এক বিবেকবান পকেটমারের গল্প
“শিরোনাম” এ খুব ভাবছেন ত ?
এ আবার কেমন কথা!
ঠিক এ কথাই সবার মনে হবে, কিন্ত কি করব। এ যে একেবারেই নিজস্ব অভিজ্ঞতা। বিবেক চেতনাই বটে। অনেক আগে “পকেটমার” নামে এক সিনেমাও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বিশেষ ভীড়ের বাসে বা রেলে বা স্থানে পকেটমারের প্রকোপের প্রাদুর্ভাব ছিল যা বলাই বাহুল্য। সে এক বিশেষ দক্ষতা ঐ কথায় বলা হয় যে– ” চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা” হঠাৎই একদিন কলেজে( এক সরকারী কলেজে পড়াতাম) অফিস থেকে জরুরী তলব এলো। ক্লাশ শেষে জানতে চাইলাম,
“কি ব্যাপার?” কম বয়সের সপ্রতিভ প্রফেসর মানুষ আমি তখন।
“দেখুন ত,”…. একটা মোটা খাম এগিয়ে
দিল।
“আপনার নাম আর এই কলেজের ঠিকানা”
খামের উপরে মস্ত লেখা
“বডদিদি”
হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন ড় নয় ড। আমি ত অবাক, প্রেরকের কোন নাম নেই। একটু কি সন্দেহজনক নয়!! এত কাগজে বোঝাই ভারী এনভেলপ!!!
গত শতাব্দীর সত্তরের দশক যে।
আসলে তখন ছিল “নকশাল” আন্দোলন আমল, যা উদ্ভব হয়েছিল উত্তর বঙ্গের নকশাল বাড়ি গ্রামে Maoist উগ্র বামপন্থীদের এক রাজনৈতিক মতবাদের চিন্তাধারায় নতুন ভারত গড়বার। সে স্বপ্ন সফলে সশস্ত্র বিপ্লবের ঢেউ ছিল অতি তড়িত গতিতে দ্রুত হঠকারীতার তৎপরতায়। ছিন্ন ভিন্ন হয়েছিল অনেক টাটকা মন ও শরীর, সেই সাথে বহু শুভ বুদ্ধিজীবীদের হত্যালীলাও। অনেক সংসার ভেসে গিয়েছিল…..
সে সময়ে সকলেই একটু সজাগ, চারদিকে সন্ত্রাস । সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ হেন এক অজানা ভারী বড় খাম বোঝাই কাগজ। কে পাঠাল? আমি ত অবাক। কেমন? অদ্ভূত ব্যাপার।
“খুলুন না খামটা। দেখুন”
অফিসের বড়বাবু পরামর্শ দিলেন।
“হ্যাঁ, দেখছি। “
কাগজপত্র অনেক সব বেড়োল। আর একটি চিঠি। সাদা কাগজে। বাংলায় লেখা— বক্তব্য পড়ে হাসতে গিয়েও মায়া হলো। সেই একই সম্বোধন
“বডদিদি”
“গোতকাল গড়িহাত মরে আপনার বাগ আমি ছিনাই নি আপনার বাগ কাগজ ছিল দরকারি কলকাতা কলেজের পরিখা নিয়ে আমি বুঝিনি। কিন্ত আপনার এ কাগজগুলি দরকারি বুঝী। পরিখার সব বাপার। আপনার ঠিকানা ছিল ঐটাথে। তাই পাঠায়ে দিয়ে আমি আমার কতব্য সমাধান করলাম। ইতি আপনার এক ভাই পনাম নেবেন।”
চিঠিটা অনেকবার পড়েছি, অনেককে দেখিয়েছি। পড়ে পড়ে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
হ্যাঁ, ঠিক , গত দিন সাতেক আগে আমার ব্যাগ সত্যিই ছিনতাই হয়েছিল , গড়িয়াহাট মোড়ে। খুব বেশি টাকা ছিল না, ছিল খান তিনেক ডট্ পেন, টুকটাক নিত্য ব্যবহৃত রুমাল ইত্যাদি জিনিস, কিছু পুরোন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি, পরীক্ষক হিসাবের কিছু কাগজপত্র। আসল চিঠিপত্র ও নম্বর ইত্যাদি ফর্মালিটিস সব হয়ে গিয়েছিল। ব্যাগ পরিষ্কার করা হয় নি আর কি। কাগজ সব ফেলে দিলাম কিন্ত চিঠিটি সযত্নে রেখেছিলাম অনেকদিন।
ছেলেটির নীতিজ্ঞান সত্যিই অভাবনীয়। পেটের জ্বালা বা কোন এক তাড়নায় নিশ্চয়ই সে পকেটমারের জীবিকা রপ্ত করেছিল, কিন্ত, পড়ার প্রতি ও শিক্ষকের প্রতি তার এক শ্রদ্ধা বা কিছু দুর্বলতা নিশ্চয়ই ছিল। ইউনিভার্সিটির কাগজ ও ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষতি যাতে না হয়, সে তাগিদেই সে নিজ “অর্জিত ” পয়সা খরচ করে উপকারে লিপ্ত হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ঘটনাটি যেন এক চাবুক চমক ।
আসলে এ নজির বিরল হলেও সম্ভাবনার প্রশ্ন ত থেকেই যায়। কিছু স্মৃতি বা কারোর কথা মনে এক বিশেষ আসনে একপাশে স্থান করে নেয়। এও তাই, হউক না সে অল্প শিক্ষিত এক “ছিনতাই পেশা”র ভাই, এ দেশের এক জন নাগরিক ত।