অনেকেই বলে নিজে অশিক্ষিত হয়ে অন্যকে মানুষ হওয়ার জ্ঞান দেওয়া চূড়ান্ত হাস্যকর….,
প্রবাদে আছে,’ আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও’ এটা অস্বীকার করা মুশকিল অসৎ ব্যক্তি যদি অন্যদের সৎ হওয়ার পরামর্শ দেয়, ভেসে আসতেই পারে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চটুল মন্তব্য….,
আপাত দৃষ্টিতে এসব কিছুই খুব একটা ভুল নয় ,
এ হলো দৈনন্দিন জীবনে অতি পরিচিত আমাদের
সমাজের প্রতিনিয়ত চেনা প্রতিফলন।
তবু কিছু ক্ষেত্রে স্থান-কাল,পরিবেশ অনুসারে গতানুগতিক ভাবনাগুলোর পাল্টে যাওয়া চিত্র
আমাদের নাড়া দেয় মন,তোলে আলোড়ন.…,
পরিবারের চাপে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া অদম্য পড়াশোনার ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়ে সংসারের দায়-দায়িত্ব বোঝা টেনেও,
মা যখন তার সন্তানের পাশে বসে বলেন,” তোকে বড় হতেই হবে খোকা, খুব ভালো রেজাল্ট করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে”,
উৎসাহ দেন উঁচু ক্লাসের পড়াশোনা,সিলেবাসের সামান্য কিছু না বুঝেও সেটাই সন্তানের মনে বিরাট এনার্জেটিক বুস্টার হিসাবে কাজ করে…,
ধেয়ে আসা সমালোচনার তীরে বিদ্ধ অশিক্ষিত মায়ের অনুপ্রেরণা আরও মজবুত হয়ে,
সন্তানকে মানুষ করার মনের জোড় বাড়ে যা
সমাজের বুকে শেকলের মতো আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা
চলে আসা ভাবনার পরিপন্থী তবু এটা বাস্তব ..!
তখন মনে হয় এই উৎসাহ-অনুপ্রেরণাগুলো, পরিস্থিতির চাপে অশিক্ষিত থাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক নির্দেশ করে না বরং দেখায় আলোর দিশা..!
যোগ্য অভিভাবকত্বের অভাবে,
সঙ্গদোষে বখে যাওয়া ছেলে যখন আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না, সারাজীবন খেসারত দেয় ,
একটা সুস্থ জীবনের লক্ষ্যে ব্যর্থ প্রচেষ্টায়,
লোকে আঙুল তুলে হেয়ো করে জেনেও আকাঙ্খায় কিন্তু চায় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে,
চায় তার পাপের বোঝা যেন আগামী প্রজন্মের উপর না পড়ে ,
তার সন্তানরা মানুষের মতো মানুষ হয়ে
নিজেদের পরিচয়ে পরিচিত ও নাম উজ্জ্বল করে
দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে…
আর এটার মধ্যে সত্যিই অন্যায়ের কিছু নেই…।
সঙ্গদোষ খুব খারাপ জিনিস,
সরকারি দপ্তরে কিছু সংখ্যক অর্থ লোভী,রক্ত পিশাচ লোকের জন্য সৎ অফিসারকেও বদ নামের ভাগীদার হতে হয়,
নতুবা কেউ কেউ নিজে পাঁকে ডুবছে জেনেও পাছে সন্তানের বদনাম হয় বাবার পরিচয়ে,
আতঙ্কিত হয় এই কালিমা ছাপ যেন সন্তানদের ওপর না পড়ে এটা ভেবে সন্তানদের সৎ আদর্শ জীবনের পাঠ দিয়ে সংযত হওয়ার শিক্ষা দেন।
এই পরামর্শ আপাত দৃষ্টিতে হাস্যকর হলেও অনৈতিক নয়,
দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকা অফিসার কখনোই চান না তাঁর নিজের ফেঁসে যাওয়া কাজকর্মের শরিক হোক তার সন্তানরা…,
বরং তারা পরিচিত হোক নিজস্ব গুণে,আপন প্রতিভায়,
কেনোই বা তারা বয়ে বেড়াবে অমানুষ,অসৎ বাবা বা মায়ের পাপের বোঝা!!
একজন অশিক্ষিত মায়ের সন্তান যেমন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হয়ে নিজের ও সমাজের নাম উজ্জ্বল করার ক্ষমতা রাখে,তেমনি এক অপরাধ জগতের দাগী আসামীর সন্তান কৃতি আইনবিদ হওয়ার মধ্যেও আশ্চর্যের কিছু নেই।
এইভাবে যা কিছু ঘটে তা স্বাভাবিক চোখে
বিস্ময় জাগালেও,
সমাজের চেনা প্রতিফলনের উল্টো পুরান হলেও
কিছুটা ব্যতিক্রমী তবু সাধুবাদ যোগ্য অন্তত সমাজের কল্যাণে।