছিল, ‘আপনারা আপনাদের যা ইচ্ছে খান না। আমি দেখছি কী নেওয়া যায়।’
হাত থেকে মেনু-কার্ডটা টেনে নিয়ে উশ্রীদি ধমক দিয়ে উঠল, ‘তোকে দেখতে হবে না। আমরা দেখছি। আর অত আপনি আপনি কিসের রে? তুমি বলতে পারিস না? ইমন অতএব স্মিত মুখে বসেছিল।
‘কফি খাবি তো?’
‘না।’
‘কারণ আছে না কি রে? ট্রেনিং-এ আছিস তো? কী কী খেতে বলেছে?
‘বারণ-টারণ কিছু না। টাইম ফিক্সড্ আছে, চা, কফি আমি এমনিই খাই না। বেশি মশলা, ফ্যাটি জিনিসও চলে না।’
‘ইস অনেকগুলো কথা বলে ফেললি যে রে! এতক্ষণ হুঁ হাঁ করে সারছিলিস! কে তোকে প্রথম আবিষ্কার করে রে?
‘আবিষ্কার আবার কী।’ ইমন হেসে বলল, ‘ওখানে একটা ক্লাব ছিল, খেলাধুলো করতুম। ডানপিটে, গেছো ছিলুম। রমুদা, মানে রমেন বিশ্বাস বলে একজন টেবল্ টেনিস শেখাতেন। দেখে দেখে আমি একদিন বললুম খেলব। রমেনদার সঙ্গে অনেকক্ষণ র্যালি হল। উনি ইচ্ছে করেই খানিকটা খেলতে দিচ্ছিলেন আর কি! তারপর খুশি হয়ে ট্রেনিং দিলেন।
‘জাস্ট দেখে দেখে খেললি? শুনে শুনে গান তোলার মতো!’
‘বাড়িতে খেলতুম। মেঝেতে। মাঝখানে একটা নারকেল দড়ি টাঙিয়ে নেট হত।’
‘দারুণ! দারুণ। তার পর?’
‘ক্লাবে সবাই চলে গেলে, বোর্ড ফাঁকা পেলে বন্ধুদের কাউকে নিয়ে খেলতুম। মারগুলো প্র্যাকটিস করতুম।’
‘ইস কী ট্যালেন্ট! ভীষণ ভাল লাগল রে! আমাদের সঙ্গে খেলবি তো?’
‘খেলবো না কেন?’ ইমন তার ঝোলাটা নিয়ে উঠে পড়ল। ‘আজ যাই। কাজ আছে। হ্যাঁ।’
‘দিদিদের অনুমতি নিচ্ছিস? হাউ সুইট!’
ইমন বেরিয়ে এল। সে কোনদিকে তাকাল না। যেন তার গন্তব্য সর্বদা ঠিক থাকে। লক্ষ্যবস্তু যেন অনেক আগে থেকে দেখে নিয়েছে। লম্বা লম্বা পা ফেলে সে হোস্টেলের দিকে হাঁটতে শুরু করল। ইমনের হাঁটার ভঙ্গিটা একেবারেই মেয়েলি নয়। এটা কি তার পোশাকের জন্য? নাকি তার শরীর যথেষ্ট পুষ্ট নয় বলে? ইমন খুব সম্ভব আলাদাভাবে মেয়ে হবার সময় পায় নি এখনও।
কলকাতা সে ভালো করে চেনে না। খেলার সূত্রেই মাঝে মাঝে আসতে হত। কিন্তু সে কতগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট লোকেদের সঙ্গে। এখন সে এখানে বসবাস করছে। ভর্তি হওয়ার পর, গত পরশু দিন সবে এলো। বাসে-ট্রামে বেশ ভিড়। কিছুক্ষণ হাঁটার পর সে লক্ষ্য করল রাস্তাতেও বেশ ভিড়। মাঝে মাঝেই সামনে-ধেয়ে-আসা মানুষদের এড়িয়ে এঁকে বেঁকে চলতে হচ্ছে, যে ভাবে বাধা বিপত্তি এড়িয়ে নদী চলে। যতই খণ্ডিত হোক তার চলা, একটা নিরন্তরতা আছে, প্রবাহ আছে, সবচেয়ে বেশি করে যা আছে তা হল ছন্দ। এই যে অত্বরিত ছন্দোময় চলা, যা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও অনায়াস এবং নদীসদৃশ, এই চলা ইমনকে যতটা উন্মোচিত করে আর কিছু বোধহয় ততটা করে না। সে এমন একজন, যে নিরুচ্ছ্বাস এবং অনভিব্যক্ত বলে বোঝ যায় না যে সে আসলে বীর। প্রথা না মানার ব্যাপারটা সে এমন নির্দ্রোহ ভঙ্গিতে করে যে বোঝা যায় না সে কিছু গড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু ভাঙছেও।
হোস্টেলটা একদম চুপচাপ। ইমন নিজের ঘরে চলে গেল। দোতলার কোণের দিকের ঘর। এ ঘরে দুজন থাকে। দুদিকে দুটো লোহার খাট। মাথার কাছে একটা ছোট টেবিল আর চেয়ার। টেবিলে তাক করা আছে। ইমনের এখনও বিশেষ বই-টই কেনা হয়নি। তাকটা প্রায় খালিই। খাটের তলায় তার ট্রাঙ্ক। টেবিলের তলায় এক দিকে ছোট্ট আলমারি মতো করা আছে, তাতে সে তার নিজস্ব কিছু খাদ্য রাখে। তার রুমমেট এখনও এসে পৌঁছয়নি। ফাঁকা ঘরে একলা খাটে শুতে তার দুটো রাত কেমন-কেমন যেন লেগেছে। ভেতরে-ভেতরে একা হলেও, বাইরে এতটা একা থাকা তার অভ্যেস নেই। ভয় ঠিক হয় না। কী রকম অদ্ভুত অনুভূতি হয়। এইবারে জীবন যেন তাকে সম্পূর্ণ একা করে দিল। তাকে একা করে দেওয়ার এই প্রকল্পটা যেন জীবন অনেক দিন আগে থেকেই শুরু করেছে। সে বুঝতে পারত, একটা কিছু চলছে ভেতরে ভেতরে। ঠিক কী সেটা, তা বুঝতে পারত না। এখন, এই দুদিন একলা থাকতে থাকতে স্পষ্ট হয়েছে ব্যাপারটা। প্রথমে ছিল সে, বাবা, মা, ভাই। বাবাকে কেড়ে নেওয়া হল। বাবার সঙ্গেই তার যা কিছু গল্প, স্বপ্ন দেখা, মতের আদান-প্রদান। বাবার চলে যাওয়া মানেই তার জুড়ি চলে যাওয়া এক রকম। মাকে কাজে বেরোতে হল। সারা দিন রাত কাজ। সে-ও তো এক রকম কেড়ে নেওয়াই। যে মা রাঁধতে-রাঁধতে, ঘরের কাজ সারতে-সারতে নিশ্চিন্ততার একটা গন্ধ ছড়িয়ে রাখত বাড়িতে, সকাল দশটা থেকে এগারটার মধ্যে ভাত পাওয়া যাবেই, ভাতের গন্ধ ভাসবে উঠোনে, নয়নতারা আর টগরের ঝোপের আশেপাশে, ভোরবেলায় চুল ঝাড়ার আওয়াজ, গামছা দিয়ে সপাটে লম্বা চুল ঝাড়া, বিকেলবেলা সুজির গন্ধ, সেলাই হাতে মা, রাত্রে মা সাবান মেখে গা ধুয়ে এসে শুয়েছে। এই সব শব্দ গন্ধ একটা চমৎকার নিশ্চিন্দিপুর তৈরি করে রাখে। মাকে কাজে বেরিয়ে যেতে হলে, ঠিক সেইভাবে সেই গন্ধ, সেই স্পর্শ, সেই শব্দ পাওয়া যায় না। বাবা চলে যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে একটা সখ্য হয়েছিল। তার ভিত প্রয়োজন। দুজনের একাকিত্ব। কিন্তু মা তার স্বপ্নের সঙ্গে নিজের স্বপ্ন মেলাতে পারেনি। অর্থাৎ তার ভেতরে অর্ধেকটা একা, একদম একা। ভাই, ভাইটা কত ছোট। তাকেই আঁকড়ায় যেন মা, যেন বাবা। তাকে, তার নিত্যদিনের উপস্থিতিটাকে ভাইয়ের একান্ত প্রয়োজন। এখনও ভাই তার জীবনের শরিক হতে পারেনি। প্রতিদিনকার খুঁটিনাটির মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠতে পারত হয়ত। কিন্তু সেই সম্ভাবনাটা মূলেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভেতরের নিঃসঙ্গতাটা তাই ক্রমেই বাইরে বেরিয়ে আসছে। ছড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে এখনও কেউ নেই যার কাছে যাওয়া যায়। কিছুক্ষণ কথা বলা যায়। রানাঘাটে আর কেউ না থাক রমুদা ছিলেন। অন্য কিছু নয়, খেলাধুলো নিয়েই কথা বলতেন। টেবল টেনিসের কিংবদন্তীপুরুষ ভিক্টর বার্নার কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলেন এক সময়ে। সেই সব সুন্দর, আশাব্যাঞ্জক, টেকনিক্যাল খুঁটিনাটিতে ভরা গল্প। ইমনের এক চতুর্থাংশ একটা সঙ্গী পেত। এখানে তা-ও না। কলকাতায় তার আসার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু যা কিছু বলার মতো খেলা তো এখানেই। টুনামেন্ট খেলার জন্য এসে রমুদার মামাত ভাইয়ের বাড়ি আর উঠতে হবে না। প্র্যাকটিসের ভাল সুযোগ পাওয়া যাবে। সমকক্ষ প্রতিযোগী। সুতরাং বহু চেষ্টাচরিত্র করে বৃত্তি যোগাড়। কিন্তু ওয়াই.এম.সি.এ তে আগে আগে যখনই খেলতে এসেছে ইমন, প্রতিযোগীদের কেমন অন্য গ্রহের মানুষ বলে মনে হয়েছে। মেলামেশা করতে ইচ্ছে হয়নি। এগুলো সে কাউকে বলেনি, নিজের ভেতরে রেখে দিয়েছে। এগুলো সে জয় করবার চেষ্টা করে যাচ্ছে তার নিজের মতো করে। তার অনেক লড়াইয়ের মধ্যে এটাও একটা।
অনেকক্ষণ সন্ধে হয়ে গেছে। ইমন খেয়াল করে নি। তার আলোর দরকার হয় নি। ঘরের আলোটা টুক করে জ্বলে উঠল।
‘হ্যাললো, সিটিং ইন দ্য ডার্ক।’ লাজুক লাজুক স্বরে নেপালি মেয়েটি বলল। এ বোধহয় উল্টো দিকের ঘরে থাকে।
‘তুমি একলা থেকে বালোবাসছো?’
‘কই না! এসো না!’
‘তুমার রুমমেট আসেনি!’
‘না।’
মেয়েটি নেপালি নয়। খাসিয়া। শিলং থেকে ও পড়তে এসেছে এখানে। কেমিস্ত্রি নিয়ে পড়ছে। জলি দেবী, এই ভাবে ও নিজের নাম বলে। থার্ড ইয়ার সবে আরম্ভ হয়েছে। এসে যোগ দিয়েছে। এখনও পরীক্ষার ফলাফল বেরোয়নি।
জলি দেবী এতো চুপচাপ যে ইমনকেই কথা বলতে হয়, ‘বি.এসসির পর কী করবে?’ ‘টীচার্স ট্রেনিং নেবো।’
‘এম.এসসি পড়বে না?’
‘না পড়তে বালো লাগে না। আই’ল বী অ টীচার ইন দ্য লোক্যাল স্কুল।
‘বাস?’
‘নো। বাস নো। আই’ল ম্যারি,’ গাল দুটো লাল করে খুব খুশির হাসি হেসে জলি দেবী বলল, ‘অ্যান্ড য়ু?’
‘আমার অনেক কিছু করার আছে।’ ইমন আস্তে আস্তে বলল।
‘জানে। তুমি ক্যালো।’
ইমন হাসল। যদি খেলা দিয়েই তার ‘অনেক কিছু’র ব্যাখ্যা হয়ে যায় তো ভালোই। সে নিজেই কি জানে এই অনেক কিছু ঠিক কী কী? জানে না। কিন্তু জলির মতো অত সহজে তার পথ শেষ হবে না, এটুকু সে জানে। এবং পথে অনেক চড়াই-উৎরাই থাকবে। এবং তাকে খুব মন দিয়ে পথ চলতে হবে। এবং একা। সে একা।
জলি চলে গেলে সে একটা ইনল্যান্ড লেটার নিয়ে বসল। মাকে একটা চিঠি লেখা যাক। এক দিনেই অবশ্য সে চিঠিটা শেষ করতে চায় না। দু-তিন দিন ধরে লিখবে। বেশ হপ্তাখানেকের অভিজ্ঞতা থাকবে চিঠির পাতায়। মায়ের সঙ্গে কথা বলবে। মুখেও যেমন সে বেশি কথা বলতে পারে না, চিঠিতেও তেমনি। আজকের পুরো দিনটা সম্পর্কে তাই সে শুধু লিখতে পারল—‘কলেজটাতে বিরাট বিরাট রাজবাড়ির মতো দরজা। ক্লাস একটা ঘরে হয় না। হোস্টেল ভালো। কারো কারো সঙ্গে আলাপ হয়েছে।’
এইটুকু লিখে সে তার ডট কলমটা খটাস করে বন্ধ করে দিল। তার কি এই প্রথম চিঠি লেখা? বোধ হয়। বাইরের কথা কিছু লেখা হল। ভেতরের কথা নয়। চারদিক-ছেয়ে-থাকা এই একাকিত্বর কথা লিখলে মা মুষড়ে পড়বে। অথচ চিঠিটা পড়ে মায়ের সহজাত বোধে বুঝতে পারবে যে ইমন সব কথা লেখেনি। মায়ের মাথায় ভেতরে অত কাজের মধ্যে একটা ছোট্ট দুশ্চিন্তা-চক্র পাক খাবে। কিন্তু তার মায়ের কিছু করার নেই। জীবন নামক অজানা-মালিকের হাতে মেয়েকে এইভাবে সঁপে দিতে তো তিনি বাধ্যই হলেন। ইমনেরও কিছু করার নেই। তার হাতে শুধু কয়েকটা মার আছে। তার পা দুটো কোমর পর্যন্ত অত্যন্ত দ্রুতগতিতে জায়গা বদল করতে পারে। পা নয় যেন জাত সাপ। এ ছাড়া তার আছে একটা ব্লটিং পেপারের মতো মন। চারদিকে যা হচ্ছে, ঘটছে সব খুব নিপুণভাবে শুষে নেয়। সে খুব সতর্ক। তার খেলোয়াড়ি প্রশিক্ষণ থেকেই হয়ত এই সতর্কতাটা পেয়েছে, কিংবা বাড়িয়েছে সে। ব্যস। আর কিছু নেই আপাতত। এইটুকু নিয়ে সে ভেসে পড়েছে। একলা।