Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অভিশপ্ত প্রাচীন পুঁথি || Uday Kumar Ghosh

অভিশপ্ত প্রাচীন পুঁথি || Uday Kumar Ghosh

আকাশে তখন মেঘ জমতে শুরু করেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারী তুষারপাত শুরু হবে। অতীন এবং ফাদার গ্রীন চার্চের প্রেয়ার হলের একটি বেঞ্চে বসে আছেন। হঠাৎ ঘড়ির কাঁটা টা পাঁচটার ঘরে এসে পড়তেই সেটা ঢং ঢং করে বেজে উঠলো। “আচ্ছা ফাদার বইটা নিয়ে এখন কি করা যায় ?”- অত্যন্ত গম্ভীরভাবে প্রশ্নটা করলো অতীন।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গম্ভীর কথা বলে উঠলেন, “আমিও তো সেটাই ভাবছি অতীন ট্রানসেলভেনিয়ার অভিশপ্ত মাটিতে এই চার্চও যে খুব নিরাপদ জায়গায় সেটা বলা যায় না। তবে চিন্তা করো না আমি কিছু একটা উপায় বের করবোই। “
“আচ্ছা ফাদার শয়তানকে তো আমরা মেরে ফেলেছি তবে আর ভয় কিসের?”
“শয়তান শেষ নেই অতীন, তার অসীম শক্তির সামনে একমাত্র দাঁড়াতে পারেন শুধু ঈশ্বর।”
“মানে! সে আবার আসবে?” – ভয়ে ঢোক গিলতে গিলতে জিজ্ঞাসা করল অতীন।
“হ্যাঁ আসবে। কিন্তু কতবার যেরকম যখন পেয়েছে তাদের হাতে কিছুটা সময় আছে।”
“ফাদার, দয়া করে বলুন এসবের শেষ কি করে হবে?” ফাদারের দিকে করজোড়ে নিবেদন করল অতীন।
“সে তো বলবোই কিন্তু তার আগে তোমার জানতে হবে এসব শুরু কোথা থেকে, আর কিভাবে হয়েছে।”
“তবে শুরু করুন ফাদার। শুভস্য শীঘ্রম! “
“শোনো তবে…
ষাট বছর আগের কথা। আমি সবে সতেরোতে পা দিয়েছি বাবা আমায় ঈশ্বর সেবায় নিযুক্ত হতে বলায় লন্ডনের একটা চার্জে যোগ দিই। আমি ছিলাম সৎ, মেধাবী এবং দক্ষ। তাই খুব শীঘ্রই আমাকে আরো ভালো শিক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সালটা সম্ভবত ১৯৬২ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর এবং সবচেয়ে ছোট দেশ অভ্যন্তরে বই নিয়ে চলে বিপুল গোপন কালো সত্যের সম্ভার। বহু জিনিস রয়েছে যেগুলো সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের জ্ঞান এতটাই সামান্যতর যে আমার তারা সেগুলোকে অবাস্তব বলে মনে করে। আমিও করতাম যতদিন না ভ্যাটিকান এর চার্জে নিযুক্ত হই আমি। গ্রীস্মের এক জোছনাময় আমায় রাতে আমার বাবার এক বিশেষ বন্ধু মিস্টার জনাথান স্মিথ হঠাৎ একদিন বাড়িতে এসে বাবাকে বললেন আমার প্রোফাইল নাকি ভ্যাটিকানের ওপর তল্লাটের ব্যাক্তিবর্গ অত্যন্ত পছন্দ করেছে। তখন ঘড়িতে ঘন্টার কাঁটা সবে নয়ের অঙ্কে স্পর্শ করেছে, মিনিটেরটা এক এ। খবরটা পেয়ে একদিকে আমি যেমন খুশিতে লাফি উঠেছিলাম অন্যদিকে বাবা-মা দুশ্চিন্তার ঘরে ক্রমশ বিমর্ষ রূপে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। বাবা অত্যন্ত ভারী কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,”না তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।”
আমি কাঁদতে কাঁদতে অনুরোধ করলাম,” বাবা দয়া করে এরকম করো না। এটাই আমার চিরকালের স্বপ্ন। এটাকে এভাবে ছাড়তে পারবো না আমি।”
“দেখো আমি চাইনা তুমি কোন প্রেতাত্মার খপ্পরে পড়ে দেখোরে প্রাণটা দাও। তাই তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না এরপর আরও বাড়াবাড়ি করলে তোমাকে বোরিং স্কুলে পাঠিয়ে দেবো”-বাবা তীব্র রাগের সঙ্গে ধমকে উঠলেন।
“তারপর কি হয়েছে বলুন চুপ করে গেলেন যে?”- অতীন দেখল ফাদার গ্রিন একটা আদিকালের পুরনো ডায়েরির পাতার সমানে উলটে চলেছেন।
ব্যাপারটা কি হলো? ডায়েরী এতক্ষণ নজরে পড়েনি হঠাৎ করে এই ডাইরি তবে হাওয়া থেকে উদয় হলো, যদিওবা হয় তবে তা কোন মন্ত্র বলে?”- কথাটা মনে মনে চিন্তা করছিল অতীন। হটাৎ সেই মুহূর্তে যে ঘটনাটি ঘটলো তারপর থেকে অতীনের যেনো নিজের অস্তিত্বের ওপরও সন্দেহ হতে শুরু করেছে। অতীন এতক্ষণ লক্ষই করেনি তার বুকের কাছটা ক্রমশ উষ্ণ হয়ে চলেছে। যদি করত তবে হয়তো আর তাকে বেশি ভাবতে হতো না। সমস্ত কিছুর উত্তর তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যেত। যখন বুঝতে পারলো তখনও অবশ্য খুব বেশি একটা দেরি হয়নি কিন্তু তা সত্ত্বেও আরেকটু আগে আভাস পেলে হয়তো আজ তাকে এমন আপদম বিপদগ্রস্থ হতে হতো না। হঠাৎই দেখল তার চারপাশটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। চার্চের নতুন দেওয়াল গুলো কেমন যেন আদ্দিকালের পুরনোতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। যেন কোন পারদর্শী লেখকের ভৌতিক উপন্যাসের কোন পোরো বাড়ি অথবা হলিউডের কোনো সিনেমার হন্টেড হাউস কিংবা অভিশপ্ত অপবিত্র কোনো চার্চ যেটা এখন শয়তানের ডেরা।
“এটাও তো চার্জ! ট্রান্সলেভেনিয়ার পুরনো এক চার্চ, তবে কি এখানেও?…”- বিদ্যুতের গতিতে কথাটা মাথায় খেলে গেলো অতীনের।
“লোকালয় থেকে এত নির্জনে একটা মানুষ
অন্ন- জল ছাড়া বেঁচে আছে কি করে? ” কথাটা তার মগজে ঢুকতেই অতীন বুঝতে পারল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চম্পট দিতে হবে। কিন্তু সে তো শয়তান কে মেরে ফেলেছে তবে এসব হচ্ছে কি করে? অতীন বেঞ্চ থেকে সবেমাত্র উঠতে যাবে অমনি তার নজর পড়লো চার্চের দেওয়ালের দিকে, জায়গায় জায়গায় প্লাস্টার খসে ইট বেরিয়ে এসেছে, কিছু কিছু জায়গায় বিশাল বিশাল গাছের শিকড়। অতীনের অজান্তেই তার বা হাতের কনুইয়ের আঘাতে তার পাশে থাকা ঘুমন্ত হুলো বেড়ালটা ছিটকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে প্রচন্ড রাগে তার দিকে ফিরে ম্যাও ম্যাও করে চেচাতে শুরু করে। অতীন প্রথমটায় চমকে উঠে তাল সামলাতে না পেরে একটা বড় রকমের হোঁচট খায়। ফলে তার গলায় ঝুলতে থাকা কোন বস্তু যে তার জামার বাইরে বেরিয়ে এসেছে সেদিকে তার নজর যায় না। তার চোখ তখন ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। অতীন দেখতে পাচ্ছে, যে বেড়ালটার সে উপস্থিতি এতক্ষণ টের পর্যন্ত পায়নি সেই নাকি এখন তার প্রাণের শত্রু হয়ে উঠেছে। বিড়ালের মত নিরীহ আদরপ্রেমী পশুও যে এমন মানুষ খেকো রক্ত পিপাসু হয়ে উঠতে পারে তা এমনতর পরিস্থিতিতে না পড়লে হয়তো জানতেই পারতো না অতীন। বলাই বাহুল্য রোমানিয়ার হাড় হিম করা প্রখর শীতে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া বেড়াল যে ইংল্যান্ড, আমেরিকার গরম বিছানায় মানুষ হওয়া পোষ্য বেড়াল কিংবা আমাদের দেশের দেয়াল অথবা রাস্তায় পড়ে থাকা বিড়ালের চেয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং হিংস্র হবে তানি মনে সন্দেহ রাখবার কোন মানে হয় না কিন্তু এ বিড়ালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আলাদা দেখেই মনে হচ্ছে আর পাচটা সাধারন বিড়ালের মত নয়। ইয়া বড় দীর্ঘ কালো শরীর তাও কোন সদ্যোজাত গো শাবকের চেয়ে কম নয়। চক্ষু ঝুরার কাছে রক্তের রং ও যেনো ফ্যাকাশে। আর সেই দাঁত এরকম ভয়ানক দাঁত তো ড্রাগুলারও ছিল না বোধহয়। দাঁত তো নয় যেন Chainsaw এর ব্লেড। মোমবাতির মৃদু আলো সেগুলোর উপর পড়লে মুক্তোর মতো জ্যোতি ছড়াচ্ছে। এতকিছু বলার পর নখের কথা আর না বললেও চলে। হঠাৎই অতীন দেখল চোখের নিমেষে বেড়ালটা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অতীন কোন কিছুর জন্যই প্রস্তুত ছিল না সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

Pages: 1 2
Pages ( 1 of 2 ): 1 2পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *