Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অতীনের যখন চোখ খুলল তখন দেওয়ালের ফাটল দিয়ে ঝলমলে রোদ এসে তার মুখের উপর পড়েছে। পাখিদের সমবেত সংগীত শুনে অতীন বুঝতে পারলো যে সকাল হয়েছে। কিন্তু গতকাল রাতের কথা মনে করে নানা প্রশ্নের গোলক ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে তার মনের ভেতর। কিন্তু সে এখনো বেঁচে আছে কি করে? বেড়ালরুপী রাক্ষসটা তাকে যেভাবে আক্রমণ করেছিল তাতে তার তো আর বেঁচে থাকার কথা নয়! তাহলে ব্যাপারটা কি? আর হঠাৎ করে ফাদার গ্রীনই’বা কোথায় উধাও হয়ে গেলেন? রহস্য যে একটা আছে এটা আন্দাজ করতে পেরে পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিল অতীন। গত কয়েকদিন ধরেই সে এখানে আছে তাই পুরো চার্চের এমন কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই যেটা সে চেনে না। অন্তত এমনটাই তো দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু বলে না ‘বিধি বাম মম প্রতি!’ এমনটাই দশা হয়েছে এখন আমাদের অতীনের। বিগত কয়েকদিনে জায়গাটা সে যেমন দেখেছে আজ সম্পূর্ণই বদলে গেছে। যেন কত যুগ ধরে মানুষের পা পড়ে নিয়ে জায়গায়। এতক্ষণে অতীন লক্ষ্য করল যে তার গলায় থাকা বিশেষ লকেটটি যথাস্থানেই রয়েছে, সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায়। “এ কি করে সম্ভব, এটা তো…”- অতীনের মাথায় কিছু আসছিল না সে যে করেই হোক দুয়ে দুয়ে চার করতে চাইছিল। হঠাৎ হাঁটতে হাঁটতে অতীন তার ঘরে অর্থাৎ যেখানে তার সমস্ত জিনিসপত্র ছিল সেই ঘরে পৌঁছে গেল। অতীন সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর তার ব্যাগটা উদ্ধার করতে সক্ষম হলো। অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে কেউ খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেন বা কিভাবে ব্যর্থ হয়েছে সেটা জানতে আগ্রহী নয় অতীন। “ব্যাগ তো পেয়েই গেছি, এখন দিন থাকতে এই নরক থেকে বেরিয়ে পড়াই ভালো।”- এমনটাই মনে মনে চিন্তা করল অতীন।
চার্চের বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এসে অতীন সকালের আকাশের দিকে তাকালো। বাইরের খোলা হাওয়া বেরিয়ে নিজেকে একটু পুনর্জীবিত করে তুলে চার্চের ইমারতের দিকে ফিরে দেখাতেই চমকে ওঠে অতীন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত যেটার সাথে সুন্দর এক গির্জা তাকে এখন ঠান্ডার বললেই বোধহয় ভালো মানাবে।
হঠাৎ একটা থিওরী অতীনের মাথার বাতিটা জ্বালিয়ে দিয়ে মাথার ভেতরে ঘুরপাক খেতে শুরু করল। এখানে এসেছিল তখন ও বাইরে সূর্যিমামা দিব্যি তার জ্যোতি ছড়িয়ে দিচ্ছিল। যদি তাই হয় তাহলে দিনের বেলাতেও এ জায়গা তেমন একটা নিরাপদ নয়। হবে মেইন গেটের কাছে পৌঁছেছে হঠাৎ সে আবিষ্কার করল তার কোচম্যান ঘাসের উপর পড়ে আছে, দেহ প্রাণহীন,নিঃসাড়। অতীন বুঝতে পারলো এটা কার কাজ। কিন্তু এখন এসব ভেবে কাজ নেই তাকে যে করেই হোক সূর্যাস্তের আগে লোকালয়ে পৌঁছাতেই হবে। মেইন গেট অতিক্রম করে বাইরে বেরিয়ে পড়লো অতীন কোনো রকমে একবার হাইওয়েতে উঠতে পারলেই ব্যাস কোন না কোন গাড়ি সে পেয়ে যাবেই। সেদিন গাড়িতে এতটা না বুঝলেও আজ পায়ে হেঁটে জঙ্গলটাকে বেশ ঘনই মনে হচ্ছে অতীনের। দীর্ঘ পিলারের মত বৃক্ষ গুলি যেনো প্রহরীর মতো পাহারা দিচ্ছে ওই ধ্বংস স্তূপ। আর শীতকালের ইঞ্চি তিনে পুরো তুষারে আবৃত এখানকার পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে যেন একটা আলাদা জগতে এসে পড়েছে অতীন। হঠাৎ পিছন থেকে একটা আওয়াজ তার কানে প্রবেশ করল। সে বুঝতে পারল কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। অতীন একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল তবে দুটো কারণে। প্রথমত ট্রান্সেলভেনিয়ার প্রত্যন্ত অরণ্যে কেউ তার নাম কি করে জানতে পারলো ? দ্বিতীয়টা আর বলার প্রয়োজন নেই, কণ্ঠস্বর একটু কাছে এগিয়ে আসতেই অচিন তা চিনতে পারল। পেছনে ফিরে তাকাতেই ফাদার গ্রীন বলে উঠলেন,”থ্যাংক গড্! তুমি ঠিক আছো আমি তোমাকে কখন থেকে খুঁজে বেরাচ্ছি তুমি জানো?”
অতীন কোন কচি খোকা নয়। ছেলেবেলা থেকেই ভূত, গোয়েন্দা, অলৌকিক এবং অল্পবিজ্ঞানের কাহিনী পড়ে বড় হয়েছে। ‘ইউ এন্ড এ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি-তে অনেক উচু দরের অ্যাডভাইজার অতীন রায়চৌধুরী গতকাল রাতের ওইসব দৃশ্য, সকালে কোচম্যানের মৃত্যু, চার্চের ওই জরাজীর্ণ অবস্থা এবং সর্বোপরি তার গলার মনিটা অক্ষত থাকা। এসবের পর অতীন খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে সে একটা একটা বড় মাপের সরযন্ত্রের কবলে পড়েছে। মুখে কোনো কথা না বলে, তার মনিটা ফাদারের দিকে বাগিয়ে ধরল। নিবেশ এর মধ্যে সাদা গ্রীন রুপি শয়তানটা ভয়ংকর চিৎকার করতে করতে বাতাসে মিলিয়ে গেল। অচিন বুঝতে পারলো ফাদার গ্রীন বলে আসলে কেউ নেই এতদিন যা হয়েছে সেটা অতীনের একটা ইল্যুশন মাত্র, শয়তানের ছলনা। ফাদার গ্রীন ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছিল। তাই সে নির্বাক পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। যেন তার হাত-পা সব জমে বরফ হয়ে গেছে। ভয় করছে তার ইতিমধ্যে হাত-পা সব কাঁপতে শুরু করেছে পালাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। কোন অদৃশ্য শক্তি যেন থাকে বাধা দিচ্ছে তারই মধ্যে অতীন দেখতে পেল ফাদার তার থেকে আর মাত্র কয়েক মিটার দূরে। অতীন কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না যখন ফাদার গ্রীনরূপী ওই নরকের পিশাচটা তার একদম সামনা সামনি এসে পড়েছে তখন সমস্ত আশা ছেড়েই দিল অতীন। এখন সে ভাবতে শুরু করেছে তার জীবনের কথা, পরিবার মা বাবার কথা। তাতে কি এভাবে মরতে হবে কপালটা তার ছোট থেকেই খারাপ কিন্তু তা বলে তার ভাগ্যে যে এভাবে অকালমৃত্যু লেখা আছে তা সে জন্মেও কল্পনা করতে পারেনি।
তার মৃত্যুর পর তার বাবা-মার কি হবে? এই খবরটাই বা পাবে কিভাবে, তার মৃতদেহ উদ্ধারি বা কে করবে এই ঘন বনে শিয়াল কুকুরে খেয়েই তো শেষ করে দেবে।

Pages: 1 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress