Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কেন সে আমাদের এত সাহায্য করছে? বেশ বড়ো একটা অর্ডার এনেছে। হাজার পিস শাড়ি সাতদিনের মধ্যে ছেপে দিতে হবে। কাপড় পার্টির, আমাদের কাজ শুধু ছেপে দেওয়া। লাভ ভালোই। অর্ডারটা এনেছে হাতকাটা শানু। এ পাড়ার কুখ্যাত মাস্তান। মুখে মদের গন্ধ। পরিষ্কার কথাবার্তা। তিন বছর আগে অ্যাকশান করতে গিয়ে ডান হাতটা কবজির কাছ থেকে নেই, উড়ে গেছে।

শানু কথা বলছে একটু দূরত্ব রেখে, ‘ওস্তাদ। কাছে যাচ্ছি না, মালের গন্ধে তোমাদের অসুবিধে হবে। তোমার জন্যে একমাস লড়ে অর্ডারটা কব্জা করেছি। কাজটা ভালো করে কোরো।’

রুমকি চা আর নিমকি এনেছে। হাত নেড়ে বললে, সন্ধের পর ভদ্দরলোকে চা খায়। নিয়ে যাও, নিয়ে যাও! এই মেয়েটাকে আমি আগে খারাপ চোখে দেখতুম। দু—একবার মালের মেজাজে প্যাঁকও দিয়েছি। মিথ্যে বলব না। তারপরে একদিন স্বপ্ন দেখলুম। আমার সেই হাত উড়ে যাওয়ার স্বপ্নটা। লাইনের ধারে পড়ে আছি। চারপাশ ধোঁয়ায় ধোঁয়া, আর রুমকি আমার মা হয়ে কাটা হাতে লাল একটা কাপড় জড়াচ্ছে। বলছে, ভয় নেই, তোর হাত আমি জুড়ে দোব। শেষরাতের স্বপ্ন। ছাঁৎ করে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমটাকে আবার জোড়া লাগালুম। আবার স্বপ্ন। রুমকি আমাকে চামচে করে ভাত খাওয়াচ্ছে। পরপর তিনবার, একই স্বপ্ন। লে হালুয়া। পরের রাতে আবার। পরের রাতে একটা খারাপ জায়গায় আউট হয়ে পড়েছিলুম। সেই একই স্বপ্ন। তখন ভাবলুম, খারাপ চোখের জন্যে খারাপ মেয়ে আছে, দেবীর মতো একটা মেয়েকে কেন আমি কু—নজরে দেখব? আমি আমার ভগবানের কাছ থেকে আদেশ পেয়েছি, রুমকির সেবা কর, তাহলে তোর ভালো হবে।’

রুমকি বলল, ‘তাহলে মদ খাওয়াটা ছেড়ে দাও।’

‘ওটা পারব না, তাহলে আমাকে অনেকদিন এই নোংরা পৃথিবীতে বাঁচতে হবে।’

এতক্ষণ আমি একটাও কথা বলিনি। অনুমান করার চেষ্টা করছিলুম, শানুর আসল চালটা কী?

যার আতঙ্কে পাড়ার দোকানপাট নিমেষে বন্ধ হয়ে যায়। জানলার শার্সি, খড়খড়ি। মেয়েরা সব ঘরে ঢুকে পড়ে। সে একটা স্বপ্ন দেখে ভোগী থেকে যোগী হয়ে গেল! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য! রুমকি কি পরশপাথর? লোহাকে সোনা করে দিয়েছে?

প্রশ্নটা করেই ফেললুম, ‘নোংরা কে করেছে, কারা করেছে?’

শানু একটা চেয়ারে ধীরে ধীরে বসে বললে, ‘নোংরা করেছে আমাদের নেতারা, আর আমাদের শুয়োর কি বাচ্চা পূর্বপুরুষরা। নিজের অবস্থা দেখে বুঝতে পারো না ওস্তাদ, আমাদের বাপ—ঠাকুরদারা কী রকম গেঁড়ে ছিল!’

রুমকির আনা ট্রে থেকে চায়ের কাপটা অন্যমনস্কে তুলে নিতে নিতে শানু বললে, ‘দাও, তোমার চা তো অমৃত, খেয়েই ফেলি।’

‘বোধহয় ঠান্ডা হয়ে গেছে, গরম এক কাপ করে আনি?’

‘আরে ধুস, আমাকে অত খাতির কোরো না তো। যে কথাটা হচ্ছিল, আমার জীবনকাহিনি শুনবে? উপন্যাস—টুপন্যাস সব পানসে হয়ে যাবে। ক্লাস সেভেন অবদি আমি ক্লাসে ফার্স্ট হতুম। বিষয়—সম্পত্তি নিয়ে কোর্টে মামলা। ঠাকুরদা উইল করে সব বড়ো ছেলেকে দিয়ে গেছেন। ব্যাটা বুড়োর পাপের শেষ ছিল না। নব্বই বছর বেঁচে ছিলেন। ছ—ফুট লম্বা, ছাপ্পান্ন ইঞ্চি বুকের ছাতি। জীবনের ধ্যান—জ্ঞান মেয়েমানুষ। বড়ো ছেলের বউকে নিয়ে বিছানায় যেতেন।

অমন সেবা নাকি আর কেউ করতে পারেনি। মল্লিকবাড়ির ভেতরের এইসব কথা অনেকেই জানে। প্রতিবাদ কেউ করেনি। সকলেরই আশা ছিল, বুড়োর পলিসি হবে—দিয়ো কিঞ্চিৎ, না করো বঞ্চিত! আরে বাবা, মেয়েদের কম ক্ষমতা! মনে নেই, হারকিউলিসকে নেড়া করে ছেড়ে দিয়েছিল। শরীরের ওপর উইল হয়ে গেল, গাড়ি, বাড়ি, বাগান সব বড়ো ছেলের। বাকিরা সব হারামজাদা। বাবা আমাদের নিয়ে পথে নামলেন। মামলা ঠুকলেন কোর্টে। আর আমার মা, বড়োলোকের আদুরী মেয়ে, বাবাকে বললে, তুমি লড়ে যাও, আমি চললুম, বাগনানে বাপের বাড়িতে, সম্পত্তি উদ্ধার হলে ফিরে এসে ফুলশয্যা করব। আমার ফাইটার বাবাকে আমি ভালোবাসতুম। আমি থেকে গেলুম ফাদারের কাছে। বাপের বাড়িতে গর্ভধারিণী আমার ফুলবাগানে চাঁদের আলোয় প্রেমকাহিনি শুরু করলেন। প্রেমিক নিজের মামাতো ভাই। কেস কেলেঙ্কারির। পানিফলের মতো প্রেমের ফল এসে গেল গর্ভধারিণীর গর্ভে। তিনি আমডালে ঝুলে পড়লেন আধহাত জিভ লকলকিয়ে। বাবা সেই দুঃখে ধর্মের লাইনে না গিয়ে মদের লাইনে চলে গেলেন। মন যখন ভীষণ হুহু করত তখন চলে যেতেন বেহালাপাড়ার লাল বস্তিতে। সেখানে একজন মেয়েছেলে ছিল, যাকে নাকি অবিকল আমার মায়ের মতো দেখতে ছিল। যেটুকু ছিল, তিন ছটাক জমি, কয়েক পাটি গয়না, সেই ডোবায় ডুবে গেল। সর্বাঙ্গে সিফিলিস। লিভার শেষ, বুকে যক্ষ্মা, রায়বাহাদুরের ছেলে পটল। তবে হ্যাঁ, বেশ্যা হলে কী হবে, তার দিল ছিল। আমাকে মানুষ করার চেষ্টা করেছিল বহুৎ। তার কাছে এক শিক্ষক আসতেন দেহ—জ্বালা জুড়োতে। শর্ত ছিল, আমাকে এক ঘণ্টা পড়াবার পর তবেই কাজ শুরু হবে। সে—ই আমার স্কুলের মাইনে দিত। ক্লাসে ছেলেরা খেপাতো ছড়া কেটে।

আসল মা পালিয়ে গেল
বাপ মরল পথে
বেশ্যাবাড়ির দালাল
এখন সারেগামা সাধে।।

একদিন তিনটেকে বেধড়ক দিলুম। একটার ওপরের পাটির সব কটা দাঁত খুলে পড়ে গেল। সাতদিন শুয়ে শুয়ে জলসাবু। হেডমাস্টারমশাই রেগে গিয়ে, এম. এ, পি আর এস, পি এইচ ডি ভুলে হুকুম দিলেন, খচ্চরটাকে উলঙ্গ করে বেধড়ক পেঁদা। দুটো বিহারি দারোয়ান তেড়ে এল দু—দিক থেকে, আমি ঝুল কেটে পগারপার!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress