একুশে পা (Ekushey Paa) : 13
তার কষ্ট বেশি না ইমনের?
ইমন ফাইনাল খেলছে। উল্টো দিকে বম্বের মায়া ভাবনানি। ইমনের চোখ, মন সমস্ত সবুজ টেবিলটার আলোকবৃত্তের ওপর কেন্দ্রীভূত। সে দেখে নিয়েছে মায়া ভাবনানির ফোর হ্যান্ডটা দুর্বল। মায়া বেঁটেখাটো। একটা পিংপং বলের মতোই সে লাফাচ্ছে তার উল্টো দিকে। ইমন লম্বা, রোগা, সে দুলছে জোরালো হাওয়ার বেগে বাঁশের কঞ্চির মতো। মায়া সার্ভিস করে যেন কেউটে সাপের ছোবল। টেবিলের কোনায় পড়ে ছিটকে যাচ্ছে বল। ওর সার্ভিসগুলোতে ছুঁতে পারছে না ওকে ইমন। শেষ বলটা সে চমৎকার একটা টপ স্পিন মারল। পয়েন্ট ইমনের। ইমনের সার্ভিস। তুলেছে মায়া, নেটের ওপর দিয়ে টুক করে ড্রপ শটে পড়ল, এক লাফে এগিয়ে এসে ইমন তুলল বলটাকে, টেবিলের বাইরে চলে গেল। এইভাবে পাঁচটা অবধি গড়ালো গেম, ইমন পারল না। একটুর জন্যে হেরে গেল। ঘামে সোঁপাটে ভিজে গেছে। ভাবনানির সঙ্গে হ্যান্ড শেক করে ইমন ফিরে যাচ্ছে। ক্লিক ক্লিক ক্যামেরা, সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরেছে। ‘দারুণ খেলেছেন, জাস্ট ব্যাড লাক।’ ‘স্টাইল অনবদ্য।’
‘কী মনে হচ্ছে আপনার? টুনামেন্টটা কিন্তু আপনারই হাতে ছিল। অত ভ্যারাইটির মার। কী মনে হচ্ছে?’ নাছোড় সব সাংবাদিক।
‘কী মনে হবে? পারলাম না এই মনে হচ্ছে!’ ইমন হাসল। আসলে কিন্তু সে সবুজ জলের তলা দিয়ে যাচ্ছিল। চারপাশে অজানা গাছ। গুল্ম, সমুদ্রের তলার সব প্রাণী তাকে নিরীক্ষণ করছিল। ইমন ভেসে ভেসে বেরিয়ে যাচ্ছিল। যখন খুব মনোযোগ থাকে, তখন সে এইরকম আলোকময় সবুজ জলের তলায় চলে যায়। অনেকক্ষণ এই জায়গা থেকে বার হতে পারে না। ট্রোফি নিল মায়া। সে রানার আপ। টীম ইভেন্টেও বম্বে। ডাবল্স্-এ কুসুম ভার্গিজের সঙ্গে তারা জিতেছে।
হোটেলে ফিরে চান-টান খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই লাউঞ্জে বসে আছে। কুসুম বললে, ‘ইমন, তোমার ওপর কিন্তু আমাদের অনেক আশা ছিল।’ ইমন বলল, ‘জানি।’ ইমন জানে তার ওপর অনেকের আশা, অনেকের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। কুসুম আবারও বলল, ‘দারুণ খেলা তোমার যেন গান গাইছ, কিন্তু ইমন ওই যে বলে কীলার ইনস্টিংট! ওইটেরই কি অভাব তোমার?’ ইমন উঠে বসল। সত্যিই তো! খেলতে খেলতে খেলার শিল্পে সে মগ্ন হয়ে যায়, প্রতিপক্ষকে প্রতিপক্ষ বলে মনে করে না, যেন তার পার্টনার। জেতার ওপর সে গুরুত্ব দেয় না। কুসুম বলল, ‘কিচ্ছু না, তুমি কোচ পাল্টাও। ইমন।’
সংবাদটা টিভি-র মারফত শুনে মন খারাপ হয়ে গেল মিঠুর, ভেঙ্কটের। খেলা খানিকটা দেখালও। মিঠুর দাদা সুহাস বলল, ‘একটা এক্স ফ্যাকটর থাকে, থেকেই যায় এসব খেলায়। একটু এদিক ওদিক হলেই পয়েন্ট গেল। তাছাড়া বম্বের কোচিং অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক। কত খরচ করে ওদের পেছনে। এখানে কী আছে? না কোনও এনকারেজমেন্ট, না টাকা-পয়সা, না প্রপার কোচিং। আমি ইমনের খেলা আগেও দেখেছি। খুব ভালো। কিন্তু ঠিক লোকের হাতে পড়া চাই।’
অনুরাধা বললেন, ‘ওর কি সব চান্সই চলে গেল? এই শেষ?’
‘তা কেন?’ সাদেক বললেন, ‘আবার আসছে বছর খেলবে, আসছে বছর ও পাবেই। আমি বলে দিলুম, দেখো।’
ভেঙ্কট প্রথমটায় খুব ভেঙে পড়েছিল। খবর শুনেই মাথায় হাত দিয়ে নিজের ঘরে শুয়ে পড়ল। পারল না? ইমনটা পারল না! বেঙ্গলে ওকে কেউ ছুঁতে পারেনি দু বছর। কলকাতায় থাকতে এসে কি অবনতি হল মেয়েটার?
কলেজ গিয়ে কিন্তু সে সম্পূর্ণ অন্য কথা বলতে লাগল। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ-এ রানার আপ হওয়াটাই কি সোজা কথা! তাছাড়া কাগজে ফলাও করে ইমনের স্টাইলের প্রশংসা করেছে। এমনিতেই তো খেলার পাতার দুই তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকে ক্রিকেট আর ফুটবল, বাকি টুকুতেও টেনিস, হকির জয়জয়কার। টেব্ল্ টেনিস কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, অথচ কী বিউটিফুল খেলাটা! ভেঙ্কট বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেয়। বলে, দেখ ইমনের হার কোনও কারণে সেদিন শরীরটা ঠিক ছিল না। এইসব আনুষঙ্গিক ব্যাপারই ভীষণ জরুরি হয়ে দাঁড়ায় এ ধরনের টুর্নামেন্টে। সবাই বলল, ‘ভেঙ্কট তুই-ই ট্রোফিটা দিয়ে দে ইমনকে।’
‘দেবই তো, দেবই তো’ ভেঙ্কট একটুও দমে না।
মঙ্গলবার খেলা শেষ হল, ইমন কলেজে এলো পরের সোমবার। সেই একই রকম আলগা শার্ট আর ব্লু-জীন্স্ পরে লম্বা লম্বা পায়ে হাঁটতে হাঁটতে সে তন্ময়ের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। অনেকদিন কলেজ কামাই হয়ে গেছে, তন্ময় নোট-টোট যদি দেয়। ভেঙ্কট বলল, ‘আমি তোর জন্যে সব জিরক্স করে রেখেছি। ফিলসফির জন্যে রাজেশ্বরীকে বল।’ মিঠু বলল, ‘এতদিন কোথায় ছিলি রে ইমন?’ ইমন বলল—‘বাড়ি গিয়েছিলাম, মাকে ভাইকে দেখতে।’
‘বাবা?’
‘বাবা তো নেই!’
‘তোর বাবা নেই? বলিসনি তো?’
‘বলবার আর কি আছে!’ ইমন স্মিতমুখে বলছে যেন বাবা না থাকাটা খুব একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
‘তোর ভাই কত বড় রে?’
‘বছর দশ হবে।’
‘কোথায় পড়ে?’
‘ওখানেই স্কুলে পড়ে।’
‘খেলে তোর মতো?’
‘না।’
উজ্জয়িনী বলল, ‘শেখাস না?’
‘পারবে না। পোলিওতে একটা পা জখম।’
‘ইস্স্। মাসিমা ওকে নিয়ে একা একা? কার কাছে থাকিস তোরা?’
বিপজ্জনকরকম ব্যক্তিগত আওতায় চলে আসছে আলোচনা। ইমন বলল, ‘কার কাছে থাকবে? একা একাই থাকে। কোয়াটার্স আছে।’
‘মাসি কাজ করেন? কোথায় রে?’
‘হাসপাতালে, নার্স।’
উজ্জয়িনী পাশেই দাঁড়িয়ে শুনছিল। হঠাৎ তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে গেল। মিঠু লক্ষ্য করেনি। কিন্তু ইমন লক্ষ্য করেছিল। সে জানে, সে জানত তার মায়ের বৃত্তির পরিচয় পেলে এরা এইসব সম্পন্ন পরিবারের শহুরে মেয়েরা সেটা ভাল ভাবে নেবে না। তার বাবা নেই। তার ভাইয়ের পোলিও, তার মা নার্স, নার্স মানে কী? তাদের তো আলাদা কোনও কোয়াটার্স নেই, ছোট্ট এক ঘরের একটা আস্তানা, একটু রান্নাঘর আর কলঘর। উজ্জয়িনীর বাবা মস্ত বড় ডাক্তার, গাইনি, সে জানে, মিঠুর বাবা নামকরা কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, ঋতুর বাবা প্রাইভেট ফার্মে বড় অফিসার, ওদের মায়েরাও বড় বড় কাজ করেন, কেতাদুরস্ত, চলায় বলায় একেবারে অন্য জগতের মানুষ। এরা তার দিকে, তার মায়ের দিকে বাঁকা চোখে চাইবে, সে সহ্য করতে পারবে না। তাই সে একা একা থাকে, কারো সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে চায় না। নিষ্ঠুর, দাম্ভিক, এই শহর, সে জানে। কিন্তু তার মা যে তার মা-ই। তার সমস্ত ছেলেবেলা, আনন্দ, ভালবাসার কেন্দ্র, তার পঙ্গু ভাইটি আর তার মা, আর তার অকালমৃত বাবা, যিনি হাসপাতালের ক্লার্ক ছিলেন। কী কঠোর দারিদ্রে তাদের দিন কাটছে। এরা এইসব ফর্সা, চুল কাটা, লিপস্টিক মাখা মেয়েরা সেসব কল্পনাও করতে পারবে না।
হোস্টেলে গিয়ে সে দেখল তার নামে একটা লম্বা খামের চিঠি এসেছে। উল্টেপাল্টে সে দেখল সেন্ট্রাল গর্ভমেন্টের। রেলওয়েজ। তাকে যত শীঘ্র সম্ভব দেখা করতে বলা হচ্ছে।
উজ্জয়িনী নার্স কথাটা কানে এলেই ধাক্কা খায়। সে সরে এসেছিল ওই কারণেই। মিঠু ক্লাস শেষ হতে বলল, ‘উজ্জয়িনী তখন তুই চট করে চলে এলি, ইমন বোধ হয় কিছু মনে করল।’ ইমনের সঙ্গে মিটু অন্যদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। সে অনুভব করে ইমনের ভেতরে কোথাও ব্যথার জায়গা আছে। বাবা নেই, ভাইয়ের পোলিও, এই দুটো কথাতেই ইমনের দুর্ভাগ্যের একটা ছবি যেন কেউ কাঠকয়লা দিয়ে তার সামনে এঁকে দিয়েছিল।
উজ্জয়িনী অন্যমনস্ক ভাবে বলল, ‘কে বললে?’
‘কে আবার বলবে? আমার মনে হল।’
‘আচ্ছা, আমি ইমনের সঙ্গে কথা বলব।’
‘কী বলবি? দূর কিছু বলতে যাস নি।’
মিঠু মনে মনে দুঃখ পেল, উজ্জয়িনীকে সে এত ভালবাসে, কিন্তু ওর মধ্যে করুণা, ভালবাসা, এ জিনিসগুলো বোধ হয় কোনদিন আর জন্মাবে না। ইদানীং আবার সে যেন আগের চেয়েও খামখেয়ালি হয়ে উঠেছে। সে তবু বলল, ‘ইমনের কী কষ্ট বল তো! বাবা মারা গেছেন। মাকে সব চালাতে হয়, ভাইটার আবার পোলিও। যত কষ্ট কি একজনকেই দিতে হবে?’ হঠাৎ যেন উজ্জয়িনীর মুখের ওপর কে চাবুক মারল। অস্পষ্ট ভাবে সে বুঝতে পারল, ইমনের অনেক সমস্যা আছে। তার চেয়ে বেশি কী? সারা ক্লাস ধরে সে শুধু এই কথাই ভাবে। তার কষ্ট বেশি না ইমনের? ইমন কি কোনভাবে তার সমস্যার কাছাকাছিও আসতে পেরেছে? না, বোধ হয় না। পরক্ষণেই মনে হয়, তার জাগতিক সুখ সৌভাগ্য অনেক আছে, ইমনের সেসব নেই। তাহলে?
এইসব কথাই সে আজকাল ভাবে সবসময়। এইরকম ভাবতে ভাবতেই একদিন সে বাড়ি গিয়ে দেখল সামনে অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে। সে ভেতরে ঢুকল, লিফটম্যান তার দিকে যেন কেমন করে তাকাল, দরজা খোলা, মা বসে আছে, সঙ্গে একগাদা আত্মীয়স্বজন, সবাইকার থমথমে মুখ। কী হল? যাক মা, মা অন্তত আছে। তার এক পিসতুতো দাদা তাকে কোণে টেনে নিয়ে গিয়ে বলল, ‘মামার প্লেন অ্যাকসিডেন্ট করেছে। বেশির ভাগই মৃত। মামা যুঝছে, এখনও কাউকে যেতে দিচ্ছে না।’ উজ্জয়িনী দুহাতে মুখ ঢাকল। মা বলল, ‘জুনি, আমার কাছে আয়।’ সবাই পথ করে দিচ্ছে। উজ্জয়িনীকে ধরে ধরে তার মার কাছে পৌঁছে দিল তার পিসতুতো দাদা। মা উজ্জয়িনীকে জড়িয়ে ধরে আছে। মা কি জানে উজ্জয়িনীর সেই স্বপ্নটার কথা? বালিশ, বালিশটা সে বাবার মুখের ওপর প্রাণপণে চেপে ধরেছে। বাবা বড্ড বেশি ঘুমের ওষুধ খায়, ছটফট করছে বালিশের তলায়!
দুদিন পরে কলেজ গেল উজ্জয়িনী। সমস্ত বন্ধুরা উৎকণ্ঠিত মুখে সহানুভূতি জানাচ্ছে। কেমন আছেন? কেমন আছেন? উজ্জয়িনী শুকনো মুখে বলল, ‘কিছু বলা যাচ্ছে না।’
তিন মাস পর ডক্টর মিত্র ফিরে এলেন। কথা বলতে পারেন না। হাত পা নাড়তে পারেন না। পোড়া ঘাগুলো শুকিয়ে এসেছে, কিন্তু সারা শরীরে কষ্ট। নার্ভের চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু ডাক্তাররা বিশেষ আশা দিতে পারছেন না। এইভাবেই যতদিন বাঁচেন। অমিতা একটি আয়া রাখলেন, পথ্য করা, খাওয়ানো, ওষুধপত্র দেওয়া তিনি নিজে হাতেই করেন। উজ্জয়িনীও কিছু কিছু করে।
দুপুর বেলা বাবা ঘুমোচ্ছেন। বা কোমার মধ্যে পড়ে আছেন। উজ্জয়িনী আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকল। বাবার টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি বার করল। ড্রয়ারগুলো একটা একটা করে খুলে কাগজপত্রগুলো দেখে আর রেখে দেয়, অবশেষে একটা পুরনো ফাইলের মধ্যে সে তার অন্বিষ্ট কাগজের টুকরোটা পেল—এ ফিমেল চাইল্ট বর্ন টু মিস ডোরা ডিসুজা, অ্যাট টুয়েলভ নুন, দি টোয়েন্টি ফার্স্ট নভেম্বর, নাইনটিন সিক্সটি নাইন। কাগজটা তুলে নিল সে, তলায় একটা ডাইরি, তার পাতা খুলতেই একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি— ডলি ডলি মুখ একটি মেয়ে, বাইশ তেইশ বছর বয়স হবে। ছবির পেছনে লেখা ‘টু রজত, মাই ডার্লিং— ডোরা।’ ছবিটাও তুলে নিল উজ্জয়িনী। ড্রয়ার বন্ধ করে উঠে দাঁড়াতে দেখে বাবা চেয়ে আছে। কি রকম গোঁ গোঁ শব্দ করছে মুখে, সে একটু এগিয়ে গেল, বলল, ‘আমার বার্থ সার্টিফিকেটটা আর ডোরার ছবিটা নিলাম।’ রজত মিত্র কিছু বুঝলেন কিনা বোঝা গেল না। কিন্তু আবার চোখ বুজে ফেললেন।
এইভাবেই তার টেস্ট হয়ে গেল। ছুটি পড়ার ঠিক আগে দীর্ঘ দীর্ঘকাল ভোগার পর ডক্টর মিত্র মারা গেলেন। উজ্জয়িনী তার বার্থ সার্টিফিকেট আর ডোরার ছবি দুটো চুপিচুপি গ্যাসের ওপর ধরে পুড়িয়ে ফেলল।
শেষদিন কলেজে গিয়ে শুনল খুব হইচই হচ্ছে। ইমন রেলে ভাল চাকরি পেয়েছে।
‘কি রে ইমন? তুই তাহলে কলেজ ছেড়ে দিবি?’
‘না, না। যত দিন না গ্র্যাজুয়েশন হচ্ছে ওরা বিবেচনা করবে। সকালবেলায় গিয়ে একবার শুধু সইটা করে আসতে হবে। তবে ওদের হয়ে সব টুর্নামেন্ট খেলতে হবে।
‘এত ভাল চাকরি পেলি, আমাদের খাওয়াবি না?’
‘নিশ্চয়ই খাওয়াব। কী খাবে, কবে খাবে বলো।’ ইমন সবসময়ে প্রস্তুত।
ভেঙ্কট বলল, ‘না, না, ও খাওয়াবে না। আমি খাওয়াব, অনেকদিন ধরে ঠিক হয়ে আছে। এবার একটা দিন ঠিক করে ফেল সবাই।’
গৌতম বলল, ‘সত্যিই, ভেঙ্কট কিন্তু সেই গত বছর থেকে এঁচে আছে, কবে ইমন ন্যাশন্যাল চ্যাম্পিয়ন হবে, ও খাওয়াবে।’
ইমন বলল, ‘আমি তো পারি নি ভেঙ্কট, তাহলে তুমি কেন শুধু শুধু…’
ভেঙ্কট বলল, ‘খেলার সেমি-ফাইন্যাল, ফাইন্যাল থাকবে, খাওয়ার থাকবে না? এটা আমার খাওয়ানোর সেমি-ফাইনাল।’
‘মানে তুমি যে কোন ছুতোয় খাওয়াবেই?’ ইমন হাসিমুখে বলল।
‘যে কোনও ছুতোয় না, আই. মুখার্জিকে ছুতো করে অর্থাৎ কেন্দ্র করে।’
এই সময়ে লাল পাড় কোরা শাড়ি পরে রুক্ষ চুলে উজ্জয়িনী ঢোকে, যেন রুক্ষ, তপস্যাক্লিষ্ট অপর্ণা। প্রসাধন পারিপাট্যহীন উজ্জয়িনী যেন অন্য উজ্জয়িনী। তাদের চেনা নয়। সবাই চুপ করে যায়। সম্ভ্রমের স্তব্ধতা। একগুচ্ছ জীবনের মাঝখানে মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে। ইমন আস্তে আস্তে একটু ইতস্তত করে তার দিকে এগিয়ে যায়, বিষণ্ণ মুখে বলে, ‘উজ্জয়িনী, আয়্যাম উইথ ইউ। আমিও তোমারই মতো শোকার্ত।’ সবাই মুখ নিচু করল। উজ্জয়িনীর মাথার মধ্যে কী বিচিত্র সব ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে ভাবছে, সব মৃত্যুই কি এক? বাইরে থেকে রুক্ষ মলিন বেশ, খালি পা, হবিষ্যান্ন, কিন্তু ভেতরে? ইমনের বাবাকে সে ইমনের এখনকার মুখ-চোখের আর্ততার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। তাঁর মৃত্যু একটা সর্বনাশ। কিন্তু রজত মিত্র যে সময়মতো মারা গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছেন। কে যে এই টাইমিংগুলো করে!
সে মুখ নিচু করে বলল, ‘থ্যাংকিউ।’ উজ্জয়িনীর অশৌচ, তাই ভেঙ্কটের বাড়ির পার্টিটা পেছিয়ে যায়।