Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কিরীটী কথাগুলো বলে

কিরীটী কথাগুলো বলে সহসা কতকটা যেন নাটকীয়ভাবেই চেয়ার থেকে উঠে হঠাৎ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আর ওরা চারটি প্রাণী স্তব্ধ অনড় হয়ে যেমন বসে বা দাঁড়িয়ে ছিল তেমনই রইল।

হঠাৎ একসময় ঘরের অসহনীয় স্তব্ধতা ভঙ্গ করে পরেশই বলে উঠল, ফ্যানটাসটিক্‌–রিডিকুলাস! ভদ্রলোকের ওপরে আমার সত্যিই কিছুটা শ্রদ্ধা ছিল, এখন দেখছি মানুষটা একটা পুরোপুরি হামবাগ! শেষ পর্যন্ত কিনা ধারণা হল তার—আমরাই, মানে আমাদের মধ্যে কেউ একজন সে-রাত্রে নির্বাণীকে হত্যা করেছি আর আমাদের মধ্যে একজন তাকে চেনে বা দেখেছে।

ক্ষীণ গলায় শিখেন্দু বললে, কিন্তু এটা তো ঠিক, কেউ আমরা সত্যি স্টেটমেন্ট দিইনি!

মানে? আমরা মিথ্যে বলেছি? পরেশ রাগত কণ্ঠে শুধাল।

তোমরা বলেছ কিনা তোমরাই জান, তবে আমি বলেছি—

কি?

দশটার আগে একবার আমি ওপরে গিয়েছিলাম।

ওপরে মানে? পরেশ শুধাল।

তিনতলায় নির্বাণীর ঘরে—

সে কি? কেন?

নির্বাণী বরাবর স্পেশাল ব্রা স্টেট এক্সপ্রেস ৫৫৫ খেত তোরা তো জানিস। ওর সিগারেট ফুরিয়ে গিয়েছিল, অথচ সঞ্জীব তখনও যায়নি, তাই নির্বাণী আমাকে বলেছিল তিনতলায় গিয়ে তার ঘর থেকে দু প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আসতে, নির্বাণী প্যাণ্ডেল ছেড়ে যেতে চায়নি।

তারপর?

হঠাৎ কিরীটীর কণ্ঠস্বরে চমকে সকলেই ফিরে তাকাল দরজার দিকে। কিরীটী চলে যায়নি ঘর থেকে বের হয়ে দরজার আড়ালেই চুপটি করে দাঁড়িয়েছিল কারণ সে অনুমান করেছিল তার ঐ কথাগুলো বলে ঘর ছেড়ে চলে যাবার পর চার বন্ধু ব্যাপারটা নিয়ে কোন-না-কোন মন্তব্য হয়তো করবেই। এবং তার অনুমানটা যে মিথ্যা নয় সেটা একটু পরেই প্রমাণিত হওয়ায় সে কান খাড়া করে ওদের কথা শুনছিল।

শিখেন্দুর শেষ কথার সঙ্গে সঙ্গেই সে সাড়া দিয়ে ঘরে এসে ঢুকল।

কিরীটীর অভাবিত অতর্কিত আর্বিভাবে চারজনই যেন বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল কয়েকটা মুহূর্তের জন্য।

পরেশই বলে, কিরীটীবাবু আপনি তাহলে যাননি?

না, পরেশবাবু। হামবাগ হলে অবিশ্যি চলেই যেতাম, কিন্তু শিখেন্দুবাবু—আপনি থামলেন কেন? একটু আগে যা বলছিলেন শেষ করুন। তারপর কখন কোন্ পথে আপনি আবার নীচের প্যাণ্ডেলে ফিরে আসেন সে-রাত্রে? প্লিজ বলুন, চুপ করে থাকবেন না!

শিখেন্দু যেন কেমন যোবাদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিরীটীর মুখের দিকে।

বলুন!

সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছিলাম। আস্তে আস্তে থেমে থেমে কথাগুলো বলল শিখেন্দু।

কতক্ষণ পরে?

মিনিট দশ-বারো পরেই

তবে গোকুল আপনাকে নেমে আসবার সময় দেখতে পেল না কেন?

বলতে পারব না—

কখন গিয়েছিলেন ওপরে?

রাত দশটা বোধ হয় তখন।

তাহলে নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে সেই নীলবসনা রহস্যময়ী নারীর দেখা হয়েছিল?

নীলবসনা রহস্যময়ী নারী! সে আবার কে? পরেশ হঠাৎ প্রশ্ন করল।

নির্বাণীতোষবাবুর হত্যাকারী।

কি বলছেন আপনি কিরীটীবাবু? নির্মল বলল, তাহলে কোন মহিলাই খুনী?

আপাতদৃষ্টিতে তাই বলতে পারেন।….কি শিখেন্দুবাবু, কোন স্ত্রীলোককে দেখেননি তিনতলায়, সে তো আপনার পরে-পরেই ওপরে গিয়েছিল, দেখেননি?

না—না তো বলে শিখেন্দু সকলের মুখের দিকে পর্যায়ক্রমে তাকাল।

না, সত্যি বলছি মিঃ রায়, সে-সময় তিনতলায় কাউকে আমি দেখিনি।

তবে কেন আপনি ওপরে আরো একবার গিয়েছিলেন, আমার বার বার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও স্বীকার করেননি? কেন?

ভয়ে–

ভয়–কিসের ভয়?

যদি আপনি—

আপনাকে সন্দেহ করি, তাই?

হ্যাঁ।

কিরীটী কিছুক্ষণ অতঃপর তাকিয়ে রইলো শিখেন্দুর মুখের দিকে। তারপর বলল, চলুন—আপনি তো বেরুবেন, হাসপাতালে যাবেন?

হ্যাঁ।

চলুন আপনাকে আমি হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে যাব।

শিখেন্দু আর প্রতিবাদ জানাতে পারল না। কিরীটীর সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

গাড়িতে বসে যেতে যেতে কিরীটী শিখেন্দুকে কতকগুলো কথা বলল।

শিখেন্দু শুনে গেল।

হাসপাতালের গেটের সামনে নামিয়ে দেবার সময় কিরীটী বললে, সংবাদগুলো আমার চাই যত তাড়াতাড়ি পারেন দেবেন। সোজা আমার বাড়িতে চলে আসবেন।

শিখেন্দু তখন অনেকটা আবার স্বাভাবিক বোধ করছে নিজেকে। বললে, যাব।

কিরীটীর গাড়ি চলে গেল।

ফেরার পথে কিরীটী ভবানীপুর থানায় নেমে বীরেন মুখার্জীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলল। বাড়িতে এসে যখন গোঁহল, বেলা তখন সাড়ে দশটা।

ওকে ঘরে ঢুকতে দেখে কৃষ্ণা শুধাল, কি ব্যাপার, সক্কাল বেলাতেই কিছু না খেয়েই কোথায় বের হয়েছিলে?

সারকুলার রোডে শিখেন্দুদের মেসে—

কিছু খাবে তত এখন?

না, এক কাপ কফি নিয়ে এস।

কৃষ্ণা ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই কিরীটী সোফা-কাম-বেডটার উপর টান-টান হয়ে শুয়ে পড়ল। দীপিকার কথাই মনের মধ্যে আনাগোনা করছিল কিরীটীর। এই সময় কিন্তু দীপিকার কাছে গিয়ে কোন লাভই নেই। অতীতের সমস্ত স্মৃতি বর্তমানে তার মন থেকে মুছে গিয়েছে। ডাঃ বর্মণ যেমন বলেছেন, দীপিকার পূর্ণ স্মৃতি আবার ফিরে আসবে, কিন্তু কবে কেমন করে আসবে,তা তিনি বলতে পারেন না; তার ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে কিরীটীর চলবে না, তাই সে মনে মনে গাড়িতে আসতে আসতেই সঙ্কল্প করেছিল, দীপিকার পূর্বস্মৃতি ফিরে আসে কিনা সে-সম্পর্কে সে একবার চেষ্টা করে দেখবে।

কারণ কিরীটীর মন কেন যেন প্রথম থেকেই বলছে, দীপিকা হয় হত্যাকারীকে দেখেছিল বা সে বাথরুমে এমন কিছু দেখেছিল যেটা তার মানসিক ভারসাম্য হারাবার কারণ হয়েছিল।

হত্যাকারী কি তখনো বাথরুমের মধ্যেই ছিল? তাই যদি হয় তো, ময়না তদন্ত রিপোর্টে যেমন নিবণীতোষের মৃত্যুর সময় বলছে—সেটা ঠিক নয়, হয়তো দীপিকা ঘরে ঢোকার পরই হত্যাকারী নির্বাণীতোষকে হত্যা করেছে। কিন্তু তাহলে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, হত্যাকারী বাথরুমের মেথরদের যাতায়াতের দরজাটা খুলে পালাল না কেন? আর তা যদি না পালিয়ে থাকে তো কোন্ রাস্তা দিয়ে সে পালাল? সিঁড়িপথ দিয়ে নিশ্চয়ই নয়?

কৃষ্ণা এসে ঘরে ঢুকল, হাতে কফির কাপ।

কফির কাপটা কিরীটীর হাতে তুলে দিয়ে সামনের সোফাটার উপরে বসতে বসতে কৃষ্ণা বলল, দেখ, আমার একটা কথা কাল রাত্রে শুয়ে শুয়ে মনে হচ্ছিল—

কি কথা? কিরীটী স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল।

হত্যাকারীকে দীপিফা বোধ হয় দেখতে পেয়েছিল, শুধু তাই নয়, চিনতে পেরেছিল তাকে।

তার মানে তুমি বলতে চাও কৃষ্ণা, হত্যাকারী দীপিকার কোন পরিচিত জন?

মনে হয় তাই।

হওয়াটা অসম্ভব নয়। তবে পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট যদি সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলে হত্যাকারীর তখন সেখানে উপস্থিত থাকাটা কোন যুক্তিবিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কেন?

কারণ দীপিকা ওপরে গিয়েছিল পৌনে বারোটা নাগাদ, তারপর ব্যাপারটা আবিষ্কৃত হয় এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে পৌনে এগারোটা থেকে পৌনে বারোটা ঐ এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই কোন এক সময় নির্বাণীতোষকে হত্যা করা হয়েছে। খুব সম্ভবত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে। তাই যদি হয়, তবে হত্যার পর আধ ঘণ্টা পনের কুড়ি মিনিট হত্যাকারী বাথরুমে থাকবে কেন?.কাজ শেষ হবার পর তো তার চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

তা স্বাভাবিক, তবে এমনও তো হতে পারে—

কি?

কোন্ পথে পালাবে, কোন্ পথে পালালে যে কারো নজরে পড়বে না সেটা ভাবতে তার কিছু সময় গেছে।

তারপর? পালাল কোন্ পথে? বাথরুমের মেথরদের যাবার দরজা তো বন্ধ ছিল, আর সিঁড়ি দিয়ে পালালে সবার চোখে পড়ে যেত তখন।

পাশের ঘরের সংলগ্ন বাথরুম নেই?

কিরীটী যেন কৃষ্ণার কথায় চমকে উঠে বললে, ঠিক বলেছ! সে ঘরটা তো দেখিনি! বলেই সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ে কিরীটী শিবতোষের বাড়িতে ফোন করল।

শিবতোষ বাড়িতে ছিলেন না। ফোন ধরল তাঁর ছোট মেয়ে স্বাতী, কে?

আমি কিরীটী রায়, আপনি কে?

স্বাতী।

স্বাতী দেবী, আমাকে একটা সংবাদ দিতে পারেন?

কি বলুন?

আপনার দাদা তিনতলায় যে পাশাপাশি দুটি ঘর ব্যবহার করতেন, তার দুটো ঘরেই কি সংলগ্ন বাথরুম আছে?

আছে। ওপরের সব ঘরেই সংলগ্ন বাথরুম আছে, একটা ঘর বাদে।

সে বাথরুমেও নিশ্চয়ই মেথরদের যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে?

পেছনের দিকে একটা সরু ফালি বারান্দা আছে, সেই বারান্দা দিয়েই প্রত্যেকে বাথরুমে ঢোকে, মেথরের সিঁড়িটা লোহার ঘোরানো।

ওপরে গিয়ে চট্ করে একবার দেখে আসবেন, সেই পাশের ঘরের বাথরুমের দরজাটা খোলা মা বন্ধ?

ধরুন, দেখে এসে বলছি।

মিনিট দশেক বাদেই স্বাতী এসে বলল, দরজাটা বন্ধ আছে।

আর একটা কথা, সে রাতের পর কেউ কি তিনতলায় আর গিয়েছে?

না। কেউ যায় না আর ওপরে। মেথররাও না?

না।

কেন?

বাবা বারণ করে দিয়েছেন। ওপরের সব ঘরেই এখন তালা দেওয়া।

বৌদি কেমন আছেন?

সেই রকম।

কিছুই মনে করতে পারছেন না?

না।

ধন্যবাদ। কিরীটী ফোনটা রেখে দিল।

উঃ কৃষ্ণা, তোমার জন্যই রহস্যের রীতিমত শক্ত জট খুলে গেল। কেবল সেদিন থেকে অন্ধকারে হাতড়ে মরছিলাম, অথচ একবারও দ্বিতীয় ঘটনার কথা মনে হয়নি, আশ্চর্য! এতবড় একটা ভুল হল লে আমার? মাথার বস্তুগুলো বোধ হয় সব ফসিল হয়ে গিয়েছে আমার কৃষ্ণা Must retire now, কিরীটীর ছুটি এবারে—

না, কিছুই হয়নি—সব ঠিক আছে।

তবে কথাটা মনে পড়ল না কেন? বুড়ো হয়ে গিয়েছি কৃষ্ণা-বুড়ো হয়ে গিয়েছি, সকলকে প্রণাম জানিয়ে এবারে ছুটি নেব।

হয়ত পরে মনে পড়ত, কৃষ্ণা মৃদু হেসে বলে।

স্বামীকে স্তোক দিচ্ছ?

না গো না। কিরীটী রায় তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কিরীটী রায়ই থাকবে, কিন্তু কফিটা যে ঠাণ্ডা হয়ে গেল!

যাক। জটটাও খুলেছে, আর সেই সঙ্গে এখন যেন অন্ধকারে একটু একটু করে আলোও ফুটে উঠেছে।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *