Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কমলাকান্তের বিদায় (Kamalakanter Patro)

সম্পাদক মহাশয়!
বিদায় হইলাম, আর লিখিব না। বনিল না। আপনার সঙ্গে বনিল না, পাঠকের সঙ্গে বনিল না, এ সংসারের সঙ্গে আমার বনিল না। আপনার সঙ্গে আর আমার বনিল না। আর কি লেখা হয়? বেসুরে কি এ বাঁশি বাজে? বাঁশী বাজি বাজি করে, তবু বাজে না-বাঁশী ফাটিয়াছে। আবার বাজ দেখি, হৃদয়ের বংশী! হায়! তুই কি আর তেমনি করিয়া বাজিতে জানিস্? আর কি সে তান মনে আছে? না, তুই সেই আছিস-না আমি সেই আমি আছি, তুই ঘুনে ধরা বাঁশী-আমি ঘুনে ধরা কি, কি ছাই তা আমি জানি না। আমার সে স্বর নাই-আর বাজাইব কি? আর সে রস নাই, শুনিবে কে? একবার বাজ দেখি, হৃদয়! এই জগৎ সংসারে-বধির, অর্থচিন্তায় বিব্রত, মূঢ় জগৎ সংসারে, সেইরূপ আমার মনের লুকান কথাগুলি তেমনি করিয়া বল্ দেখি? বলিলে কেহ শুনিবে কি? তখন বয়স ছিল-কত কাল হইল সে দপ্তর লিখিয়াছিলাম-এখন সে বয়স, সে রস নাই-এখন সে রস ছাড়া কথা কেহ শুনিবে কি? আর সে বসন্ত নাই-এখন গলা-ভাঙ্গা কোকিলের কুহুরব কেহ শুনিবে কি?
ভাই, আর কথায় কাজ নাই-আর বাজিয়া কাজ নাই-ভাঙ্গা বাঁশের মোটা আওয়াজে আর কুক্কুর-রাগিণী ভাঁজিয়া কাজ নাই। এখন হাসিলে কেহ হাসিবে না-কাঁদিলে বরং লোকে হাসিবে। প্রথম বয়সের হাসিকান্নায় সুখ আছে-লোকে সঙ্গে সঙ্গে হাসে কাঁদে;-এখন হাসিকান্না। ছি!-কেবল লোক হাসান!
হে সম্পাদককুলশ্রেষ্ঠ! আপনাকে স্বরূপ বলিতেছি-কমলাকান্তের আর সে রস নাই। আমার সে নসী বাবু নাই-অহিফেনের অনটন-সে প্রসন্ন কোথায় জানি না-তাহার সে মঙ্গলা গাভী কোথায় জানি না। সত্য বটে, আমি তখনও একা-এখনও একা- কিন্তু তখন আমি একায় এক সহস্র-এখন আমি একায় আধখানা। কিন্তু একার এত বন্ধন কেন? যে পাখীটি পুষিয়াছিলাম-কবে মরিয়া গিয়াছে-তাহার জন্য আজিও কাঁদি; যে ফুলটি ফুটাইয়াছিলাম-কবে শুকাইয়াছে, তাহার জন্য আজিও কাঁদি; যে জলবিম্ব, একবার জলস্রোতে সূর্য্যরশ্মি সম্প্রভাত দেখিয়াছিলাম-তাহার জন্য আজিও কাঁদি। কমলাকান্ত অন্তরে অন্তরের সন্ন্যাসী-তাহার এত বন্ধন কেন? এ দেহ পচিয়া উঠিল-ছাই ভস্ম মনের বাঁধনগুলো পচে না কেন? ঘর পুড়িয়া গেল-আগুন নিভে না কেন? পুকুর শুকাইয়া আসিল-এ পঙ্কে পঙ্কজ ফুটে না কেন? ঝড় থামিয়াছে-দরিয়ায় তুফান কেন? ফুল শুকাইয়াছে-এখনও-গন্ধ কেন? সুখ গিয়াছে-আশা কেন? স্মৃতি কেন? জীবন কেন? ভালবাসা গিয়াছে-যত্ন কেন? প্রাণ গিয়াছে-পিণ্ডদান কেন? কমলাকান্ত গিয়াছে-যে কমলাকান্ত চাঁদ বিবাহ করিত, কোকিলের সঙ্গে গায়িত, ফুলের বিবাহ দিত, এখন আবার তার আফিঙ্গের বরাদ্দ কেন? বাঁশী ফাটিয়াছে-আবার সা, ঋ, গ, ম কেন? প্রাণ গিয়াছে, ভাই, আর নিশ্বাস কেন? সুখ গিয়াছে, ভাই, আর কান্না কেন?
তবু কাঁদি। জন্মিবা মাত্র কাঁদিয়াছিলাম, কাঁদিয়া মরিব। এখন কাঁদিব, লিখিব না।

অনুগত, স্বগত এবং বিগত
শ্রীকমলাকান্ত চক্রবর্ত্তী

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress