Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অথচ নিজেই আমি || Shamsur Rahman

অথচ নিজেই আমি || Shamsur Rahman

একদিন সন্ধ্যেবেলা ফ্ল্যাটে ফিরে দেখি
থমকে-দাঁড়ানো অন্ধকার বারান্দায়
দাঁড়ের সবুজ টিয়ে পাখিটার ঘাড় কী নিখুঁত
মটকে পালিয়ে যাচ্ছে একজন লোক, তাকে খুব চেনা চেনা
লাগল আমার। কিছুদিন
শুধু সবুজাভ ছোপ চারপাশে বারংবার ভেসে
বেড়াল আমাকে ঘিরে। খুন হয়ে যাওয়া টিয়েটার
কথা ভেবে মন ভারি খারাপ থাকল কিছুকাল।
এই তো সেদিন
মাঝ রাত্তিরের বুক শিল্পিত আঁচড়ে চিরে চিরে
বিলায়েত খান
ক্যাসেটে নিশুত দরবারি কানাড়া হচ্ছেন ক্রমে,
হঠাৎ আমার পোষা বেড়ালের, যে আমার
চেয়ারে শয্যায় আর কখনো সখনো
লেখার টেবিলে ঘুমে থাকে, কান্না শুনে
ছুটে গিয়ে দেখি গলা টিপে আক্রোশে মারছে একজন
লোক, হাতে নাতে তাকে ধরে ফেলতেই
সে তাকাল আমার চোখের দিকে, ওর চোখ দুটো
দেখে ভয়ে পেছিয়ে গেলাম
তিন হাত। লোকটা নিহত বেড়ালের
শব ঝুল বারান্দায় ফেলে
চলে গেল অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে। বাষ্পাকুল চোখে
সে রাতে অনেকক্ষণ জেগে থাকলাম
উঠোনে মাটির নিচে নিষ্প্রাণ বেড়ালটিকে
গুপ্তধনের মতন চুপিসারে
গচ্ছিত রাখার পর।
অন্যদিন আমার সবচেয়ে প্রিয় দেশ-বিদেশের
কবিতার বইগুলো দিয়ে
সাজালো জ্বলন্ত চিতা সেই একই লোক। অসহায় চক্ষুদ্বয়
অসহ্য আটকে থাকে ভস্মীভূত অক্ষরমালার দিকে, যেন
অপরূপ একটি সভ্যতা লুপ্ত হলো
আমার চোখের নিচে ঘটা করে। কেমন নিশ্চুপ বসে থাকি
পোড়া গন্ধময়
একলা ঘরের মধ্যে অতিশয় বিস্ফোরিত চোখে।

আকাশ যাচ্ছিল ভেসে চাঁদের যৌবনে আর আমি
ছিলাম নিবিষ্ট ঝুঁকে লেখার টেবিলে।
অকস্মাৎ অমাবস্যা গ্রাস
করে আকাশকে, সে লোকটা
বলা কওয়া নেই
ঘরে ঢুকে আমার নিজস্ব কবিতার খাতা কেড়ে
নিয়ে কুটি কুটি ছিঁড়ে ফেলে
সবগুলো পাতা, তার ক্রূর ক্রিয়াপরায়ণ হাত
থেকে খাতা ছিনিয়ে নেয়ার
সাহস হলো না, আমি শুধু নির্বাসিত
কবির মতন
অশ্রুপাত করি ধু-ধু বিদেশ বিভুঁইয়ে।

পড়েছি ভীষণ ধন্দে লোকটাকে নিয়ে; একে একে
আমার সকল প্রিয় বস্তু নষ্ট করে
সে এখন ভয়ানক উল্লাসে প্রমত্ত আর আমি নামহীন
আতঙ্কে সেঁধিয়ে যাচ্ছি নিজের ভেতর ক্রমাগত। মনে হয়,
যে কোনো মুহূর্তে এসে লোকটা আমার
মুখের ভেতর ঠেসে দেবে অসংখ্য ঘুমের বড়ি। বড় ভয়ে
ভয়ে থাকি, হে দীপিতা, যদি
আমাদের আর দেখা না হয় কখনো কোনো দিন।
পদধ্বনি শুনি, কার? লোকটা কি আসছে আবার? রোমকূপ
কাঁটা হয়; অথচ নিজেই আমি বানিয়েছি তাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress