অন্ধের চোখে
মৌলালী থেকে এন্টালীতে ঢুকলে, পথের একপাশে দেখা যায় অনেক ভিখারি, পথশিশু। জন্মসূত্রে বেলেঘাটার বাসিন্দা। আত্মীয়স্বজন বেশিরভাগটাই ঐ সেলসট্যাক্স মোড় থেকে জোড়ামন্দিরের মধ্যেই। তাই ছোট থেকেই মৌলালী এন্টালীতে খুব যাতায়াত। উদ্বৃত্ত পোশাক ওখানেই যেত, সঙ্গে খাবার, কোনো কোনো সময় কিছু পয়সাও। ছোট থেকেই দেখে আসছি বলে, এখনও ঐ পথ দিয়ে গেলে হাতের সামনে যা থাকে, দিয়ে দিই।
কিছুদিন আগে ঐ পথ দিয়ে আসছিলাম বিশেষ কারণে। সেই চেনা চিত্র। এদিকে ট্রেন ধরবো। পায়ে হেঁটে শিয়ালদা অনেকটাই। বাসে যাওয়া এক বিড়ম্বনা। প্রতিটি সিগন্যালে দাঁড়াতে দাঁড়াতে যতক্ষণে শিয়ালদা পৌঁছাবে, তার আগে পায়ে হেঁটে পৌঁছে যাই।
যাইহোক, সেদিন তাড়াহুড়ায় এক অন্ধ ভিখারীকে টাকা দিয়ে জোরকদমে হাঁটছি। কিছুদূরে যাবার পর টের পেলাম, আমাকে কেউ দিদি দিদি বলে ডাকছে। পিছন ফিরে দেখি সেই অন্ধ ভিখারি। অবাক হয়ে গেলাম, জিজ্ঞাসা করলাম আমাকে কিছু বলবেন? আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, দিদি আপনি কি দত্তপুকুর থাকেন? বললাম হ্যাঁ, আপনি কি ভাবে জানলেন?
এবার উনি বেশ অনুনয় বিনয় করে বললেন, দিদি আপনি টাকা ভেবে আপনার রিটার্ন টিকিট দিয়েছেন। বেশ লজ্জা পেলাম নিজের বেয়াকুবির জন্য। টিকিটটা ফিরিয়ে নিয়ে,ওনাকে টাকা দিলাম। কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, আপনি অন্ধ না? বললেন একদম ঠিক বলেছেন, তারপর লাঠি ঠকঠক করতে করতে আকাশের পানে চেয়ে, অন্ধ মানুষকে কিছু দিয়ে যান বাবু, বলতে বলতে চলে গেলেন।