Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » উপসংহার – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 5

উপসংহার – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

সেদিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে দু’জনে বীরেনবাবুর প্রতীক্ষা করিতেছিলাম। ব্যোমকেশ তাহার রিভলবারটা তেল ও ন্যাকড়া দিয়া পরিষ্কার করিতেছিল।

আমি বলিলাম‌, ‘বীরেনবাবু তো এখনো এলেন না।’

‘এইবার আসবেন। ‘ ব্যোমকেশ একবার ঘড়ির দিকে চোখ তুলিল।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম‌, ‘আচ্ছ ব্যোমকেশ‌, লোকটার আসল নাম কি? তুমি নিশ্চয় জানো?’

‘আমি তো বলেছি‌, এখনও ঠিক জানি না।’

‘তবু আন্দাজ তো করেছ।’

‘তা করেছি।’

‘কে লোকটা? আমার চেনা নিশ্চয়–না?’

‘শুধু চেনা নয়‌, তোমার একজন পুরনো বন্ধু।’

‘কি রকম?’

ব্যোমকেশ একটু চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল‌, ‘সেই চিঠিখানাতে কোকনন্দ গুপ্ত নাম ছিল মনে আছে বোধ হয়। তা থেকে কিছু অনুমান করতে পার না?’

‘কি অনুমান করব। কোকনন্দ গুপ্ত তো ছদ্মনাম।’

‘সেই জন্যই তো তাতে আরো বেশি করে ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। মানুষের সত্যিকার নামকরণ হয় সম্পূর্ণ খেয়ালের বশে‌, অধিকাংশ স্থলেই কানা ছেলের নাম হয় পদ্মলোচন। যেমন তোমার নাম অজিত‌, আমার নাম ব্যোমকেশ–আমাদের বর্ণনা হিসাবে নাম–দুটোর কোনও সার্থকতা নেই। কিন্তু মানুষ যখন ভেবে চিস্তে ছদ্মনাম গ্ৰহণ করে তখন তার মধ্যে অনেকখানি ইঙ্গিত পুরে দেবার চেষ্টা করে। কোকনন্দ শব্দটা তোমাকে কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে না? কোনও একটা শব্দগত সাদৃশ্য?’

আমি ভাবিয়া বলিলাম‌, ‘কি জানি‌, আমি তো এক কোকোন ছাড়া আর কিছুর সঙ্গেই সাদৃশ্য পাচ্ছি না।’

ব্যোমকেশ হাসিল, ‘বলিল, ‘কোকনদের সঙ্গে কোকেনের সাদৃশ্য মোটেই কাব্যানুমোদিত নয়, তাই তোমার মন উঠছে না–কেমন? কিন্তু–ঐ বীরেনবাবু আসছেন‌, সঙ্গে আর একজন। অজিত‌, আলোটা জ্বেলে দাও‌, অন্ধকার হয়ে গেছে।’

বীরেনবাবু প্ৰবেশ করিলেন; তাঁহার সঙ্গে একটি দীর্ঘাকৃতি শিখ। শিখের মুখে প্রচুর গোঁফ-দাড়ি-গ্রন্থি বাঁধিয়া তাহাদের উচ্ছঙ্খলতা কিঞ্চিৎ সংযত করা হইয়াছে। মাথায় বেণী।

ব্যোমকেশ উভয়কে আদর করিয়া বসাইল।

কালব্যয় না করিয়া ব্যোমকেশ শিখকে প্রশ্ন আরম্ভ করিল। শিখ বলিল‌, আজ সকালের আরোহীকে তাহার বেশ মনে আছে। তিনি বেলা আন্দাজ সাড়ে দশটার সময় তাহার ট্যাক্সি ভাড়া করিয়া শ্রীরামপুরে যান; সেখানে হাসপাতালের অনতিদূতে গাড়ি রাখিয়া তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেন। অল্পক্ষণ পরেই আবার লৌটিয়া আসিয়া দ্রুত কলিকাতায় ফিরিয়ে আসিতে আদেশ করেন। কলিকাতায় পহুঁছিয়া তিনি এই বাসায় নামেন‌, তারপর সামান্য কিছু সামান্‌ লইয়া আবার গাড়িতে আরোহণ করেন। এখান হইতে বউবাজারের কাছাকাছি একটা স্থানে গিয়া তিনি শেষবার নামিয়া যান। তিনি ভাড়া চুকাইয়া দিয়া উপরন্তু দুই টাকা বখশিশ দিয়াছেন; ইহা হইতে শিখের ধারণা জন্মিয়াছে সে লোকটি অতিশয় সাধু ব্যক্তি।

ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল‌, ‘তিনি শেষবার নেমে গিয়ে কি করলেন?’

শিখ বলিল‌, তাহার যতদূর মনে পড়ে তিনি একজন ঝাঁকামুটের মাথায় তাঁহার বেগ্‌ ও জলের সোরাহি চড়াইয়া দিয়া প্ৰস্থান করিয়াছিলেন; কোনদিকে গিয়াছিলেন তাহা সে লক্ষ্য করে নাই।

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘তুমি তোমার গাড়ি এনেছ। সেই বাবুটকে যেখানে নামিয়ে দিয়েছিলে আমাদের ঠিক সেইখানে পৌঁছে দিতে পারবে?’

শিখ জানাইল যে বে-শক্‌ পারিবে।

তখন আমরা দুইজনে তাড়াতাড়ি তৈয়ার হইয়া নীচে নামিলাম। নীল রংয়ের গাড়ি বাড়ির সম্মুখে দাঁড়াইয়া ছিল‌, ৮০০৮ নম্বর গাড়িই বটে। আমরা তিনজনে তাহাতে উঠিয়া বসিলাম। শিখ গাড়ি চালাইয়া লইয়া চলিল।

রাত্রি হইয়াছিল। গাড়ির অন্ধকারের মধ্যে বসিয়া বীরেনবাবু হঠাৎ বলিলেন‌, ‘আপনার কয়েদীর খোঁজ নেওয়া হয়েছিল। ইনি তিনিই বটে। মাস ছয়েক হল জেল থেকে বেরিয়েছেন।’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘যাক‌, তাহলে আর সন্দেহ নেই। মুখ পুড়েছিল কি করে?’

‘ইনি শিক্ষিত ভদ্রলোক আর বিজ্ঞানবিৎ বলে এঁকে জেল-হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল। বছর দুই আগে একটা নাইট্রিক অ্যাসিডের শিশি ভেঙে গিয়ে মুখের ওপর পড়ে। বাঁচবার আশা ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেলেন।’

আর কোনও কথা হইল না। মিনিট পনেরো পরে আমাদের গাড়ি এমন একটা পাড়ায় গিয়া দাঁড়াইল যে আমি বিস্মিত হইয়া বলিয়া উঠিলাম‌, ‘ব্যোমকেশ‌, এ কি! এ যে আমাদের–’। বহুদিনের পুরাতন কথা মনে পড়িয়া গেল। এই পাড়ারই একটা মেসে ব্যোমকেশের সহিত আমার প্রথম পরিচয় হইয়াছিল।*(‘সত্যান্বেষী’ গল্প দ্রষ্টব্য।)

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘হ্যাঁ‌, আমার অনেক আগেই বোঝা উচিত ছিল।‘ চালককে জিজ্ঞাসা করিল‌, ‘এইখানেই তিনি গিয়েছিলেন?’

চালক বলিল‌, ‘হাঁ।’

একটু চিন্তা করিয়া ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘আচ্ছা‌, এবার আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে চল।’ বীরেনবাবু বলিয়া উঠিলেন‌, ‘সে কি‌, নামবেন না?’

‘দরকার নেই। আমাদের শিকার কোথায় আছে আমি জানি।’

‘তাহলে তাকে এখনি গ্রেপ্তার করা দরকার।’

ব্যোমকেশ বীরেনবাবুর দিকে ফিরিয়া বলিল‌, ‘শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে? দেশলায়ের বাক্সটা চাই না?’

‘না না–তা চাই বৈ কি। তাহলে কি করতে চান?’

‘আগে দেশলায়ের বাক্সটা সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হয়ে তারপর তাকে ধরতে চাই। চলুন‌, কি করতে হবে বাসায় গিয়ে বলব।’

আমরা আবার ফিরিয়া চলিলাম।

রাত্রি আটটার সময় আমি‌, ব্যোমকেশ ও বীরেনবাবু একটা অন্ধকার গলির মোড়ে এক ভাড়াটে গাড়ির মধ্যে লুকাইয়া বসিলাম। এইখানে একটা গাড়ির স্ট্যান্ড আছে—তাই‌, আমাদের গাড়িটা কাহারও দৃষ্টি আকর্ষণ করিল না।

সম্মুখে প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে আমাদের সেই পুরাতন মেস। বাড়িখানা এ কয় বৎসরে কিছুমাত্র বদলায় নাই‌, যেমন ছিল তেমনই আছে। কেবল দ্বিতলের মেসটা উঠিয়া গিয়াছে; উপরের সারি সারি জানালাগুলিতে কোথাও আলো নাই।

মিনিট কুড়ি-পঁচিশ অপেক্ষা করিবার পর আমি বলিলাম‌, আমরা ধরনা দিচ্ছি‌, কিন্তু উনি যদি আজ রাত্রে না বেরোন?’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘বেরুবেন বৈ কি। রাত্রে আহার করতে হবে তো।’

আরো কুড়ি মিনিট কাটিয়া গেল। ব্যোমকেশ গাড়ির খড়খড়ির ভিতর চক্ষু নিবদ্ধ করিয়াছিল‌, সহসা চাপা গলায় বলিল‌, ‘এইবার! বেরুচ্ছেন তিনি।’

আমরাও খড়খড়িতে চোখ লোগাইয়া দেখিলাম‌, একজন লোক আপাদমস্তক র‍্যাপার মুড়ি দিয়া সেই বাড়ির দরজা হইতে বাহির হইয়া আসিল‌, তারপর একবার ক্ষিপ্ত-দৃষ্টিতে রাস্তার দুইদিকে তাকাইয়া দ্রুতপদে দূরের অন্ধকারে মিলাইয়া গেল।

রাস্তায় লোক চলাচল ছিল না বলিলেই হয়। সে অদৃশ্য হইয়া গেলে আমরা গাড়ি হইতে নামিয়া বাড়ির সম্মুখীন হইলাম।

সম্মুখের দরজায় তালা বন্ধ। ব্যোমকেশ মৃদু স্বরে বলিল‌, ‘এদিকে এস।’

পাশের যে-দরজা দিয়া উপরে উঠিবার সিঁড়ি আরম্ভ হইয়াছে‌, সে দরজাটা খোলা ছিল; আমরা তাহার ভিতরে প্রবেশ করিলাম। এইখানে সরু একফালি বারান্দা, তাহাতে একটি দরজা নীচের ঘরগুলিকে উপরের সিঁড়ির সহিত সংযুক্ত করিয়াছে। ব্যোমকেশ পকেট হইতে একটা টর্চ বাহির করিয়া দরজাটা দেখিল; বহুকাল অব্যবহৃত থাকায় দরজা কীটদষ্ট ও কমজোর হইয়া পড়িয়াছে। ব্যোমকেশ জোরে চাপ দিতেই হুড়কা ভাঙিয়া দ্বার খুলিয়া গেল। আমরা ঘরে প্ৰবেশ করিলাম।

ভাঙা দরজা স্বাভাবিক রূপে ভেজাইয়া দিয়া ব্যোমকেশ টর্চের আলো চারিদিকে ফিরাইল। ঘরটা দীর্ঘকাল অব্যবহৃত‌, মেঝোয় পুরু হইয়া ধূলা পড়িয়াছে‌, কোণে ঝুল ও মাকড়সার জাল। ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘এটা নয়‌, ওদিকে চল।’

ঘরের একটা দ্বার ভিতরের দিকে গিয়াছিল‌, সেটা দিয়া আমরা অন্য একটা ঘরে উপস্থিত হইলাম। এ ঘরটা আমাদের পরিচিত‌, বহুবার। এখানে বসিয়া আড্ডা দিয়াছি। টর্চের আলোয় দেখিলাম ঘরটি সম্প্রতি পরিষ্কৃত হইয়াছে‌, একপাশে একটি তক্তপোশের উপর বিছানা পাতা‌, মধ্যস্থলে একটি টেবিল ও চেয়ার। ব্যোমকেশ ঘরটার চারিপাশে আলো ফেলিয়া দেখিয়া লইয়া বলিল‌, ‘হুঁ‌, এই ঘরটা। বীরেনবাবু্‌, এবার আসুন অন্ধকারে বসে গৃহস্বামীর প্রতীক্ষা করা যাক।’

বীরেনবাবু ফিসফিস করিয়া বলিলেন‌, ‘দেশলায়ের বাক্সটা এই বেলা—’

‘সেজন্যে ভাবনা নেই। রিভলবার আর হাতকড়া পকেটে আছে তো?’

‘আছে।’

‘বেশ। মনে রাখবেন‌, লোকটি খুব শান্ত-শিষ্ট নয়।’ আমি এবং বীরেনবাবু তক্তপোশের উপর বসিলাম‌, ব্যোমকেশ চেয়ারটা দখল করিল। অন্ধকার ঘরের মধ্যে নিঃশব্দে প্ৰতীক্ষা আরম্ভ হইল।

বেশিক্ষণ অপেক্ষা করিতে হইল না। আধঘণ্টা তখনও অতীত হয় নাই‌, বাহিরের দরজায় খুট্‌ করিয়া শব্দ হইল। আমরা খাড়া হইয়া বসিলাম; নিশ্বাস আপনা হইতে বন্ধ হইয়া গেল।

অতি মৃদু পদক্ষেপ অন্ধকারে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে। তারপর সহসা ঘরের আলো দপ্‌ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল।

ব্যোমকেশ সহজ স্বরে বলিল‌, ‘আসতে আজ্ঞা হোক অনুকুলবাবু। আমরা আপনার পুরনো বন্ধু‌, তাই অনুমতি না নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছি। কিছু মনে করবেন না।’

অনুকুল ডাক্তার–অর্থাৎ দুনম্বর ব্যোমকেশবাবু–সুইচে হাত দিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। কিছুক্ষণ তিনি কথা কহিলেন না। তাঁহার পক্ষ্মহীন চক্ষু দুটি একে একে আমাদের তিনজনকে পরিদর্শন করিল। তারপর তাঁহার বিবৰ্ণ বিকৃত মুখে একটা ভয়ঙ্কর হাসি দেখা দিল; তিনি দাঁতের ভিতর হইতে বলিলেন‌, ‘ব্যেমকেশবাবু যে! সঙ্গে পুলিস দেখছি। কি চাই? কোকেন?’

ব্যেমকেশ মাথা নাড়িয়া হাসিল–’না না‌, অত দামী জিনিস চেয়ে আপনাকে বিপদগ্ৰস্ত করব না। আমরা অতি সামান্য জিনিস চাই–একটা দেশলায়ের বাক্স।’

অনুকুলবাবুর অনাবৃত চক্ষু দুটা ব্যোমকেশের মুখের উপর স্থির হইয়া রহিল। তিনি ধীরে ধীরে বলিলেন‌, ‘দেশলায়ের বাক্স। তার মানে?’

‘মানে‌, যে-বাক্স থেকে একটি কাঠি সম্প্রতি ট্রামে যেতে যেতে আপনি আমায় উপহার দিয়েছিলেন‌, তার বাকি কাঠিগুলি আমার চাই। আপনি তাদের যে মূল্য ধাৰ্য করেছেন অত টাকা তো আমি দিতে পারব না‌, তবে আশা আছে বন্ধুজ্ঞানে সেগুলি আপনি বিনামূল্যেই আমায় দেবেন।’

‘আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।’

‘পারছেন বৈকি। কিন্তু হাতটা আপনি সুইচ থেকে সরিয়ে নিন। ঘর হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেলে আমাদের চেয়ে আপনারই বিপদ হবে বেশি। আপনি বোধ হয় লক্ষ্য করেননি‌, দুটি রিভলবার আপনার বুকের দিকে স্থির লক্ষ্য করে আছে।’

অনুকুলবাবু সুইচ ছাড়িয়া দিলেন। তাঁহার মুখে পাশবিক ক্ৰোধ এতক্ষণে উলঙ্গ মূর্তি ধরিয়া দেখা দিল। তিনি চীৎকার করিয়া উঠিলেন‌, ‘(ছাপিবার যোগ্য নয়) আমার জীবনটা তুই নষ্ট করে দিয়েছিস! তো…’ অনুকুলবাবুর ঠোঁটের কোণে ফেনা গাঁজাইয়া উঠিল।

ব্যোমকেশ দুঃখিতভাবে মাথা নাড়িয়া বলিল‌, ‘ডাক্তার‌, জেলখানায় থেকে তোমার ভাষাটা বড় ইয়ে হয়ে গেছে দেখছি। দেবে না তাহলে দেশলায়ের বাক্সটা?’

‘না—দেব না। আমি জানি না কোথায় দেশলায়ের বাক্স আছে। তোর সাধ্য হয় খুঁজে নে‌,–কোথাকার।’

নিশ্বাস ফেলিয়া ব্যোমকেশ উঠিয়া দাঁড়াইল–’খুঁজেই নিই তাহলে।—বীরেনবাবু্‌, আপনি সতর্ক থাকবেন।’

ব্যোমকেশ তক্তপোশের শিয়রে গিয়া দাঁড়াইল। গেলাস-ঢাকা জলের কুঁজোটা সেখানে রাখা ছিল‌, সেটা দুহাতে তুলিয়া লইয়া সে মেঝের উপর আছাড় মারিল। কুঁজা সশব্দে ভাঙিয়া গিয়া চারিদিকে জলস্রোত প্ৰবাহিত হইয়া গেল।

কুঁজার ভগ্নাংশগুলি মধ্য হইতে নীল কাপড়ে মোড়া শিশির মত একটা জিনিস তুলিয়া লইয়া ব্যোমকেশ আলোর সম্মুখে আসিয়া পরীক্ষা করিল‌, বলিল‌, ‘ওয়াটারপ্রুফ‌, শিশি‌, সীলমোহর‌, সব ঠিক আছে–শিশিটা ভাঙেনি দেখছি—বীরেনবাবু্‌, দেশলাই পাওয়া গেছে—এবার চোরকে গ্রেপ্তার করতে পারেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress