সন্ধে সাতটায় জনের ঘরে
সন্ধে সাতটায় জনের ঘরে সবাই চলে এল। অর্জুনকে নিয়ে আটজন। এই ঘরটি বেশ বড়। বেডরুম ওপাশে। শীতবস্ত্র হিসেবে অর্জুনকে যা দেওয়া হল তার ওজন কম নয়! কাঁধে ঝুলিয়ে নেওয়ার ব্যাগ, যাতে সমস্ত সম্পত্তি থাকবে এবং নিজেকেই বইতে হবে। বরফের ওপর হাঁটার জুতো, চশমা, স্টিক, গ্লাভস। সবই ঠিকঠাক মিলে গেল শরীরের সঙ্গে। জন বললেন, প্রত্যেকে ব্যক্তিগত জিনিস যা ওপরে নিয়ে যাচ্ছি না তা এই ঘরে রেখে যাব। এনি কোশ্চেন?
ডানা জিজ্ঞেস করল, আমার কোনও অভিজ্ঞতা নেই। এসব বহন করে ক্যামেরা স্ট্যান্ড, ফিল্ম নিয়ে কি আমি হাঁটতে পারব?
সরি ডানা। তোমাকে বলা হয়নি, একজন লোক ওগুলো ভোমার হয়ে বইবে। সবসময় তোমার পাশে-পাশে সে থাকবে। যখনই প্রয়োজন হবে তুমি ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারবে। ওয়েল, আজ আমরা তাড়াতাড়ি ডিনার করে নেব। কাল সকাল আটটায় সবাই যেন লবিতে চলে আসি। জন বললেন।
ডিনার শেষ করে ঘরে ফিরে জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখল অর্জুন। এই অভিযানে জন সঙ্গে কোনও অস্ত্র নিচ্ছেন কিনা জিজ্ঞেস করেনি সে। নিরাপত্তার ব্যাপারটা কি একটুও ভাবছেন না তিনি। অর্জুন সঙ্গে কোনও অস্ত্র আনেনি। বিদেশে অস্ত্র এনে কী বিপদ হবে কে জানে! এখন ঘটনা যেদিকে গড়াল তাতে মনে হচ্ছে সঙ্গে কিছু থাকলে ভাল হত। সুটকেসটাকে রেখে যেতে হবে। সঙ্গে-সঙ্গে মনে পড়ল সেই বাক্সটার কথা। বাক্সটাও সুটকেসে থেকে যাবে।
এইসময় টেলিফোন বাজল। উঠে গিয়ে রিসিভার তুলল অর্জুন, হ্যালো।
একটি পুরুষকণ্ঠ ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি অর্জুন?
হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?
আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনার সঙ্গে বসে কথা বলা যেতে পারে?
কী ব্যাপারে বলুন তো?
সেটা টেলিফোনে না বলাই ভাল।
আপনি গেস্ট হাউসের লাউঞ্জে আসতে পারেন?
না। আমি যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনার ঘরে পৌঁছে যাই তা হলে কি আপনার আপত্তি হবে?
আসুন।
রিসিভার নামিয়ে রেখে অর্জুন হাসল। শেষপর্যন্ত মানিকলাল তাকে খুঁজে বের করেছে। মানিকলের পক্ষে আজ কাঠমণ্ডতে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই, কারণ একমাত্র ফ্লাইটে সে চলে এসেছে। তা হলে এস, কে, গুপ্তার মৃত্যুসংবাদ পেয়েই মানিকাল সুদূর ভদ্রপুর থেকে কাঠমণ্ডর কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছে তাকে খুঁজে বের করতে। এর অর্থ হল, বাক্সটায় খুব দামি কিছু রয়েছে। যে-ই আসুক, মানিকলাল অথবা এস. কে. গুপ্তার লিখিত নির্দেশ সঙ্গে না নিয়ে এলে সে বাক্সটা হস্তান্তর করছে না। দ্বিতীয়টা অবশ্য সম্ভব নয়। এস, কে, গুপ্তা লেখার সুযোগ আর কখনওই পাবেন না।
দরজায় শব্দ হল। অর্জুন এগিয়ে গিয়ে সেটা খুলতেই এক প্রৌঢ় ভদ্রলোককে পঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ভদ্রলোক হাত বাড়ালেন, অর্জুন?
ইয়েস?
ভদ্রলোক চট করে হিন্দিতে চলে এলেন, আমার মনে হচ্ছে আপনি যখন ভারতীয় তখন আমরা হিন্দিতেই কথা বলতে পারি। ভেতরে আসব?
দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ভদ্রলোক চেয়ার টেনে বসলেন, আমার নাম প্রবীণলাল। আজ বিকেলে আপনারা আমার দোকানে দয়া করে পায়ের ধুলো দিয়েছেন।
আপনার দোকানে?
আজ্ঞে। শেঠ বাবুলাল অ্যান্ড সন্স আমারই দোকান। শেঠ বাবুলাল আমার বাবা। তিনি গত হয়েছেন বছরপাঁচেক হল। কিন্তু এখানকার মানুষের মুখে তিনি এখনও বেঁচে আছেন। আমি যা কিছু করছি সবই তাঁর আশীর্বাদে।
ভদ্রলোক দুটো হাত কপালে ঠেকিয়ে পিতৃদেবকে শ্রদ্ধা জানালেন।
অর্জুন কল্পনাই করেনি তার খেলাচ্ছলে ঘুরে আসা এতটা কার্যকর হবে। সে গম্ভীর গলায় বলল, বলুন।
আমার ছোট্ট দোকান আপনি দেখে এসেছেন। এখানেই জন্ম, কর্ম আমার। কাঠমণ্ডুতে কোথায় কী হচ্ছে, কী পাওয়া যাচ্ছে তার খবর রাখতে হয় এই ব্যবসা বানাতে গেলে। মিস্টার জন বেইলির নেতৃত্বে একটা অভিযান হচ্ছে এই খবরটা জানতাম। এরকম তো কতই হয়! মাথা ঘামাইনি তাই। আপনি চলে আসার পর খবর নিয়ে জানলাম অভিযানটা হচ্ছে ইয়েতিদের ছবি তুলতে। আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন হিলারিসাহেব পাহাড় থেকে ঘুরে এসে বলেছিলেন ইয়েতি বলে কিছু নেই। নীল রঙের একধরনের ভালুককেই লোকে ইয়েতি বলে ভুল করছে। কিন্তু একথা পাহাড়ের মানুষ বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে ইয়েতি আছে। আপনিও তাই মনে করেন জেনে ভাল লাগল। প্রবীণলাল পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে এগিয়ে ধরলেন।
অর্জুন মাথা নেড়ে না বলে, কী করে মনে হল?
আরে, ইয়েতি আছে বিশ্বাস না করলে আপনি দোকানে খোঁজ করবেন কেন? প্রবীণলাল বললেন, এই দলে আপনিই একমাত্র ভারতীয়। আরে আমিও তাই। এখানে পড়ে আছি পেটের দায়ে। আপনার সঙ্গে একটা চুক্তি করতে চাই।
কীরকম?
যদি সত্যি ইয়েতির কোনও নিদর্শন খুঁজে পান তা হলে আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিক্রি করবেন না। দামের জন্যে আপনি চিন্তা করবেন না।
প্রস্তাবটা আপনি আমাদের নেতা জনসাহেবকে দিচ্ছেন না কেন?
সাহেবদের আমি বিশ্বাস করি না।
কিন্তু আমি দলের সঙ্গে যাচ্ছি। নেতা যা বলবেন তাই করতে হবে। আপনি বলছেন ওগুলোর ভাল দাম হবে। তা হলে লোক পাঠিয়ে নিজেরাই নিয়ে আসছেন না কেন?
সম্ভব না। নেপাল সরকারের অনুমতি ছাড়া ওখানে যাওয়া যায় না।
কিন্তু বরফের ওপরের গ্রাম থেকে লোকজন এখানে আসে বলে শুনেছি।
ওখানকার বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে ওই আইন চালু নেই। আরে মশাই, সেই চেষ্টা যে করা হয়নি তা নয়। কিন্তু কাজ হয়নি। আর আপনি যদি সাহায্য করতে চান তা হলে নেতাকে না জানালেই হল।
এখন পর্যন্ত কেউ আনতে পারেনি?
না। বাজারে একটা খবর চালু হয়েছে যে, ইয়েতির মাথা নাকি কাঠমণ্ডুতে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি না। মাথা নাড়লেন প্রবীণলাল।
আর কেউ কি এসবের ব্যবসা করেন এখানে? বলেই যেন মনে পড়ে গেছে এমন ভঙ্গিতে অর্জুন বলল, হ্যাঁ, কী নাম যেন, এস, কে, গুপ্তা, তাই না?
আচমকা প্রবীণলালের চোখ ছোট হয়ে গেল, ওকে আপনি চেনেন?
না। টিভিতে নাম শুনলাম। অ্যাকসিডেন্টে মারা গিয়েছেন। তখন পরিচয় দেওয়ার সময় বলা হল উনি কিউরিও নিয়ে ব্যবসা করতেন। অম্লানবদনে মিথ্যে কথা বলল অর্জুন।
প্রবীণলালের টানটান মুখ আস্তে-আস্তে সহজ হল। হাসি ফুটল মুখে। মাথা নেড়ে বললেন, তাই বলুন। আমি একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আরে মশাই, অন্যায় করলে ভগবান ঠিক শাস্তি দিয়ে দেন।
ওকে আপনি চিনতেন?
বিলক্ষণ। কেউ মারা গেলে দুনাম করতে নেই, কিন্তু যা সত্যি তা চিরকালই সত্যি। হিটলার যে খুনি ছিলেন তা মারা গেছেন বলে কি বলব না? ইন্টারন্যাশনাল স্মাগলার ছিল মশাই। ওই ইয়েতির মাথার গল্পটা ওই চালু করেছিল। যাক গে, আপনার সঙ্গে সব কথাবার্তা ফাইনাল হয়ে গেল। আমি নিশ্চিত। উঠে দাঁড়ালেন প্রবীণলাল। তারপর পকেট থেকে একটা খাম বের করে সামনে ধরলেন, এটা নিয়ে আমাকে নিশ্চিন্ত করুন। এটা অ্যাডভান্স।
কী এটা?
সামান্য টাকা। রাস্তায় খরচ করবেন।
আপনি হয়তো জানেন না আমরা এখান থেকে হেলিকপ্টারে যাচ্ছি। যেখানে নামব সেখানে বরফ আর ফাঁকা পাহাড়। মানুষ যেখানে হাতে গোনা। সেখানে দোকান কোথায় পাব খরচ করার! ইয়েতিরা নিশ্চয়ই দোকান খোলেনি? অর্জুন উঠে দাঁড়াল, আপনাকে তো আগেই বলেছি আমাদের দলনেতার সঙ্গে কথা বলতে। ঠিক আছে, যদি ইয়েতিদের কিছু খুঁজে পাই তা হলে কাঠমণ্ডুতে ফিরে আপনাকে ফোন করব। আপনার সঙ্গে কার্ড আছে?
ভদ্রলোক মাথা নেড়ে পার্স থেকে কার্ড বের করে দিলেন। তারপর বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। কয়েক সেকেন্ড বাদে অর্জুন বাইরে বেরিয়ে এল। ওপর থেকে দেখতে পেল প্রবীণলাল হেঁটে গাড়িতে উঠলেন। দুজন লোক গাড়ির সামনের সিটে উঠে পড়ল। তার মানে ভদ্রলোক দেহরক্ষী সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। একজন কিউরিও ব্যবসায়ীর দেহরক্ষীর কখন প্রয়োজন হয়?
সকালে জন বেইলির ঘরে সবাই জিনিসপত্র রাখার পর তিনি একটা ম্যাপ দেখিয়ে বোঝাতে লাগলেন ঠিক কোন জায়গায় আজ হেলিকপটার নামছে। দলের অন্য সবাই এর আগেই মাপের সঙ্গে পরিচিত। তাঁরা একবার নজর বুলিয়ে মাথা নেড়ে সরে যাচ্ছিলেন। এধরনের ম্যাপ অর্জুন আগে কখনও দ্যাখেনি। তার বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল। পাশে দাঁড়ানো ডানা যখন হেসে বলল, ম্যাপ দেখে আমি কী করব। আপনি যখন যেমন বলবেন তাই করব।
জন মাথা নাড়লেন, নো। নট অ্যাট অল। ধরো, তুমি ওখানে গিয়ে পথ হারালে। কাউকে খুঁজে পাচ্ছ না। তখন এই ম্যাপ, কম্পাস তোমার জীবন বাঁচাবে। বুঝলে মাই লিটল লেডি!
পর্বত অভিযানের কাহিনী অনেক পড়েছে অর্জুন। পাহাড়ে ওঠার আগে যে প্রস্তুতি নিতে হয় তা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। প্রচুর মালপত্র, খাবার, এলাহি ব্যাপার। কুলির মাথায় চাপিয়ে সেসব নিয়ে আসা হয় বেসক্যাম্পে। সেখান থেকে মূল অভিযান শুরু হয়। কুলিরা ফিরে যায় আর শেরপারা দায়িত্ব নেয়। তখন যে-যার জিনিস বহন করে। রীতিমতো গলদঘর্ম হওয়ার ব্যাপার।
এয়ারপোর্টের যে প্রান্তে হেলিকপটার দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে কাঠের বাক্সের পাহাড় দেখতে পেল অর্জুন। বাক্সের ওপর জিনিসগুলোর নাম লেখা। জন পাইলটের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আটজন শেরপা আর আটজন সদস্য। এখন সবাই হালকা পোশাক পরে আছে। অর্জুন লক্ষ করল শেরপারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষগুলো গম্ভীর মুখে হেলিকপটার দেখছে। ডানাকে বাদ দিলে এঁদের প্রত্যেকেই পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন। অর্জুন জুডির দিকে তাকাল। এই মহিলা ডাক্তার। সঙ্গে একটা বড় চামড়ার ব্যাগ আর রুকস্যাক নিয়ে এসেছেন। ইনিও বোধহয় কথা কম বলেন। জন ফিরে এলেন, তিনটে ট্রিপ দিতে হবে। প্রথম ট্রিপে জিনিসপত্রের সঙ্গে আটজন যাবে। জন শেরপা আর আমাদের দুজন। তিনি একজন স্বাস্থ্যবান সদস্যকে ডেকে নিলেন। হেলিকপটারের পেছন দিকটায় অনেক জিনিস ধরল। জন বাকি সাতজনকে নিয়ে উড়ে গেলেন।
এখন সকাল সাড়ে আটটা। সাড়ে নটার আগে হেলিকপটারের ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। সবাই ফিরে গেল এয়ারপোর্ট বিল্ডিং-এর ভেতর। যে -দুজন শেরপা থেকে গিয়েছিল তাদের সঙ্গে ভাব জমাল অর্জুন। এরা দুজনেই এভারেস্টের অ্যাডভান্স ক্যাম্প পর্যন্ত উঠেছে। পিকে ওঠার সুযোগ এখনও পায়নি। ওরা আক্ষেপ করে বলল মাঝখানে যেমন ঘন-ঘন অভিযান হত এখন তেমন হয় না। অভিযান হলেই তাদের রোজগার বেড়ে যায়।
অর্জুন ওদের কফি খাওয়াচ্ছিল। ডানা এসে যোগ দিল। অর্জুন বলল, দ্যাখো ভাই, আমি এতকাল সমান জমিতে হেঁটে এসেছি। পাহাড়ে চড়ার কোনও অভিজ্ঞতা আমার নেই। তোমরা আমাকে সাহায্য কোরো।
একজন শেরপা মিটিমিটি হেসে জিজ্ঞেস করল, সাহেব কি সত্যি সাহায্য চাইছেন?
সত্যি। একশোবার সত্যি।
তা হলে আপনার ভার আমরা নিলাম। তরুণ শেরপাটি হাসল।
হেলিকপটারে চেপে পায়ের তলায় পাইনগাছের মাথা দেখতে ভারী ভাল লাগছিল। দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে গাছগাছালি। এতদিন যেসব প্লেনে অর্জুন উঠেছে তারা উড়ে গেছে তিরিশ হাজার বা তার বেশি ফুট উঁচু দিয়ে। নীচে তাকালে শুধু মেঘের এবড়ো-খেবড়ো মাঠ। মাঝে-মাঝে সেখানে কুয়ো এবং পুকুর দেখা যায়। কিন্তু এইভাবে প্রায় গাছের মাথা ছুঁয়ে পাহাড়ের ঔদ্ধত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কখনওই হয়নি। এইসব জায়গা দিয়ে যদি হেঁটে যেতে হত তা হলে পাহাড়ের পর পাহাড় ভাঙতে হত। অর্জুন মাথা নাড়ল।
পেছন থেকে ডানা জিজ্ঞেস করল, এনি প্রব্লেম?
ওই পাহাড়টায় একটাও গাছ নেই। শুধুই পাথর।
ডানা বলল, আমাদের ভো উঠতে হচ্ছে না।
পাহাড়, পাহাড় আর পাহাড়। মাঝে-মাঝে এক-একটা গ্রাম দেখা যাচ্ছে। চাষের খেত। পাহাড়ের ঢালু জমিতে ফসল ফলাবার চেষ্টা হয়েছে। আর তারপরেই হেলিকপ্টার যেই ঘুরে গেল অমনই বরফ নজরে এল। সামনের পাহাড়টা অন্যদের চেয়ে বেশ উঁচু। তার গায়ে ছোপ-ছোপ বরফ লেগে রয়েছে। সেটাকে পাশ কাটাতেই বরফের পৃথিবী শুরু হয়ে গেল।
হেলিকপটারে ওঠার আগে যতটা সম্ভব শীতের পোশাক পরে নিয়েছিল সবাই। এখন চোখে বড় গগল্স উঠল। ওপর থেকে বরফ দেখতে কী মায়াময় লাগে। ওপর থেকেই ওরা জনসাহেবদের দেখতে পেল। প্রথম ফ্লাইটে নিয়ে আসা জিনিসপত্রগুলোকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাহাড়ের গায়ে। জনসাহেব হাতে একটা পতাকা নিয়ে নাড়ছেন। পাইলটকে নির্দেশ দিচ্ছেন কোথায় নামতে হবে। যে-কোনও জায়গায় হেলিকপটার নামানো যায় না। যে বরফকে ওপর থেকে শক্ত বলে মনে হয়, সামান্য চাপ পড়তেই সেটা ফাঁক হয়ে যাবে। অর্জুন পরে শুনেছিল আগের হেলিকপটার থেকে দড়ির সিঁড়ি নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জন এবং শেরপারা তাই বেয়ে নীচে নেমে অনেক পরীক্ষার পর স্থির করেছিল জায়গাটা, যেখানে হেলিকপটার নামতে পারে।
হেলিকপটার স্থির হতেই ওরা নেমে এল। জিনিসপত্র নামানো হলে হেলিকপটার আবার আর-একটা ট্রিপ দেওয়ার জন্যে ফিরে এল। পরনে পর্বতারোহীর পোশাক, চোখে চশমা, মাথায় টুপি। অর্জুনের মনে হল এখানে তেমন শীত নেই। বরফের ওপর দাঁড়িয়েও শরীর কনকন করছে না। সে দেখল শেরপারা অনেক হালকা শীতবস্ত্র পরে কাজ করছে। সমস্ত জিনিসপত্র পাহাড়ের গায়ে নিয়ে যাওয়ার পর শেরপাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁবু টাঙবার হুকুম দিলেন জনসাহেব। পাহাড়ের আড়াল বাতাস আটকে রেখেছে। শেরপাদের সঙ্গে সাহেবদের হাত লাগাতে দেখে অর্জুন এগিয়ে গেল। কিন্তু জনসাহেব হাত নেড়ে নিষেধ করলেন, তোমাকে ওসব করতে হবে না।
কেন? অর্জুন জানতে চাইল।
কারণ, তুমি জানো না কীভাবে টেন্ট টাঙাতে হয়। তাই না?
কথাটা সত্যি। কিন্তু মেয়েরা ছাড়া সবাই যখন পরিশ্রম করছে তখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে খারাপ লাগে। অর্জুন দেখল, ডানা একটা বাক্স খুলে ফেলেছে এর মধ্যে। সেখানে ছবি তোলার নানান সরঞ্জাম। ক্যামেরা ডানা হাতছাড়া করেনি কখনও। দেখা গেল আর একটি ক্যামেরাকে প্রচুর যত্নে বাক্সে রাখা হয়েছে। বাক্স পড়ে গেলে অথবা ধাক্কা লাগলেও যেন ক্যামেরার কোনও ক্ষতি না হয়, তার ব্যবস্থা রয়েছে।
ক্যামেরায় ক্যাসেট ঢুকিয়ে ফোকাস ঠিক করছিল না। তারপর অর্জুনকে ক্যামেরায় ধরল। অর্জুন হেসে বলল, ছবি দেখে কেউ বুঝতে পারবে না কার ছবি তোলা হয়েছে। সে টুপি আর গগল্স দেখাল। ডানা চিৎকার করে বলল, একটু হাঁটো। অর্জুন হাঁটল। তার ছবি তুলে ডানা কাছে এসে বলল, এবার যারা তোমাকে চেনে তারা বুঝতে পারবে। প্রত্যেক মানুষের াঁটার ভঙ্গিটা তার নিজস্ব।
আজকের দিনটা জিনিসপত্র গোছাতেই গেল। শেরপাদের জন্যে দুটো বড় তাঁবু, আর দলের সদস্যদের জন্যে চারটে। মেয়ে দুজন এক তাঁবুতে, জনের সঙ্গে অর্জুন। পায়ের তলায় বরফের ওপর নাইলনের কার্পেট। একটা টেবিল, দুটো চেয়ার, দুটো হ্যামক, অর্জুন নামকরণ করল ঝুলন্ত বিছানা। এ ছাড়া রান্না, স্টোর এবং বেশ কিছুটা দূরে ল্যাট্রিন এবং টয়লেটের জন্যে আলাদা তাঁবুর ব্যবস্থা হল। টিনের খাবারে হাত না দিয়ে প্রথম দিন শেরপাদের রান্না করা খিচুড়ি আর ডিমভাজা দিয়ে লাঞ্চ সারা হল।
লাঞ্চের পর জনসাহেব বললেন, এখান থেকে খুব কাছে যে গ্রামটা সেটা মাত্র কুড়ি মিনিটের রাস্তা। হেলিকপ্টার আসা-যাওয়া করছে; আমরা এসেছি তবু কেউ খোঁজখবর করতে এল না। বুঝতেই পারছ আমাদের আপ্যায়ন করার কোনও ইচ্ছে ওদের নেই। এখন শত্রুতা করলে কতটা করবে সেটা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। তাই কখনওই ক্যাম্প ফাঁকা করে আমরা বেরিয়ে যাব না। অন্তত দুজন পাহারায় থেকে যাবে।
একজন সদস্য জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কি আত্মরক্ষার জন্যে অস্ত্র ব্যবহার করতে পারি?
জন মাথা নাড়লেন, না। কখনওই নয়। কোনও মানুষের বিরুদ্ধে আমরা অস্ত্র ব্যবহার করব না। শুধু হিংস্র জন্তুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যে ওগুলোর প্রয়োজন।
অধিনায়কের এই আদেশ খুবই পছন্দ হল অর্জুনের। কিন্তু সেইসঙ্গে অস্বস্তিও হল। এঁরা সবাই নিউজিল্যান্ডের মানুষ। নিশ্চয়ই কলকাতা বা কাঠমন্ডু থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেননি। অথচ বোঝাই যাচ্ছে এঁদের সঙ্গে অস্ত্র আছে। কী করে নিয়ে এলেন। বিদেশ থেকে অস্ত্র নিয়ে আসা কি বেআইনি নয়?
বিকেলের মধ্যে জায়গাটাকে একটা ছোট্ট বসতি বলে মনে হচ্ছিল। শেরপারা বেরিয়েছিল খোঁজখবর নিতে। তারা ফিরে এসে জানাল আশপাশের বরফ বেশ শক্ত হয়ে আছে। হাতে লাঠি নিয়ে সহজেই গ্রামের দিকটায় যাওয়া যেতে পারে। আর এই খোঁজাখুঁজির সময় তুষার-ভালুকের পায়ের চিহ্ন তাদের চোখে পড়েনি।
জনসাহেব এতে হতাশ হলেন না। সবাইকে নির্দেশ দিলেন ভোর ছটার মধ্যে তৈরি হতে।
সন্ধে নামল ঝুপ করে। সূর্য ড়ুবে গেলেও একধরনের আলো নেতিয়ে রইল বরফের ওপর। আর আকাশটা কী চমৎকার নীলে ভরে গেল। এমন পরিষ্কার আকাশ কখনও দেখেছে বলে মনে পড়ল না অর্জুনের। লোকালয়ে মানুষের তৈরি নোংরা ধোঁয়া যে আকাশের চেহারা কতটা বদলে দিতে পারে তা এখানে এলেই বোঝা যায়। ঝটপট খাওয়াদাওয়া সেরে যে-যার তাঁবুতে ঢুকে গেল।
জনসাহেব টেবিলে একটা ব্যাটারিচালিত আলো জ্বেলে লেখা শুরু করলেন! ঝুলন্ত বিছানায় মানিয়ে নিতে সময় লাগল অর্জুনের। সন্ধের পর ঠাণ্ডা বাড়তে শুরু করেছে। ভারী শীতবস্ত্র খুলে রেখে পুলওভার পরে স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকে পড়েছে অর্জুন। শরীর গরম হতে একটু সময় লাগল।
লিখতে লিখতে জনসাহেব মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আলো জ্বললে ঘুমোতে অসুবিধে হবে না তো?
না, না। তবে এই সময়ে ঘুমোনোর অভ্যেস নেই তো, তাই ঘুম কখন আসবে জানি না। শুয়ে-শুয়ে অর্জুন কথা বলল।
অভ্যেস। অভ্যেস হয়ে গেলেই অসুবিধে হবে না। জনসাহেব বললেন, ওয়েল, তুমি নিশ্চয়ই চিন্তা করছ কীভাবে কাজ শুরু করবে!
চিন্তা করার মতো কিছু পাইনি।
তার মানে?
আজ এখানে আসার পর চারপাশে শুধু বরফ ছাড়া কিছুই দেখতে পাইনি। এই বরফের ভেতর যদি কেউ লুকিয়ে রেখে থাকে জিনিসগুলো, তা হলে সূত্র
পেলে খুঁজে বের করা অসম্ভব।
ঠিক কথা। তা হলে কাল কীভাবে শুরু করবে?
শেরপাদের কাছে জেনেছি তিনটে গ্রাম আছে আমাদের কাছাকাছি। যে-গ্রামের মন্দির থেকে ওগুলো চুরি গিয়েছে, সেটি খুব কাছেই। আমি প্রথমে ওখানেই যাব। তারপর দেখা যাক।
কিন্তু মনে রেখো ওরা আমাদের এখন বন্ধু বলে ভাবছে না।
দেখা যাক। অর্জুন কথাটা বলতেই জনসাহেব আবার লেখার দিকে মন দিতে চাইলেন। অর্জুন সেটা লক্ষ করে একটু সময় নিল। তারপর জিজ্ঞেস করল, মিস্টার বেইলি, আপনি এই দলের নেতা, আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
জনসাহেব মাথা নাড়লেন, শিওর।
দলের কারকার সঙ্গে অস্ত্র আছে?
অস্ত্র?
হ্যাঁ। তখন আপনি নিষেধ করলেন সেগুলো ব্যবহার করতে।
ও, হ্যাঁ। অভিযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে আমরা একটা শক্তিশালী রিভলভার আর রাইফেল এনেছি। ভারত এবং নেপালের গভর্নমেন্টের অনুমতি নিয়েই ওই দুটো অস্ত্র আনা হয়েছে।
ওগুলো কোথায় আছে?
এখানে। এই তাঁবুতে। ওই বাক্সে। জনসাহেব অবাক হলেন, কেন বলো তো?
আপনি নিশ্চিত, অন্য সদস্যরা কেউ নিজের অস্ত্র নিয়ে আসেননি?
জনসাহেব বললেন, তুমি ভুলে যাচ্ছ, কাঠমন্ডুতে হয়নি, কিন্তু কলকাতায় আমাদের কাস্ট করতে হয়েছিল। ওখানকার সিকিউরিটি আমাদের ভালভাবে চেক করেছে। কেউ যদি সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে আসতে চেষ্টা করে তা হলে তখনই তার ধরা পড়ে যাওয়ার কথা। তাই না?
অর্জুন আর কথা বাড়াল। কিন্তু তার অস্বস্তি হচ্ছিল। অস্ত্র তো ইচ্ছে করলে কাঠমন্ডু থেকেও কেনা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল, যারা শুধু ভালুকের ছবি তুলতে এসেছে তারা অস্ত্র কেন কিনবে? কিন্তু যে লোকটি জনসাহেবকে প্রশ্ন করেছিল, তার ভাবভঙ্গি ভাল লাগেনি অর্জুনের।
একসময় আলো নিভিয়ে জনসাহেব তাঁর ঝুলন্ত বিছানায় উঠে পড়লেন। পৃথিবীর কোথাও কোনও শব্দ নেই। তারপর হঠাৎই শব্দটা শুরু হল। নেই-টাকে মিথ্যে করতে সে যেন জানান দিল। প্রথমে শব্দটা কী তা বুঝতে পারছিল না অর্জুন। তারপর আওয়াজ বাড়তেই বুঝতে পারল, হাওয়া বইছে। সোঁ-সোঁ শব্দটা যেন ছুটে চলেছে পাগলের মতো। অথচ তাদের তাঁবুতে কোনও কম্পন নেই। অর্থাৎ পাহাড় তাদের আড়াল করে রেখেছে। শব্দটা একসময় কমে গিয়ে মিলিয়ে গেল। আর তখন থেকে টুপটাপ তুষার পড়তে লাগল তাঁবুর ওপর। এক রাত্রে কত তুষার পড়ে?
সকালটা চমৎকার। দুজন শেরপা ছাড়া আর কাউকে ক্যাম্পে দেখতে পেল না অর্জুন। ভোর হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে সবাই বেরিয়ে গেছে। এই তুষারের রাজ্যে কোথায় ভালুকমশাইরা আস্তানা গেড়েছেন তাই খুঁজে দেখবে সবাই। বেরিয়ে যাওয়ার আগে জনসাহেব তাকে ডাকেননি। অভিযাত্রীদের মধ্যে মিলিটারির শৃঙ্খলা থাকে বলে পড়েছিল অর্জুন, দেখা যাচ্ছে কথাটা খাঁটি।
একজন শেরপা তাকে এক মগ চা আর বিস্কুট এনে দিল। ধোঁয়া ওঠা চা মুখে দিতে-দিতেই তেজ হারাচ্ছে। অর্জুন দেখল আর একজন শেরপা ঝুলঝাড়ার মতো একটা কিছু দিয়ে তাঁবুর গায়ে রাতে পড়া তুষার সরিয়ে দিচ্ছে।
চা শেষ করে মগটা কিচেনে পৌঁছে দিয়ে আসার সময় অর্জুন দেখল জুডি তাঁবু থেকে বের হচ্ছে। তা হলে জুডিও যায়নি। সে হেসে বলল, গুড মর্নিং। জুড়ি গম্ভীর মুখেই বলল, ইয়েস, গুড মর্নিং।
তুমি ওদের সঙ্গে গেলে না কেন?
জুডি তাকাল। তার চশমার বড় কাচে আলো পড়ল, ভোরের আলো। বলল, আমার কাজ ছবি তোলা নয়, কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করা। আর সেটা ক্যাম্পেই করা সহজ।
তোমার কি মনমেজাজ ঠিক নেই?
বাজে কথা বলতে বা শুনতে আমি পছন্দ করি না।
জুডি অন্যদিকে তাকাল। ডাক্তার-মহিলাকে ফুটিয়ে লাভ নেই, অর্জুন শেরপাদের কাছ থেকে স্টিক চেয়ে নিয়ে হাঁটতে বের হল। হাকা ধাতব সরু স্টিকের মাথায় ইংরেজি টি অক্ষর বসানো। সামনে চাপ দিলে বোঝা যায় তুষারে পা কতখানি ড়ুববে।
হাঁটতে ভাল লাগছিল অর্জুনের। এখনও পায়ের তলায় হাল্কা তুষারে ঢাকা শক্ত বরফ পাওয়া যাচ্ছে। শেরপারা যেদিকে বলেছিল সেদিকে মিনিট পনেরো হাঁটার পর গ্রামটাকে দেখতে পেল সে। পাহাড়ের ওদিকটায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বরফ পড়েছে। কালো মাটি বা পাথর দেখা যাচ্ছে তাই। খুব ছোট গ্রাম নয়। দূর থেকেই মানুষের চলাফেরা নজরে এল। পাহাড়ের আড়ালে তাঁবু ফেলেছেন বলে জনসাহেব হাওয়ার দাপট থেকে দলকে বাঁচাতে পেরেছেন। আর এই গ্রামটা তৈরি হয়েছে পাহাড়ের আর-একটা দিকে যাতে হাওয়া বা তুষারঝড় পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারে। এবং সেই কারণেই মাটি দেখা যাচ্ছে, তুষার সর্বত্র ছড়িয়ে যেতে পারেনি।
গ্রামের সীমানায় পা রেখে অর্জুন প্রথমে কাউকে দেখতে পেল না। যেটুকু নেপালি ভাষা তার জানা ছিল তাই সম্বল করে সে চিৎকার করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে চাইল।
এইসময় চারজন লোক পাহাড়ের আড়াল ছেড়ে এগিয়ে এল তার দিকে। পাহাড়ের মানুষের মুখে আপাত সারল্য সবসময় থাকে। এদের দেখে শত্রু বলে মনে হল না অর্জুনের। এবা কোন ভাষায় কথা বলে তা অর্জুনের জানা নেই। নেপালি হলে সে কাজ চালিয়ে দেবে। কিন্তু তাকে অবাক করে একজন হিন্দিতে জিজ্ঞেস করল, কোত্থেকে এসেছ?
আমি জলপাইগুড়িতে থাকি। অর্জুন সত্যি কথাই বলল।
লোকগুলো মুখ চাওয়াচাওয়ি করল নিজেদের মধ্যে। বোঝাই যাচ্ছে নামটা তারা কখনওই শোনেনি। এদের সম্পর্কে যা জেনেছে তাতে তো পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গার নাম এদের শোনার কথা নয়।
অর্জুন বলল, আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
তুমি কি কাঠমন্ডু থেকে হেঁটে আসছ?
না। ওই অভিযাত্রীদের সঙ্গে হেলিকপটারে এসেছি।
ও। তা হলে তোমার সঙ্গে আমাদের কোনও কথা নেই।
কেন?
কারণ ওই সাদা চামড়ার লোকদের আমরা বিশ্বাস করি না।
কিন্তু আমার চামড়া তো সাদা নয়।
লোকগুলো আবার নিজেদের মধ্যে কথা বলল। তারপর ইশারা করল অর্জুনকে। ওদের অনুসরণ করে এগোতে গিয়ে অবাক হল অর্জুন। ট্রানজিস্টার বাজছে। বিদেশি গানের সুর। এই গ্রামে বিদ্যুৎ থাকার কথা নয়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রেডিয়ো এসে গিয়েছে। যারা ইদানীং কাঠমণ্ডুতে যায় তাদের দৌলতেই এটা সম্ভব হয়েছে। বাচ্চা মেয়েরা তাকে দেখছিল আগ্রহ নিয়ে। পাথর এবং সিমেন্ট দিয়ে তৈরি কিছু বাড়ি নজরে এল। বাকিগুলো কাঠের। পাহাড়ের ওপর উঠে আসায় এদিকে পায়ের তলায় বরফ নেই। গ্রামটি মোটেই হতশ্রী নয়। জনসাহেব বলেছিলেন এদের রোজগার ফসল লিয়ে। যখন বরফ পড়ে না তখন পাহাড়ে ফসল ফলায় এরা। আর জঙ্গলের কাঠ তো রয়েছেই।
একটা গুহার সামনে সুন্দর চাতালে দশবারোজন মানুষ বসে ছিল। এই চারজন এগিয়ে গিয়ে তাদের খবরাখবর দিল। অর্জুন দেখল গুহার মুখটা সুন্দর সাজানো। যারা বসে ছিল তাদের একজন তাকে এমন ভাষায় জিজ্ঞেস করল যার একটা শব্দও বোধগম্য হল না। এবার প্রথম লোকটি সেটি হিন্দিতে অনুবাদ করে বলল, আমাদের প্রধান জানতে চাইছেন তুমি ওই সাদা চামড়াদের সঙ্গে কেন এসেছ?
অর্জুন বলল, আমি সমতলের মানুষ। পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা নেই। ওদের সঙ্গে হেলিকপটারে না এলে এখানে আসতে পারতাম না।
লোকটি সেটা প্রধানকে শুনিয়ে দিতে তিনি দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন। দোভাষী জানাল, তোমার এখানে আসার উদ্দেশ্য কী?
আমি শুনেছি তোমাদের পবিত্র দুটি বস্তু চুরি গেছে। ওগুলো কারা চুরি করেছে এবং কোথায় আছে তা খুঁজে বের করতে আমি চাই।
তুমি কি পুলিশ?
না। আমি সত্যসন্ধানী। প্রকৃত সত্যি খুঁজে বের করাই আমার কাজ।
এই খবর তোমাকে কে দিল?
তোমাদের গ্রামের এক ছেলে, যিনি এখন কাঠমণ্ডর ডাক্তার।
এবার ওরা আলোচনায় বসল। বেশ কিছুক্ষণ ওরা কথা বলল। তারপর দোভাষী বলল, তুমি যার কথা বললে সে ছেলেবেলা থেকেই সাদা চামড়াদের সঙ্গে থেকে নিজের বিশেষত্ব হারিয়েছে। এই গ্রামে সে খুবই কম আসে। ওর বাবা-মা পর্যন্ত ছেলের কাছে গিয়ে থাকতে চায় না। ওকে আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারি না।
উনি কিন্তু তোমাদের কথা খুব ভাবেন। তা ছাড়া তোমরা কি চাও না হারিয়ে যাওয়া জিনিসগুলোকে ফিরে পেতে?
নিশ্চয়ই চাই। কিন্তু হারিয়ে যায়নি। চুরি করা হয়েছে।
এ-বিষয়ে তোমরা নিঃসন্দেহ?
নিশ্চয়ই। ওই পবিত্র গুহায় ওগুলো রাখা ছিল। কিছুদিন আগে সেগুলো উধাও হয়ে গেল। অথচ ওই পবিত্র মাথা আর গায়ের চামড়া যুগ-যুগ ধরে আমাদের পুর্বপুরুষেরা রক্ষা করে এসেছিলেন। যতদিন ওগুলো নিরাপদে ছিল ততদিন ওই গ্রামে কোনও অশান্তি হয়নি।
কিন্তু যে বা যারা চুরি করবে, তাদের স্বার্থ কী?
প্রধানকে দোভাষী প্রশ্নটা জানাতে তিনি খেপে গিয়ে উত্তেজনা প্রকাশ করলেন। দোভাষী বলল, আজ থেকে অনেক বছর আগে এক সাদা চামড়ার দল এসে তখনকার প্রধানকে রাজি করিয়ে ওই পবিত্র জিনিসগুলো নিয়ে গিয়েছিল তাদের দেশে। এগুলোকে পাহারা দেওয়ার জন্যে গ্রামের দুজন পুরুষ সঙ্গে গিয়েছিল। তখনই সারা পৃথিবীতে জানাজানি হয়ে গেছে ওগুলোর কথা। ওরা অবশ্য ঠিকঠাক ফিরিয়ে দিয়েছিল তবু ওগুলোকে দেখতে পরের বছরগুলোতে সাদা চামড়াদের আসা-যাওয়া চলছিল। বহু টাকা দিয়ে কিনে নিতে চেয়েছিল কেউ-কেউ। আমরা বিক্রি করিনি। সেই লোভে চোর চুরি করল। এর জন্যে যারা দায়ী সেই সাদা চামড়াদের সঙ্গে আমরা কোনও সহযোগিতা করব না।
অর্জুন বলল, তোমাদের গ্রামের ছেলে এখন ডাক্তার। তিনি কখনওই তোমাদের ক্ষতি চাইবেন না। ওই পবিত্র জিনিসগুলো খুঁজে বের করতে তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি সাদা চামড়ার মানুষ নই।
দোভাষী বলল, তুমি পুলিশ নও। দেখে মনে হচ্ছে শরীরে তেমন শক্তি নেই। নিজেই বললে পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতাও নেই। তুমি কী করে খুঁজে বের করবে?
অর্জুন চারপাশে তাকাল। একটা বিশাল পাথর দেখতে পেল সে। ওটাকে সরানো দূরের কথা, নড়াবার শক্তি তার নেই। সে জিজ্ঞেস করল, আপনাদের গ্রামের কেউ ওই পাথরটাকে কিছুটা সরাতে পারবে?
দোভাষী বলল, পাগল। কারও ক্ষমতা নেই ওটাকে সরাবার। তিনটে মানুষ একসঙ্গে চেষ্টা করেও পারবে না।
আমি যদি সরিয়ে দিই?
তুমি! একা। দোভাষী জানাতেই সবাই হেসে উঠল।
অর্জুন চারপাশে তাকাল। একটা কোদালের মতো জিনিস নজরে এল। সে ওটাকে তুলে পাথরের পেছনে চলে এল। বিরাট পাথর দাঁড়িয়ে আছে মাটির ওপর। সে কোদাল চালাল। সবাই ভিড় করে এল তার চারপাশে। প্রায় মিনিট পনেরো লাগল গর্তটাকে বড় করতে। একেবারে পাথরের ধার ঘেঁষে যতটা সম্ভব কাছে গর্তটাকে নিয়ে গেল সে। তারপর উলটো দিকে গিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে পাথরটাকে ঠেলতেই সেটা নড়ে কাত হয়ে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে জনতা গুগুন করে উঠল। অর্জুন দোভাষীকে বলল, তা হলে দেখলে, শুধু শক্তি দিয়ে যেটা সম্ভব নয়, একটু বুদ্ধি খরচ করলে সেটা সম্ভব হয়।
এই একটি ঘটনায় অর্জুনকে ওদের গ্রহণ করা সহজ হয়ে গেল। চাতালে বসিয়ে ওরা ওকে চমরি গাইয়ের দুধ খাওয়াল। অর্জুন দোভাষীকে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের পবিত্র জিনিসগুলো চুরি হয়েছে কোনখান থেকে?
ওকে ওরা গুহার মধ্যে নিয়ে গেল। সে অবাক হয়ে দেখল গুহার প্রান্তে বেদির ওপর বিশাল শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ এরা শৈব? কিন্তু চারপাশে বৌদ্ধমন্দিরের স্মারকচিহ্ন ছড়ানো। ডানদিকে একটা উঁচু পাথর দেখাল দোভাষী। ইয়েতির মাথা এবং ছাল তার ওপর রাখা ছিল। বিদেশ থেকে ফেরার সময় একটা কাচের বাক্স আনা হয়েছিল। ওগুলো তার মধ্যে সংরক্ষিত ছিল।
এই গুহায় ঢোকার অন্য কোনও পথ নেই। যে চুরি করেছে তাকে আসতে হবে সামনে দিয়েই। সন্ধের আগে গুহার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। চুরি হয়েছে রাতেই, কারণ সকালে মন্দিরের দরজা খোলার পরই এগুলোকে আর দেখা যায়নি। অথচ গুহার মুখ বন্ধ ছিল সারারাত।
অর্জুন জিজ্ঞেস করল, এই গ্রামের সবাই কি এই মন্দিরে পুজোর জন্যে আসেন?
দোভাষী জানাল, হ্যাঁ। এখন পর্যন্ত আসে তবে আগের মতো সবাই পুজো দেয় না। বিশেষ করে যারা কাঠমণ্ডুতে গিয়েছে তাদের কেউ-কেউ আলাদা হয়ে গিয়েছে।
পুজোর পুরোহিত কে?
তিনি অসুস্থ। এই কারণে পুজো বন্ধ আছে। ওই পবিত্র জিনিসগুলো চুরি গিয়েছে বলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি সুস্থ হলে আবার পুজো হবে।
আর যদি মারা যান তা হলে নতুন পুরোহিত ঠিক করা হবে।
অমি ওঁর সঙ্গে দেখা করতে পারি?।
গ্রামপ্রধানের সঙ্গে কথা বলে দোভাষী তাকে নিয়ে গেল যে বাড়িতে, তাকে বাড়ি বলা চলে না। কাঠের ঘরটির অবস্থা খুবই করুণ। তবে ঢালু ছাদ এখনও মজবুত। সম্ভবত তুষারের চাপ সহ্য করার জন্যেই ওটুকু রয়েছে। দরজা ভেজানো। দোভাষী সেটাকে ঠেলতেই খুলে গেল। ছোট্ট ঘরের ভেতর থেকে ভ্যাপসা গন্ধ বেরিয়ে এল। দোভাষী তার নিজের ভাষায় কিছু বলে অর্জুনকে ইশারা করল ভেতরে ঢুকতে। কোনওরকমে মাথা নিচু করে ভেতরে কতেই অর্জুন দেখতে পেল আপাদমস্তক কম্বল এবং ভেড়ার লোম সমেত চামড়ার নীচে কেউ শুয়ে রয়েছে। লোকটির মাথার পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে এক বৃদ্ধা।
দোভাষী বলল, চুরি যাওয়ার খবর শোনার পর থেকে সেই যে জ্বর এসেছে তা আর কমছে না। এখন জ্বর বেড়েছে, কথা বলার শক্তি নেই।
অর্জুন মুখ থেকে চাপা সরিয়ে দিতে বলল। দোভাষী সেটা জানাতে বৃদ্ধা কম্বল গলার ওপর নামিয়ে দিল। অর্জুন দেখল ভাঙাচোরা এক বৃদ্ধের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। চোখ বন্ধ। নিশ্বাস পড়ছে দ্রুত। সে কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর ভালই। সে দোভাষীকে জিজ্ঞেস করল, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছ না কেন?
দোভাষী বলল, তিনদিনের পথ। নিয়ে যেতে-যেতে মরে যাবে।
তা হলে কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না?
হচ্ছে। পাশের গ্রামে একজন মানুষ আছেন, যিনি গাছের পাতা-শেকড় দিয়ে অসুখ সারান। তিনি এসে দেখে গেছেন তিনদিন আগে। তাঁর ওষুধই খাওয়ানো হচ্ছে। দোভাষী বলল।
কিন্তু তাতে তো কাজ হচ্ছে না।
কী করা যাবে। অভিশাপ লেগেছে এই গ্রামের ওপর।
অর্জুন ঘর থেকে বেরিয়ে এল। এবার গ্রামের মেয়ে-পুরুষ-বুড়োর দল যে যার বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাকে দেখছে। অর্জুন তাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়তে তারা হাসল। অর্জুন দোভাষীকে বলল, কাঠমপুর হাসপাতালের ডাক্তার কোন বাড়িতে থাকতেন? ওঁর বাবা-মা নিশ্চয়ই বেঁচে আছেন?
তুমি সেখানে যেতে চাও?
হ্যাঁ।
দোভাষী তাকে নিয়ে এল শেষপ্রান্তে। এখানে বরফ নেই। দূরে তুষারের মাঠ পড়ে রয়েছে। বাড়িটি সুন্দর। দেখলেই বোঝা যায় গৃহস্থের অবস্থা ভাল। বাড়ির সামনে কিছু গাছ লাগানো হয়েছে। দোভাষী ডাকতেই এক বৃদ্ধ বেরিয়ে এলেন। লম্বা, মঙ্গোলিয়ান চোখ-মুখ, কিন্তু হাঁটাচলায় অসুস্থতা ধরা পড়ে।
দোভাষী বলল, ইনি ইংরেজি জানেন। বিদেশ ঘুরে এসেছেন। তুমি যার কথা বললে ইনি তার বাবা।
অর্জুন ইংরেজিতে বলল, আমার নাম অর্জুন, আপনার ছেলের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। আপনি যখন ইংরেজি জানেন তখন কথা বলতে অসুবিধে হবে না।
ভদ্রলোক শুন্যে হাত চালালেন, নো ইংলিশ। ওনলি ইয়েস অ্যান্ড নো। নো হ্যাবিট। হিন্দি গোড়া-থোড়া।
অর্জুন হিন্দিতে জিজ্ঞেস করল, আপনিই তো লন্ডনে গিয়েছিলেন?
জি। কুইন্স হাউস। ভেরি বিগ। হাম আভি সিক। ভেরি সিক।
কী হয়েছে আপনার?
হার্ট অ্যাটাক। আমার ছেলে বলেছে ঘরের বাইরে না যেতে, ওঠানামা না করতে। আমার ছেলে ডাক্তার। বলে শ্বাস নিলেন, আচ্ছা, কুইন কি মরে গেছেন? খুব ভাল মেয়ে ছিলেন।
না। উনি ভাল আছেন। ওঁর ছেলের বউ মারা গিয়েছে। তা আপনি যখন অসুস্থ তখন ছেলের কাছে গিয়ে থাকেন না কেন? সেখানে ভাল চিকিৎসা হত। এখানে তো ডাক্তার নেই।
না, না। দিস ইজ গুড। এই জায়গা আমার জায়গা। এখান থেকে গেলে আমি মরে যাব। হাসলেন বৃদ্ধ, তা ছাড়া এই অসুখের যা-যা ওষুধ লাগে, সব ছেলে আমাকে দিয়ে গিয়েছে।
আপনি শুনেছেন নিশ্চয়ই মন্দির থেকে ইয়েতির মাথা আর চামড়া চুরি হয়ে গিয়েছে। শুনেছেন?
শুনেছি। ভেরি স্যাড।
কাউকে সন্দেহ হয় আপনার?
বৃদ্ধ একটু ভাবলেন। তারপর বললেন, যার খুব টাকার লোভ সে নিয়েছে। হিলারি বলেছিল ওগুলো ভালুকের, ইয়েতি বলে কিছু নেই। কিন্তু তবু লোকে বিশ্বাস করে ইয়েতি আছে! যারা বিশ্বাস করে তাদের কাছে বিক্রি করলে লোভী লোকেরা প্রচুর টাকা পাবে।
এই লোভী লোকদের নাম বলতে পারেন?
কী করে বলব কখন কার লোভ হচ্ছে। এই যে এ, এরও লোভ হতে পারে। এখন তো সব কাঠমণ্ডুতে গিয়ে সিনেমা দ্যাখে।
ওগুলো চুরি গিয়েছে বলে গ্রামের সবাই সাদা চামড়াদের ওপর রেগে গেছে। কিন্তু তারা চুরি করেনি। আপনার কী মনে হয়?
আমি জানি না।
আপনি তো বিদেশ গিয়েছিলেন ওগুলো নিয়ে। তখন কেউ চুরি করতে পারেনি। এত বছর পর চুরি হল। সাদা চামড়ার লোক চুরি করতে এত বছর অপেক্ষা করত? কী মনে হয়?
আমি জানি না। শুধু জানি ওরা যেসব জায়গায় থাকে সেখানে কোনও মানুষ থাকতে পারে না। রাস্তায় চলতে গেলে একের সঙ্গে অন্যের ধাক্কা লাগে। ওরকম জায়গায় মানুষ ভাল হতে পারে না।
তা হলে ওদের কুইনকে ভাল মেয়ে বললেন কেন?
ও হো। কুইন যে বাড়িতে থাকে সেখানে ভিড় নেই। বিশাল বাড়ি, বাগান। কত বড়বড় ঘর।
দোভাষী চুপচাপ শুনছিল। এবার সে তাড়া দিল ফেরার জন্যে। অর্জুনের মনে পড়ল বৃদ্ধ একটু আগে বলেছেন যে, তাঁর ছেলে অনেক ওষুধ দিয়ে গেছে। সে বলল, আপনার ছেলে কী কী ওষুধ দিয়েছে দেখতে পারি?
বৃদ্ধ কোনওরকমে ঘরে গেলেন। তারপর ফিরে এলেন একটা টিনের বাক্স নিয়ে। বাক্সটা খুললে হার্ট এবং প্রেশারের ওষুধ দেখতে পেল অর্জুন। প্রায় তিন মাসের ব্যবস্থা করা আছে। তারপর নানান ক্যাপসুল আর ট্যাবলেট নজরে এল। তা থেকে দুটো ক্রোসিন ট্যাবলেট তুলে নিয়ে বাক্সটা ফেরত দিল অর্জুন। আবার আসবে জানিয়ে সে দোভাষীর সঙ্গে ফিরে আসছিল। পুরোহিতের ঘরের সামনে পৌঁছে ও দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। একটা ক্রোসিন ট্যাবলেট বের করে সে দোভাষীকে বলল, এইটে জল দিয়ে খাইয়ে দাও।
এটা খেলে যদি মরে যায়? দোভাষীকে খুব নার্ভাস দেখাল।
তা হলে আমাকে মেরে ফেলল। যদি উনি মরে যান এই কদিনের অসুখের জন্যে মারা যাবেন, ট্যাবলেটের জন্যে নয়।
দোভাষীর কথায় বৃদ্ধা ট্যাবলেটটা জলের সঙ্গে খাইয়ে দিল বৃদ্ধকে। অর্জুন কম্বল এবং ছাল কোমরের নীচে নামিয়ে দিল। তারপর বেরিয়ে এল বাইরে।