রামায়ণ : উত্তরাকাণ্ড – শিব-বিবাহ
সমস্ত দেবতা গেলা হিমালয়-ঘর।
বাহিরিলা গিরিরাজ দেখিয়া অমর।।
বড় বেড়ি রহিলা যতেক দেবগণ।
বসিতে আসন দিল করিয়া বরণ।
দধি দুগ্ধ গঙ্গাজল অগুরু চন্দন।।
গুয়া নারিলেক দিল উত্তম বসন।।
বরের বরণ কৈল বেলা শুভক্ষণে।
চারিদিকে বেদধ্বনি শুনি ঘনে ঘনে।।
বরেরে বরিয়া হিমালয় গেলা ঘর।
আইলা কন্যার মাতা দেখিবারে বর।।
বর পার্শ্বে গেলা যে মঙ্গল-সজ্জা লৈয়া।
মোহিত হইলা রাণী বরেরে দেখিয়া।।
পায়ে দধি দিল, আর শিরে দূর্ব্বাধান।
মাথায় নিছিয়া ফেলে শত শত পান।।
দুই চক্ষু ঢাকে রাণী হেঁট মাথা করি।
তখন নারদ মুনি দিলা টিটকারী।।
এতেক দেখিয়া সে কুপিলা নারায়ণ।
ঝাট কন্যা আন বহি যায় শুভক্ষণ।।
করেন বরের বেশ যত দেবগণ।
আপনার মূর্ত্তি ধরে দেব-ত্রিলোচন।।
ত্রিভুবন মোহিলেন দেব-ত্রিপুরারি।
পার্ব্বতীর বেশ করে দেবতার নারী।।
ত্রিভুবন মোহিলেন রূপে বিদ্যাধরী।
রূপে আলোকিত কৈলা সকল নগরী।।
বদন তাঁহার জিনি পূর্ণচন্দ্র-কলা।
পার্ব্বতী বাহির হৈলা হাতে পুষ্পমালা।।
জটাতে লুকাল দেবী গঙ্গা গোঁসাইনী।
মুকুট উপর শোভে কাল ভুজঙ্গিনী।।
ললাটেতে শোভে চন্দ্র ভস্ম সর্ব্বগায়।
হৃদয়েতে হাড়মালা, নাগিনী ফোঁপায়।।
ত্রাসে লুকাইল সাপ, নিবিল আগুনি।
হরের নিকটে গেলা আপনি ভবানী।।
শিরে পারিজাত মালা মধু পিয়ে অলি।
বিশ্বকর্ম্মা যোগাইল অশোকের ডালি।।
সপ্তসাগরের জল যোগাইল আনি।
শুভক্ষণে হৈল হরগৌরীর মিলানি।।
দুন্দুভি বাদ্য বাজে মধুর তাল শুনি।
সুবেশে নাচয়ে তথা ইন্দ্রের নাচুনী।।
কন্যা লুকাইল লয়ে অন্ধকার ঘরৈ।
কন্যারে আনিতে হর দাঁড়াল দুয়ারে।।
ডানহাতে করে দেবী কঙ্কণের ধ্বনি।
হাতে ধরি কন্যা আনে দেব-শূলপাণি।।
কন্যা লয়ে বৈসে হর মণ্ডপেতে আসি।
চারিদিকে বেড়িল সকল দেব-ঋষি।।
চারিদিকে বৈসে দেব ছাড়িয়া বিমান।
নানাদান দিয়া গিরি কৈল কন্যা দান।।
মন্ত্র পড়ি করে গিরি কন্যা সমর্পণ।
সর্ব্বকাল করো কন্যা রক্ষণ পোষণ।।
কুশণ্ডিকা লাজহোম কৈল সাবধানে।
নানাদান করে সব দেব বিদ্যমানে।।
মহাদেবী বলে রাজা, তুমি আগে যাহ।
ঝি-জামাতা ভোখে মরে, ভোজন করাহ।।
জামাতা লজ্জিত হয়ে শাশুড়ী দেখিয়া।
একবারে দেহ ভাত ব্যঞ্জন আনিয়া।।
স্বর্ণথাল ঘুচাহ, পরস-পাত পাত।
পায়স-পিষ্টক সহ দেহ তাহে ভাত।।
দধি দুগ্ধ ঘৃত দিতে না করিহ হেলা।
ঘনাবর্ত্ত দুগ্ধ দেহ মর্ত্তমান কলা।।
জল লয়ে দুইজনে কৈল পঞ্চগ্রাসী।
হরের নিকটে তবে বৈসে দেব-ঋষি।।
ভোজন করেন দেব-ঋষি ত্রিপুরারি।
সন্নিকটে হরের বসিলা দেবী গৌরী।।
হেঁটে দেয় গোময়, উপরে আলিপনা।
দুইপাশে করিল যে সূতার মেলনা।।
কতেক ভোজন কৈলা দেব-ত্রিলোচন।
নারদ বলে, ছোঁয়া গেছে না কর ভোজন।।
দেবদেবী ছোঁয়া পড়ি কৈলা আচমন।
দোঁহা পাতে যা ছিল ভীমা করিল ভোজন।।
পুষ্পশয্যা করিলেক গন্ধে মনোহর।
সোণার চৌখণ্ডী তাহে নির্ম্মাল বাসর।।
ত্রয়োসব মিলি দিল শুভ হুলাহুলি।
পাড়িল সোণার খাটে নেতপাট-তূলী।।
স্বর্ণখাটে শয়ন করিলা পশুপতি।
সোণার প্রদীপে জ্বলে ঘৃতপূর্ণ-বাতি।।