Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উপসংহার – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 6

উপসংহার – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

ব্যোমকেশ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল‌, ‘এই কাহিনীর মরাল হচ্ছে-ভাগ্যং ফলতি সর্বত্ৰ ন বিদ্যা ন চ পৌরুষং। পুঁটিরাম যদি দাওয়ায় বসে না থাকত এবং ট্যাক্সির নম্বরটা ৮০০৮ না হত‌, তাহলে আমরা অনুকুলবাবুকে পেতুম কোথায়?’

জিজ্ঞাসা করিলাম‌, ‘তা তো বুঝলুম‌, কিন্তু দেশলাই-চোর যে অনুকুলবাবু এ সন্দেহ তোমার কি করে হল?’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘আমার সত্যান্বেষী জীবনে যতগুলি ভয়ঙ্কর শত্ৰু তৈরি করেছি‌, তার মধ্যে কেবল তিনজন বেঁচে আছে। প্রথম–পেশোয়ারী আমীর খাঁ‌, যে মেয়ে-চুরির ব্যবসাকে সূক্ষ্ম ললিতকলায় পরিণত করেছিল। বিচারে পিনাল কোডের কয়েক ধারায় তার বারো বছর জেল হয়। দ্বিতীয়–পলিটিক্যাল দালাল কুঞ্জলাল সরকার‌, যে সরকারী অর্থনৈতিক গুপ্ত সংবাদ চুরি করে শেয়ার মার্কেটে বিক্রি করত। বছর দুই আগে তার সাত বছর শ্ৰীঘরের ব্যবস্থা হয়েছে। তৃতীয়—আমাদের অনুকুল ডাক্তার। ইনি কোকেনের ব্যবসা এবং আমাকে খুন করবার চেষ্টার অপরাধে দশ বছর জেলে যান। হিসেব করে দেখছি‌, বর্তমানে কেবল অনুকুলবাবুরই জেল থেকে বেরুবার সময় হয়েছে। সুতরাং অনুকুলবাবু ছাড়া আর কে হতে পারে?’

‘তা বটে। কিন্তু এই দগ্ধানন ভদ্রলোকটিই যে অনুকুলবাবু এ সন্দেহ তোমার হয়েছিল?’

‘না। ওঁর হাঁটার ভঙ্গীটা পরিচিত মনে হয়েছিল বটে। কিন্তু ওঁকে সন্দেহ করিনি। তারপর সেই কোকনন্দ গুপ্তর চিঠিখানা—সেটাও মনে ধোঁকা ধরিয়ে দিয়েছিল। কোকনন্দ নামটা এতই অস্বাভাবিক যে ছদ্মনাম বলে সন্দেহ হয়‌, উপরন্তু আবার ‘গুপ্ত’। তুমি বোধহয় লক্ষ্য করেছ, আমাদের দেশের লোক ছদ্মনাম ব্যবহার করতে হলেই নামের শেষে একটা ‘গুপ্ত’ বসিয়ে দেয়। তাই‌, দুনম্বর ব্যোমকেশবাবু যখন চিঠিখানা নিজের বলে স্পষ্টভাবে দাবি করতে না পেরেও নিয়ে চলে গেলেন‌, তখন আমার মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগল। কোকনদ শব্দটা কোকেনের কথাই মনে করিয়ে দেয়–তুমি ঠিক ধরেছিল। কিন্তু তখন দুনম্বর ব্যোমকেশবাবুর ওপর কোনও সন্দেহ হয়নি‌, তাই মনের সংশয় জোর করে সরিয়ে দিয়েছিলুম। তারপর শ্রীরামপুর হাসপাতালে তুমি বললে‌, উনি আমাকে দেখতে এসেছেন তখন নিমেষের মধ্যে সংশয়ের সব অন্ধকার কেটে গেল। বুঝলুম উনিই অনুকুলবাবু এবং দেশলাই-চোর।’

‘উনি ব্যোমকেশ নাম গ্ৰহণ করে এ বাসায় উঠেছিলেন কেন?’

‘আগেই বলেছি প্রতিহিংসা প্রবৃত্তি বড় অদ্ভুত জিনিস। ঐ চিঠিখানা আমাকে দিয়ে আমি বুঝতে পারি কি না দেখবার জন্যে উনি এত কাণ্ড করেছিলেন; আর ঐ প্রবৃত্তির দ্বারা তাড়িত হয়েই শ্রীরামপুরে আমার মৃত মুখ দেখতে গিয়েছিলেন। উনি জানতেন‌, ওঁর মুখের চেহারা এমন বদলে গেছে যে আমরা ওঁকে চিনতে পারব না।’

কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া প্রশ্ন করিলাম‌, ‘আচ্ছা‌, জলের কুঁজোর মধ্যে দেশলায়ের কাঠি লুকিয়ে রেখেছেন‌, এটা ধরলে কি করে?

ব্যোমকেশ কহিল‌, ‘এইখানে অনুকুলবাবুর প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। দেশলায়ের কাঠি জলের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হবে এ কেউ কল্পনাই করতে পারে না। কাজেই‌, যদি কোনও কারণে তাঁর ঘর খানাতল্লাস হয়‌, জলের কুঁজোর মধ্যে কেউ তা খুঁজতে যাবে না। আমার সন্দেহ হল যখন শুনলুম‌, তিনি একটি হ্যান্ডব্যাগ আর জলের কুঁজে নিয়ে চলে গেছেন। হ্যান্ডব্যাগ না হয় বুঝলুম‌, কিন্তু জলের কুঁজে নিয়ে গেলেন কেন? শীতকালে যে-লোক লেপ বিছানা নিয়ে গেল না‌, সে জলের কুঁজো নিয়ে যাবে কি জন্যে? জলের কুঁজো কি এতই দরকারী? তারপর তাঁর বাক্স থেকে যখন গালা ওয়াটারপ্রুফ ইত্যাদি বেরুল‌, তখন আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। কাঠিগুলি তিনি শিশিতে পুরে ওয়াটারপ্রুফ কাপড়ে জড়িয়ে সীলমোহর করে তাকে জলের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন‌, যাতে জলের মধ্যে থেকেও নষ্ট না হয়। অনুকুলবাবুর বুদ্ধি ছিল অসামান্য‌, কিন্তু বিপথগামী হয়ে সব নষ্ট হয়ে গেল!’

পুঁটিরাম চায়ের শূন্য বাটিগুলা সংগ্ৰহ করিতে আসিয়াছিল‌, তাহার দিকে চাহিয়া ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘পুঁটিরাম‌, ফার্স্টবুক এনেছ?’

লজ্জিতভাবে পুঁটিরাম বলিল‌, ‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’

‘বেশ। অজিত‌, আজ থেকেই তাহলে পুঁটিরামের হায়ার এডুকেশন আরম্ভ হোক। কারণ প্ৰত্যেক বারই যে ৮০০৮ নম্বর ট্যাক্সিতে আসামী পালাবে এমন তো কোনো কথাই নেই।

Pages: 1 2 3 4 5 6
Pages ( 6 of 6 ): « পূর্ববর্তী1 ... 45 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress