আম্ফান
আম্ফান নাম টার মধ্যে আতঙ্ক না থাকলেও সেদিন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সবার কেঁপেছিল। অতিমারীর কারণে দুই হাজার কুড়িতে মানুষ আতঙ্কে যখন উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে, কাজ হারিয়ে শ্রমিক যখন ঘরে ফিরেছে ,বন্ধ ট্রেন _বন্ধ সব রকম পরিবহনব্যবস্থা। বাড়ির আশেপাশে দোকান গুলো কঠোর শাসেন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ঘরের বাইরে জনপ্রাণী নেই। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কে যেমন ভুলতে পারিনি তার থেকে অনেক পরিমাণে বেশি অতিমারীর কারণে ঘরে ঘরে মৃত্যুর কান্না,অসহায় মানুষ ছুটছে তার পরিবারকে বাঁচানোর তাগিদে। ওষুধ বের হয়নি তবে কিভাবে বাঁচাবে প্রাণ ।উৎকণ্ঠায় মানুষের ঘুম নেই। নিজের মানুষকে নিজে সাহায্য করার সাহস পায় না। এমন ভয়ঙ্কর পরিবেশেই আবার আর একবার ভয়ের সঞ্চার। হঠাৎ আম্ফান ঝড়। সারা পশ্চিমবাংলাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গেল। সেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়। সেদিন বোটানিক্যাল গার্ডেন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, সহ পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে কলকাতায় মত পুরাতন গাছ ছিল সব মাটিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল।সেদিন কত পাখির মৃতদেহ পড়ে ছিল গুনে শেষ করে বলা যাবে না। চারিদিকে শুধু মৃত্যুর ছবি। আমার জন্মস্থান সুখচর বাজার পাড়াতে তিনশো বছরের অশথ্থ গাছ পড়ে গেল। কালী মন্দিরের সামনে তিনশো বছরের অধিক বটগাছ ভূপতিত ।আমার প্রিয় নিজের হাতে লাগানো প্রায় ত্রিশ বছরের ল্যাংড়া আম গাছটা মাটির সঙ্গে মিশে গেলো ।সেদিন কান্না থামিয়ে রাখতে পারিনি। বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে কত মানুষ প্রান হারাল। সারা কলকাতা সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে জল ও গাছপালা সহ কত ভাঙ্গা ঘর বাড়ি, মানুষের মৃত্যুর খবর টিভির পর্দায় ঘনঘন আপডেট হতে লাগলো। এরমধ্যে পুলিশ-সাংবাদিক বন্ধু ,নার্স ,রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ডাক্তার প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজে মনোযোগ দিয়ে সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করল। ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা সরকার করেছে। ক্ষতের উপর ক্ষত। প্রতিটি পাড়ায় রাজনৈতিক কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ প্রত্যেকে গৃহহীন ,বয়স্ক ,অসুস্থ মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এত বড় ঝড় আর হয়নি। উত্তাল হাওয়া। দুদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। তাঁর মধ্যে আমার এক উকিল বন্ধুর মা পরলোকগত। ফোনে বারবার জানছি বিদ্যুৎ না থাকার জন্য তারা মৃতদেহ সৎকার করতে পারেনি। আম্ফানে ক্ষতি তো সামান্য নয়, এত বড় একটা ধাক্কা _তার মধ্যে সমস্ত পরিষেবা অফিসে লোক কম, কারণ ট্রেন বন্ধ। মানুষ তার নির্দিষ্ট অফিসে পৌঁছাতে পারছে না, এমতাবস্থায় লোকালয় থেকে মানুষদের নিয়ে পরিষেবা প্রদান করতে হচ্ছে। আম্ফান আমাদের জীবনে একটা অভিশাপের মতো আত্মপ্রকাশ করেছিল।