Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অপমান-বর || Apaman Bor by Rabindranath Tagore

অপমান-বর || Apaman Bor by Rabindranath Tagore

ভক্তমাল

ভক্ত কবীর সিদ্ধপুরুষ খ্যাতি রটিয়াছে দেশে ।
কুটির তাহার ঘিরিয়া দাঁড়ালো লাখো নরনারী এসে ।
কেহ কহে ‘ মোর রোগ দূর করি মন্ত্র পড়িয়া দেহো ‘ ,
সন্তান লাগি করে কাঁদাকাটি বন্ধ্যা রমণী কেহ ।
কেহ বলে ‘ তব দৈব ক্ষমতা চক্ষে দেখাও মোরে ‘ ,
কেহ কয় ‘ ভবে আছেন বিধাতা বুঝাও প্রমাণ করে ‘ ।

কাঁদিয়া ঠাকুরে কাতর কবীর কহে দুই জোড়করে ,
‘ দয়া করে হরি জন্ম দিয়েছ নীচ যবনের ঘরে —
ভেবেছিনু কেহ আসিবেনা কাছে অপার কৃপায় তব ,
সবার চোখের আড়ালে কেবল তোমায় আমায় রব ।
একি কৌশল খেলেছ মায়াবী , বুঝি দিলে মোরে ফাঁকি ।
বিশ্বের লোক ঘরে ডেকে এনে তুমি পালাইবে নাকি ! ‘

ব্রাহ্মণ যত নগরে আছিল উঠিল বিষম রাগি —
লোক নাহি ধরে যবন জোলার চরণধুলার লাগি !
চারি পোওয়া কলি পুরিয়া আসিল পাপের বোঝায় ভরা ,
এর প্রতিকার না করিলে আর রক্ষা না পায় ধরা ।
ব্রাহ্মণদল যুক্তি করিল নষ্ট নারীর সাথে —
গোপনে তাহারে মন্ত্রণা দিল , কাঞ্চন দিল হাতে ।

বসন বেচিতে এসেছে কবীর একদা হাটের বারে ,
সহসা কামিনী সবার সামনে কাঁদিয়া ধরিল তারে ।
কহিল , ‘ রে শঠ , নিঠুর কপট , কহি নে কাহার ও কাছে —
এমনি করে কি সরলা নারীর ছলনা করিতে আছে !
বিনা অপরাধে আমারে ত্যজিয়া সাধু সাজিয়াছ ভালো ,
অন্নবসন বিহনে আমার বরন হয়েছে কালো ! ‘

কাছে ছিল যত ব্রাহ্মণদল করিল কপট কোপ ,
‘ ভণ্ডতাপস , ধর্মের নামে করিছ ধর্মলোপ !
তুমি সুখে ব ‘ সে ধুলা ছড়াইছ সরল লোকের চোখে ,
অবলা অখলা পথে পথে আহা ফিরিছে অন্নশোকে ! ‘
কহিল কবীর , ‘ অপরাধী আমি , ঘরে এসো নারী তবে —
আমার অন্ন রহিতে কেন বা তুমি উপবাসী রবে ? ‘

দুষ্টা নারীরে আনি গৃহমাঝে বিনয়ে আদর করি
কবীর কহিল , ‘ দীনের ভবনে তোমারে পাঠালো হরি ।’
কাঁদিয়া তখন কহিল রমণী লাজে ভয়ে পরিতাপে ,
‘ লোভে পড়ে আমি করিয়াছি পাপ , মরিব সাধুর শাপে ।’
কহিল কবীর , ‘ ভয় নাই মাত :, লইব না অপরাধ —
এনেছ আমার মাথার ভূষণ অপমান অপবাদ ।’

ঘুচাইল তার মনের বিকার , করিল চেতনা দান —
সঁপি দিল তার মধুর কণ্ঠে হরিনামগুণগান ।
রটি গেল দেশে — কপট কবীর , সাধুতা তাহার মিছে ।
শুনিয়া কবীর কহে নতশির , ‘ আমি সকলের নীচে ।
যদি কূল পাই তরণী – গরব রাখিতে না চাহি কিছু —
তুমি যদি থাক আমার উপরে আমি রব সব – নিচু ।’

রাজার চিত্তে কৌতুক হল শুনিতে সাধুর গাথা ।
দূত আসি তারে ডাকিল যখন সাধু নাড়িলেন মাথা ।
কহিলেন , ‘ থাকি সবা হতে দূরে আপন হীনতা – মাঝে ;
আমার মতন অভাজন জন রাজার সভায় সাজে ! ‘
দূত কহে , ‘ তুমি না গেলে ঘটিবে আমাদের পরমাদ ,
যশ শুনে তব হয়েছে রাজার সাধু দেখিবার সাধ ।’

রাজা বসে ছিল সভার মাঝারে , পারিষদ সারি সারি —
কবীর আসিয়া পশিল সেথায় পশ্চাতে লয়ে নারী ।
কেহ হাসে কেহ করে ভুরুকুটি , কেহ রহে নতশিরে ,
রাজা ভাবে — এটা কেমন নিলাজ রমণী লইয়া ফিরে !
ইঙ্গিতে তাঁর সাধুরে সভার বাহির করিল দ্বারী ,
বিনয়ে কবীর চলিল কুটিরে সঙ্গে লইয়া নারী ।

পথমাঝে ছিল ব্রাহ্মণদল , কৌতুকভরে হাসে —
শুনায়ে শুনায়ে বিদ্রূপবাণী কহিল কঠিন ভাষে ।
তখন রমণী কাঁদিয়া পড়িল সাধুর চরণমূলে —
কহিল , ‘ পাপের পঙ্ক হইতে কেন নিলে মোরে তুলে !
কেন অধমারে রাখিয়া দুয়ারে সহিতেছ অপমান ! ‘
কহিল কবীর , ‘ জননী , তুমি যে আমার প্রভুর দান ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress