Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অন্য পূজা || Manisha Palmal

অন্য পূজা || Manisha Palmal

উল্লু বাদাডের ফুল
মা আইলো কতদূর?
ছোট্ট বাচ্চা গুলো একযোগে সমস্বরে বলতে বলতে ছুটোছুটি করছে! জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের অন্ত্যজ পাড়া এটা। বেশিরভাগ মানুষই ঢুলি বাদ্যকার বা বায়েন পাড়া বলে এটাকে।
শারদীয়ার আবহে সারা বায়েন পাড়া “আনাক মানাক তানাক তেই ” তাল ঠুকছে
ছোট্ট ছোট্ট হাতে! বাড়ির বড়রা যে শহরে গেছে দুগ্গা পুজোর বায়না নিয়ে । পুজো কাটিয়ে নতুন জামাকাপড় খাবার-দাবার নিয়ে ফিরবে সবাই। কচিকাঁচা গুলো তাই দিন গুনছে কবে মা দুগ্গা আবার কৈলাসে ফিরবেন তার। ওদের গাঁয়ে পূজা নেই। আশপাশের চার-পাঁচটা গ্রামেও। পূজা দেখতে হলে সেই শহরে যেতে হবে । জঙ্গল রাস্তা পেরিয়ে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পথ। তাই কচিকাঁচারা পুজো বলতে— প্রকৃতির মাঝে শিউলি থল কমলের ফুলে, নদীর চরের কাশের বনে, আর আকাশের পেঁজা তুলো মেঘ কেই বোঝে। কারণ ওগুলো এলেই যে বায়েন পাড় ঢাক ঢোলের তাল ঠুকতে থাকে—-
ঢেং কুড কুড বাদ্যি বাজে
মা আসছে কাশের সাজে।
উল্লু বাদাডের ফুল
মা আইলো কতদূর?
বাচ্চাগুলোর কচি মিষ্টি সুরের ছড়ায় সারা নদীর চর মাখামাখি হয়ে যায়! আদাড বাদাডের উলুক ঝুলুক ফুলেরা পাতার ফাঁকে উঁকি মেরে বলতে থাকে—মা আসছে কতদূর?
মায়ের আগমনী গান শোনা যায় শিউলি সুবাসে, ভোরের শিশিরে, শাপলা শালুকের দলে! দলবেঁধে বায়েন পাড়া খালি করে সবাই চলে যায় আয় করতে। সম্পদের আমদানিতে এই সময়ই হয়। পাঁচ বছরের ছোট্ট কানাইয়ের বাবা ও কাকা গেছে শহরে। ওর বড় কৌতুহল পূজা নিয়ে। বাবা কাকার সাথে ও তাল ঠোকে—
আনাক মানাক তানাক তেই! ওরা সবাই আজ নদীর চরে কাশের বনে খেলায় মেতেছে! হঠাৎ দূরে নীলকন্ঠ পাখি দেখে সবাই আনন্দে লাফিয়ে ওঠে— নীলকন্ঠ মা দুগ্গার কৈলাসে ফেরার খবর দেয় যে! আনন্দে নাচতে থাকে সবাই—মা ফিরল কতদূর?
এবার ফিরবে বায়েন এর দল! ধূমুল দিতে দিতে গ্রাম প্রদক্ষিণ করবে। বাড়ির মেয়েরা সিঁদুর দিয়ে ঢাক কে বরণ করবে। কচিকাঁচাদের নজর থাকবে বাবা কাকার পোটলা ঝুলির দিকে। গুরুজনদের সাথে পুজোর গল্পে মন থাকবে না তাদের কখন যে ঝুলি খুলবে সেই আশায় থাকে তারা। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পোটলা থেকে বেরোয় রঙিন জামা প্যান্ট খেলনা বন্দুক ,ক্যাপবাজি আতশবাজি আর মন্ডা মিঠাই। আনন্দে নাচতে থাকে সারা বায়েনপাড়া— ঢেং কুর কুর কাই নানা! মুখে ঢাক কাঁসির বোল তুলে নেচে বেড়াতে থাকে কানাই— ভবিষ্যৎ বায়েন— এই বাদ্যকর এর উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে চলেছে সে! বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তার মিষ্টি গলার বোল– ঢেং কুর কুর কাই নানা,
ঢেং কুর কুর কাই নানা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress