Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উর্বশী || Sanjit Mandal

উর্বশী || Sanjit Mandal

আমার নায়িকা তুমি জন্ম জন্মান্তরে, যুগে যুগে সৌন্দর্যের দৃপ্ত পারাবারে। এ মহাবিশ্বের শ্রেষ্ঠ নায়িকা তুমি যুগ যুগ ধরে,আদিম এ পৃথিবীর জন্ম লগ্ন পারে, অন্তহীন কালের বাসরে। তোমার সৌন্দর্য সুধা বিমোহিত করে, দেব দৈত্য দানব আর মানবের ঘরে। অমৃত সেচনের সেই মহাসিন্ধু পারে, অপরূপ বিভা নিয়ে সবাইকে বিমোহিত করে, উঠেছিলে যেন এক বিস্ময়ের ঘোরে। তোমার সে সৌন্দর্যের স্নিগ্ধ মহিমায় স্তম্ভিত হয়ে যায় দেবাসুর যত ছিলো সেদিনের জলসায়, সেই সুধাসিন্ধু পারে।

অমৃত সেচন বুঝি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে যায়। সৌন্দর্য বিভায় তব মুগ্ধ দেবাসুর, আপন কর্তব্য ভুলে যায়, সেই ক্ষীর সমুদ্রের পারে। দিগন্ত ব্যাকুল করা বিমুগ্ধ সন্ধ্যায়, উদাসী বিহগী তুমি কার প্রতীক্ষায় আনত নয়ানে স্মিত হাসি হেসেছিলে সে বিশ্ব সভায় সেই মহাসিন্ধু পারে! অসীম সম্ভার হতে নিজ হাতে যত্ন সহকারে, সেজেছিলে সুনিপুণ করে। বিশ্বজন জনগণ সনে এ কবিও বিমোহিত সেই তব সৌন্দর্য সম্ভারে!

হে আমার আজন্ম সাধন ধন অনিন্দ্য সুন্দরী, বিপুল লাবণ্য ভরি সাজায়েছ আপনারে, মহাবিশ্ব জগতের স্রেষ্ঠতম সুনায়িকা করে। দেবরাজ ইন্দ্রের সভায়, মৃদু পদসঞ্চারে, আলো করে গিয়েছিলে দেবতার হাত ধরে আপন ইচ্ছায়, প্রমাণ করিতে বুঝি নিজ আপনায়, নৃত্য গীত বিদ্যা জ্ঞান জানা আছে চৌষট্টি কলায়, মোহিত করিতে সবে আপন বিভায়, সে দেব সভায় শুধু নয় এ তিন ভুবন আর মহাবিশ্ব চরাচরে, বিলাতে সৌন্দর্য সুধা আপন প্রভায়।

দূরে বহুদুরে কোনো অজানা সন্ধানে ,পৃথিবীর পদপ্রান্তে নিরালা নির্জনে নিদাঘের রৌদ্রক্লান্ত ঘুঘুডাকা স্বপ্নমাখা উদাসী বিতানে, তুমিও কি শুচি স্নান করে, অমৃতের মায়াময় সপ্তসিন্ধুনীরে, মোহময়ী একাকী উদাসী বসি উন্মনা হয়েছিলে আপনার মনে। দখিনা পবনে স্নিগ্ধ, খোলা বাতায়নে, কি ভাবে ভাবিত সখি, আপনার মনে, একেলা বিজনে, নিভৃত যতনে! এলোকেশী, হে উদাসী, রূপসী ললনা, এ বিশ্ব চরাচরে অনন্ত যৌবনা, অযুত বছর ধরে, সে সুধা সাগর তীরে সবটুকু অমিয় মথিয়া করিয়াছ আপনারে দেবতার প্রিয়া। মানবে দানবে তাই নাই কোনো অধিকার শুচি স্নান করিবার তব সিন্ধু নীরে! অনির্বান সেই তব সৌন্দর্যের দীপ্ত পারাবারে, নিজে না দানিলে নিজ সৌন্দর্যের সুধাবিন্দু, কারো সাধ্য নাই তার সুধা পান করিবার তৃষিত যে চাহে বারি তব সিন্ধুনীরে।

তবে কি আপন মনে, নিরালায় নির্জনে, গোপনে মনের কোণে, এঁকেছিলে এক অতি উদ্ভাসিত মুখ,চোখে নিয়ে শ্রাবস্তীর স্নিগ্ধ মহাসুখ, কোনো এক বিশ্বরূপ তেজস্বী মানবে, এ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রঙ তুলি দিয়ে! অথবা সে নদীয়ার অমায়িত করুণার আদরের সাগরের নীলাম্বর দিয়ে জীবন নির্ঝর গানে সুনিপুন সুর তানে নির্মাণ করেছ এক বিপুল বিস্ময়! আপনার মনে।

হে উর্বশী, দেবতার প্রিয়া, ধরণীর কতখানি সৌন্দর্য মথিয়া, কার মুখ এঁকে ছিলে মনের মুকুরে! কার লাগি বিহ্বল হল তব হিয়া! হে বাসব প্রিয়া।
সে কি শুধু করুণার প্রদীপ্ত সবুজ, সে কি শুধু পৌরুষের ব্যঞ্জনা অবুঝ। সে কি সেই বীরত্বের বিপুল বিস্ময়! পদ ভরে কাঁপে যার মেদিনী বিশাল, আজানু লম্বিত বাহু প্রশস্ত ললাট, দীর্ঘ নাসা, চিবুকের সুদৃঢ় প্রত্যয়, সমগ্র পৃথিবী পারে করিতে শাসন অবহেলা ভরে, আপনার গান্ডীবের নিপুণ ঝঙ্কারে।

ধরণীর ধূলি পরে পদব্রজে যায় যবে সে সুদর্শন তার দরশন লাগি উতলা অমন, হে উর্বশী, তাই বুঝি অর্জুন সকাশে তুমি করিলে গমন! দেবতার অনন্ত প্রেয়সী, তুমি বুঝি মুগ্ধ সেই তৃতীয় পান্ডবের পৌরুষ দর্শনে! তাই তব প্রেম নিবেদন, সেই বীর অর্জুনে! তাই বুঝি আকুল ক্রন্দন তব ব্যর্থ মনোরথে! প্রিয়া নয় মাতৃ সম্বোধন যে করেছে তোমাকে, ব্যর্থ তব প্রেম। পরম বিস্ময় ঘোরে তাই বুঝি বলেছিলে, অর্জুন অর্জুন, কাম তৃষা লয়ে আমি এসেছি তোমার দ্বারে, তৃপ্ত করো আপনারে মথিত করো মোর জীবন যৌবন। অর্জুন কিছুতেই করেনি শ্রবণ, মানেনি সে প্রেমকথা, শোনেনি সে মধুর বচন। কারণ সে জেনেছিল , সমস্ত বৃত্তান্ত তব যত ইতিকথা, পরিচয় ললাট লিখন। সেইদিন বলেছিল বীর সে অর্জুন, ইন্দ্র পিতা মোর,,পিতা ইন্দ্রের প্রেয়সী তুমি মাতৃসমা হও, হে সুন্দরী উর্বশী মাতা, সহবাস আলিঙ্গন কিছুতেই সম্ভব নয়, সম্ভব নয় কোনো প্রেম চুম্বন। ক্ষমা করো, নিজ গৃহে ফিরে যাও মাতা।
আমি পুত্র সম তব, প্রেমিক কদাপি নহি মাতঃ।

তাই তব দীর্ঘশ্বাস আজো বয় অবিরত। নির্জন বিরহী দুপুরে ডাহুকের স্বরে, বাতাস এখনও ভারী হয়, অপরূপা প্রেয়সীর মর্মবেদনায়। আজও তাই বিরহী সন্ধ্যায়, কার মন হু হু করে প্রেমিকের বিরহ ব্যথায়, ডাহুকের বেদনার্ত মর্মরিত স্বরে। তাই বুঝি নিদারুণ অভিশাপ দিলে তুমি অর্জুন সুধীরে ! মহাকাব্যে বৃহন্নলা বীর অর্জুন, বিরাট রাজার কন্যা উত্তরার শিক্ষাগুরু বিরাটের ধামে, তব অভিশাপ ফলে অজ্ঞাত বাসের কালে, মহাভারতীয় এক অনন্য আখ্যানে,অন্তহীন কালের বাসরে, উর্বশী ফিরে যায় দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় নন্দিত প্রাঙ্গণে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress