এক লোভী বাঘের কাহিনী
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বিক্রমাদিত্য ফিরে গেলেন সেই গাছের কাছে।গাছ থেকে শব নামিয়ে কাঁধে ফেলে যথারীতি তিনি নীরবে শ্মশানের দিকে হাঁটতে লাগলেন।তখন শবস্হিত বেতাল বলল,”রাজন, তোমার অবস্হা দেখে আমার বড্ড করুণা হচ্ছে।জীবন পথে অনেক সময় নানান বিপদ আসে।তখন উপস্থিত বুদ্ধির জোরে ঐ বিপদ থেকে একমাত্র বিচক্ষণরা পারে সঠিক পথ বার করতে।এক বোকা পুরোহিত ও ধূর্ত শার্দুলের গল্প শুনলে রাজন তোমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।তেমার পথ চলার পরিশ্রম ও লাঘব হবে”।বলে বেতাল কাহিনী শুরু করে দেয়।
বীরশিবপুরে এক অবিবাহিত বৃদ্ধ পুরোহিত ছিলেন।চার বাড়ি পূজা করে যা পেতেন ,তা দিয়ে কোনোরকমে একটি পেট চালিয়ে নেবার চেষ্টা করতেন।হঠাৎ পুরোহিত শুনতে পায় মাইকে বলতে বলতে যাচ্ছে আজ দুপুরে জমিদার বাবুর মেয়ের অন্নপ্রাশণ।গ্রামের সকল পুরোহিতদের মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্হা করা হয়েছে।পুরোহিত আনন্দে ডগমগ হয়ে নিমন্ত্রণ বাড়ির দিকে যায়।তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্য গ্রামের বনপথ ধরে।এমন সময় বাঁচাও বাঁচাও শুনতে পায়।তারপর দেখে এক বাঘ পাঁক পুকুরে হাবুডুবু খাচ্ছে।পুরুত বাঁচাও করে কাকুতি মিনতি করে ।পুরুত বাঘকে বাঁচায়।ধর্ম অধর্মের কথা মনে পড়ে।পুরুত বলে বাঘকে আমি জমিদারের বাড়ি নিমন্ত্রণে যাচ্ছি।আমার দেরী হচ্ছে আসি বাঘমামা।বাঘ বলে আরে আমি এতক্ষণ পাঁকে আঁটকে প্রচুর ক্ষিধে পেয়েছে।আর তোমায় খাব।পুরুত বলে তোমাকে রক্ষা করলাম,তুমি আমায় খাবে।দাঁড়াও আমি তিনজনকে জিজ্ঞেস করি ।তারা কি বলে দেখি।প্রথমে একটা বটগাছকে জিজ্ঞেস করে।কাউকে উপকার করলে তার অপকার করা উচিত।বট বলে এই যে আমি পথিকদের ছায়া দান করি।বরঞ্চ ওরা যাবার সময় আমার পাতা ,ডাল ভাঙে।আগুন জ্বালিয়ে তাপ নেয়।
তাই যে উপকার করে তাকে সবাই অপকার করে।এই কথা বাঘ শুনে বলে তাহলে এবার কিমা করে খায়।
পুরুত বলে এখনো আরো দুজনকে
জিজ্ঞেস করি,তারপর এক কলমের সাথে সাক্ষাৎ হয়।সে ও বলে উপকার করেছি কত?কিন্তু এখন অকেজো ।তাই আমাকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে।তাইতো বলি যে উপকার করে তার অপকার করায় উচিত।
বাঘ এবার বলে তোমায় এবার খাব।না না আর এক জন আছে।তারপর এক শার্দুলের দেখা মেলে।তাকে ও পুরুত সব ঘটনা জানান।
শার্দুল কালার অভিনয়ে বলে কি বললে কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।ঘটনাটা যেখানে হয়েছে গিয়ে দেখাও।বাঘ পাঁকে নেমে দেখায় তখন শার্দুল বলে পুরুত চলো বাঘমামা ওখানে থাক।যেমন কর্ম তেমন ফল।
কাহিনির এইটুকু শুনিয়ে বেতাল বলে,”শার্দুল তো বট গছ ও কলমের মত কিছু বলতে পারতো,একেবারে কালা সেজে বাঘকে ফ্যাসাদে না ফেললে কি হতো??
এই প্রশ্নের উওর জানা সত্ত্বেও যদি না দাও তবে তোমার মাথা ফেটে চৌঁচির হয়ে যাবে।
বেতালের প্রশ্নের জবাবে রাজা বিক্রমাদিত্য বললেন শার্দুলের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়।না হলে এতক্ষণে বাঘের পেটে চলে যেত।
বেতাল বলে রাজা ঠিক উওর দিয়েছেন।
রাজা বিক্রমাদিত্যের এইভাবে মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে বেতাল শব নিয়ে ফিরে যায় সেই গাছে।