আসলের চেয়ে সুদ বেশি
সম্পর্কের গভীরতা বুঝতে পারে তমাল এক বিশেষ মুহূর্তে।হ্যাঁ ঠিক বলেছেন ছেলেটি যখন বাবা হলো। অনেক চেষ্টা করে সন্তান পৃথিবীতে এল।ওই ছোট্ট ছোট্ট হাত,পা, দেখে মনে হলো একদিন সবাই এত ছোট থাকে।তারপর মাতৃদুগ্ধ খেয়ে ধীরে ধীরে বড় হওয়া। জন্মের পর বিদিশা ডাক্তারকে বলেছে, আমি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারব না। আমার শরীর নষ্ট হয়ে যাবে।ডাক্তার বলে বাঁধ ভাঙলে সামলাতে পারবেন তো!! পরে বুঝবেন!
তমাল ভাবে আমার মা আধুনিকা ছিলেন না ,আমাকে মাতৃদুগ্ধ থেকে নিশ্চয় বঞ্চিত করে নি। হায়রে আমার মা , বাবা কোলকাতা তে কেমন আছে কে জানে!ছোটজাতের মেয়ে বিয়ে করেছিল বলে আজ বাবা ও মার কাছে সে মৃত। কিন্তু তমালতো একরাশ অভিমান মনের মধ্যে চেপে রেখে একদম চেষ্টা ও করেনি। বাবা ও মা কেমন আছেন!এই একরত্তি শিশু জন্মিয়ে তার বাবাকে শিখিয়ে দিয়েছে সম্পর্কের গভীরতা। বাচ্চার পেট কামড়াতে কঁকিয়ে কেঁদে ওঠে,তখন তমালের পিতৃহৃদয় কেঁদে ওঠে।মনে মনে ভাবে কোলকাতায় গিয়ে বুঝিয়ে মা ও বাবাকে নিয়ে আসবে।সত্যি ছয় বছর পর বাড়ি গিয়ে দেখি বিশাল বাড়িতে মা ও বাবা একা একা দিব্যি দিন কাটাচ্ছেন।হয়তো মনের মধ্যে গভীর ক্ষত! তাঁদের মনে ও একরাশ অভিমান।
আমাকে বাবা জোর করে বার করে দেন।কেন রে এসেছিস!! এতদিনে মনে পড়লো। বিদিশা শাশুড়ি মাকে বলেন নাতির মুখ দেখবেন না মা! হঠাৎ বাচ্চা টা কেঁদে ওঠে। শ্বশুরমশায় ছুটে এসে বাচ্চা টা কোলে নেন। বিদিশা বলে ওঠে আস্তে করে ধরুন সবে এক মাস বয়স। শোনো বাপু জ্ঞান দিও না। আমার ছেলেকে আমরা মানুষ করেছি। আমার বংশের বাতিকে তোমাদের দেব না। তোমরা কেটে পড়ো। ছেলে ও বৌমা চুপ থাকে। শাশুড়ি মা বলেন,ও ছোট্ট সোনা মা ছাড়া থাকবে কি করে! বিদিশা বলে আপত্তি নেই ও তো কৌটোর দুধ বেশি খায়।আসলে ও ব্রাহ্মণ বাড়ির ছেলে মা তো…! কি বললে এই তোমার শিক্ষা ! মায়ের মাতৃত্বে জাতপাত লেখা থাকে। সোজা হেঁটে ঘরে ঢোকো। তোদের এক সাথে বরণ করি। মা বলে বাবা তুই কি তোর বাসাতে চলে যাবি!তাহলে মায়া বৃদ্ধি করতে এলি কেন?? ছেলে বলে আমি বহরমপুর থেকে কোলকাতাতে বদলীর জন্য বলেছি। এবার এখানে পাকাপোক্ত ভাবে থাকব। তোমার বৌমা খুব ভালো। কাজেকর্মে সুনিপুণা। ভালো গান ও জানে। কথায় কথায় সবাই ঠাকুর ঘর থেকে গান শুনতে পায় মঙ্গল দ্বীপ জ্বেলে…। বৌমা স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে পুজো দিচ্ছে। মা ও বাবা ওর সুরেলা গান শুনে বিভোর। বিদিশা ও তমাল আজ খুব সুখী। দাদু ও ঠাম নানান ভাবে নাতিকে নিয়ে ব্যস্ত।