আমড়া কাঠের ঢেকি
রতিকান্ত বাবা -মা’র একমাত্র ছেলে। অত্যন্ত অলস প্রকৃতির।সারাদিন ঘুমেতে ভালোবাসে।
রতিকান্তকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, কিন্তু একদিনও সময়মতো পৌঁছতে পারতোনা বলে মাষ্টারমশাই হাতে লাঠি মারতো। একদিন স্কুলের মাষ্টার বাবা রামদাসের কাছে এসে বলে তোর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে কি হবে? ওতো পিছন বেঞ্চে বসে সারাক্ষণ ঘুমায়। রামদাস গরিব, ছেলেকে আর স্কুলে না পাঠিয়ে চাষের কাজ করাবে ঠিক করে। রতিকান্তের সুবিধা হয় । ঘরে খায়দায় আর সারাদিন ঘুমোয়। একদিন রামদাস জমিতে যাওয়ার সময় সকালে দেখে ছেলে ঘুমোচ্ছে, আবার অপরাহ্নেও এসে দেখে ঘুমিয়ে আছে। রামদাস প্রচন্ড রেগে যায় এবং পরদিন ভোরবেলা জোর করে তুলে জমিতে নিয়ে যায়। কোদাল দিয়ে জমি চষার কাজ ছেলেকে করতে দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে চলে যায়। কাজ শেষে ফিরে এসে দেখে ছেলে একটা গাছের তলায় ঘুমাচ্ছে, সামান্য মাত্র জমির মাটি খুঁড়েছে।
রামদাস ছেলেকে ডেকে তুলে বকাবকি করতে করতে বাড়ি নিয়ে আসছে এমন সময় গ্ৰামের জমিদার পাচকড়ি দত্ত দেখে রামদাসকে বলেন, কী রে রতিকান্তকে এতো বকাঝকা করছিস কেন?
রামদাস বলে, কি বলবো ছেলে আমার একটা আমড়া কাঠের ঢেকি। কুঁড়ের বাদশা। লেখাপড়া তো হলোনা, নিয়ে গিয়েছিলাম জমি চষার কাজে। সেখানে কাজ দিয়ে আমি আমার কাজে গেছি, সেখানে গাছের তলায় ঘুমিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিল, একটুও চোষেনি।
পাঁচকড়ি মশাই বললেন, আমি একটা লোক খুঁজছি আমার গরুগুলো চরাবার জন্যে। ওকে দে, আমি কাজ করিয়ে নেবো। ভালো রোজ দেবো, তবে কামাই চলবে না।
রামদাস বলে তা-ই হবে। পরদিন রতিকান্ত পাঁচকড়ি জমিদারের গরু নিয়ে মাঠে যায়। মা খাবার বেঁধে দিয়েছিল, সেগুলো খেয়ে সে দিব্যি ঘুম দেয়। ঘুম যখন ভাঙ্গে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি গরু এধার ওধার খুঁজে জমিদার বাড়িতে দিয়ে আসে।
মা’কে এসে বলে, এ কাজ সে করবেনা। তার খুব ঘুম পায়। গরু হারিয়ে গেলে তখন কী হবে ? মা বলে,কাজ না করলে কি করে হবে ? বসে বসে খাবি আর ঘুমোবি?
বাবার ভয়ে রতিকান্ত পরদিন আবার যায় কাজে। সেদিনও সে ঘুমিয়ে পড়লো। এদিকে গরু পাশের চন্ডী ঘোষের জমির আখের খেত খেয়ে সাফা করে দেয়। নালিশ আসে পাঁচকড়ির কাছে। পাঁচকড়ি রতিকান্তেকে শাসায়, এরপর যদি হয় তাহলে তোর বাবাকে ক্ষতিপূরণ দিত হবে তোর বাবাকে।
এবার সে লোকালয় ছেড়ে দূরে নদীর ধারে গরু চরাতে যায়, যাতে সে ঘুমোলে গরু কারও খেতের ক্ষতি করতে না পারে।
কিন্তু সেখানে আর এক বিপদ। রতিকান্ত মাঠের পাশে ঘুমোচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকালের ছায়া পড়েছে। সেই আলো আঁধারিতে নদীর ওপারের জঙ্গল থেকে বাঘ এসে গরুদের আক্রমণ করে। গরুর চিৎকারে রতিকান্তের ঘুম ভেঙে যায় । দেখে চাষিরা দৌড়াদৌড়ি করছে, অন্যান্য রাখাল সব লাঠি উঁচিয়ে চেঁচাচ্ছে তবু বাঘ তাড়াতে কাছে যাচ্ছে।
রতিকান্ত তাড়াতাড়ি গায়ের জামা খুলে লাঠির মাথায় পেঁচিয়ে তাতে চাষিদের হাতেপায়ে মাখার জন্য আনা সর্ষের তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মশাল বানিয়ে চিৎকার করে ছুটে যায় বাঘের সামনে। আগুন দেখে ভয়ে বাঘ পালায় নদীর ওপারে ।
সবাই রতিকান্তের সাহস দেখে বাহবা দেয়। যে যার গরু নিয়ে রাখালরা ফিরে যায়। ঘটনা শুনে পাঁচকড়ি রতিকান্তকে সাঁড়াশি দেয়। বাবা রামদাস ও মা সাবিত্রী শুনে অবাক। আপ্লুত হয়ে ছেলেকে বলে, দেখ একটা কাজ উৎসাহের সঙ্গে করে কত বাহবা পাচ্ছিস, তোর জন্য গর্বে আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে। তুই যদি আলস্য ত্যাগ করে ঠিকমত কাজ করিস তাহলে আমাদের অভাব থাকবেনা। এরপর থেকে রতিকান্ত উৎসাহের সাথে কাজে মন দেয়।