এক একটা দিন চলে যাচ্ছে
আমি অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছি,
জন্ম থেকেই এগিয়ে যাচ্ছি।
‘জন্ম’কে কথা দিয়েছিলাম
“ঠিক আবার ফিরে আসবো,
যেমন ছিলাম প্রথমে তেমন হয়ে যাবো”
হ্যাঁ, আমি অনেক চেষ্টা করছি ফিরে যাওয়ার।
জন্মের সময় আমি আমার বাড়ির এদিকে ওদিকে যে গাছগুলোকে দেখেছিলাম আজ তারা আর কেউ নেই,
বরং তাদের সেই থাকার জায়গায় অর্থাৎ মাটির বুকে এখন ইয়া বড়ো বড়ো গর্ত হয়ে আছে।
ওদের কিন্তু কেউ কেটে ফেলেনি।
ওরা আজ আর নেই।
কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করছি ওদের ফিরিয়ে আনার।
জন্মের সময় আমার বাড়ির আশেপাশে যা পরিবেশ ছিল তা এখন আর কিছুই নেই।
যেমন, ঐ বোসেদের পুকুরটা বুজিয়ে সেই কবে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে।
ঠিক আমার বাড়ির সামনেই ছিল মাটির এবড়োখেবড়ো পথ,
এখন সেই পথ হয়ে গেছে ‘হাইওয়ে’।
সেই হাইওয়ে দিয়ে দিনে রাতে মিলিয়ে কম করে হলেও একশো দুশোটা বাস লরি চলে
আরও চলে কত রকমের গাড়ি।
সেই আগের পরিবেশ কোথায় গেল?
ছিল তো ভালোই দূষণহীন মুক্ত প্রকৃতি।
তাই আমি অনেক চেষ্টা করছি সেই আগের পরিবেশকে ফিরিয়ে আনার।
জন্মের সময় আমি পৃথিবীটাকে যেমন দেখেছিলাম
এখন তা অনেক বদলে গেছে।
শুধু বদলায়নি সূর্য চাঁদ আর অগণিত তারা।
আচ্ছা, ওরা বদলাচ্ছে না কেন?
ওদের সেই একই আলো, একই দেখতে, একই আকার,
শুধু আমার পৃথিবীরই পরিবর্তন হচ্ছে?
আমি চেষ্টা করছি পৃথিবীকে সেই আগের মতো করে দেওয়ার যেমনটা জন্মের সময় দেখেছিলাম।
দিনের পর দিন দেখছি আমার চামড়ায় ভাঁজ পড়ছে,
চোখেও ভালো দেখতে অসুবিধা হচ্ছে।
তো এই কয়েক মাস আগে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম।
উনি বলেছিলেন, “এসব বয়সের ফল”।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “এই বয়সের কারণে আর কী কী হতে পারে ডাক্তারবাবু?”
তখন জবাব পেয়েছিলাম,
“ক্রমশ দেখবেন আপনার হৃদপিন্ডের ক্রিয়া ধীর গতিতে হচ্ছে,
ঈশ্বর না করুন কোনো বয়সকালীন রোগে আক্রান্তও হতে পারেন।”
এসব শুনে খুব ভেঙে পড়েছিলাম।
এখন আমি আর বাইরেও বেরোতে পারি না
সারাক্ষণ ঘরেই থাকি, কুঁজো হয়ে হাঁটি একটা লাঠিতে ভর দিয়ে।
তবু এখনও চেষ্টা করছি
সেই জন্মের সময় ফিরে যেতে,
সেই আমার মায়ের গর্ভ থেকে যেমন অবস্থায় বেরিয়েছিলাম তেমন অবস্থায় ফিরে যেতে।