আধিভৌতিক
ভ্যাম্পায়ার….রক্তচোষা বাদুড় এটাই তো সবাই জানি কিন্তূ আধিভৌতিক রক্তচোষার ঘটনা র কোন বিশ্বাস আমার ছিলো না । ঘটনা চক্রে এমন ই এক আধিভৌতিক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়ে ছিলাম যে এখনও বিশ্বাস হয় না ব্যাপার টা । খুলেই বলী. ….ঘটনা টা ওড়িশা ..মধ্যপ্রদেশসীমান্ত বর্তী একটা প্রান্তিক এলাকার। জঙ্গলপাহাড় ঘেরা আদিম আদিবাসী এলাকা। আমরা জিওলজিক্যাল সার্ভের জন্য ওখানে গিয়েছিলাম ।আদিম এলাকা, অনেক জায়গায় মানুষে র পদচিহ্ন ও পড়েনি । আমার ক্যাম্পে আমি তপন সেন , আমার সাথী রেহান খান ও আমার ফ্রেণ্ড ..ফিলজফার..গাইড…রামদা…ওরেফে জান কীবল্লভ জেনা । উনি ওড়িশা র জাজ পুরের লোক ।মা বাঙালী তাই বাংলা ভালোই বলেন । আমরা যখন এই অঞ্চলে ক্যাম্প করবো জানলেন তখন স্বইচ্ছায় আমা দের দলে যোগ দিলেন , আমাকে ছোটভাইএর মত দেখেন ….তাই হয়তো। বললেন….ওই খন্দ দের বাসভূমিটা খুব সুবিধার জায়গা নয় ।ওখানে অনেক আধিভৌতিক ঘটনা ঘটে বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যাচলে না । তোমরা শহরের ছেলে ,বিশ্বাসই করবে না । আমি আর রেহান হেসে উড়িয়ে দিলাম কথাটা॥
ক্যাম্প করার জন্য যে জায় গাটা ঠিক করলাম ,তার বাম দিক দিয়ে পাকদণ্ডী টা ঊঠে গেছে পাহাড়ে র ওপরে। ডানে কিছুটা সমতল….মালভূমি র মত । একটু দূরে বেশ কিছুটা জুড়ে বড় বড় পাথর। চারপাশে জঙ্গলী গাছের বেষ্টনী । আমাদের সাথের কুলিরা কিছুতেই এখানে ক্যাম্প করবে না , আর কোন উপায় না থাকায় ওরা বাধ্য হয় এখানে ক্যাম্প করতে কারণ কোন সমতল জমিআর এ খানে নে ই। বাধ্য হয়েই তাঁবু খাটায় ।আমাদের কুলিদলের একটি ছেলে এখানে র পাহানে র ছেলে। পাহান অর্থাত গুনীন । ও বললো…” সাব সাসানডিরির কাছে ক্যাম্প লাগা লেন …জায়গাটা ভালো না । ‘ ‘
‘ ‘ সাসান ডিরি” শব্দ টা নতুন শুনলাম , এর মানে সমাধিক্ষেত্র। ওই পাথর চাট্টান গুলো সমাধি ক্ষেত্রের পাথর…গাটা কেমন ছম ছমকরতে লাগলো। কাউকে কিছু বলতে পারলাম না ।
ক্যাম্পের দিন যাপন রোজনামচায় লিখে রাখতাম……..
প্রথম দিন ……. আজ সকলে এমন একটা ঘটনা ঘটল যে মন টা কু ডাক দিলো। রাস্তা তৈরীর জন্য গাছ কাটতে গিয়ে একজন কুলি সাপের কামড় খেল ।তাকে গাড়ি করে কটক পাঠিয়ে দেওয়া হল । জানি না বাঁচবে কিনা ! কুলিরা নি জেদের মধ্যে কিসব আলোচনা করছে…আমাদের দেখলে চুপ করে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় দিন …..আজ দিন টা খুব সুন্দর ভাবে শুরু হল ।স্হানীয় গ্রামের মোড়ল এসে আমাদের
সাথে কথা বার্তা বললেন।সব কাজে সহায়তার আশ্বাসও দিলেন । ওনা র একটা কথাতে কেমন খটকা লাগলো।উনি ‘ ‘ রক্তচোষা” র কথা বলে সবাই কে সাবধান করে দিলেন । এও বললেন ”ও বহুরূপী, সাপ রূপে এসে তোমাদের সাবধান করে গেলেন প্রথমেই।”
সেদিন বিকেল থেকেই আকাশ সেজে উঠেছে মেঘে। ঘন ঘন বিদ্যুত চমকাচ্ছে। আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হল ।আমরা সবাই একটা তাঁবুতেই বসে। রামদা বললেন..”কেন জানি না মন টা কুডাক
দিচ্ছে। আজ কিচু একটা হবেই..” কথা শেষ না হতেই কুলি ঝোপড়া র দিকে হৈ হট্টগোল। টর্চ নিয়ে সবাই গিয়ে শুনি একজন কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ছিলো আর ফেরেনি । বৃষ্টি একটু কমতে আলো নিয়ে সবাই খূঁজতে গিয়ে দেখেপাহাড়ে র ঢালে ওর দেহটা পড়ে আছে।সারা শরীর ফ্যাকাসে…রক্তশূণ্য । যেন ব্লটিং পেপার দিয়ে কেউ সব রক্ত শুষে নিয়েছে।
পাহানে র ছেলেটি বললো…”রক্তচোষার নজর পড়েছে আমাদের ওপর ।আর রেহাই নেই। ক্যাম্প তুলে নিয়ে যেতে হবেই ।” আতঙ্কের আবহে কেউ কিছু বলতে পারছি না । রাত কেটে সকালের প্রতিক্ষা করছি আর প্রার্থনা করছি যাতে সব মঙ্গল হয়।
তৃতীয় দিন …..আজ সব কুলিদের সাথে মিটিং করা হল । ওরা বললো..গ্রাম থেকে মোরগ এনে বলি দেওয়া হবে আর ওই রক্ত সাসান ডিরি তে উৎসর্গ করা হবে। তাহলে বিপদ কেটে যাবে।রেহান প্রচণ্ড প্রতিবাদ করলো!আমাকে ও রামদা কে বললো..”আপনা রা এই অশিক্ষিত লোক গুলোর কথায় নাচছেন ? কিচ্ছু করতে হবে না । ” রামদা ওকে অনেক বারণ করলেন, ও তবুও কুলিদের হাঁকিয়ে দিল । পাহানে র ছেলেটি বললো..”ভাল করলেন না সাব , এর ফল ভুগতে হবে সবাই কে।”
সেদিনসন্ধায় কাজ সেরে ক্যাম্প ফায়ারের পাশেবসে আছি সবাই হঠাৎ সাসানডিরির দিক থেকে অদ্ভুত হাড় হিম করা একটা আওয়াজ
ভেসে আসতে লাগলো….ক্যার.. ক্যার…ক্যার…ঘি..ঘি..ঘি॥
সবাই এসে জড়ো হল আগুনে র পাশে….রামদা বললেন.”বাঘ্যডুম্বা”……মানে বাঘের হাতে অপঘা তে মৃত ব্যক্তির অতৃপ্ত আত্মা,।” সে নাকি এমনি রক্তচোষা হয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়া য় । রেহান ব্যঙ্গ করে বলে বসলো..সব বোগাস।কোন জন্তু হবে।
হঠাৎ সাসান ডিরির দিকে যেন আবছা ছায়ামূর্তি কে দেখতে পেলাম । ঝাকড়া চুল ,জ্বলন্ত দুটোচোখ আর দুটো শ্বাদন্ত …বেরিয়ে আছে মুখ থেকে।রেহান হঠাৎ টর্চ হাতে এগিয়ে গেল ওই মূর্তি লক্ষ্য করে …কেউ ওকে আটকাতে পারলো না ! নি তির অমোঘ টানে ওঅন্ধকারে মিলিয়েগেল ।
অন্ধ কার আদিম অরন্যের কী ভয় ঙ্কর রূপ। এক কটা মুুহুর্ত যেন এক যুগের সমান।অনন্ত অপেক্ষার প্রহর কেটে ভোর হল । সবাই যেন প্রাণ ফিরে পেলাম ।তাড়া তাড়ি সাসানডিরির দিকে গেলাম….কেউ কোথাও নেই। পাকদণ্ডী বেয়ে কিছূটা উঠতেই রাস্তার পাশের ঝোপে রেহানে র রক্তশূণ্য প্রাণ হীন দেহটা পড়ে আছে।গলায় দুটো শ্বাদন্তের দাগ ……রক্তচোষার শিকার ॥