Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অবধূত || Sibani Gupta

অবধূত || Sibani Gupta

অবধূত

সোমলতা জানালা দিয়ে দেখলেন তাদের বাড়ির – উঠোনের সামনে তিনজন বৃদ্ধ ব্যক্তি বসে আছেন। একটু বিস্মিত হলেন তিনি ,এরা কারা! এর আগে তো কখনো দেখেছেন বলেও মনে হলো না।তাই কাউকেই চিনতে পারলেন না। সোমলতা কিছুক্ষণ ভেবে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
বৃদ্ধ তিনজনের মুখের দিকে তাকিয়ে খানিক ইতস্তত করে বললেন– কিছু মনে করবেন না,আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? এবাড়িতে কি কাউকে চেনেন মানে আপনারা কি কাউকে খুঁজছেন?আমি আপনাদের কাউকেই তো চিনতে পারলাম না। কিন্তু আপনাদের দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনারা খুব ক্লান্ত, পিপাসার্ত ও ক্ষুধার্ত।তাই বিনীত অনুরোধ করছি,আপনারা ভেতরে আসুন,আগে জলপান করুন ।তারপর ,আমি আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করছি—
সোমলতার আন্তরিক ব্যবহারে বৃদ্ধ তিনজন খুব খুশি হলেন।তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন:- আচ্ছা মা,বাড়ির কর্তা কি আছেন? সোমলতা বললেন,’না’।তিনি বাইরে গেছেন।
– ও,তাহলে তো আমরা ভেতরে আসতে পারবো না।
সোমলতা তাঁদের কথা শুনে বিস্মিত হন।
তাঁদের পোশাক পরিচ্ছদ তেমন ভালো না হলেও ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত মুখের মাঝে কেমন যেন দিব্যভাব দেখতে পেয়ে একটু চমকে যান।
সোমলতার কেন জানি মনে হয়, এঁরা সাধারণ নন,বিশেষ কেউ হবেন হয়তো। হয়তো,এবাড়ির সাথে বহু পুরানো সম্পর্ক থাকতে পারে বা এই পরিবারের বিশেষ পরিচিত ।
সোমলতা কিয়ৎক্ষণ ভেবে বিনীত অনুরোধ জানায়–,মহাশয়েরা,আমি জানি না আপনারা কারা ও কেন এখানে এসেছেন? আমার স্বামীকে কি আপনারা চেনেন? উনার সাথে কি বিশেষ দরকার আছে ? কি দরকার কোন সাহায্যের কথা হলে নিঃসঙ্কোচে আমাকে বলতে পারেন কারন উনি বিশেষ কাজে বাইরে গেছেন, আসতে সপ্তাখানেক লাগবে। আপনারা অনুগ্রহ করে বসুন, আমি ততোক্ষণে আপনাদের সেবার ব্যবস্থা করছি। দয়া করে আসুন– সোমলতার ঐকান্তিক অনুরোধে বৃদ্ধ তিনজন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে সম্মত হলেন।
সোমলতা সাদরে তাঁদেরকে বসিয়ে অল্পক্ষণের মাঝেই শুদ্ধভাবে ফল,মিষ্টি ও নাড়ু মুড়কি দিয়ে ফলারের ব্যবস্থা করে দিলেন। আগন্তুক তিনজন পরিতৃপ্তি সহকারে ফলার করে তাঁকে আশীর্বাদ করে বললেন–তুমি খুব সুখী হবে মা।তোমার স্বামীর অবর্তমানে ও তুমি ক্ষুধার্ত অতিথিদেরকে সমাদরে ভোজন করাতে কার্পন্য করোনি।তোমার স্বামীও তেমন দয়ালু ,পরের মঙ্গলার্থে তাকে নিয়ে তীর্থে গেছেন শুধুমাত্র পিতৃসম বৃদ্ধের শেষ ইচ্ছাটুকু পূর্ণ করতে তুমিও তেমনি তার যোগ্য সহধর্মিনী।
সোমলতা বৃদ্ধদের কথা শোনামাত্র চমকিত-! আশ্চর্য্য হয় সে–সেকি! আপনারা এসব কথা জানলেন কিভাবে? আপনাদের সাথে কি তবে আমার স্বামীর দেখা হয়েছিলো আগে? নাহলে ,এসব তো জানার কথা নয় বাবাঠাকুরেরা? আর ,আমিও তো আপনাদের আগে এখানে আসতে দেখিনি।তাই বলছি,আমার খুব কৌতুহল হচ্ছে ,দয়া করে বলুন,কে আপনারা ! কি পরিচয়? তিনজন বৃদ্ধের মুখেই তখন অপার্থিব আলো ফুটে।
— বেশ।তাহলে শোনো মা, আমরা হলাম – সত্য,ন্যায় ও ধর্ম।
পৃথিবীতে এখন এই তিনটি জিনিষ লুপ্ত হতে চলেছে।তাই,আমরা পরীক্ষা করতে বেড়িয়েছিলাম,এখনো, মানুষের মাঝে সত্য,ন্যায় ও ধর্মের কিছুটা অবশিষ্ট আছে কিনা।যেখানেই গেছি,বিফলতা গ্রাস করেছে।
একমাত্র ,এখানে এসেই তোমার স্বামীকে পাশের বাড়ির অপুত্রক বৃদ্ধকে নিয়ে তীর্থে যেতে দেখে মন ভরে গেলো।তারপর,তোমার পরীক্ষা নিতে গিয়েও তোমার মাঝে কল্যাণী নারীজাতির সম্পূর্ণ গুণাবলীর দেখতে পেলাম।সুখী হও মা, আশীর্বাদ রাখছি– আনন্দে অভিভূত সোমলতার চোখে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ে। মাটিতে নত হয়ে প্রণাম করে ভক্তিভরে । আর কি অবাক কান্ড! প্রণাম করে মাথা তুলতেই
সোমলতার বিস্ময়ে চমকে উঠে। সোমলতার সমস্ত শরীরে শিহরণ খেলে যায়। একি! কোথায় সেই তিনজন বৃদ্ধ!কেউ তো নেই! কোথায় অদৃশ্য হলেন ওনারা! তবে কি তার ভাগ্য এতোটাই সুপ্রসন্ন যে স্বয়ং সত্য ন্যায় ও ধর্মের সাক্ষাৎ দর্শন পেলো সে!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *