Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অপেক্ষা || Humayun Ahmed » Page 22

অপেক্ষা || Humayun Ahmed

মানুষের জীবন কি চক্রের মত? চক্রের কোন শুরু নেই, শেষ নেই। মানব জীবনও কি তাই। রহস্যময় চক্রের ভেতর এই জীবন ঘুরপাক খেতে থাকে? শুরু নেই, শেষ নেই। চক্র ঘুরছে।

বিচিত্র চক্রের কথা ভাবতে ভাবতে সুরাইয়ার চোখে পানি এসে গেল। তিনি শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলেন। আজ কি তাঁর জীবনের আনন্দময় একটি দিন? তিনি চোখের সামনে জীবনের রহস্যময় চক্ৰ দেখতে পাচ্ছেন? এই ব্যাপারটা এত দিন তার চোখে পড়ে নি কেন?

তিনি বারান্দায় বসে আছেন। দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসেছেন। অনেকদিন আগে তাঁর শাশুড়ি আকলিমা বেগম ঠিক এই ভাবেই বসতেন। এবং এই জায়গাতেই বসতেন। তিনিও কি রহস্যময় জীবন চক্রের কথা ভাবতেন? তিনিও কি তার মত কাঁদতেন? কাঁদতে কাঁদতে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতেন?

সুরাইয়ার জীবনের একটা অংশ আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে—তিনি যেখানে শেষ করছেন মিতু সেখান থেকে শুরু করছে। মিতু আজ তার ছেলের বউ। এমন একটা আশ্চর্য মেয়ে তার এত কাছে ছিল আর তিনি লক্ষ্য করেন নি? তিনি এত বোকা কেন? এই মেয়েটা তার ছেলেকে রক্ষা করবে। কোন অমঙ্গল আর কোনদিন ইমনকে স্পর্শ করতে পারবে না।

তাঁর শোবার ঘরে মিতু এবং ইমনের বাসর হচ্ছে। একদিন এই খাটে তিনি এবং ইমনের বাবা ঘুমুতে এসেছিলেন। সুরাইয়া ভয়ে ছিলেন অস্থির। প্রায় অচেনা একটা ছেলে। তিনি চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাতে পারছিলেন না। ইমনের বাবা বললেন, সুরাইয়া তুমি কি কোন কারণে ভয় পা।চ্ছ? তিনি চমকে উঠে বললেন, নাতো! এবং লক্ষ্য করলেন তাঁর সমস্ত ভয় কেটে গেছে। মিতু যে ভালবাসা দিয়ে আজ তাঁর ছেলের চারদিকে দেয়াল তুলেছে। একদিন তিনিও তাঁর স্বামীর চারদিকে দেয়াল তুলেছিলেন। তাঁর দেয়াল হয়ত তেমন কঠিন ছিল না। দেয়ালের কোন দুর্বল অংশ দিয়ে অমঙ্গল এসে ঢুকেছিল। ইমনের ক্ষেত্রে তা হবে না। মিতুর কঠিন দেয়াল ভেঙ্গে কোন অমঙ্গল আসতে পারবে না। তিনি যা পারেন নি—এই মেয়ে তা পারবে। এই মেয়ে তার মত না, এই মেয়ে কঠিন মেয়ে।

সুরাইয়া আবারো চোখ মুছলেন। সারা জীবন তিনি অপেক্ষা করেছেন। ইমনের বাবার জন্যে অপেক্ষা। মনে প্ৰাণে বিশ্বাস করেছেন মানুষটা ফিরে আসবে। ইমনের বিয়ের রাতে ফিরে আসবে। আজ সেই রহস্যময় রাত। কিন্তু আজ কেন জানি মনে হচ্ছে মানুষটা আসবে না। এলে ভাল হত। অনেক গল্প করা যেত।

এই তুমিতো ছিলে না, ইমনের উপর দিয়ে কি যে বিপদ গেল। ওর কি যেন হয়েছিল—কাউকে চিনতে পারে না। কাউকে না। শুধু যখন মিতু এসে বলল, তুই এরকম করছিস কেন? বলতো, আমি কে? ইমন তখন শুধু বলল, মিতু।

মিতুর সঙ্গে ইমনের বিয়ে দিয়েছি। আর আমি আজ সকালে মিতুকে বলে দিয়েছি—শোন বউমা, তুমি ইমনকে তুই তুই করবে না। শুনতে খুব বিশ্ৰী লাগে। মিতু হেসে বলেছে। আচ্ছা। কিন্তু আমার কি ধারণা জানো? আমার ধারণা—আমার আড়ালে ওরা একজন আরেকজনকে তুই তুই করেই বলবে। আচ্ছা বলুক। আমি তো আর শুনছি না।

রাত বাড়ছে। সুরাইয়া বসেই আছেন। মাঝখানে একবার মিতু এসে বলল, ফুপু বসে আছেন কেন? ঘুমুতে যান।

তিনি বলেছেন, যাচ্ছি মা। আমাকে নিয়ে ভেব না। তোমরা গল্প কর। সারা রাত জেগে মজা করে গল্প কর।

মিতু বলল, চা খাবেন ফুপু। ও চা খেতে চাচ্ছে। ওর জন্যে চা বানাব। আপনাকে দেব এক কাপ?

দাও।

বিয়ের পরেও মেয়েটা তাকে ফুপু ডাকছে। আচ্ছা ডাকুক। কিচ্ছু হবে না।

মিতু তাকে চা দিয়ে গেল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তাঁর শরীর কেঁপে উঠল। কি আশ্চর্য কান্ড তাদের যখন বাসর হল—তিনিও তো সেই রাতে চা বানিয়ে এনেছিলেন। মানুষটা চা খেতে চাইল। তিনি চা বানালেন। তাঁর শাশুড়ির জন্যে এক কাপ নিয়ে গেলেন। আকলিমা বেগম খুব রাগ করলেন–বাসর ঘর থেকে বের হলে কেন মা? বাসর থেকে বের হবার নিয়ম নেই।

তাইতো, মিতু বের হল কেন? বাসর রাতের মত আশ্চর্য একটা রাতের একটা মুহুৰ্তও নষ্ট করা ঠিক না।

সুরাইয়া চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। আহ মেয়েটা ভাল চা বানিয়েছে।তো। খেতে ভাল লাগছে। চা খাবার মাঝখানেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। কলিং বেল বেজে উঠল। সুরাইয়ার হাত পা জমে গেল। মানুষটা কি এসেছে? না-কি তিনি ভুল শুনছেন।

না ভুলতো না। এইতো আবারো বেল বাজল। এইতো আবার। সুরাইয়া ধরা গলায় ডাকলেন, ইমন ও ইমন। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি তার নেই। দরজা খোলার শক্তিও নেই। দরজা খুলে যদি দেখেন— চার দিক ফাঁকা।

কলিং বেল বেজে যাচ্ছে। তিনি তাকিয়ে আছেন উঠোনের দিকে। শুক্লপক্ষ বলে উঠোনে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। আচ্ছা তার বিয়ের রাতেও কি শুক্লা পক্ষ ছিল? উঠোনে চাঁদের আলো ছিল? তিনি মনে করতে পারছেন না। তার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সর্বনাশী ঘন্টা বেজেই যাচ্ছে।

কে এসেছে? কে?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
Pages ( 22 of 22 ): « পূর্ববর্তী1 ... 2021 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *