Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ইয়েতির আত্মীয় (১৯৯৯) || Samaresh Majumdar » Page 6

ইয়েতির আত্মীয় (১৯৯৯) || Samaresh Majumdar

জনসাহেবদের অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। সে রাত্রে তাঁরা কিছু শেয়ালের ছবি তুলেছিলেন। ওঁরা ফিরেছিলেন ভোরের মুখে। ফিরেই অর্জুনদের অভিযানের কথা শুনে আফসোসে মাথা চাপড়েছিলেন। তারপর অর্জুনের বয়ে আনা বস্তুটি দুহাতে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলেম, এই তো, এই সেই মাথা। একটু ক্ষতি হয়েছে দাঁত বসানোর জন্যে। এই মাথাটাকেই এরা ইয়েতির মাথা বলে নিশ্চয় হিলারিকে দেখিয়েছিল। তার মানে ওই আহত ভালুকটাই চুরি করেছিল মন্দির থেকে। তা হলে ওর কাছেই চামড়াটা আছে। গ্রেট ডিসকভারি।

সকাল হতেই সবাই মিলে গ্রামে গিয়ে মাথাটা ফিরিয়ে দিতেই উৎসব শুরু হয়ে গেল। সবাই এসে অর্জুনদের চমরি গাইয়ের দুধ খাওয়াতে লাগল। ওরা চুরি যাওয়া জিনিস ফিরে পাবে, ভাবেনি। ডানা বলল, এই পাওয়াটা নেহাতই অ্যাকসিডেন্ট। জুড়ি বলল, বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কারই অ্যাকসিডেন্ট থেকে হয়েছে। অৰ্জুন বলেছিল, পুরোহিতের মুখে বর্ণনা শুনে আমি সন্দেহ করেছিলাম তুষার-ভালুককে। লোকটার বর্ণনার সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। ভালুকটা ওগুলো যাকে উপহার দিয়েছিল তাকে গায়ের জোরে পেতে পারেনি বলেই আমরা পেয়ে গেলাম।

গ্রামবাসীদের অনুরোধে জনসাহেব ক্যাম্প সেখানে নিয়ে গেলেন। হেলিকপটার এলে অর্জুন পুরোহিতকে নিয়ে রওনা হল। চামড়াটা পাহাড়েই আছে এটা জানার পর তার কিছু করার নেই। আসার সময় জনসাহেব অনেক ধন্যবাদ আর পারিশ্রমিকের চেক ওর হাতে দিয়ে দিলেন। অসুস্থ পুরোহিতকে তার স্ত্রী সমেত হাসপাতালে পৌঁছে ওদের গ্রামের ডাক্তার ভদ্রলোককে দায়িত্ব দিয়ে দিল। এবার ফিরে যেতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউসে পৌঁছে ভাল করে স্নান করল অর্জুন। তারপর জনসাহেবের ঘর খুলিয়ে সুটকেসটা বের করে নিল। তারপর নিজের ঘরে ওটাকে নিয়ে এল। আগামীকাল ভদ্রপুরে ফিরে যাওয়ার প্লেনের টিকিট চাইল সে টেলিফোনে। কিন্তু প্লেনের অফিস থেকে জানাল কোনও সিট আগামী তিনদিন খালি নেই। অর্জুন নিজের নাম এবং হোটেলের নম্বর জানিয়ে

অনুরোধ করল কেউ ক্যানসেল করলেই যেন তাকে জানানো হয়।

অনেকদিন পরে ঘুমিয়েছিল সে পা ছড়িয়ে, টেলিফোন বাজতেই ঘুম ভাঙল। রিসিভার তুলতেই প্রবীণলালের গলা শুনতে পেল, আরে মশাই, আপনি ফিরে এসেছেন একথা জানাবেন তত! কাজ হয়েছে?

কী কাজ?

যা বলেছিলাম।

হ্যাঁ, প্রমাণ হয়েছে ইয়েতি বলে কোনও প্রাণী নেই।

হুঁ। কিছুই পাননি?

না। অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আমার খবর পেলেন কী করে?

পেয়েছি। কালই ভদ্রপুরে যাবেন?

যাব তো, কিন্তু টিকিট নেই।

হয়ে যাবে, চিন্তা করবেন না।

মিনিট পনেরো পরেই ফোন এল প্লেনের অফিস থেকে, আজ যেতে পারবেন সার। আর এক ঘণ্টা বাদে ফ্লাইট।

এয়ারপোর্টে পৌঁছে টিকিট নিতেই দেখল প্রবীণলাল দুজন দেহরক্ষী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সামনে এসে বললেন, আমার জন্যে কিছুই নিয়ে এলেন না?

কিছু না পেলে কী করব বলুন?

আমি কিন্তু খালি হাতে ফিরে যাব বলে আসিনি।

আমার কিছুই করার নেই।

বাঃ, আপনার টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলাম আমি, আমার জন্যে আপনি কিছু করবেন না? এস. কে. গুপ্তার জন্যে আপনি একটা প্যাকেট ভদ্রপুর থেকে এনেছিলেন, সেটা কোথায়? চোয়াল শক্ত হয়ে গেল প্রবীণলালের।

আপনি জানলেন কী করে?

আপনাকে অনেক প্রশ্ন করার সুযোগ দিয়েছি। উত্তর দিন।

অন্যের জিনিস আপনাকে দেব কেন?

কারণ আমি জিনিসটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেব।

প্যাকেটটার কথা ভুলেই গিয়েছিল সে। একটা দেহরক্ষী সুটকেসটার দিকে হাত বাড়াতেই সে বাধা দিতে গিয়ে দেখল দ্বিতীয়জন রিভলভার তাক করেছে। অতএব চাবি দিতেই হল। প্যাকেট বের করে নিয়ে গেল প্রবীণলাল। আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। অর্জুন চেঁচামেচি করে পুলিশ ডেকে ব্যাপারটা বলতেই লোকটা জানাল তাকে থানায় গিয়ে ডায়েরি করতে হবে। সেটা করতে গেলে এই প্লেন চলে যাবে। আবার কবে টিকিট পাওয়া যাবে কে জানে!

ভদ্রপুর এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে নেমে অর্জুন অবাক! মানিকলাল আগরওয়ালা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সে কাছে যেতেই ভদ্রলোক করমর্দন করে বললেন, আপনার ট্রিপ কীরকম হল?

ভাল। কিন্তু আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।

কেন?

আপনার জিনিস পৌঁছে দিতে পারিনি।

হ্যাঁ। খুব স্যাড। এস. কে. গুপ্তা খুন হয়ে যায়।

কিন্তু ওই প্যাকেটটাও আমার কাছে নেই।

জানি। তাই তো আপনাকে রিসিভ করতে এলাম।

বুঝলাম না!

যে আপনার কাছ থেকে ওটা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে সে পরে রেগে গিয়ে আমায় ফোন করে গালাগাল করেছে। ওই বলল এই ফ্লাইটে আপনি আসছেন। তাই এলাম। প্যাকেটে কিছুই ছিল না। একগাদা খবরের কাগজ আর একটা চিরকুট। তাতে লেখা ছিল, এটা ভোলার জন্য ধন্যবাদ।

সে কী। কেন?

আমি জানতাম, ওই প্যাকেট আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। আপনি ভানু ব্যানার্জির লোক। আপনাকে বিপদে ফেলতে চাইনি। অথচ প্যাকেট নিয়ে না গেলে গুপ্তা আমার ওপর রেগে যেত। ভেবেছিলাম পরে তার সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু সে সুযোগ আর পেলাম না। চলুন। আপনার জিপ তৈরি।

শিলিগুড়ির পথে ফিরে যাচ্ছিল অর্জুন। এই লোকগুলোর সঙ্গে ওই তুষার-ভালুক, যে চুরি করে কাউকে খুশি করতে চেয়েছিল, তার কি কোনও মিল আছে? না, অর্জুন মাথা নাড়ল। ওই চোর ভালুকটা অনেক সরল, সহজ।

Pages: 1 2 3 4 5 6
Pages ( 6 of 6 ): « পূর্ববর্তী1 ... 45 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress