হে আকাশ হে সমুদ্র চঞ্চল। জীবনের যত কিছু গান আমি তোমাদের কাছে, শিখেছিনু শৈশবে কৈশোরে, আজ শুধু সেটুকু সম্বল। গিরি নদী গুহা বন,অরণ্য বিশাল, এই মুগ্ধ ত্রিভুবন, সতত চঞ্চল, তবু যেন সবটুকু নয়। হে জ্যোর্তিময়, শুধু মনে হয়, বিশাল এ আকাশ তলে মানবের মানবতা কতটুকু পেল পরিচয়।
যেন এই সমুদ্র মেখলা পরা ধরণীর বুকে বাল্যশিশু সম এক আজীবন করিয়াছি খেলা। যেন সেই মুগ্ধ গিরি গুহা বনে আসমুদ্র হিমাচলে বসায়াছি মেলা। জীবনের মরণের সুখ- দুখ বরণের, ভরসার ভেলা,তাতে লাগে দোলা এক প্রমত্ত বাতাসে,
জীবনের গান মনে হয়, ভাসে মহাকাশে।
জীবনের সোনা রঙ গোধুলির ধূলি আবছায়ে মুছে যায়, মিশে যায়, আকাশের তারাদের গায়। তারা খসে ঝরে যবে যায়, কী বারতা বয়ে আনে মহাশূন্য হতে! অদম্য কৌতুক ভরে খুঁজে ফিরি তায়। মনে হয়, পৃথিবীর বুকের উপরে, মহাশূন্য হতে কারা নেমে বুঝি আসে আর ফিরে ফিরে যায়, বারে বারেজীবনের খেয়া পারাপার, নিরন্তর যাতায়াত সে মহা সাগরের এপার ওপার। দিন নয় রাত নয় আরো কিছু বিপন্ন বিস্ময়, প্রদোষের অমিয় সুবর্ণ সুধা কত মনমুগ্ধকর, ঊষার আসঙ্গ লিপ্সা অসীম আগ্রহভরে করে যাই যুগ যুগান্তর।।
হে জীবনস্বামী,কবেকার কোন বাল্যকালে যা কিছু জীবন শিক্ষা প্রকৃতির কোলের ভিতরে অকাতরে করেছিলে দান, সেই মহাজীবনের সে সব সম্মান আজো নিয়ে বসে আছে, অতি তুচ্ছ ক্ষুদ্র এই সকরুণ প্রাণ। তোমার পথের পরে বিলায়ে দিয়েছ যেথা,নদী কলতান, ভ্রমরের পাখিদের মায়া ভরা গান। বড় স্নেহ জুড়ে আছে,বড় প্রেম মিশে আছে, বড় মায়া ছুঁয়ে আছে,সকল সংসার কাজে দরবিগলিত এই অশ্রুসিক্ত প্রাণ। বড় ব্যথা লাগে প্রভু,সব কিছু ছেড়ে যেতে স্থান। দাও মোরে দাও প্রভু, দাও সেই অসীম আনন্দ ভরা গান, যে গান শোনাতে পারি মহাবিশ্বলোকে তোমারই এ সসাগরা পৃথিবীর মাঝে,যে ওঙ্কার ধ্বনি আজও বাজে,নিয়ে তব জয়গান, দিয়ে মোর জীবনের সারা মন প্রাণ। ভরিয়া উঠুক চিত্ত, ভরে যাক দেবতার মহিমার গান, তোমারই সে অমৃত লোক হতে, ফিরে ফিরে আসি যেন তোমার সভাতে তোমারেই দানিতে সম্মান।।