Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আতশবাজি || Rana Chatterjee

আতশবাজি || Rana Chatterjee

আতশবাজি

“আরে, ঈশিতা, তুমি চুপ করবে, এবার না হয় দান ধ্যান করা একটু ছাড়ো । তোমার প্রশ্রয়ে দিন কে দিন কাজের মেয়ে গুলো কিন্তু মাত্রা ছাড়াচ্ছে।”কথা গুলো গজ গজ করে রণিত বলার মাঝেই তেলে বেগুনে জ্বলে “আঃ, এতো চেঁচাচ্ছ কেন বলোতো, রাত কটা বাজে, সে খেয়াল আছে তোমার” বলে, তিতলির পিঠ চাপড়ে ঈশিতা ঘুম পাড়াতে লাগলো।

রনিত তখনও একনাগাড়ে রাগের তুবড়ি, চরকি পোড়াতেই ব্যস্ত।একবার শুরু করলে নিজেকে সহজে থামাতে পারে না জেনেও, আবার জের টেনে, “না ঈশিতা এত আস্কারা ওদের দিও না, জানবে ওরা কাজের মেয়ে। এই তো কিছুদিন আগে পুজোর বোনাস দিলে । আবার কি না বাজি কেনার জন্য টাকা দিতে বলছো!আমি ভেবে পাই না কি আশ্চর্য্য মানসিকতা ওদের! জানে বৌদি নরম মনের, হাত পাতলেই, ঠিক জুটিয়ে যাবে। “

“এই ওপাশ ফিরে তুমি ঘুমাও তো যাও, আমি বুঝে নেব “! “কি সেই তুমি দেবে বলছো” রনিতের উৎকণ্ঠা গুগলি শচীন স্টাইলে দুর্দান্ত সামলে আর সাড়া দিলো না ঈশিতা। আগে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঠিক এভাবে লঙ্কাকান্ড করতো রণিত।ইদানিং যেন আরো বেশি খিট খিটে হয়ে গেছে!

তিতলির চার বছর বয়স টা পার হতেই, যখন সে অন্তত নিজের হাতে খেতে শিখেছে, ঈশিতা আবার বইয়ের ধুলো ঝেড়ে একটু একটু করে নিজেকে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য তৈরি করেছে। সংসারের মধ্যে থেকে আসল সত্যটি সে বুঝে গেছে, মেয়েদের অর্থ নৈতিক স্বাধীনতাটাই হলো আসল স্বাধীনতা। এটা খুব সত্যি যে, টাকা রোজগার করে স্বামীর পাশে থেকে হাল ধরলে পতিদেব রা খুশিই হয়, সংসারের শ্রীও ফেরে, নিজের ও কিছু ইচ্ছে মতো কেনা কাটা, শখ আহ্লাদ মেটানো সম্ভব হয়। ঈশিতার আপ্রাণ প্রচেষ্টা ওকে সাফল্যের মুখ দেখিয়ে ছিল দু বছরের মধ্যে বলেই সে স্কুল শিক্ষিকা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে ।পাড়া প্রতিবেশী এমনকি আপন কিছু আত্মীয়স্বজনের আচার আচরণও সে পাল্টে যেতে দেখেছে কিন্তু রণিত সেই একই তালে বইছে।

খুব আক্ষেপ হয় মাঝে মাঝে ঈশিতার ।নিজের মেয়ের জন্য এতো প্যাকেট প্যাকেট ফটকা, ফুল ঝরি, রংমশাল কিনে আনতে পারলো রণিত আর কাজের দিদির ওই টুকু বাচ্ছা মুন্নির জন্য কিছু দিতে গেলেই দাঁত নখ বের করলো ওই ভাবে! বাচ্ছাটার কত আর বয়স, আমাদের তিতলির ই সমবয়সী, কি সুন্দর দুটো বাচ্ছা এক সাথে খেলে যখন ওর মা ওকে সঙ্গে আনে। আর কিনা ওই টুকু বাচ্ছা কে খানিক মোমবাতি, আতশবাজি কেনার পয়সা, দেবে তা নয়, চিৎকার করে গলা ফাটাচ্ছে।

এই সব চিন্তায় ভীষণ মাথা ধরা নিয়ে কাল দেরিতে শুতে গেছিলো সে।যখন ঘুম ভাঙলো, ওরে বাপরে একদম ঘড়িতে পৌনে নটা। কানে এলো রনিতের গলা, তিতলি কে ডাকছে কেন ওভাবে! তবে কি তিতলি কোথাও গেল!এই সব প্রশ্নের ভিড় ঈশিতাকে দৌড়ে ছুট কাটালো।
“কি করছিস রে তিতলি, কৈ রে, গেলি কোথায়, তিতলি “হাঁকতে হাঁকতে রণিত দেখে তিতলি বারান্দার এক কোণে চুপটি করে বসে।”একি রে, তুই এখানে আর আমি হেঁকে ডেকে হয়রান “। বাবার গলা শুনে কেমন একটা ভয়, আড়ষ্টতা জড়ানো সাত বছরের তিতলি প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম । যেন সে কিছু অন্যায় করতে গিয়ে বাবার কাছে ধরা পড়ে গেছে !পেছনে দৌড়ে ততক্ষনে, ” কি হলো মা, কই দেখি তোমার হাতে ওটা কি সোনা” বলে ঈশিতা দেখলো ছোট্ট হাতে আঁকড়ে ধরা একটা ছোট্ট প্লাস্টিক ধরে তিতলি চোখে মুখে, চরম উৎকণ্ঠায় ।তার নরম গাল বেয়ে, হড়হড় করে চোখ দিয়ে জল ঝরছে দেখে, রণিত মেয়েকে জড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। আলতো করে প্লাস্টিকটা খুলে ঈশিতা, রণিত দুজনেই দেখলো, তিতলি ওর আতশবাজি, রংমশাল থেকে, দুটো দুটো করে সরিয়ে রেখেছে ।আর ভেতরে একটা ছোট কাগজে, পেন্সিল দিয়ে অপটু হাতে লিখেছে, “মুন্নি, শুভ দীপাবলি, সাবধানে আতশবাজি পুড়িও কেমন “।খানিক মুখ চাওয়া চাওয়ি করে রণিত চুপ হয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress