অমূল্য সময়
হাঁসফাস রোদে ঘেমে নেয়ে মুখ রক্তবর্ণ করে স্কুল থেকে ফেরার সময় বুবুন লক্ষ্য করে আয়ানের মা কত আদর করে ঘাম মুছে জামা খুলিয়ে দিচ্ছে আয়ানকে। বুবুনের বন্ধু আয়ান । ওর ক্লাসেই পড়ে । বাড়ি ফেরার পথে আয়ানদের বাড়িটা পড়ে । রোজ ওর মা ওকে দিয়ে আসে নিয়ে আসে । আর বুবুনকে দেওয়া নেওয়া করে নমিতা দি মানে ওদের কাজের মাসি । বুবুনের বাবা শহরের বড় উকিল । ওনার সময় খুব কম । আর মা ডাক্তার । কাজেই নমিতা দিই বুবুনের দেখাশোনা করেন ।
বাড়ি ফিরে স্কুল ড্রেস খুলতে খুলতে আয়ানের কথা মনে পড়ে বুবুনের । আমার মাও যদি ওরাম আদর করে আমার ড্রেস খুলে দিত । দুঃখ পায় বুবুন মনে মনে । যতক্ষণ স্কুলে থাকে আনন্দে থাকে বুবুন কিন্তু বাড়ি ফিরলেই খুব একা লাগে তার । সময় কাটতে চায়না । নমি খেতে দে খুব খিদে পেয়েছে । নমিতা নুডুলস বানিয়ে নিয়ে এলে
বুবুন চিৎকার করে ওঠে । কতবার না তোকে বলেছি রোজ নুডুলস খেতে আমার ভালো লাগে না । আমি আজ স্যান্ডউইচ খাবো । আমি পারবো না ।
আমার হয়েছে যত জ্বালা । এই রেখে গেলাম। খেতে হয় খাও আর না খেতে হয় না খাও । চোখে জল আসে বুবুনের । পপিনের মা আজ টিফিনে স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিয়েছিল । বুবুন কয়েকবার বলেছিল মাকে বানিয়ে দিতে কিন্তু উনি সময় পাননি । কয়েকদিন ধরে একটা ক্রিটিকাল কেস নিয়ে খুব ব্যস্ত । রোদে ক্লান্ত বুবুন না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে । নমিতা নুডুলস এর বাটিটা তুলে নিজেই খেয়ে নেয় ।
সন্ধ্যেবেলা মা বাড়ি ফিরলে জড়িয়ে ধরে বুবুন । ছাড় বেটা ছাড় , খুব tired লাগছে । বলে দুহাতে সরিয়ে দেয় বুবুনকে । আচ্ছা মা আজ আমায় স্যান্ডউইচ বানিয়ে দেবে ? ছলছল চোখে বলে বুবুন । ছেলের চোখের জল অনুভব না করেই মা বলে আজ হবে না বুবু , কাল একটা important o.t. আছে । তাই একটু case study করতে হবে । পরে একদিন ঠিক বানিয়ে খাওয়াবো দেখিস ।
খানিক বাদে বুবুনের বাবা বাড়ি ফেরেন , ক্লান্ত – অবসন্ন । সবে fresh হয়ে laptop নিয়ে দরকারী কাজে বসেছেন এমন সময় বুবুন একরাশ আবেগ নিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে যায় , জানো বাবা আজ আমি সারাদিন কিচ্ছু খাইনি । তার কথা শেষ হবার আগেই বাবা তাকে থামিয়ে বলে , বুবুন , বিরক্ত কোরো না , দরকারি কাজ করছি ।মাম্মার কাছে যাও । কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ছোট্ট বুবুন ।
নিজের ঘরে গিয়ে তার সব থেকে প্রিয় টেডিবিয়ারটাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে । জানিস রণি ( টেডিবিয়ারের আদরের ডাক নাম ) আমার কথা কেউ ভাবে না ।
কেউ আমায় ভালোবাসে না । আমি সারাদিন যে খাইনি তাতে ওদের কিচ্ছু যায় আসে না । আজ থেকে আমি তোকেই আমার সব মনের কথা বলব । কাঁদতে থাকে বুবুন ।
আড়াল থেকে বুবুনের মা সবটা শোনে এবং বুবুনের বাবাকেও ডেকে এনে শোনায় । দুজনেই মনে মনে অনুতপ্ত হন । খানিক পরে দুজনেই বুবুনের ঘরে আসে এবং ওদের হাতে গরম গরম স্যান্ডউইচ এর প্লেট । আচ্ছা বুবু সোনা দেখনা আমি এগুলো আমার বেটাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো শুনে ওমনি হিংশুটে বাবাটাও এসে খাওয়াবে বলে । তুই ঠিক করে দে তো বেটা কার হাতে তুই খাবি । বুবুন দুজনকেই কিসি দিয়ে বলে আমার দুজনকেই চাই । দুজনেই খাওয়াবে আমায় । বুবুনকে জড়িয়ে ধরে মা- বাবা । দুজনের চোখেই জল । বুবুনের চোখে মুখে স্মিত হাসি ……… !