অকালবোধন
বোধন অর্থ উদ্বোধন, নিদ্রাভঙ্গকরণ বা জাগানো। “অকালবোধন” মানে মাকে অসময়ে জাগরণ— অসময়ে দেবী দুর্গার আরাধনা!
ত্রেতাযুগে শ্রী রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য মা দুর্গার অকাল বোধন করেন। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে শরৎকাল দেবলোকের রাত্রি, দক্ষিণায়নের অন্তর্গত! তাই এ সময় দেব পূজা করতে হলে প্রথমে দেবতার বোধন বা জাগরণ করতে হয়। বিভিন্ন পুরান, ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে রাবণ বধের আগে শ্রীরামচন্দ্র দেবী পার্বতীর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে বিল্ব বৃক্ষতলে বোধনপূর্বক দুর্গাপূজা করেছিল। শরৎকাল দেব পূজাশুদ্ধ সময় নয় বলে রাম কর্তৃক দেবী পার্বতীর বোধন “অকালবোধন” নামে পরিচিত।
এই আচারের পৌরাণিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এদিনই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। সঙ্গে থাকেন তাঁর চার সন্তান লক্ষ্মী গণেশ কার্তিক সরস্বতী। এদিনই মায়ের মুখের আবরণ উন্মোচিত হয়। মনে করা হয় যে বোধনের পর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
রামচন্দ্রের “অকাল বোধনের” গল্পটি এইরকম—-
অশুভ শক্তির প্রতীক রাবণ রাজাকে পরাজিত ও বধ করার জন্য রামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন। এইসময় দেবতাদের নিদ্রার সময় তাই ঘুমন্ত দেবী কে জাগ্রত করার জন্য স্বয়ং ব্রহ্মা কে দেবী স্তুতি করতে হয়েছিল— “হে দেবী রাবণ বধের জন্য রাম কে অনুগ্রহ করুন ও জাগ্রতা হন।”
ব্রহ্মার এই আবেদনে দেবী বিল্ব বৃক্ষের এক বিল্বপত্রে কুমারীকন্যা রূপে আবির্ভূত হন। দেবীর সেই আবির্ভাব কে স্মরণ করে আজও দেবী পূজার আগে তাঁকে জাগ্রত করা হয়। বিল্ব বৃক্ষে তাঁকে উদ্বোধিত করার যে অনুষ্ঠান তাই বোধন।
ষষ্ঠী তিথির সন্ধ্যায় প্রথমে দেবীর বোধন ও পরে অধিবাস ও আমন্ত্রণ করা হয়।
শৈল শিখর কৈলাস থেকে তিনি আসছেন মর্ত্যে তাই তাঁকে আমন্ত্রণ করে এই দিনের অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
এরপর দিন থেকে শুরু হয় শারদীয়া দুর্গাপুজোর।
তথ্যসূত্র- বিভিন্ন পুরাণ ও গুগোল