অনেক অনেকক্ষণ ধরে সুদূরে চলেছি হেঁটে; অকস্মাৎ
মনে হ’ল, যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়ে গেছি। চারপাশে
বেবাক একই তো আছে-সেই
ঘরবাড়ি, সেই গাছ, সেই পথ এবং দোকানপাট, একই।
তাহ’লে এই যে সারারাত পথপরিক্রমা আর
বহুদূর যাওয়ার বিশ্বাস
হাত থেকে পাথুরে মেঝেতে ফস্কে-পড়া পিরিচের
মতো ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে? তাহ’লে কি এতক্ষণ শুধু
ছিল দৃষ্টিভ্রম নাকি নিজেকেই ভীষণ আটকে রাখা
ফাঁকির জন্মান্ধ ঊর্ণাজালে! এ বিভ্রম
থেকে মুক্ত হওয়া
কতটা সম্ভব আজ? দারুণ খরায়
বৃষ্টি হচ্ছে ভেবে পুলকিত আমি, অথচ বাইরে
বেরুলে পুড়তে থাকি চৈত্রের প্রখর চিতাগ্নিতে। অচিরেই
গায়ে ফোস্কা ফোটে,
ঠোঁটে ফেটে রক্ত ঝরে, চতুর্দিক থেকে
রাগী মোষ বাঁকিয়ে দুর্দান্ত শিং ধুলোম্লান পথে
তেড়ে আসে; গাছের পাতারা হয় শুয়োরের কম্পমান দাঁত!
দুপুরের ফতুর পুকুরে ঘুমে-হাঁটা
লোকের মতোই একজন জাল ফেলে;
নানারঙা কত যে মাছের মেলা তার এক্তিয়ারে
আসে আর উৎফুল্ল বাজারে নিয়ে যায়। মেলে ধরে
ক্রেতাদের সমুখে, সবাই বারবার
বিশদ পরখ করে বলে,-
সরাও তোমার মাছ এক্ষুণি, এসব
পচা মাছ কেনার মোটেও সাধ নেই আমাদের।
এ কেমন নিকিরি এখানে বসে আছে গোধূলিতে
নিঃসঙ্গ, বিমর্ষ, অবসন্ন? চুপচাপ, গালে হাত;
বাজারে কিছুই বিকলো না
বলে কি হতাশা তাকে ছুঁয়েছে এখন? কাছে গিয়ে
দেখি সে-তো অবিকল আমার মতোই। তাকে আমি
নিজের যমজ ভাই নিশ্চিত ঠাউরে
নিয়ে হাত রাখব ভায়ের হাতে? টেনে নেব বুকে?
বিস্ময়ের ঘোরে দেখি, আমি আর সে লোকটা অভিন্ন মানুষ।