উত্তরসাধক (Uttarsadhak) : 11
ফুলতলির মাঠ এখন ঘাসে ঘাসে সবুজ, খানা ডোবা গর্ত বুজে গেছে, মাঝখান দিয়ে চওড়া সড়ক চলে গেছে, যা গ্রামের লোকেদের নিজেদের তৈরি। এ রাস্তাটা ওদের খুব দরকার হয়। পার হতে এবার আর ভ্যানগাড়ির দরকার হল না। দুটো জিপ যোগাড় করেছে প্রমিত। কলকাতা থেকে ধপধপি এসে, তারপর সোজা জিপেই আসা হল হই হই করতে করতে। গ্রামে ঢুকতেই একটা ঘন জঙ্গুলে জায়গা। মধ্যে দিয়ে সুঁড়িপথ। সুঁড়িপথ ধরে কোয়ার্টার মাইলটাক পথ গেলে তবে গ্রাম পড়বে। জঙ্গলটা প্রধানত বাঁশঝাড় বাবলা, গরান, নিম, আম ইত্যাদি গাছে ভর্তি। দু চারটে মহাকায় শিরিষ আছে, কেওড়া বা কেয়া একেবারেই নেই। হয়ত বহুকাল আগে যখন সমুদ্রের লোনা জল মাতলা পিয়ালি বেয়ে এসে সব প্লাবিত করে দিত, তখন কেওড়া গাছে ভর্তি ছিল এসব অঞ্চল। এখন এসব মৃত বদ্বীপ অঞ্চল। বিশুদ্ধ ম্যানগ্রোভ প্রকৃতির গাছ বিশেষ নেই। হোগলা, হেঁতাল, শোলা এগুলো অবশ্য খুব দেখা যায়। এই জঙ্গলটা নোংরা।সুঁড়িপথ ধরে গেলে অসুবিধে নেই। কিন্তু পথ থেকে খুব ভেতর দিকে যাওয়া যায় না। ওরা এবার না বলে এসেছে। দলে অনেকে আছে। অনেকেই আগে আসে নি। বাঁশের সরু সরু নরম ডগাগুলো দু হাতে সরাতে সরাতে প্রথমে চলেছিল উজান, পেছনে মেধা। মেধার পাশে লুকু। পেছনে দেবপ্রিয় ও মৈথিলী। বাকিরা আসছে আস্তে আস্তে। জীপগুলো এখন ধপধপির দিকে ফিরে যাবে। সেখানে প্রমিতদের কোনও চেনাশোনা আছেন। সন্ধের দিকে আসবে আবার।
সুঁড়ি পথটা পেরোতেই গ্রামটা যেন হঠাৎ ঘোমটা তুলে বেরিয়ে পড়ে। মেঠো রাস্তা। পরিষ্কার। দুপাশে এলোমেলো ঝোপের বিস্তার। মাঝে মাঝে এদের কুটির। খানিকটা এগোতেই ডানদিকে রাস্তার পাশে একটা বড় হোর্ডিং। গাঢ় সবুজের ওপর সাদা দিয়ে লেখা :
“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্তবায়ু;
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু,
সাহস বিস্তৃত বক্ষপট।”
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এটা করেছে গুঞ্জন সিং।
একটি বুড়ি মানুষ রাস্তা ঝাঁট দিচ্ছিল। ঝুড়িতে জড়ো করছে শুকনো পাতা, কাটি কুটি। এখন সকাল আটটা নটা বাজে। মাহিষ্যপাড়া শুনশান। উজান বলল—‘সমুর দিদা। গতবারে ওদের বলে দিয়েছিলাম যে যার বাড়ির সামনেটা পরিষ্কার রাখতে। তা কাজটা করছে দেখছি।’
ওদের পায়ের শব্দে বুড়ি মুখ তুলে তাকাল। ফোকলা মুখ সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ভরে গেল। —‘ও নারাণীর মা, ও সমুর মা, দেখে যা কারা এয়েচে।’ বুড়ি কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ‘হ্যাঁ গো উজান বাবা, মিলিদিদি ভালো আচো।’ সমুর দিদা মৈথিলী উচ্চারণ করতে পারে না।
ঘরের আগড় ঠেলে দুটি মহিলা বেরিয়ে এলো। একজনের পরনে লাল কালো নীল হলুদে কটকি শাড়ি ঝকমক করছে, আরেক জন পরেছে একটা কমলা রঙের অর্গ্যানজা শাড়ি, ভিজে গেছে শাড়িটা, মধ্যে ফ্যাব্রিকের কাজ। দুজনেরই হাসি মুখ।
—‘আসুন, আসুন,’ দাওয়ার ওপর সঙ্গে সঙ্গে মাদুর বিছিয়ে দিল ওরা।
—‘ভালো আছো পদ্ম?’ মেধা জিজ্ঞেস করলেন।
—‘থাকবো না? এমন সব কাপড় দিছেন, কত দেখাশুনো করছেন, যুক্তবন্ন পড়তে শিকে গেচি।’
—‘তাই? ক্লাসেই শিখলে?’
—‘না। সমুর ঠেঁয়ে।’
—‘বাঃ। সমুকে তো একটা প্রাইজ দিতে হবে দেখছি। সুবচনী তুমি?’
—‘তোমাদের সুবচুনী পোয়াতি হয়চে গো!’ সমুর মা ওদিক থেকে হেসে বলল।
সুবচনীর প্রতি বছর একটা করে মেয়ে হয়। এ গ্রামে পরিবার-পরিকল্পনার প্রাথমিক কাজ মৈথিলী অবশ্য করে গেছে। কিন্তু গ্রামের কাউকে ঠিকমতো পরিচালনা করবার জন্য এখনও পাওয়া যায় নি। মৈথিলী আড়চোখে দেখল মেধাদির মুখ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। এ গ্রামে জন্মহার খুব বেশি। সমুর দিদার রেকর্ড আছে ষোলটি সন্তান। তার থেকে নানান বয়সে মরে মরে এখন পাঁচটিতে দাঁড়িয়েছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল—‘পদ্মকাকী, তুমি সুবচনী কাকীর খাওয়া-দাওয়াটা ঠিকমতো দেখছো তো? দুধ-ডিম ঠিকঠাক পাচ্ছো? বড্ড ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে কিন্তু!’ সমুরা নিতান্ত ছোট চাষী। তাদের জমি বংশ পরম্পরায় ভাগ হতে হতে এখন সমুর বাবা ও দুই কাকার ভাগে যা এসে দাঁড়িয়েছে তাতে তাদের সারা বছরের অন্ন জোটা মুশকিল। কিন্তু সমু বা সমরকুমার হাজরা খুব বুদ্ধিমান ছেলে।
সমুর মা পদ্ম বললে—‘সুবচনীর পাঁচটা মেয়ে, আমার দুটো ছেলে দুটো মেয়ে। নোকে বলচে তাবৎ ডিম দুধ তো সেকালে একজনের বাড়িতেই ঢালতে হয়। যা আসচে ওরই মধ্যে চালাতে হবে, তা মুখপুড়ি মেয়েদের না দিয়ে, ঠাকুরপোকে না দিয়ে খেতে চায় না, এদিকে ভীষণ অরুচি। দুধসাবু ছাড়া পেটে কিছু থাকচেও না দিদি।’
—‘আচ্ছা, আমি দেখছি’—মেধা বললেন। গ্রামে সকলেই সমুদের মত গরিব নয়। যাদের নিজস্ব গরু ছাগল আছে, ঘরপোষা হাঁস মুরগী আছে, তাদের যৌথ ডেয়ারি পোলট্রির জিনিস পাবার ততটা অধিকার নেই যতটা এদের আছে। এখন উৎপাদন ঠিক কতটা, কত জনের মধ্যে বিলি হচ্ছে এ হিসেবটা পাওয়া দরকার।
সমুদের দাওয়া থেকে ওরা উঠে পড়ল। পদ্ম বলল—‘তাহলে আপনাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করি, এখন একটু মুড়ি খান। নারকোল কুরে দিচ্চি।’ আগে যতবার এসেছেন এরাই উদ্যোগী হয়ে পাড়া প্রতিবেশী জড়ো করে তাঁদের খাবার ব্যবস্থা করেছে।’ মেধা বললেন—‘এবার আমরা খবর না দিয়ে এসেছি পদ্ম, আজ আমাদের চড়ুই ভাতি। নিজেরা রান্না করে খাবো। তোমরা ভেবো না। আমি সুবচনীর সঙ্গে একটু কথা বলি। তোরা স্কুলের দিকে এগো।’
সুবচনীকে নিয়ে মেধা ঘরের ভেতর ঢুকে গেলেন। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে চলতে চলতে বললেন—‘দেব, কলকাতায় ফিরে গিয়েই তোমাকে কিছু ওষুধপত্র টনিক কিনতে হবে। কারুর হাতে নয়, নিজে এদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাবে। হয় সদর হাসপাতালে, নয় মেডিক্যাল কলেজেই এর ব্যবস্থা করতে হবে। পুত্র সন্তান না হওয়া পর্যন্ত এই অ্যানিমিক মেয়েটাকে এরা রেহাই দেবে না মনে হচ্ছে।’
পাতকুয়োগুলো শুকোতে আরম্ভ করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই নলকূপগুলো হবে একমাত্র ভরসা। মাতলা পিয়ালির মজা খালগুলো এরা সংস্কার করতে আরম্ভ করেছে। মহিষ দুটো জলার মধ্যে নেমে গেছে। ধারে ভিজে ঘাস মাটির ওপর কয়েকটা গরু শুয়ে শুয়ে আধবোজা চোখে জাবর কাটছে।
স্কুলের ছেলেরা এদিকে মুখ করে পড়ছে। ওরাই দেখতে পেয়েছে আগে। হই-হই করে উঠে দাঁড়িয়েছে সবাই। নিরঞ্জন খাঁড়া ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, হঠাৎ তাড়াহুড়ো করে নেমে এলেন। গুঞ্জন, লুকু আর মৈথিলীকে ঘিরে দাঁড়াচ্ছে ছেলেমেয়েগুলো। ওদের লজেন্স-টফি-পিপারমিন্ট বিতরণ করছে ওরা। খাঁড়া বললেন—‘হয়েছে। হয়েছে। এবার সব যে যার জায়গায় গিয়ে বসো।’
মেধা এসে বললেন—‘এরা এরকম সং সাজলো কোত্থেকে রে?’
ছেলেদের পরনে সাদা নীল সেলর স্যুট, নিকার বোকার, একটু বড় ছেলেরা পরেছে জিনস। তিনকড়ি, সমু এগিয়ে এলো পেছনে আরও দু চার জন, প্রত্যেকের গায়ে স্পোর্টস শার্ট। তার ওপর বড় বড় করে নানারকম লেখা। সমুর বুকে লেখা ‘হাই মারাদোনা’, তিনকড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল গেঞ্জি পরে তাতে নীল দিয়ে লেখা ‘বেট, য়ু লাভ মি’, ঝলমলে ব্যাগিজ পরেছে অনেকেই।
মেধা আবার বললেন—‘হ্যাঁরে, গ্রামে ঢুকে থেকে দেখিছ এরা ছেলে-বুড়ো সব্বাই সঙ সেজেছে। নিরঞ্জনই বা ওর ওই জামাটা কোত্থেকে পেল? গোটা শার্টটায় নিউজ পেপার ক্লিপিং-এর ছাপ! খুবই দামী জামা, একটু রঙ জ্বলে গেছে, কিন্তু একেবারে অত্যাধুনিক কাপড়। এই গরমে ওরা পরছেই বা কি করে এসব?’
মৈথিলী বলল—‘নিরঞ্জনদা আপনি পড়ান। আমরা একটু ঘুরে আসি। স্কুল ঘরেই রান্না-টান্না করব।’
পথে নেমে উজান বলল—‘নিরঞ্জনদা বলছিল গ্রামে অন্ন আর ওষুধ-পথ্যেরর অভাব অনেকটাই ঘুচেছে। কিন্তু ওদের এমন অবস্থা নেই যে জামাকাপড় কেনে। পুরনো জামা-কাপড় চেয়েছিল। আইডিয়াটা আমাকেও স্ট্রাইক করে। সত্যিই তো আমাদের সবার বাড়িতেই খুঁজলে নানা সাইজের পুরনো জামা-কাপড় পাওয়া যাবে। সেগুলো জড়ো করে রেখেছিলাম, নিরঞ্জনদা দু তিনবার এসে এসে নিয়ে গেছে। মৈথিলীর বাড়ি থেকে মউমিতার বাড়ি থেকে, আমার বাড়ি থেকেও। আমার বাড়ি অবশ্য জলগ্রহণ করেনি।’
মেধা বললেন—‘ওদের যে ভিখারির মতো দেখতে লাগছে রে! মৈথিলী লক্ষ্য করেছিস? ওই গোলাপি সিনথেটিক শাড়ি সুবচনীকে কে দিল রে?’
গুঞ্জন অপরাধীর মতো বলল—‘ওটা আমার শাড়ি মিস।’
মেধা বললেন—‘কি যাচ্ছেতাই দেখাচ্ছে ওদের! উজান তোরা ওদের ভিখারি বানিয়ে দিলি? আমরা গড়তে চাইলাম একটা স্বাবলম্বী গ্রাম—আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, কুসংস্কার মুক্ত,—তোর বাড়িতে নিরঞ্জন জল খায়নি বলছিস? জামা-কাপড় নিয়েছে তোর?’
উজান হাসছিল। কিছু বলল না।
মেধা বললেন—‘যা করেছিস, করেছিস। এটা বন্ধ কর। শীতকালে ওদের সস্তায় চাদর-টাদর কেনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। গুঞ্জন তোর উলবোনার মেশিন কদ্দুর?’
গুঞ্জন বিপন্নমুখে বলল—‘দুটো যোগাড় হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, আমি এসে শেখাতে পারব না মিস। সন্ধেবেলায় লণ্ঠন জ্বলে উঠলেই আমার বাজে লাগে।’
—‘একটা রাত হয়ত থাকতে হবে। তুই একা থাকবি কেন? আর কাউকে সঙ্গে নিবি। দুজনে মিলে থাকবি। ভয় কি! ছেলেও একটা থাক। প্রমিত থাকবে এখন। মেশিনগুলো চালু করে দে। দার্জিলিং থেকে আমি সস্তায় উল আনিয়ে দিচ্ছি। ওরা যদি যথেষ্ট পরিমাণে বুনতে পারে তো উলের দামটাও উঠে আসছে। দুটো মেশিনে পালা করে গ্রামের দশটা মেয়েও যদি দু ঘন্টা করে বসে…পাঁচ ঘন্টায় বোধহয় একটা করে প্রমাণ সাইজ সোয়েটার হয়, দিনে তিনটে, কম কি? গঞ্জের বাজারে হু হু করে বিক্রি হয়ে যাবে।’
দুপুর বেলা স্কুল-ঘরে খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা রান্না হল। চাটনি কিনে আনা হয়েছিল।
খাওয়া-দাওয়ার পর বিকেলের দিকে অনেকেই জড়ো হয়েছে স্কুলের আটচালায়। অল্প কয়েক ঘর মুসলমান গ্রামটায়। এরা প্রায় সকলেই রাজমিস্ত্রি কিম্বা কাঠপালিশের কাজ করে। শহরে-গঞ্জে যায় ভারি সীজন পড়লে। সপ্তাহ শেষে বাড়ি আসে। আজকের সভায় একমাত্র আনোয়ার শেখ যোগ দিতে পেরেছে। খক খক করে কাশছে আনোয়ার। নীলমণি বলল—‘আনোয়ারকাকা গত কয়েকমাস ধরে এইভাবে কেশে যাচ্ছে।’ দেবপ্রিয় পরীক্ষা করে বলল বুকের ছবি এবং স্পুটাম পরীক্ষা করা দরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ওকে কলকাতায় যেতে হবে।’
আনোয়ারের দুটি বিবি। একপাল ছেলে মেয়ে। বড় ছেলেটি সবে রাজের যোগাড়ের কাজে নেমেছে। কপালে চড় মেরে আনোয়ার বলল—‘ডাঙার থেকে সবগুনোকে নামাই দিব। নিশ্চিন্দে ঘুমাতে দেয় না। দূরদূর। এগুনোকে খাওয়াতে পারচি না, দেখেন দিদি, ছুটকিটা আবার বাধাইচে।’
মেধা বললেন—‘ছুটকিটা আবার বাধাইচে’ বললে পার পাবেন আনোয়ার! পরিবার-পরিকল্পনার ক্লাস হল শুনেছিলেন?’
—‘তওবা, তওবা, আনোয়ার বলল, ‘কোরাণে নিষেধ আছে দিদি। ও আমাদের ধম্মে বাধে। যা বলেন সব আনোয়ার মানবে। ধম্মে হাত পড়লে মানতে পারবেনে।’ বলতে বলতে আনোয়ারের নিশ্বাস ঘন হয়ে এলো, সে খকখক করে কাশতে লেগে গেল। উজান পেছন থেকে মেধার কনুই ছুঁয়ে ইশারা করল। মেধা চুপ করে গেলেন।
এবারে ওদের ফলন খুব ভালো। আমগাছগুলো ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে। থোকা থোকা জাম, লিচু, লেবু। পটল খুব ভালো হয়েছে। উদ্বৃত্ত টাকা থেকে ওরা আরও দুধেল গাই কিনবে। সস্তায় পাওয়া যাবে দায়পুর ডেয়ারি থেকে। মুরগীর চাষ চলছে খুব ভালো। পুরো একটা আটচালা মুরগীর ঘর। পোলট্রি থেকে গৃহপালনের জন্য কিছু কিছু মুরগী ছাড়া হয়েছিল। নিতাই দাস পোলট্রি পরিচালক, জানাল সেগুলো বাঁচছে না। দেশি মুরগী যেভাবে বাঁচে, এসব শৌখীন মুরগী সেভাবে বাঁচে না। বাড়ি বাড়ি মুরগী দেওয়া বন্ধ হোক।
বিকেলের দিকে খানিকটা গান-বাজনা হল। লুকু রজনীকান্তর গান গাইল। সবাই মিলে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া হল। কেউ কেউ খোল, করতাল, এসরাজ নিয়ে এলো। মৈথিলী বলল—‘পালানরা থাকলে কত ভালো হত বল তো!’ স্কুলের ছেলেমেয়েরা নিরঞ্জনবাবুর পরিচালনায় তাদের প্রার্থনা সঙ্গীত ‘হও ধরমেতে ধীর’ শুনিয়ে দিল। নিতাই বাঁশি বাজাল। আনোয়ারের একটা পুঁচকে মেয়ে, এই বয়সেই তার মাথায় কাপড়, মিঠে সুরে ভারি সুন্দর গাইল তাদের ছাত পিটোনোর গান।
‘অল্পর বইসে পীরিতি করিয়া ছাড়ি গেলা নিজ দেশ
না লইলা চুড়ি না লইলা শাড়ি না লইলা আপন বেশ।’
সন্ধের মুখে ছাত্র সংঘের ছেলেমেয়েরা বেড়াতে বেরোল। মেধা নিরঞ্জনের সঙ্গে স্কুল ঘরের সিঁড়িতে বসে রইলেন।
মেধা বললেন—‘কী নিরঞ্জন? ছেলেমেয়েরা কি রকম কাজ করছে।’
নিরঞ্জন হাত কচলে বলল—‘কী সুক্ষণেই আপনার কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েছিলুম দিদি। ছেলেমেয়েরা যা করছে তা আমি স্বপ্নেও আশা করিনি।’
—‘তুমি হাত দুটোকে নিয়ে কি করছো, নিরঞ্জন?’
—‘আজ্ঞে!’ নিরঞ্জন থতমত খেয়ে যায়।
—‘হাত দুটোকে অমন করে চটকাচ্ছ কেন?’
—‘আজ্ঞে, অভ্যেস হয়ে গেছে।’
—‘অভ্যেস? কেন?’ মেধা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
—‘আজ্ঞে আমরা গরিব গুরবো লোক, এই ধরুন প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে হয়, জেলা বোর্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে হয়। এ গ্রাম তো একেবারে মুখ্যু গরিব গাঁ ছিল কি না, আমাকেই তো বরাবর সব করতে হয়। কারবাড়ি ঝগড়া, কাজিয়া। কে পাশের জমির ধানের জট কেটে নিল…বিনীত, নম্র না হলে চলে না কিনা!’
—‘বিনীত, নম্র, ভদ্র তো নিশ্চয় হবে। কিন্তু তার জন্য হাত দুটো অমন কচলাবার দরকার হয় না। ওরকম ঘাড় নিচু করেই বা থাকবে কেন! তুমি তো গ্র্যাজুয়েট!’
—‘বিদ্যা বিনয়ং দদাতি।’
—‘বিনয় তো নিশ্চয় দেবে। ঘাড় হেঁট করে থাকাটা কিম্বা হাত কচলানোটা কিন্তু বিনয়ের লক্ষণ নয়। নিরঞ্জন তোমার থেকে আমি এর চেয়ে বেশি কাণ্ডজ্ঞান আশা করি। তুমি ঘাড়টা তোল! হ্যাঁ, হাতের ওপর থেকে হাত সরাও! হ্যাঁ, এবার ঠিক হয়েছে।’
নিরঞ্জন বলল—‘একটা কথা বলার ছিল দিদি।’
—‘বলো।’
—‘গাঁয়ের সবাই বলছিল এবারটা গরু না কিনে আমরা যদি একটা ব্যাটারি সেট টিভি কিনতুম সবাই মিলে একটু আনন্দ করা যেত।’
মেধা সামান্য এলিয়ে বসেছিলেন। সোজা হয়ে গেলেন। বললেন—‘টিভি? গরুর বদলে টিভি? নিরঞ্জন তুমি এদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত, স্কুলের মাস্টারমশাই হয়ে এই কথা বললে? টিভি হলে তোমার ছাত্র-ছাত্রীরা আর কেউ বই পড়তে চাইবে! তুমি জানো না এই ভিশুয়ালের অত্যধিক বাড়বাড়ির ফলে পশ্চিম দেশেও লেখা এবং পড়ার ব্যাপারে লোকে পিছিয়ে যাচ্ছে!
—‘খবরাখবরও তো জানা যায়!’
—‘খবরাখবর জানবার জন্য তোমরা দু-একটা কাগজ রাখছ। কাগজটা বোর্ডে সেঁটে দেওয়া হচ্ছে এখানে, তা ছাড়াও কয়েক জনের ট্রানজিস্টর রেডিও সেট রয়েছে। সেটাই তো যথেষ্ট। আপাতত। আনন্দ করবার জন্য তোমরা সবাই মিলে গান বাজনা করতে পারো আজ যেমন হল। পুজোর সময়ে যাত্রা তো হয়ই আশেপাশে। মেলাও তো বসে! কিন্তু এতো দরিদ্র গ্রাম। এখনও তোমাদের উদবৃত্ত বলে বিশেষ কিছু নেই। নিজেরাই তো বলো সবজি চালান দেবার ভ্যানগাড়ি দরকার, মাথায় করে বয়ে নিয়ে যেতে এত কষ্ট! এর মধ্যে টিভির কথা তোমাদের মনে আসে কি করে?’
নিরঞ্জন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উঠে পড়ল, বলল—‘আজ্ঞে দিদি, আমি একটু ঘুরে আসি।’
—‘এসো। এখানে বসে থাকবার দরকার নেই।’
নিরঞ্জন চলে যাবার পর মেধার মনে হল তিনি কি একটু বেশি খিটখিটে হয়ে যাচ্ছেন? বলার ভঙ্গিতে ধমক, তিক্ততা এসে যাচ্ছে? এই কড়া নির্দেশের সুর তিনি ওদের মধ্যে যে আত্মমর্যাদা জাগাতে চাইছেন, তাকেই যদি আঘাত করে? কিন্তু লোকগুলো কি বেহায়া! কি স্পর্ধা তাদের! এতগুলো অল্পবয়সী ছাত্র-ছাত্রী তাদের সময়, শক্তি ব্যয় করে চ্যারিটি শো করে, চাঁদা তুলে, এভাবে তাদের স্বনির্ভর করার কাজে উঠে পড়ে লেগেছে। ওষুধপথ্য বইপত্র অন্ন-বস্ত্র কিছুর অভাব রাখছে না। ইতিমধ্যেই গ্রামের চেহারায় একটা স্বাস্থ্যের সর পড়তে আরম্ভ করেছে, পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠছে, জলা, দিঘি, রাস্তাঘাট। ওদের এই সমস্ত উন্নয়নের উপকরণ একটাও চাইতে ইচ্ছে হল না, না চায় দেশ বিদেশের জ্ঞান, না চায় বইপত্র, না চায় ভ্রমণ করতে। শেষ পর্যন্ত চাহিদা হল কি না একটা টিভি সেট? তা-ও গরুর বদলে?
দেবপ্রিয় প্রমিতকে জঙ্গলের মধ্যে ধরেছিল। সঁড়িপথ দিয়ে যেতে যেতে মরা বিকেলের আলোয় গন্ধটা কোনদিক থেকে আসছে ঠিক করে নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়েছিল। কয়েকটা বাবলা গাছ, ঝোপের মতো। প্রমিত একলা শুয়ে শুয়ে সিগারেট খাচ্ছিল। আর কেউ কাছাকাছির মধ্যে নেই। পেছন থেকে এসে দেবপ্রিয় সাবধানে ওর পাশে বসে পড়ল। বলল—‘সাবধান, প্রমিত, এ সব ঝোপে ভীষণ কাঁটা থাকে।’
—‘দেবপ্রিয় তুই?’ প্রমিত চমকে তাকাল।
দেবপ্রিয়ও তার পকেট থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বার করল। আস্তে আস্তে নিপুণ ভঙ্গিতে ধরালো। তারপর খুব হালকা গলায় বলল—‘আমার প্যাকেটটা বদলে দিয়েছিলে কেন প্রমিত?’
—‘আমি? আমি তোর প্যাকেট বদলে দিয়েছি?’
—‘হ্যাঁ আমি দেখতে পেয়ে গেছি। যখন আমার পাশে বসে আজ খাচ্ছিলে, তখনই।’
প্রমিত হা হা করে হেসে বলল—‘এগুলো কত মজাদার বলো?’
—‘সে তো বটেই! আর কাকে কাকে দিয়েছ?’
—‘আর কাউকে নয়। আপাতত তোমাকেই!’
—‘পরে আরও কাউকে কাউকে দেবে তো?’
প্রমিত হঠাৎ একটু চুপ হয়ে গেল, একটু তীক্ষ্ণ স্বরে জিজ্ঞেস করল—‘এ কথা বলছিস কেন? তারপরে বলল—‘তোর সঙ্গে জমবার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের।’
—‘এভাবে চুপিচুপি না দিয়ে সোজাসুজিও তো দিতে পারতে!’
প্রমিত বলল, ‘ছাড় ছাড়, ঠিক আছে। এবার থেকে সোজাসুজিই দেবো।’
—‘কোথা থেকে এগুলো পাও?’
—‘আছে সোর্স। কেন?’
—‘আমি ভাবছিলুম অরিজিন্যাল সোর্স থেকে আমিও সংগ্রহ করব।’
কটুগন্ধে জঙ্গলের অভ্যন্তর ভরে উঠছিল। দেবপ্রিয় হঠাৎ তার সিগারেটটা মাটিতে ঘষে ঘষে নিবিয়ে দিয়ে উঠে পড়ল। বলল—‘প্রমিত তুমি আমাকে সুবিধমতো দেখিয়ে দিও তোমার সোর্সটা।’
—‘অফ কোর্স। তুই যদি চাস। তোর কি এতোই দরকার?’
দেবপ্রিয় বলল—‘একবার যখন ধরেছি, দরকার হবেই।’
পেছন থেকে শুকনো পাতার শব্দ হল। লুকু। লুকু বসে পড়ে বলল—‘প্রমিত, দেব, তোরা স্মোক করছিস, আমায় একটা দে, প্লিজ।’
প্রমিত অপ্রস্তুতের মতো হাসল। দেবপ্রিয় বলল—‘লুকু, আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি। মডেল গ্রাম হবে এটা একটা। যদি গ্রামের কেউ এসে দেখে আদর্শস্থাপনকারীদের মধ্যে একটি মেয়ে এখানে স্মোক করছে…’
লুকু বলল—‘তোমরা তবে খাচ্ছিলে কেন?’
দেবপ্রিয় বলল—‘অন্যায় করেছি, স্বীকার করছি। চলো, ওদিকে ওরা কি করছে দেখা যাক।’
প্রমিত বলে উঠল—‘হোয়াটস দা হার্ম? লেট হার হ্যাভ আ স্মোক দেব।
দেবপ্রিয় বলল— ‘অল রাইট। আমি কিন্তু চললুম। লুকু তোমার যা ইচ্ছে করতে পারো।’
কয়েক গজ চলে আসার পর দেবপ্রিয় বুঝতে পারল লুকু পেছন পেছন আসছে, দেবপ্রিয় বলল—‘তোমাকে স্মোক করা ছেড়ে দিতে হবে এই কথা বলতে আমি তোমার বাড়ি গিয়েছিলুম লুকু। মনে রাখোনি?’
লুকু অসহায়ের মতো বলল—‘কি করব আমি থাকতে পারি না যে! ভেতরে কি রকম একটা টেনশন বিল্ড করে…আর তোমার ব্র্যান্ডটাই আমার সবচেয়ে ভালো লাগে।’
দেবপ্রিয় চলতে চলতে থেমে গেল। বলল—‘লুকু, ওই ব্র্যান্ডটার কথা তুমি ভুলে যাও। ওটা তুমি বাজারে পাবে না। তুমি এখনও বুঝতে পারছে না ওটাতে হেরোইন ছিল?
লুকু প্রায় চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল—‘দেব, তুমি…?’
দেবপ্রিয় ঝট করে লুকুর মুখ চেপে ধরল। বলল—‘আমি খাই না। আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। হয়ত তোমাকেও, অনেককেই। চুপ করে যাও। সাবধানে থাকো।’
দুজনে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগল। দেবপ্রিয় বলল—‘লুকু তোমরা তো সকলেই এক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী! সবাইকার সম্পর্কেই কি তোমার ধারণা স্পষ্ট?
লুকু বলল—‘তুমি যদি ডি খাওয়ার কথা বলতে চাও তো উজান, মৈথিলী, প্রমিত এরা খায় না, খাবেও না—এটা আমি নিশ্চিত জানি। আমি খেতে পারি, ওরা পারে না।
—‘কেন?’
—‘ওদের কোনও ফ্রাস্ট্রেশন নেই।’
‘নেই কেন? মৈথিলী আশানুরূপ রেজাল্ট করেনি। উজানকে খেলাধুলো ছাড়তে হয়েছে।’
—‘দে জাস্ট ডোন্ট বদার। ওরা এখন নিজেদের পছন্দসই কাজ পেয়ে গেছে। মৈথিলী সামহাউ ম্যানেজেস টু বাব্ল্ উইথ হ্যাপিনেস। অলওয়েজ। আর উজান খেলা ছেড়ে দিলেও স্টিল খেলোয়াড়। ওর বডি দেখেছ? একফোঁটা এক্সট্রা মেদ নেই। খুব ডিসিপ্লিনড লাইফ লীড করে ও। উজানের খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত মাপা।’
—‘কেন লুকু অনেক খেলোয়াড়ই তো ভেতরে ভেতরে নেশা করছে, ধরা পড়ছে।’
—‘তারা কোনও প্রতিযোগিতায় কমপিট করার জন্য আর্টিফিসিয়াল এনার্জির জন্য খাচ্ছে অ্যাডিকট হয়ে গেলে কেরিয়ার শেষ। তা ছাড়াও উজান খুব স্ট্রেট ফরোয়ার্ড ছেলে।’
—‘প্রমিত?’
—‘প্রমিতের মাথার ওপর কত বড় দায়িত্ব জানো! ওদের বিরাট ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশনের বিজনেস। তা ছাড়াও আরও কি কি আছে আমি সব জানি না। এম এসসি করেই ও পুরোপুরি চার্জ নেবে। এখন ওর মা সামলাচ্ছেন বেশির ভাগ।’
—‘বাবা!’
—‘ইস, বাবা তো আমরা যখন নাইনে পড়ি মারা গেছেন! প্রমিতের মা রঞ্জুমাসী কিভাবে সেই থেকে সব সামলাচ্ছেন! এখন অবশ্য প্রমিতও যথেষ্ট করে।’
—‘তোমারই বা কি অসুবিধে? তুমি ফ্রাস্ট্রেটেড কেন তা হলে?’
লুকু মুখ নিচু করে ফেলল। তার চোখ ভারি হয়ে আসছে। একটু পরে বলল—‘আই ডোন্ট নো। কিন্তু আমার ভালো লাগে না। কিছু ভালো লাগে না।’ দেবপ্রিয় একটু চুপ করে থেকে হঠাৎ বলল—‘লুকু আমি ডাক্তারি পড়ছি বটে। কিন্তু শুধু ফিজিওলজি, অ্যানাটমি, ফার্মাকোলজি পড়ে আমি তেমন রস পাই না। আমি ইতিহাস জানতে চাই। বিশেষত আমাদের ইতিহাস। য়ুরোপও বটে। তুমি আমাকে একটু গাইড করতে পারবে?’
লুকু বলল—‘আমাদের তো এনশেন্ট ইন্ডিয়ান হিসট্রি বেশি পড়ানো হয় না। আমরা যেটুকু জানি, সেটুকু তুমিও জানো। ফার্দার স্টাডি করতে হলে তোমাকে আমি একটা বিব্লিওগ্রাফি তৈরি করে দিতে পারি। তোমার অত সময় হবে?’
—‘সেটাই ভাবছিলুম। তুমি যদি একটু জিস্ট করে পড়িয়ে দাও। তোমার কি সময়ের অভাব আছে?’
—‘নাঃ পার্ট ওয়ানে তো সবগুলো হয়ে গেল, পার্ট টু-তে দিলাম মাত্র চারটে অনার্স পেপার। আমি তো তখন থেকেই বসেই আছি। এখনও রেজাল্টও বেরোল না, এম এ-টা আরম্ভ হল না। কিন্তু তোমাকে পড়ানো আমার সাহসে কুলোবে না দেব।’ তা ছাড়া শুধু প্রাচীন ভারত নিয়ে পড়তে গেলে আরও অনেক পড়াশোনার দরকার হবে। অত কি আমি পারবো!’
—‘ঠিক আছে। তোমাদের কোর্সে যা পড়েছ, তাই দিয়েই শুরু করো। আমি প্রতি শনিবার তোমাদের বাড়ি যাবো। ধরো তিনটে থেকে চারটের মধ্যে। অসুবিধে আছে?’
—‘উঃহু। তবে শনিবার ভাইয়ার ছুটি। সে কিন্তু ভীষণ বিরক্ত করবে।’
—‘করুক।’
—‘ঠিক আসবে? প্রমিস।’
—‘প্রমিস! দেবপ্রিয় বাঁশের ডগা সরাতে সরাতে বলল, —‘ইন দা মীন টাইম, তুমি তোমার বাপীর প্যাকেটগুলো সদ্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।’
লুকু হেসে উঠল। বলল—‘বাপীর থেকে নেওয়া খুব রিসকি। ধরে ফেলবে। আমাকে খুব সাবধানে সংগ্রহ করতে হয়। এটার থেকে একটা, ওটার থেকে একটা…।’
জঙ্গলটা পেরিয়ে ওরা গ্রামের রাস্তার ওপর এসে পড়েছিল। ওদিক থেকে মৈথিলী, গুঞ্জন, উজান, বুল্টু আসছিল, উজান বলল—‘কি রে তোরা এই সন্ধের ঝোঁকে জঙ্গলে কি করছিলি? খুব সন্দেহজনক!’
দেবপ্রিয় বলল—‘আমরা কিছু করিনি। —কে কি করছে দেখতে বেরিয়ে ছিলুম। তবে প্রমিত বোধহয় কিছু করছে।’
মৈথিলী বলল—‘আমরাও এক্সপ্লোর করছিলুম। পুলকেশরা গেছে ফলসার দিকে।
উজান বলল—‘প্রমিত কি করছে দেখে আসতে হয়। দেখবার মতো তো রে দেব?’
দেবপ্রিয় বলল—‘দেখো। দেখে বিচার করো। সবাই মিলে হই-হই করে গেলে হয়ত দেখতেও পাবে না।’
উজান বলল—‘আচ্ছা! ভেরি মিস্টিরিয়াস!’
এই সময়ে দু হাতে বাঁশ ঝাড় সরাতে সরাতে প্রমিত এসে উপস্থিত হল। উজান কিছু বলতে যাচ্ছিল। দেবপ্রিয়র চোখের দিকে তাকিয়ে মৈথিলী হঠাৎ তাকে একটা চিমটি কাটল। জোর গলায় বলল—‘একটি ঘোষণা। ছাত্রসংঘের কেওড়া সফর শেষ হয়েছে। প্রোফেসর ভাটনগর সবাইকে জানাতে বলছেন। রথ ওদিকে প্রস্তুত। এবার আমাদের নগরজননীর জঠরে ফিরে যেতে হবে।’