অসুখ
স্মৃতি ঘেটে এমন এক জীবিকা পর্ব উঠে এলো আজ, যা একদম একক অর্থাৎ নিজস্ব শিল্প ও নিজস্ব ব্যবসা ও আচমকা একদিন ” হাউই” য়ের মতো মিলিয়েও গেল। বড়ো করুন , বড্ড ক্ষণস্থায়ী — তিন চার বছর মনে হয় তার ব্যাপ্তি ।
বলতে হবে ছোট্ট করে কারণ শিরোনাম যে অনুগল্প । কিন্তু একটু বৃহৎ অনু। ফেলে আসা শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক আমার ছোট্ট বেলার “মন কেমন করা ” বোঝাই ঝুড়ি ।
সুরটা বড়ো সুন্দর, ডাকটা ছিল–‘ ” আনায় বারো, দু আনায় পঁচিশ “
অর্থাৎ একটা “ফাউ” যে কথাটি এখন সম্পূর্ণ লুপ্ত । “ইন্সেনটিভ” আছে তা অন্যভাবে । তবে আসলের চেয়ে ফাউ কথাটিতে একটা লোভনীয় আকর্ষণ ছিল। আমার পক্ষে বারোটিই যথেষ্ট, চারটে খেয়ে আর খেতে পারতাম না। খুব ছোট্ট নকুলদানা মাপের এক বিশেষ ধরনের “আঠা কদমা”। এক ডালায় করে এক ভদ্রলোক হেঁকে যেতেন এক এক পাড়ায়। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা অপেক্ষা করতাম কবে ঐ হাঁক শুনবো। হাটু ছাড়িয়ে সাদা বাংলা সার্ট ও ধূতি আর পায়ে ঐ হাঁটু অবধি কালো মোজা ও কালো পাম্পসু , শীত গ্রীষ্ম সব ঋতুতে। ভাবতে একটু অবাক লাগত কিন্তু ক্রীত বস্তুর দিকেই ত নজর ছিল, অপূর্ব সে স্বাদ, তিনি নাকি নিজের হাতেই তৈরী করতেন ।
তারপর হঠাত্ একদিন থেকে আর আসেন না। কি মন খারাপ , কি মন খারাপ ।
তারপর ? ছোট শহর?, সবাই সবার খোঁজ রাখেন। ছোট্ট মনও জানতে পারল একদিন তার অন্তর্ধান রহস্য । কি কস্ট কি কস্ট!!! তখন কস্ট আঠা কদমার জন্য, আর এখন কস্ট মনে , সেই ফেরিওয়ালার জন্য ।
কি অজ্ঞতা কি মূঢ়তা কি রূঢ় মানব সমাজ । রহস্য উদ্ঘাটন হলো তার কালো মোজা পরিধানের। প্রথম ত পায়েই দেখা দেয় তারপর ঠোঁটে!!!
কালো চামড়ায় বেশি পরিস্ফুট । হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, হয়েছিল ” শ্বেতি” যাকে বলা হয় “ধবল”। লজ্জা কি লজ্জা !!! সমাজে ঘৃণা !!! তখন সবাই জানত ধবল হলো ” শ্বেতকুষ্ঠ”।
অতএব ইতি ও ইতিহাস আঠা কদমার। এখন “মেলানিন ” অভাব ও “অ্যালবিনো” সবাই জানেন? কিন্তু কিভাবে সেই ফেরিওয়ালার জীবন কেটেছিল তার খোঁজ কি কেউ রেখেছিলেন । এ পাপ কার? যে এ স্মৃতির বাহক তার মন শুধুই তোলপাড়— আর একটু “আহা” শব্দ । বড়ো কস্ট !!