অর্থমনর্থম্ ২
ব্যোমকেশ উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, ‘এবার চলুন, বাড়িটা একটু ঘুরে দেথা যাক। মৃতদেহ বোধহয় এখনও স্থানান্তরিত হয়নি।’
‘না।’ একটু অপ্রসন্নভাবেই বিধুবাবু উঠিয়া অগ্রবর্তী হইয়া চলিলেন, আমরা তাহার অনুসরণ করিলাম। উপরে উঠিবার সিঁড়ি বারান্দার দুই দিক হইতে উঠিয়া মাঝে চওড়া হইয়া দ্বিতলে পৌছিয়াছে। সিঁড়ির নীচে একটি ঘরের দরজা খোলা দেখা গেল, ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘ও ঘরটি কার?’
বিধুবাবু বলিলেন, ‘ওটা মতিলালের ঘর। বিশেষ কারণবশ তিনি নীচে শোয়াই পছন্দ করতেন। কর্তা অত্যন্ত কড়া মেজাজের লোক ছিলেন, রাত্রি ন’টার পর কারুর বাইরে থাকবার হুকুম ছিল না। এর ঠিক ওপরের ঘরেই কর্তা শুতেন।’
‘ও—আর এ ঘরটি?’ বলিয়া ব্যোমকেশ সিঁড়ির পাশে কোণের ঘরটি নির্দেশ করিল।
‘ওটায় মাখনলাল থাকে।’
‘এরা সবাই যে-যার ঘরে আছেন বোধহয়? অবশ্য মতিলাল ছাড়া?’
‘নিশ্চয়। আমি কড়া হুকুম দিয়ে দিয়েছি, আমার বিনা অনুমতিতে কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যায়। দোরের কাছে কনস্টেবর মোতায়েন আছে।’
ব্যোমকেশ অস্ফুট স্বরে প্রশংসা ও অনুমোদনসূচক কি একটা বলিল, শুনা গেল না। দোতলায় উঠিয়া সম্মুখেই একটা বন্ধ দরজা দেখাইয়া বিধুবাবু বলিলেন, ‘এই ঘরে করালীবাবু শুতেন।’
দরজার সম্মুখে গিয়া হঠ্যাৎ ব্যোমকেশ নতজানু হইয়া ঝুঁকিয়া বলিল, ‘এটা কিসের দাগ? বিধুবাবু ঝুঁকিয়া একবার দেখিলেন, তারপর সোজা হইয়া তাচ্ছিল্যভরে বলিলেন, ‘ও চায়ের দাগ। প্রত্যহ সকালে ঐ মেয়েটি—সত্যবতী—চা তৈরি করে এনে করালীবাবুকে ডাকত—আজ সকালে সাড়া না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখল, তিনি মরে পড়ে আছেন। সেই সময় বোধহয় পেয়ালা থেকে চা চলকে পড়েছিল।’
‘ও—তিনিই বুঝি করালীবাবুর মৃত্যুর কথা জানতে পারেন?’
‘হ্যাঁ।’
দ্বারে চাবি লাগানো ছিল, বিধুবাবু তালা খুলিয়া দিলে আমরা ভিতরে প্রবেশ করিলাম। ঘরটি মাঝারি আয়তনের, আসবাবপত্র বেশি নাই, কিন্তু যে কয়টি আছে, সেগুলি পরিপাটীভাবে সাজানো। মেঝেয় মৃজাপুরীর কার্পেট পাতা; ঘরের মাঝখানে কাজকরা টেবিল-ক্লথে ঢাকা ছোট টিপাই; এক কোণে একটি আলনা—তাতে কোঁচানো থান ও জামা গোছানো রহিয়াছে, জুতাগুলি নীচে বার্ণিশ করা অবস্থায় সারি সারি রাখা আছ। ঘরের বাঁ দিকের কোণে একখানি খাট—খাটের উপর চাদর-ঢাকা একটা বস্তু রহিয়াছে, দেখিলে মনে হয়, যেন কেহ পাশ ফিরিয়া চাদর মুড়ি দিয়া ঘুমাইতেছে। খাটের পাশে একটি টেবিল, তাহার উপর কয়েকটি ঔষধের শিশি ও মেজার গ্লাস সারি দিয়া সাজানো রহিয়াছে। কাচের গেলাস ঢাকা একটি কুঁজা খাটের শিয়রে মেঝের উপর রাখা আছে। মোটের উপর ঘরটি দেখিলে গৃহকর্তা কিরুপ গোছালো লোক ছিলেন, তাহা সহজেই অনুমান করা যায়, এবং বিছানায় শয়ন ঐ চাদর-ঢাকা লোকটি যে গত রাত্রিত এই ঘরেই খুন হইয়াছিল, তাহা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য হইয়া পাড়ে। টিপাইয়ের উপর এক পেয়ালা অনাস্বাদিত চা তখনও রাখা ছিল, ব্যোমকেশ প্রথমে সেই পেয়ালাটাই অনেকক্ষণ ধরিয়া নিরীক্ষণ করিল। শেষে মৃদুস্বরে কতকটা নিজমনেই বলিল, ‘পেয়ালার অর্ধেক চা চলকে পিরিচে পড়েছে, পেয়ালাটা অর্ধেক খালি, পিরিচটা ভরা—কেন?’
বিধুবাবু অধীরভাবে মুখের একটা শব্দ করিয়া বলিলেন, ‘সে কথা তো আগেই বলেছি, মেয়েটি—’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘শুনেছি। কিন্তু কেন?’
বিধুবাবু এই অর্থহীন প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করিলেন না, বিরক্তমুখে জানালার সম্মুখে গিয়া দাঁড়াইলেন।
ব্যোমকেশ সন্তর্পণে চায়ের পেয়ালাটা তুলিয়া লইল। চায়ের উপর একটা শ্বেতাভ ছালি পড়িয়াছিল, চামচ দিয়া চা নাড়িয়া সে আস্তে আস্তে একটু চা মুখে দিল। তারপর পেয়ালাটি যথাস্থানে রাখিয়া দিয়া মুখ মুছিয়া খাটের পাশে গিয়া দাঁড়াইল।
কিছুক্ষণ স্থিরভাবে বিছানার দিকে চাহিয়া থাকিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, ‘মৃতদেহ নাড়াচাড়া হয়নি? ঠিক যেমনটা ছিল তেমনি আছে?’
বিধুবাবু জানালার দিকে তাকাইয়া বলিলেন, ‘হ্যাঁ। কেবল চাদরটা মাথা পর্যন্ত ঢাকা দেওয়া হয়েছে, আর ছুঁচটা বার করে নিয়েছি।’
ব্যোমকেশ ধীরে ধীরে চাদরটি তুলিয়া লইল। শুষ্ক শীর্ণ লোকটি, যেন দেয়ালের দিকে পাশ ফিরিয়া ঘুমাইতেছে। মাথার চুল সব পাকিয়া যায় নাই, কপালের চামড়া কুঁচকাইয়া কয়েকটা গভীর রেখা পড়িয়াছে। মুখে মৃত্যু-যন্ত্রণার কোনও চিহ্ন নাই।
ব্যোমকেশ লাস না সরাইয়া পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে পরীক্ষা করিল। ঘাড়ের চুল সরাইয়া দেখিল, নাকের কাছে ঝুঁকিয়া অনেকক্ষণ কি নিরীক্ষণ করিল। তারপর বিধবাবুকে ডাকিয়া বলিল, ‘আপনি নিশ্চয় খুব ভালো করেই লাস পরীক্ষা করেছেন, তবু দুটো বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ঘাড়ে তিনবার ছুঁচ ফোটানোর দাগ আছে।’
বিধুবাবু পূর্বে তাহা লক্ষ্য করেন নাই, এখন তাহা দেখিয়া বলিলেন, ‘হ্যাঁ—কিন্তু ও বিশেষ কিছু নয়। মেডালা আর মেরুদন্ডের সন্ধিস্থলটা খুঁজে পায়নি, তাই কয়েকবার ছুঁচ ফুটিয়েছে। দ্বিতীয় বিষয়টি কি?’
‘নাকটা দেখেছেন?’
‘নাক?’
‘হ্যাঁ—নাক।’
বিধুবাবু নাক দেখিলেন। আমিও ঝুঁকিয়া দেখিলাম, নাসারন্ধ্রের চারিদিকে কয়েকটা ছোট ছোট কালো দাগ রহিয়াছে, শীতের সময় গায়ের চামড়া ফাটিয়া যেরুপ দাগ হয়, সেইরুপ।
বিধুবাবু বলিলেন, ‘বোধহয় সর্দি হয়েছিল। ঘন ঘন নাম মুছলে ওরকম দাগ হয় এ থেকে আপনি কি অনুমান করলেন? বিধুবাবুর স্বর বিদ্রুপ-তীক্ষ্ণ।
‘কিছু না—কিছু না। চলুন, এবার পাশের ঘরটা দেখা যাক। ওটা বোধহয় করালীবাবুর বসবার ঘর ছিল।’
পাশের ঘরে টেবিল, চেয়ার, টাইপ রাইটার, বইয়ের আলমারি ইত্যাদি ছিল—এই ঘরেই করালীবাবু অধিকাংশ সময় কাটাইতেন। বিধুবাবু টেবিলের দেরজা নির্দেশ করিয়া বলিলেন, ‘এই দেরাজে উইলগুলো পাওয়া গেছে।’
ব্যেমকেশ এই ঘরটাও ভাল করিয়া পরীক্ষা করিল, কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। দেরাজে অন্য কোনও কাগজপত্র ছিল না। ঘরের অপর দিকে ছোট একটি গোসলখানা—ব্যোমকেশ সেটাতে একবার উঁকি মারিয়া ফিরিয়া আসিল, বলিল, ‘এখানে কিছু দেখবার দরকার নেই। এবার চলুন সুকুমারবাবুর ঘরে—তিনি মৃতের উত্তরাধিকারী না? ভাল কথা, ছুঁচটা একবার দেখি।’
বিধুবাবু পকেট হইতে একটা খাম বাহির করিয়া দিলেন। ব্যোমকেশ তাহার ভিতর হইতে একটি ছুঁচ বাহির করিয়া দুই আঙুলে তুলিয়া ধরিল। সাধারণ ছুঁচ অপেক্ষা আকারে একটু বড় ও মোটা—অনেকটা কাঁথা সেলাইয়ের ছুঁচের মত; তাহার প্রান্ত হইতে একটু সুতা ঝুলিতেছে। ব্যোমকেশ বিস্ফারিত-নয়নে কিছুক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া চাপা-স্বরে কহিল, ‘আশ্চর্য! ভারি আশ্চর্য!
‘কি?’
‘সুতো। দেখছেন, ছুঁচে সুতো পরানো রয়েছে—কালো রেশমের সুতো!’
‘তা তো দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ছুঁচে সুতো পরানো থাকাতে আশ্চর্যটা কি?’
ব্যোমকেশ এবার বিধুবাবুর মুখের দিকে তাকাইল, তারপর যেন একটু লজ্জিতভাবে বলিল, ‘তাও বটে, আশ্চর্য হবার কি আছে। ছুঁচে সুতো পরানো তো হয়েই থাকে, তার জন্যেই তো ছুঁচের সৃষ্টি!’ ছুঁচ খামে ভরিয়া বিধুবাবুকে ফেরত দিল, বলিল, ‘চলুন, এবার সুকুমারবাবুকে দেখা যাক।’
বারান্দার বাঁ দিকের মোড় ঘুরিয়া কোণের ঘরটা সুকুমারবাবুর। দ্বার ভেজানো ছিল, বিধুবাবু নিঃসংশয়ে দ্বার ঠেলিয়া ভিতরে প্রবেশ করিলেন।
সুকুমার টেবিলের উপর কনুই রাখিয়া দু‘হাতে মুখ ঢাকিয়া বসিয়াছিল, আমরা ঢুকিতেই তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাঁড়াইল। ঘরের এক ধারে খাট, অপর ধারে টেবিল, চেয়ার ও বইয়ের আলমারি। কয়েকটা তোরঙ্গ দেয়ালের এক ধারে উপরি উপরি করিয়া রাখা আছে। সুকুমারের বয়স বোধ করি চব্বিশ-পঁচিশ হইবে; চেহারাও বেশ ভাল, ব্যায়ামপুষ্ট বলিষ্ঠগোছের দেহ। কিন্তু বাড়িতে এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার ফলে মুখ শুকাইয়া, চোখ বসিয়া গিয়া চেহারা অত্যন্ত শ্রীহীন হইয়া পড়িয়াছে। আমাদের তিনজনকে একসঙ্গে প্রবেশ করিতে দেখিয়া তাহার চোখে একটা ভয়ের ছায়া পড়িল।
বিধুবাবু বলিলেন, ‘সুকুমারবাবু, ইনি—ব্যোমকেশ বক্সি—আপনার সঙ্গে কথা কইতে চান।’
সুকুমার গলা সাফ করিয়া বলিল, ‘বসুন।’
ব্যোমকেশ টেবিলের সম্মুখে বসিল। একখানা বই টেবিলের উপর রাখা ছিল, তুলিয়া লইয়া দেখিল—গ্রে’র অ্যানাটমি। পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে বলিল, ‘আপনি কাল রাত বারোটার সময় কোথা থেকে ফিরেছিলেন সুকুমারবাবু?’
সুকুমার চমকিয়া উঠিল, তারপর অস্ফুট স্বরে বলিল, ‘সিনেমায় গিয়েছিলুম।’
ব্যোমকেশ মুখ না তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘কোন সিনেমায়?’
‘চিত্রা।’
বিধুবাবু একটু ধমকের সুরে বলিলেন, ‘এ আমাকে আগে বলা উচিৎ ছিল। বলেননি কেন?’
সুকুমার আমতা-আমতা করিয়া বলিল, ‘দরকারি কথা বলে মনে হয়নি, তাই বলিনি—’
বিধুবাবু গম্ভীর মুখে বলিলেন, ‘দরকারী কি অদরকারী, সে বিচার আমরা করব। আপনি যে চিত্রায় গিয়েছিলেন, তার কোন প্রমান আছে?’
সুকুমার কিছুক্ষণ নতমুখে চিন্তা করিল, তারপর আলনায় টাঙানো পাঞ্জাবির পকেট হইতে একখন্ড রঙীন কাগজ আনিয়া দেখাইল। কাগজখানা সিনেমা টিকিটের অর্ধাংশ, বিধুবাবু সেটা ভাল করিয়া দেখিয়া নোটবুকের মধ্যে রাখিলেন।
ব্যোমকেশ বইয়ের পাতা উল্টাইতে উল্টাইতে বলিল, ‘সন্ধ্যের ‘শো’ তে না গিয়ে ন’টার ‘শো’ তে গিয়েছিলেন—এর কোনও কারণ ছিল কি?’
সুকুমারের মুখ ফ্যাকাসে হইয়া গেল, সে অনুচ্চ স্বরে বলিল, ‘না, কারণ এমন কিছু—’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘বেশি রাত্রি পর্যন্ত বাইরে থাকা করালীবাবু পছন্দ করেন না, এ কথা নিশ্চয় জানা ছিল?’
সুকুমার উত্তর দিতে পারিল না, পাংশুমুখে দাঁড়াইয়া রহিল।
হঠ্যাৎ তাহার মুখের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে চাহিয়া ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘করালীবাবুর সঙ্গে আপনার শেষ দেখা কখন হয়েছিল?’
একটা ঢোক গিলিয়া সুকুমার কহিল, সন্ধ্যে পাঁচটার সময়।’
‘আপনি তাঁর ঘরে গিয়েছিলেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘কেন?’
সুকুমার জোর করিয়া নিজের কণ্ঠস্বর সংযত করিয়া ধীরে ধীরে বলিল, ‘মেসোমশাইকে উইল সম্বন্ধে কিছু বলতে গিয়েছিলুম। তিনি মতিদাদাকে বঞ্চিত করে আমার নামে সমস্ত সম্পত্তি উইল করেছিলেন; এই নিয়ে মতিদা’র সঙ্গে দুপুরবেলা তাঁর বচসা হয়। আমি মেসোমশাইকে বলতে গিয়েছিলুম, আমি একা তাঁর সম্পত্তি চাই না, তিনি যেন সবাইকে সমান ভাগ করে দেন।’
‘তারপর?’
‘আমার কথা শুনে তিনি আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন।’
‘আপনিও বোধহয় বেরিয়ে গেলেন?’
‘হ্যাঁ । সেখান থেকে আমি ফণীর ঘরে গিয়ে বসলুম। ফণীর সঙ্গে কথা কইতে কইতে রাত হয়ে গেল। মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই ভাবলুম, বায়োস্কোপ দেখে আসি; ফণীও যেতে বললে। তাই রাত্রে চুপি চুপি গিয়েছিলুম, ভেবেছিলুম মেসোমশাই জানতে পারবেন না।’
সুকুমারের কৈফিয়ত শুনিয়া বিধুবাবু সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হইয়াছেন, তাহা বেশ বুঝা গেল। ব্যোমকেশের মুখ কিন্তু নির্বিকার হইয়া রহিল। বিধুবাবু বেশ একটু কঠিন স্বরে বলিলেন, ‘আপনার মনের কথা কি বলুন তো ব্যোমকেশবাবু? আপনি কি সুকুমারবাবুকে খুনী বলে সন্দেহ করেন?’
ব্যোমকেশ উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, ‘না না, সে কি কথা—চলুন, এবার এঁর ভগিনীর ঘরটা—’
বিধুবাবু অত্যন্ত রূঢ়ভাবে বলিলেন, ‘চলুন। কিন্তু অযথা একটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করবার কোনো দরকার ছিল না, সে কিছু জানে না। তাকে যা জিজ্ঞেস করবার আমি জিজ্ঞাসা করে নিয়েছি।
ব্যোমকেশ কুণ্ঠিতভাবে বলিল, ‘সে তো নিশ্চয়। তবু একবার—’
বারান্দা যেখানো মোড় ফিরিয়াছে, সেই কোণের উপর মেয়েটির ঘর; বিধুবাবু গিয়া দরজায় টোকা মারিলেন। আধ মিনিট পরে সতের-আঠারো বছরের মেয়ে দরজা খুলিয়া আমাদের দেখিয়া কবাটের পাশে সরিয়া দাড়াইল। আমরা সঙ্কুচিত-পদে ঘরে প্রবেশ করিলাম। সুকুমারও আমাদের পিছনে পিছনে আসিয়াছিল, সে গিয়া ক্লান্তভাবে বিছানায় বসিয়া পড়িল।
ঘরে ঢুকিবার সময় মেয়েটিকে একবার দেখিয়া লইয়াছিলাম। তাহার গায়ের রঙ ময়লা, লম্বা রোগা গোছের চেহারা, কাঁদিয়া কাঁদিয়া চোখ দু’টি লাল হইয়া উঠিয়াছে, মুখও ঈষৎ ফুলিয়াছে; সুতরাং সে সুশ্রী কি কুশ্রী, তাহা বুঝিবার উপায় নাই। মাথার চুল রুক্ষ। এই শোকে অবসন্ন মেয়েটিকে জেরা করার নিষ্ঠুরতার জন্যে মনে মনে ব্যোমকেশের উপর রাগ হইতেছিল, কিন্তু তাহার কুণ্ঠার আড়ালে যে এক দৃঢ় সঙ্কল্পিত উদ্দেশ্য রহিয়াছে, তাহও বুঝিতে পারিতেছিলাম। ব্যোমকেশ মেয়েটিকে একট নমস্কার করিয়া বিনীতভাবে বলিল, ‘আপনাকে একটু কষ্ট দেব, কিছু মনে করবেন না। এ রকম একটা ভয়ানক দুর্ঘটনা যখন বাড়িতে হয়ে যায়, তখন বোঝার ওপর শাকের আঁটির মত পুলিসের ছোটখাটো উৎপাতও সহ্য করতে হয়—’
বিধুবাবু ফোঁস করিয়া উঠিলেন, ‘পুলিসের নামে বদনাম দেবেন না, আপনি পুলিস নন।’
ব্যোমকেশ সেদিকে কর্ণপাত না করিয়া বলিল, ‘বেশি নয়, দু’ একটা সাধারণ প্রশ্ন আপনাকে করব। বসুন ।’ বলিয়া ঘরের একটি মাত্র চেয়ার নির্দেশ করিল।ভ
মেয়েটি বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিতে একবার ব্যোমকেশের দিকে তাকাইল। তারপর চাপা ভাঙা গরায় বলিল, ‘আপনি কি জানতে চান, বলুন। আমি দাঁড়িয়েই জবাব দিচ্ছি।’
‘বসবেন না? আচ্ছা, আমিই তাহলে বসি।’ চেয়ারে বসিয়া ব্যোমকেশ একবার ঘরের চারিদিকে চাহিয়া দেখিল। এ ঘরটিও সুকুমারের ঘরের মত অত্যন্ত সাদাসিধা—আসবাবের বাহুল্য নাই। খাট, চেয়ার, বইয়ের আলমারি; বাড়তির মধ্যে একটা দেরাজযুক্ত ড্রেসিং টেবিল।
কড়িকাঠের দিকে অন্যমনস্কভাবে তাকাইয়া ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘আপনিই রোজ সকালে করালীবাবুকে ডাকতেন?’
মেয়েটি নীরবে ঘাড় নাড়িল।
ব্যোমকেশ বলিল, ‘আজ তাহলে চা দিতে গিয়ে আপনি প্রথম জানতে পারলেন যে তিনি মারা গেছেন?’
মেয়েটি আবার ঘাড় নাড়িল।
‘তার আগে আপনি কিছু জানতেন না?’
বিধুবাবু গলার মধ্যে গজ্গজ্ করিয়া বলিলেন, ‘বাজে প্রশ্ন, বাজে প্রশ্ন। একেবারে foolish!’
ব্যোমকেশ যেন শুনিতে পায় নাই, এমনিভাবে বলিল, ‘রাত্রিতে করালীবাবুর দরজা খোলা থাকত?’
‘হ্যাঁ। এ বাড়ির কারুর দরজা বন্ধ করে শোবার হুকুম ছিল না। মেসোমশাই নিজেও রাত্রিতে দরজা খুলে শুতেন।’
‘বটে! তাহলে—’
বিধুবাবু আর সহ্য করিতে না পারিয়া বলিয়া উঠিলেন, ‘ঢের হয়েছে, এবার উঠুন। যত সব বাজে প্রশ্ন করে বেচারীকে বিরক্ত করবার দরকার নেই। আপনি ক্রস্ একজামিন করতে জানেন না—’
এতক্ষণে ব্যোমকেশের বিনীতভাবের মুখোশ খসিয়া পড়িল। খোঁচা-খাওয়া বাঘের মত সে বিধুবাবুর দিকে ফিরিয়া তীব্র অথচ অনুচ্চ কণ্ঠে কহিল, ‘যদি বার বার বিরক্ত করেন, তাহলে কমিশনার সাহেবকে জানাতে বাধ্য হবে যে, আপনি আমার অনুসন্ধানে বাধা দিচ্ছেন। আপনি জানেন, এ ধরণের কেস সাধারণ পুলিসের এলাকায় পড়ে না—এটা সি আই ডি’র কেস?’
গালে চড় খাইলেও বোধ করি বিধুবাবু এত স্তম্ভিত হইতেন না। তিনি আরক্তচক্ষুতে কটমট করিয়া কিছুক্ষণ ব্যোমকেশের পানে তাকাইয়া রহিলেন। তারপার একটা অর্ধোচ্চারিত কথা গিলিয়া ফেলিয়া গট্গট্ করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন।
ব্যোমকেশ মেয়েটির দিকে ফিরিয়া আবার আরম্ভ করিল, ‘আপনি করালীবাবুর মৃত্যুর কথা জানতেন না? ভেবে দেখুন।’
‘ভেবে দেখেছি, জানতুম না।’ মেয়েটির গলার আওয়াজে একটু জিদের আভাস পাওয়া গেল। ব্যোমকেশ কিছুক্ষাণ ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া চুপ করিয়া রহিল। তারপর বলিল, ‘যাক। এখন আর একটা কথা বলুন তো, করালীবাবু চায়ে ক’ চামচ চিনি খেতেন?’
মেয়েটি এবার অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল, শেষে বলিল, ‘চিনি? মেসোমশাই চায়ে চিনি একটু বেশি খেতেন, তিন-চার চামচ দিতে হত—’
বন্দুকের গুলির মত প্রশ্ন হইল, ‘তবে আজ চায়ে আপনি চিনি দেননি কেন?’
মেয়েটির মুখ একেবারে ছাইয়ের মত হইয়া গেল, ত্রাস-বিস্ফারিত নয়নে সে একবার চারিদিকে চাহিল। তারপর অধর দংশন করিয়া অতিকষ্টে নিজেকে সম্বরণ করিয়া বলিল, ‘বোধহয় মনে ছিল না, কাল থেকে আমার শরীরটা ভাল নেই—’
‘কাল কলেজে গিয়েছিলেন?’
অস্পষ্ট অথচ বিদ্রোহপূর্ণ উত্তর হইল, ‘হ্যাঁ।’
অলসভাবে চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া ব্যোমকেশ ধীরে ধীরে বলিল, ‘সব কথা খুলে বললে আমাদের অনেক সুবিধা হয়, আপনাদেরও হয়তো সুবিধা হতে পারে।’
মেয়েটি ঠোট টিপিয়া দাঁড়াইয়া রহিল, উত্তর দিল না।
ব্যোমকেশ আবার বলিল, ‘সব কথা বলবেন কি?’
মেয়েটি আস্তে আস্তে কাটিয়া কাটিয়া বলিল, ‘আমি আর কিছু জানি না।’
ব্যোমকেশ একটা নিশ্বাস ফেলিল। এতক্ষণ সে টেবিলের উপর রক্ষিত একটা সেলাইয়ের বাক্সের দিকে চাহিয়া কথা কহিতেছিল, এবার টেবিলের নিকট গিয়া দাঁড়াইল। বাক্সটা নির্দেশ করিয়া বলিল, ‘এটা আপনার বোধ হয়?’
‘হ্যাঁ।’
বাক্সটা ব্যোমকেশ খুলিল। বাক্সর মধ্যে একটা অসমাপ্ত টেবিল-ক্লথ ও নানা রঙের রেশমী সুতা তাল পাকানো ছিল। সুতার তালটা তুলিয়া লইয়া ব্যোমকেশ নিজমনেই বলিতে লাগিল, ‘লাল, বেগুনী, নীল, কালো—হুঁ—কালো—’ সুতা রাখিয়া দিয়া বাক্সর মধ্যে কি খুঁজিল, পাট-করা টেবিল-ক্লথটা খুলিয়া দেখিল; তারপর মেয়েটির দিকে ফিরিয়া বলিল, ‘ছুঁচ কই?’
মেয়েটি একেবারে কাঠ হইয়া গিয়াছিল, তাহার মুখ দিয়া কেবল বাহির হইল—‘ছুঁচ?’
ব্যোমকেশ বলিল—‘হ্যাঁ—ছুঁচ। ছুঁচ দিয়েই সেলাই করেন নিশ্চয়। সে ছুঁচ কোথায়?’
মেয়েটি কি বলিতে গেল, কিন্তু কিছু বলিতে পারিল না; হঠাৎ ফিরিয়া ‘দাদা’ বলিয়া ছুটিয়া গিয়া সুকুমার যেখানে বসিয়াছিল, সেইখানে তাহার কোলের উপর মাথা রাখিয়া কাঁদিয়া উঠিল। চাপা কান্নার আবেগে তাহার সমস্ত দেহ কাঁপিয়া উঠিতে লাগিল।
সুকুমার বিহ্বলের মত তাহার মুখটা তুলিবার চেষ্টা করিতে করিতে বলিতে লাগিল, ‘সত্য—সত্য—?’
সত্যবতী মুখ তুলিল না, কাঁদিতেই লাগিল। ব্যোমকেশ তাহাদের নিকটে গিয়ে খুব নরম সুরে বলিল, ‘ভাল করলেন না, আমাকে বললে পারতেন। আমি পুলিস নই—শুনেছেন তো। বললে হয়তো আপনাদের সুবিধা হত—চল অজিত।’
ঘর হইতে বাহিরে আসিয়া ব্যোমকেশ সন্তর্পণে দ্বার ভেজাইয়া দিল; কিছুক্ষণ ভ্রু কুঞ্চিত করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিয়া হঠাৎ মুখ তুলিয়া বলিল, ‘এবার?—হ্যাঁ—ফণীবাবু। চল, বোধহয় ওদিকের ঘরটা তাঁর।’
করালীবাবুর ঘর পার হইয়া বারান্দার অপর প্রান্তের মোড় ঘুরিয়া পাশেই একটা দরজা পড়ে, ব্যোমকেশ তাহাতে টোকা মারিল।
একটি কুড়ি-বাইশ বছর বয়সের ছোকরা দরজা খুলিয়া দিল। ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘আপনিই ফণীবাবু?’
সে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, ‘হ্যাঁ—আসুন।’
ফণীর চেহারা দেখিয়াই মনে হয়, তাহার শরীরে কোথাও একটা অসঙ্গতি আছে; কিন্তু সহসা ধরা যায় না। তাহার দেহ বেশ পুষ্ট, কিন্তু মুখখানা হাড় বাহির করা; বহুদিনের নিরুদ্ধ বেদনা যেন অল্পবয়সেই তাহার মুখখানাকে রেখা-চিহ্নিত করিয়া দিয়াছে। আমরা ঘরে প্রবেশ করিতেই সে আগে আগে গিয়া একটা চেয়ার নির্দেশ করিয়া বলিল, ‘বসুন।’ তখন তাহার হাঁটার ভঙ্গী দেখিয়া বুঝিলাম, শারীরিক অসঙ্গতিটা কোনখানে। তাহার বাঁ পা’টা অস্বাভাবিক সরু—চলিত কথায় যাহাকে ‘ছিনে-পড়া’ বলে, তাই। ফলে, হাঁটিবার সময় সে বেশ একটু খোঁড়াইয়া চলে।
আমি বিছানার এক পাশে বসিলাম, ফণী আমার পাশে বসিল। ব্যোমকেশ প্রথমটা যেন কি বলিবে ভাবিয়া পাইল না, শেষে একটু ইতস্তত করিয়া বলিল, ‘এই ব্যাপারে পুলিস আপনার দাদা মতিলালবাবুকে সন্দেহ করে, আপনি জানেন বোধ হয়?’
ফণী বলিল, ‘জানি; কিন্তু আমিও জোর করে বলতে পারি যে, দাদা নির্দোষ। দাদা ভয়ানক রাগী আর ঝগড়াটে—কিন্তু সে মামাকে খুন করবে, এ আমি বিশ্বাস করতে পারি না।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘বিষয় থেকে বঞ্চিত হবার রাগে তিনি এ কাজ করতে পারেন না কি?’
ফণী বলিল, ‘সে অজুহাত শুধু দাদার নয়, আমাদের তিন ভায়েরই আছে। তবে শুধু দাদাকেই সন্দেহ করবেন কেন?’
ব্যোমকেশ প্রশ্নটা এড়াইয়া গিয়া বলিল, ‘আপনি যা জানেন, সব কথাই বোধহয় পুলিসকে বলেছেন, তবে দু’ একটা কথা জানতে চাই—’
ফণী একটু বিস্মিত হইয়া বলিল, ‘আপনি কি পুলিসের লোক নন? আমি ভেবেছিলুম, আপনারা সি আই ডি—’
ব্যোমকেশ সাহাস্যে মাথা নাড়িয়া বলিল, ‘না, আমি একজন সামান্য সত্যাম্বেষী মাত্র—’
বিস্ফারিত চক্ষে ফণী বলিল, ‘ব্যোমকেশবাবু? আপনি সত্যাম্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী?’
ব্যোমকেশ ঘাড় নাড়িল, ‘এখন বলুন তো, করালীবাবুর সঙ্গে বাড়ির আর সকলের সম্বন্ধটা কি রকম ছিল? অর্থাৎ তিনি কাকে বেশি ভালবাসতেন, কাকে অপছন্দ করতেন—এই সব।’
ফণী কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়া চুপ করিয়া রহিল, তারপর একটু ম্লান হাসিয়া বলিল, ‘দেখুন, আমি খোঁড়া মানুষ—ভগবান আমাকে মেরেছেন—তাই আমি ছেলেবেলা থেকে কারুর সঙ্গে ভাল করে মিশতে পারি না। এই ঘর আর এই বইগুলো আমার জীবনের সঙ্গী (বিছানার পাশে একটা বইয়ের শেলফ দেখাইল)—মামা যে আমাদের পাঁচজনের মধ্যে কাকে বেশি ভালবাসতেন, তা নির্ভুলভাবে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বড় তিরিক্ষি মেজাজের লোক ছিলেন, তাঁর মনের ভাব মুখের কথায় প্রকাশ পেত না। তবে আঁচ-আন্দাজে যতদূর বোঝা যায়, সত্যবতীকেই মনে মনে ভালবাসতেন।’
‘আর আপনাকে?’
‘আমাকে—আমি খোঁড়া অকর্মণ্য বলে হয়তো ভেতরে ভেতরে একটু দয়া করতেন—কিন্তু তার বেশি কিছু—। আমি মৃতের অমর্যাদা করছি না, বিশেষত তিনি আমাদের অন্নদাতা, তিনি না আশ্রয় দিলে আমি না খেতে পেয়ে মরে যেতুম, কিন্তু মামার শরীরে প্রকৃত ভালবাসা বোধহয় ছিল না—’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘তিনি সুকুমারবাবুকে সব সম্পত্তি দিয়ে গেছেন, জানেন বোধহয়?’
ফণী একটু হাসিল—’শুনেছি। সুকুমারদা সব দিক থেকেই যোগ্য লোক, কিন্তু ও-থেকে মামার মনের ভাব কিছু বোঝা যায় না। তিনি আশ্চার্য খেয়ালী লোক ছিলেন; যখনই কারুর ওপর রাগ হত, তখনই টপাটপ টাইপ করে উইল বদলে ফেলতেন। বোধহয়, এ বাড়িতে এমন কেউ নেই—যার নামে একবার মামা উইল তৈরি না করেছেন।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘শেষ উইল যখন সুকুমারবাবুর নামে, তখন তিনিই সম্পত্তি পাবেন।’
ফণী জিজ্ঞাসা করিল, ‘আইনে কি তাই বলে? আমি ঠিক জানি না।’
‘আইনে তাই বলে।’ ব্যোমকেশ একটু ইতস্তত করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘এ অবস্থায় আপনি কি করবেন, কিছু ঠিক করেছেন কি?’
ফণী চুলের মধ্যে একবার আঙুল চালাইয়া জানালার বাহিরে তাকাইয়া বলিল, ‘কি করব, কোথায় যাব, কিছুই জানি না। লেখাপড় শিখিনি, উপার্জন করবার যোগ্যতা নেই। সুকুমারদা যদি আশ্রয় দেয়, তবে তার আশ্রয়েই থাকব—না হয়, রাস্তার গিয়ে দাঁড়াতে হবে।’ তাহার চোখের কোলে জল আসিয়া পড়িয়াছে দেখিয়া আমি তাড়াতাড়ি অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া লইলাম।
ব্যোমকেশ অন্যমনস্কভাবে বলিল, ‘সুকুমারবাবু কাল রাত্রি বারোটার সময় বাড়ি ফিরেছেন।’
ফণী চমকিয়া ফিরিয়া চাহিল—‘রাত্রি বারোটার সময়! ওঃ—হ্যাঁ, তিনি বায়স্কোপে গিয়েছিলেন!’
ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘করালীবাবুকে ক’টার সময় খুন করা হয়েছে, আপনি আন্দাজ করতে পারেন? কোন রকম শব্দ-টব্দ শুনেছিলেন কি?’
‘কিছু না। হয়তো শেষ রাত্রে—’
‘উহুঁ—তিনি রাত্রি বারোটায় খুন হয়েছেন।’ ব্যোমকেশ উঠিয়া পড়িল, ঘড়ি দেখিয়া বলিল, ‘উঃ, আড়াইটে বেজে গিয়েছে—আর না, চল হে অজিত। বেশ ক্ষিদে পেয়েছে—আপনাদেরও তো এখনও খাওয়া-দাওয়া কিছুই হয়নি—নমস্কর।’