আত্মত্যাগ
তাঁর সেনাবাহিনি গঠন পরিকল্পনা সফল হলে ভারতে ব্রিটিশদের খুঁজে পাওয়া যেত না। ভয়ঙ্কর এই লোকটিকে ব্রিটিশ বাহিনী হন্যে হয়ে খুঁজেছে। আমি আশ্চর্য হলাম যখন আমাকে ব্যবহার করতে
দেখলাম। সমস্ত প্ল্যান ছিল ওনার।লোকটা মোটেই
সামান্য নয়।ভারতকে পরাধীনতার শেকল মুক্ত করতে এক ব্রিটিশকে হত্যা করে ব্রিটিশ পুলিশের
চোখে ধূলো দিয়ে বিপ্লবী পালিয়ে গেল জাপানে।
আশ্রয় দিলেন ব্ল্যাক ড্রাগন পার্টির নেতা মিৎসু তোয়ামা।নিশ্চয়ই স্বার্থ ছিল তোয়ামার। তোয়ামাও পুলিশের নজর এড়াবার জন্য রাসবিহারীকে গচ্ছিত রাখলেন রুটি কারখানার মালিক সোমার কাছে। এটি নিরাপদ আশ্রয় ভেবেছিলেন তিনি। দেখলাম সোমা
আপত্তি না করে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা এক বিপ্লবীকে আশ্রয় দিল।এটা তাঁর গর্ব বলে মনে হয়েছে।
তোয়ামার পরের প্রস্তাব সন ১৯১৮ জাপান।
টোকিওর ষোড়শী তরুণী, নাম তোশিকোর বাবা মি: সোমা। স্কুলছাত্রী, সুন্দরী, পাণিপ্রার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
হঠাৎ ছন্দপতন ঘটাতে চাইল তাদের নিশ্চিন্ত জীবনে।পরাধীন ভারত থেকে পালিয়ে আসা ভারতীয় বিপ্লবী রাসবিহারী বোস বাঁচলেন
তোয়ামার সক্রিয় ভূমিকায়।
জাপান পুলিশ আর ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর থেকে রাসবিহারীকে বাঁচাতে হলে তোয়ামা প্রস্তাব দিলেন সোমার কন্যা তোসিকোর সঙ্গে রাসবিহারীর বিয়ে।এছাড়া রাসবিহারীকে বাঁচানো যাবে না। তার মতে তোসিকো সঙ্গে থাকলে কোন অপরিচিত রাসবিহারীর দিকে সন্দেহের চোখে তাকাবে না।
হতভম্ব সোমা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দিলেন তোসিকোর ওপরেই।
কোন অভাব ছিল না তোসিকোর।বুজলাম না অন্য দেশের এক অজানা বিপ্লবীর স্বার্থে নিজের জীবনের সমস্ত আহ্লাদ বিসর্জন দিল তোসিকো। গড়মিল সে অঙ্কের হিসেবে।
নিজের চাওয়া পাওয়ার হিসেব করল না।
নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি উপেক্ষা করে তোসিকো হাসিমুখে স্বীকার করে নিলেন রাসবিহারী ও নিজের দুর্ভাগ্য।
কোনো দুঃখ নেই তোসিকোর, সব কিছু মেনে নিলেন তিনি। স্বামীকে শেখালেন জাপানি ভাষা, নিজেও স্বামীর থেকে আত্মস্থ করে নিলেন ভারতীয় সংস্কৃতি, খাওয়া দাওয়া, অভ্যাস, সবকিছুই।
আট বছরের সংক্ষিপ্ত বিবাহিত জীবনে সতেরো বার বাসা পরিবর্তন করেছিল, জাপান ও ব্রিটিশ গুপ্তচরদের এড়াতে। পদে পদে বিপদের ভয় ছিল
তাদের।রাসবিহারী স্বীকৃতি পেয়েছিলেন জাপানি নাগরিক হিসেবে।
দুঃসহ জীবনের অবসান ঘটলো ১৯২৩ এর ৯ই জুলাই। নিজের সমস্ত কর্তব্য চুকিয়ে শেষে তোসিকো, একটি পুত্র ও একটি কন্যাকে রেখে
গেলেন।
তোসিকোর নিস্বার্থ আত্মত্যাগে মুগ্ধ আমি
সেই বোমা যে বোমার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছিল
ব্রিটিশ লর্ড হার্ডিঞ্জ।রক্তধারায় ভিজল ভারতের
বুক। আমিও ভারতমাতার কোলে কার্যকারণ সম্পর্কে ইতিহাসের পাতায়।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাসবিহারীকে ইতিহাস মনে রেখেছে।
ইতিহাসের পাতায় তোসিকো স্বীকৃতি পেলেন কতটা?
তোসিকো না থাকলে কী রাসবিহারীর মতো বিপ্লবীকে পেতাম আমরা ? তাঁকে বাঁচানো যেত?
সকলের কী মনে হয়?