রামায়ণ : আরণ্যকাণ্ড – চিত্রকূট পর্ব্বতে শ্রীরাম, সীতা এবং লক্ষ্মণের অবস্থিতি ও রাক্ষসের উৎপাত জন্য তথা হইতে মুনিগণের প্রস্থান
করিলেন অযোধ্যায় ভরত গমন।
চিত্রকূট পর্ব্বতে রহেন তিন জন।।
চিত্রকূট পর্ব্বতে অনেক মুনি বৈসে।
ভাল মন্দ যখন যে রামেরে জিজ্ঞাসে।।
মুনিগণ একদিন করে কাণাকাণি।
জিজ্ঞাসা করেন রাম ধনুর্ব্বাণ-পাণি।।
কহ কহ মুনিগণ কি কর মন্ত্রণা।
আমারো না কহ কেন বাড়াও যন্ত্রণা।।
আমরা সকলে করি একত্র বসতি।
একের ক্ষতিতে হয় সবাকার ক্ষতি।।
যদি কোন বিপদ হয়েছে উপস্থিত।
আমারে জানাও, আমি করিব বিহিত।।
মুনিরা রামের বাক্যে পড়িলেন লাজে।
বৃদ্ধ মুনি উঠিয়া বলেন তার মাঝে।।
যে মন্ত্রণা করিতেছিলাম রঘুবর।
তাহার বৃত্তান্ত কহি তোমার গোচর।।
রাবণের দুই ভাই দুষ্ট নিশাচর।
তার মধ্যে জ্যেষ্ঠ খর, দূষণ অপর।।
তাহার সমন্তগণ চতুর্দ্দিকে ভ্রমে।
যত উপদ্রব করে, প্রবেশি আশ্রমে।।
যজ্ঞ আরম্ভণ মাত্র আসিয়া নিকটে।
যজ্ঞ নষ্ট করে, দ্বিজ পলায় সঙ্কটে।।
রাক্ষসের ডরে লুকাইয়া ঘরে আসি।
ফল মূল কাড়ি খায়, ভাঙ্গয়ে কলসী।।
এই বন ছাড়িয়া যাইব অন্য বন।
কাণাকাণি করিলাম এই সে কারণ।।
মুনিগণ ছাড়ে যদি, শূন্য হবে বন।
শূন্য বনে কেমনে রহিবে তিন জন।।
সীতা অতি রূপবতী এই বন মাঝে।
কেমনে রাখিবা রাম রাক্ষস-সমাজে।।
বিক্রমে বিশাল তুমি, আমি জানি মনে।
কত সম্বরিয়া রাম থাকিবা কাননে।।
আমরা এ বন ছাড়ি অন্য বনে যাই।
তোমার সহিত আর দেখা হবে নাই।।
স্ত্রী পুরুষে মুনিগণ চলেন সত্বর।
যার যেথা ছিল স্থান কুটুম্বাদি ঘর।।
উঠে গেল মুনিগণ, শূন্য দেখা যায়।
শ্রীরাম ভাবেন তবে তাহার উপায়।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের মধুর পাঁচালী।
গাইল অরণ্যকাণ্ডে প্রথম শিকলি।।