ফ্লোরিডার কিসিমি শহরের এক নিঝুম অ্যাপার্টমেন্টে
বসে আমি লিখছি। আমার
মেজো মেয়ে ফাওজিয়া গ্যাছে এক প্রতিবেশিনীর
অ্যাপার্টমেন্টে; ওর বর গ্যাছে কাজে। ওদের তিন ছেলে
হৃদয়, উপল এবং জেহিন ইশকুল। একলা
ঠান্ডা ঘরের জানালা দিয়ে দেখলাম জালিম রোদ বেদম চাবকাচ্ছে
গাছপালা, বিনীত অ্যাপার্টমেন্ট এবং
একটি কি দু’টি মোটর কারকে। তৃষ্ণায় ফেটে যাচ্ছে
দুপুরের বুক। নিঃসঙ্গতা আমাকে নিয়ে কেলিপরায়ণ; যেমন
বেড়ালের থাবা জব্দ ইঁদুরকে নিয়ে খেলায় মত্ত।
মনে পড়ল চার বছর ছুঁই ছুঁই আমার পৌত্রী নয়নাকে, যাকে
রেখে এসেছি ঢাকায়। তার দুটি কালো চোখে
দিগন্তে নেমে-আসা শ্রাবণ মেঘের গাঢ়, টলটলে মায়া।
জানি না, সে এখন কী করছে। হয়তো ভোরবেলা
বারান্দায় লুটিয়ে-পড়া
এক ফালি গাছের ছায়া নিয়ে খেলায় মেতেছে,
হয়তো চিলের ছোঁ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে
নিজের বুকে জড়িয়ে ধরেছে কবুতরছানাকে, হয়তো জীবজন্তুর
ছবি-অলা একটি বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে আপন মনে।
আজ টেলিফোনে কথা হলো নয়নার সঙ্গে।
মধুর কণ্ঠে সে জিগ্যেস করল আমাকে, ‘তুমি কেমন আছো দাদাভাই?
তুমি কবে আসবে?’ ‘শিগগিরই চলে আসবো,’ জানালাম ওকে।
ভবিষ্যতে একদিন নয়নার সত্তায় ক’টি বসন্তের ঘ্রাণ সঞ্চিত হবে, জানব না।
সে ব্যাকুল প্রশ্ন করবে,
‘দাদাভাই, তুমি কবে আসবে?’ সেদিন
তাকে জবাব দেওয়ার জন্য আমি কোথাও থাকব না।
ওর প্রশ্ন ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে মিলিয়ে যাবে
নির্দয় শহরের কৃপণ নিসর্গে, দালানে, পথের ধুলায়।