আহ্বান
তখন ফাল্গুন মাস, বসন্তে ডালে ডালে আগুন জ্বেলে রাঙাপলাশ হাসছিল,শিমূল ফোঁটা ফোঁটা বুকের রক্ত দিয়ে ফুল ফুটিয়েছিল। আমের মঞ্জরী তার গন্ধ মাখিয়ে দিয়েছিল বাতাসে।বাতাস তখন উতলা হয়ে এসে কানে কানে ফিস ফিস করে বলেছিল-“আমি এসে গেছি।” বাতাসের সেই ফিসফিস,ভ্রমরের গুঞ্জরণ, কৃষ্ণচূড়ার অশ্রুত মর্মরধ্বনি বুকের গভীরে এসে শুনিয়ে গিয়েছিল প্রেমের মর্মগাথা ! অব্যক্ত প্রেমের বার্তা অযুত তরঙ্গে আছড়ে পড়েছিল বুকের ভেতর। তবুও মন ছিল নিরাসক্ত । বিয়ের পর সংসারে মন বসাতে পারেনি তখনো ।পারবে কী করে! বুকের ভেতর সেই আহ্বান! ভোলে কি করে! অস্থির হয়ে ওঠে তার মন । কেউ একজন তো একটানা ডেকেই চলেছে সেই কবে থেকে! স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে এসেছে শ্রীক্ষেত্র পুরীধামে। সমুদ্রের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে আর মুগ্ধ হয়। বুকের ভেতর থেকে কেউ যেন বলে ওঠে- ‘শেষমেশ এলে তাহলে!’
কিছুতেই বুঝতে পারে না এমন কেন হচ্ছে!
হোটেলে ফিরে পরিচ্ছন্ন হয়ে জগন্নাথের মন্দিরে ঢুকতেই অপার্থিব একটা শিহরণ ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। নির্নিমেষে চেয়ে থাকে জগন্নাথের মূর্তির দিকে। বুকের ভেতর হাহাকার জেগে ওঠে তুলির, দুচোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। ভিজিয়ে দিয়েছে বুকের আচ্ছাদন। তুলি বোঝে এতদিন কে ডাকছিল তাকে!
রাতে স্বপ্ন দেখে আলোয় আলোময় এক দেবতনু,তাকে বলছে-
‘আজ বসন্তে এসেছো ! অপরিচয়ের আঁধার যে কাটলো না এখনো ,ভোর হবে কি করে!’
তুলি বলে -‘বারে, সব দায় বুঝি আমার !’
সেই দেবতনু বলে-
‘দেখো একদিন সহস্র শৃঙ্খল দিয়ে গাঁথা সব প্রাচীর যাবে ভেঙ্গে । রাঙা পলাশের আগুনে ডানায় ভর করে তোমার কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে আমার অব্যক্ত প্রেম।সময় হয়ে এসেছে।’
ঘুম ভেঙেছে তুলির, বড়ো প্রসন্ন মন নিয়ে ঘুম ভেঙেছে আজ প্রথমবার।