রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – লব ও কুশের সহিত শ্রীরামের যুদ্ধ
কটক হইল পার নদ নদী নীরে।
জল শুখাইল কটকের পদভরে।।
নদী শুখাইয়া মাটি হৈল গুঁড়া গুলা।
গগন-মণ্ডলে লাগে কটকের ধূলা।।
সমরে গেলেন রাম কমল-লোচন।
ভরত লক্ষ্মণ পড়িয়াছে শত্রুঘন।।
আর পড়িয়াছে ঠাট ছয় অক্ষৌহিণী।
দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইলেন রঘুমণি।।
লব কুশ দুই ভাই করে অনুমান।
এই বুঝি সৈন্য লয়ে আইলেন রাম।।
সংগ্রামে পণ্ডিত অতি বিখ্যাত শ্রীরাম।
ইহাকে মারিতে পারি তবে থাকে নাম।।
এই যুক্তি দুই ভায়ে করে কাণাকাণি।
হেনকালে আইলেন সীতা ঠাকুরাণী।।
জানকী বলেন কিবা কর দুই ভাই।
কটকের মহারোল শুনিতে যে পাই।।
কার সনে করিয়াছ বাদ বিসম্বাদ।
কোন্ দিনে লব কুশ পাড়িবে প্রমাদ।।
উভয়ে সীতাদেবী করেন সাবধান।
শত শত আশীর্ব্বাদ করেন কল্যাণ।।
অভাগীর পুত্র তোরা নির্ধনের ধন।
অন্ধের নয়ন তোরা মায়ের জীবন।।
কায়মনোবাক্যে যদি আমি হই সতী।
তোসবার রণে কারো নাহি অব্যাহতি।।
তোসবার সনে যে আসিয়া করে রণ।
বাহুড়িয়া দেশেতে না যাবে এক জন।।
অব্যর্থ সীতার বাক্য নহে অন্য মত।
যা বলেন যাহারে সে ফলে সেই মত।।
এতেক বলিয়া সীতা চলিলেন ঘর।
চরণ বন্দিয়া চলে দুই সহোদর।।
রামের সহিত যুদ্ধ করে এই মন।
সেইমত বেশ করিলেন দুই জন।।
তূণ পূর্ণ বাণ নিল ধনু নিল হাতে।
বুঝিবারে দুই ভাই চলে আনন্দেতে।।
যেখানে শ্রীরাম তথা গেল দুই জন।
তিন রাম এক ঠাঁই দেখে সর্ব্বজন।।
এক বল এক রূপ একই সুঠাম।
একই বিক্রম সবে দেখে তিন রাম।।
রাক্ষস বানর আদি যত সেনাপতি।
অনুমান করে তারা বুদ্ধে বৃহস্পতি।।
পঞ্চমাস গর্ভবতী জানকী যখন।
সেকালে তাঁহারে রাম করেন বর্জ্জন।।
লক্ষ্মণ আনিয়া তাঁরে রাখে এই বনে।
ইহারা সীতার পুত্র হেন লয় মনে।।
সেই গর্ভে হইল যমজ সহোদর।
ত্রিভুবন জয়ী দুই বীর ধনুর্দ্ধর।।
এই কথা রঘুনাথ করি অনুমান।
নতুবা ইহারা কেন তোমার সমান।।
এ দুয়ের যুদ্ধে রাম না দেখি নিস্তার।
প্রাণ লয়ে দেশ প্রতি কর আগুসার।।
এই যুক্তি শ্রীরামেরে বলে সেনাপতি।
হেনকালে নিবেদয়ে সুমন্ত্র সারথি।।
পঞ্চমাস যখন জানকী গর্ভবতী।
হেনকালে তাঁহারে বর্জ্জিলা রঘুপতি।।
রাখিলাম তাঁহারে যে এই বনবাসে।
আমি আর লক্ষ্মণ গেলাম দোঁহে দেশে।।
অতএব রঘুনাথ এই সেই বন।
সীতার এ দুই পুত্র হেন লয় মন।।
যমজ দুই সহোদর বুঝি এ প্রকার।
পরিচয় লহ প্রভু তোমার কুমার।।
সুমন্ত্রের কথা শুনি রামের বিস্ময়।
উভয়ের কাছে গিয়া দেন পরিচয়।।
রাজা দশরথের তনয় আমি রাম।
তোমরা আমারি মত ধর রূপ শ্যাম।।
তেজ ধর আমারি, আমারি ধনুর্ব্বাণ।
আকৃতি প্রকৃতি দেখি আমার সমান।।
পরাক্রম আমারি, না হয় অন্য জ্ঞান।
অতএব কহি আমি বলহ বিধান।।
তেঁই সে কারণে আমি পরিচয় চাই।
পরিচয় দেহ কে তোমরা দুই ভাই।।
পরিচয় দেহ কিবা আমার নন্দন।
এমন হইলে আমি না করিব রণ।।
না জানিয়া মারিব কি আপন তনয়।
যাবৎ না লই প্রাণ দেহ পরিচয়।।
শুনিয়া সে কথা দোঁহে করে কাণাকাণি।
কেমনে বলিব নাম বাপে নাহি চিনি।।
আজি গিয়া জিজ্ঞাসিব জননীর ঠাঁই।
কার পুত্র আমরা যমজ দুই ভাই।।
দুই ভাই যুক্তি করে কেহ নাহি জানে।
ডাকিয়া রামেরে বলে তর্জ্জন গর্জ্জনে।।
এতদিনে অবোধের সনে দরশন।
পরিচয় দিলে হবে কোন্ প্রয়োজন।।
পুত্র হয়ে পিতৃ সনে কেবা করে রণ।
আপনার পুত্র বলি ভাব মনে মন।।
আমা দোঁহা দেখিয়া যে কাঁপিলে অন্তরে।
পরিচয় তেকারণে চাহ বারে বারে।।
তোমারে কহিব শুন অবোধ শ্রীরাম।
বড় ভয় পাও তুমি করিতে সংগ্রাম।।
দুই ভাই চতুর না জানে পিতৃনাম।
ভাণ্ডাইল কপটে বুঝিলেন শ্রীরাম।।
পরিচয় নহিলে হইল গালাগালি।
সর্ব্ব সৈন্য বেড়ে লব কুশ মহাবলী।।
শ্রীরাম বলেন নাহি দিল পরিচয়।
সাবধানে যুঝ সৈন্য না করিহ ভয়।।
আমার ছাপান্ন কোটি মুখ্য-সেনাপতি।
তিন কোটি আমার যে মদমত্ত হাতী।।
তিরাশী কোটি যে উত্তম তেজি ঘোড়া।
অক্ষৌহিণী সত্তরি যাহাতে পৃথ্বী জোড়া।।
সুগ্রীব অঙ্গদের আছে যে কোটি সেনা।
যার যুদ্ধে দেব দৈত্য কাঁপে সর্ব্ব জনা।।
ভল্লুক অসংখ্য আছে রাক্ষস বানর।
আমার অনেক ঠাক কটক বিস্তর।।
এতেক কটক যদি পড়ে আজি রণে।
তবে অপযশ মোর ঘুষিবে ভুবনে।।
বাছিয়া বাছিয়া বীর দেহ চারিভিতে।
বেড়ো যেন দুই শিশু নারে পলাইতে।।
মন্ত্রিগণ সহ রাম করেন মন্ত্রণা।
বাছিয়া কটক দিল চারিভিতে থানা।।
হস্তী ঘোড়া চালাইল প্রথমতঃ রণে।
বিপক্ষ মরুক ঘোড়া হাতীর চাপনে।।
পাইয়া রামের আজ্ঞা কটকের ত্বরা।
চালায় প্রথম রণে হাতী আর ঘোড়া।।
রাহুত মাহুত ধায় শিশু ধরিবারে।
দুই ভাই দুই ভিতে ধনুর্ব্বাণ যোড়ে।।
লবে বলে কুশ ভাই যুক্তি কর সার।
রামসৈন্য কাটিয়া করিব চূরমার।।
দুই ভাই কুপিয়া ধনুকে বাণ যোড়ে।
হস্তী ঘোড়া কাটিয়া গগনে বাণ উড়ে।।
লব এড়িলেন বাণ নামেতে আহুতি।
এক বাণে কাটিয়া পাড়িল কোটি হাতী।।
কুশ বাণ এড়িল নামেতে অশ্বকলা।
কাটিল তিরাশী কোটি তুরঙ্গের গলা।।
চারিভিতে সৈন্য যুঝে লব কুশ মাঝে।
নানা অস্ত্র লইয়া সে দুই ভাই যুঝে।।
সৈন্য দেখি দুই ভাই চিন্তিত অন্তর।
কেমনে মারিব ঠাট কটক বিস্তর।।
এত সৈন্য লইয়া যুঝিতে এল রাম।
ইহাকে মারিতে পারি তবে রহে নাম।।
সতী-পুত্র হই যদি মুনির থাকে বর।
এখনি মারিয়া পাঠাইব যমঘর।।
মুনির আশিষে হয় সর্ব্বত্র কল্যাণ।
সন্ধান পূরিয়া লব কুশ এড়ে বাণ।।
ষটচক্র বাণে লব পূরিল সন্ধান।
ত্রিভুবন যুঝে যদি নাহি ধরে টান।।
কুশের প্রধান বাণ বেড়াপাক নাম।
বেড়াপাক-বাণে কুশ পূরিল সন্ধান।।
হেন বাণ দুই ভাই যুড়িল ধনুকে।
সন্ধান পূরিয়া এড়ে উঠে অন্তরীক্ষে।।
সিংহের গর্জ্জনে বাণ তারা যেন ছুটে।
সত্তর অক্ষৌহিণী সেনা দুই ভাই কাটে।।
সমরে আসিয়াছিল ভল্লুক বানর।
হাতে করি কেহ গাছ, কেহ বা পাথর।।
সুগ্রীব অঙ্গদ যুঝে বীর হনুমান।
কোটি কোটি সেনাপতি যুঝে সাবধান।।
রাক্ষস ভল্লুক কপিরূপে ভয়ঙ্কর।
নানা অস্ত্র এড়ে তারা পাদপ পাথর।।
রাক্ষস বানর আর যতেক ভল্লুক।
নিরখিয়া কুশ লব করিছে কৌতুক।।
লব বলে কুশ ভাই শুনহ বচন।
দেখ দেখ কটকের বিকট বদন।।
হেন সব মুখ কভু নাহি দেখি আর।
দেখিতে শরীর যেন পর্ব্বত-আকার।।
বানর ভল্লুক বীর যুঝিছে বিস্তর।
নানা অস্ত্র এড়ে তারা পাদপ পাথর।।
রাক্ষসেরা বাণ এড়ে পূরিয়া সন্ধান।
লব কুশ দেখিয়া না হয় আগুয়ান।।
লব বলে কুশ ভাই কার মুখ চাই।
বিকট কটক মারি পাড়ি দুই ভাই।।
সেই দিকে দুই ভাই পূরিল সন্ধান।
সন্ধান পূরিয়া এড়ে চোখ চোখ বাণ।।
বাণে বিদ্ধ রাক্ষস বানর যত পড়ে।
যেমন কদলী-বৃক্ষ পড়ে মহাঝড়ে।।
লব বলে কুশের কি শিক্ষা চমৎকার।
রাক্ষস বানর আদি পড়িল অপার।।
পরে যুদ্ধে আইলেন সুগ্রীব বানর।
দ্বাদশ যোজন আনে পর্ব্বত সত্বর।।
ক্রোধভরে পর্ব্বত উপাড়ে দুই হাতে।
ইচ্ছা করে মারে লব-কুশের শিরেতে।।
বাণে কাটি লব কুশ করে খান খান।
আর বাণে সুগ্রীবের লইল পরাণ।।
তবেত অঙ্গদ বীর আইল সত্বরে।
ধরিবারে চাহে দোঁহে আপনার জোরে।।
এতেক ভাবিয়া বীর লাফ দিয়া যায়।
লব কুশ বাণ এড়ে পড়ে তার গায়।।
পড়িল অঙ্গদ বীর সেই বাণ খেয়ে।
হনুমান আইলেন হাতে গিরি লয়ে।।
পর্ব্বত এড়িল লব-কুশের উদ্দেশে।
বাণে কাটি লব কুশ ফেলায় আকাশে।।
কুশ বাণ মারে হনুমানের উপরে।
হনুমান মূর্চ্ছিত সে পড়িল সমরে।।
দেখিয়া হনুর দশা অপর বানর।
ত্রাসে পলাইয়া যায় হইয়া কাতর।।
বেড়াপাক বাণে কুশ পূরিল সন্ধান।
বেড়াপাকে সবাকার লইল পরাণ।।
রাক্ষস ভল্লুক সে পড়িল কপিগণ।
ইহার মধ্যেতে এড়াইল তিন জন।।
অমর কারণে এড়াইল তিন বীর।
দুই কটকের রক্তে বহে যেন নীর।।
রক্তেতে ভাসিয়া নদী হইল পাথার।
দেখিয়া রামের মনে লাগে চমৎকার।।
আছিল ছাপান্ন কোটি শ্রীরামের সেনা।
হাতী ঘোড়া ঠাট তার নাহি এক জনা।।
শ্রীরামের সেনাপতি বীর মহামতি।
গিয়াছিল রণস্থলে সৈন্যের সংহতি।।
শ্রীরামের আগে কহে যোড় করি হাত।
প্রাণ লয়ে দেশেতে চলহ রঘুনাথ।।
যদি রঘুনাথ দেশে করহ গমন।
তবেত সবার রক্ষা নতুবা মরণ।।
শিশু নহে দুই জন সাক্ষাৎ যে যম।
ত্রিভুবনে বীর নাহি এ দোঁহার সম।।
শ্রীরাম বলেন আইলাম সৈন্য সাথে।
সব সৈন্য মজাইয়া যাইব কি মতে।।
মজাইয়া সর্ব্বস্ব কেমনে যাব ঘর।
সাবধানে যুঝ সৈন্য না করিহ ডর।।
সেনাপতি সকলে রামের আজ্ঞা পায়।
ধনুর্ব্বাণ হাতে করি যুঝিবারে যায়।।
একবারে সব সৈন্য পূরিল সন্ধান।
সন্ধান পূরিয়া এড়ে চোখ চোখ বাণ।।
কোটি কোটি চোখ বাণ সেনাপতি এড়ে।
লব কুশ নিরখিয়া আগু নাহি সরে।।
সেনাপতি সকলে লাগিল চমৎকার।
পলাইয়া সব সৈন্য হৈল ছত্রাকার।।
সেনাপতি ভঙ্গ দিল লব কুশ হাসে।
ডাক দিয়া শ্রীরামেরে বলে লব কুশে।।
যুদ্ধে ভঙ্গ দিলেক তোমার সেনাপতি।
হেন ঠাট আন কেন তোমার সংহতি।।
পাইয়া শ্রীরাম লজ্জা করেন উত্তর।
যায় যাক ঠাট আমি আছি একেশ্বর।।
আমি আছি একাকী, তোমরা দুই জন।
এক বাণে পাঠাইব যমের সদন।।
তিন জনে এত যদি বোলাচার হৈল।
সে সকল সেনাপতি আবার আইল।।
চারিদিকে ছাইয়া লব কুশেরে বেড়িলে।
লব কুশে নিরখিয়া অগ্নি হেন জ্বলে।।
সেনাপতি সকলে যখন যোড়ে বাণ।
লব কুশে দেখিয়া না হয় আগুয়ান।।
সেনাপতিগণের যতেক অস্ত্র ছিল।
ফুরাইল সব বাণ তূণ শূন্য হৈল।।
সেনাপতিগণ রণে করিল বিরতি।
বলে লব কুশ সেনা সকলের প্রতি।।
তোমা সবাকার যুদ্ধ হৈল অবসান।
মোরা দুই ভাই পূরি এখন সন্ধান।।
এড়িলেন বাণ গোটা তারা যেন ছুটে।
সেনাপতি ছাপ্পান্ন কোটির মাথা কাটে।।
বাসুকি তক্ষক যেন বাণের গর্জ্জন।
পড়িল সকল সৈন্য নাহি এক জন।।
পড়িল সকল সৈন্য নাহিক দোসর।
সবে মাত্র শ্রীরাম আছেন একেশ্বর।।
চিন্তা গণিলেন রাম হইয়া উদাস।
ডাক দিয়া লব কুশ করে উপহাস।।
সর্ব্বলোকে বলে তোমা ধার্ম্মিক শ্রীরাম।
অলক্ষিতে যত তুমি করিলে সংগ্রাম।।
দুজনের প্রতি যদি তিন জন রোষে।
ধর্ম্মনাশ হয় মরে আপনার দোষে।।
হস্তী ঘোড়া ঠাট কটকের নাহি সংখ্যা।
সতী-পুত্র আমরা যে তেঁই পাই রক্ষা।।
কহেন শ্রীরাম কিছু হইয়া লজ্জিত।
তোমরা যে কিছু বল নহে অনুচিত।।
পৃথিবীমণ্ডলে আমি রাজচক্রবর্ত্তী।
না জানি কটক-ঠাট আইল সংহতি।।
আমারে জিনিতে কেহ নারে ত্রিভুবনে।
পুত্র বিনা আমারে নাহিক কেহ জিনে।।
আমার পুত্রের স্থানে আছে পরাজয়।
পিতাকে জিনিতে পুত্র পারে শাস্ত্রে কয়।।
আমার আকৃতি দেখি তোমরা দুজন।
মম পুত্র হও যদি না করিহ রণ।।
পরিচয় দেহ কিবা আমার নন্দন।
লব কুশ বলিয়া তোমরা দুই জন।।
রাবণ দুর্জ্জয় বীর ছিল লঙ্কাদেশে।
আমার সহিত রণে মরিল সবংশে।।
শুনিয়া রামের কথা দুই ভাই হাসে।
ডাক দিয়া রামেরে বলিছে অবশেষে।।
শুনহ তোমারে বলি অবোধ শ্রীরাম।
বড় ভয় পেলে তুমি করিতে সংগ্রাম।।
পুত্র পুত্র বলিয়া চাহিছ পরিচয়।
হেন বুঝি সমর করিতে ভয় হয়।।
কোথা শুনিয়াছ তুমি পিতা পুত্রে রণ।
আপনার পুত্র বলি ভাব মনে মন।।
রণেতে পণ্ডিত তুমি নিজে মহারাজ।
বারে বারে পুত্র বল নাহি বাস লাজ।।
রাবণে মারিয়া কত আপনা বাখান।
পড়িলে বীরের হাতে ভালমতে জান।।
অধিক কি কব রাম শুনহ উত্তর।
ক্ষত্রিয় হইয়া কেন হইলে কাতর।।
আমরা মুনির পুত্র সেইমত বল।
তুমি ত ধরণীপতি কেন কর ছল।।
শ্রীরাম বলেন, শুন বলি লব কুশ।
বালকের সহ যুদ্ধে কি হবে পৌরুষ।।
তোমা দোঁহে দেখি যেন আমার আকৃতি।
পরিচয় নাহি দিলে তোরা অল্পমতি।।
কটক পড়িল আমি না যাইব দেশে।
অবশ্য করিব রণ যেবা হয় শেষে।।
আমার সহিত যুদ্ধে কারো নাহি রক্ষা।
এখনি দেখাই যত অস্ত্রের পরীক্ষা।।
পিতা পুত্রে গালাগালি কেহ নাহি চিনে।
গালাগালি মহাযুদ্ধ বাজে তিন জনে।।
মহাক্রোধে রঘুনাথ পূরেন সন্ধান।
দুই শিশু উপরে এড়েন মহাবাণ।।
নানা অস্ত্র এড়েন শ্রীরাম কোপন্বিত।
মহাব্যস্ত লব কুশ পলায় ত্বরিত।।
দুই ভাই পলাইল রাম পান আশ।
তাঁহার বাণেতে গিয়া ছাইল আকাশ।।
অন্ধকার হইল সংসার সেই বাণে।
আগু হৈয়া যুঝিতে না পারে দুই জনে।।
এইমত দুই ভাই গেল পলাইয়া।
বিলাপ করেন রাম রথেতে বসিয়া।।