Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

দিদি, তুমি বোধ হয় ও পাড়ার চণ্ডীবাবুকে জান?

জানি নে! তিনি যে ডাকসাইটে নিন্দুক।

বিধাতার কারখানায় খাঁটি জিনিস তৈরি হয় না, মিশল থাকেই। দৈবাৎ এক-একজন উতরে যায়। চণ্ডী তারই সেরা নমুনা। ওর নিন্দুকতায় ভেজাল নেই। জান তো, আমি আর্টিস্ট-মানুষ। সেইজন্যে এরকম খাঁটি জিনিস আমার দরবারে জুটিয়ে আনি। একেবারে লোকটা জীনিয়স বললেই হয়। একটা এড়িয়ে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। একদিন দেখি, অধ্যাপক অনিলের দরজায় কান দিয়ে কী শুনছে। আমি তাকে বললুম, অমন করে খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছ কাকে হে।

সেটাই যদি জানতুম তা হলে তো কথাই ছিল না। চার দিকে চোখ কান খুলে রাখতে হয়, কাউকে বিশ্বাস করবার জো নেই— চোর-ছ্যাঁচড়ে দেশ ভরে গেল।

বলো কী হে।

শুনে অবাক হবেন, এই সেইদিন অমন আমার চাঁপার রঙের গামছাখানা আলনার উপর থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে গেল।

বলো কী হে, গামছা!

আজ্ঞে হ্যাঁ, গামছা বৈকি। কোণটাতে একটুখানি ছেঁড়া ছিল, তা সেলাই করিয়ে নিয়েছিলুম।

তুমি অনিলবাবুর দরজার কাছে অমন ঘুর-ঘুর করছিলে কেন। পরের ছেঁড়া গামছা জোগাড় করবার রোগে তাঁকে ধরেছে নাকি।

আরে ছি ছি, ওঁরা হলেন বড়োলোক, গামছা কখনো চক্ষেও দেখেন নি। টার্কিস তোয়ালে না হলে ওঁর এক পা চলে না।

তা হলে?

আমি ভাবছিলুম, ওঁর পাওনা তো বেশি নয়। অথচ, এত বাবুআনা চলে কী করে।

বোধ হয় ধার করে!

আজকালকার বাজারে ধার তো সহজ নয়, তার চেয়ে সহজ ফাঁকি।

আচ্ছা, তুমি পুলিশে খবর দিয়েছিলে নাকি।

না, তার দরকার হয় নি। সেটা বেরোল আমার স্ত্রীর ময়লা কাপড়ের ঝুড়ির ভিতর থেকে। কাউকেই বিশ্বাস করবার জো নেই।

কী বল তুমি, ওটা ঠিক জায়গাতেই তো ছিল।

আপনি সাদা লোক, আসল কথাটাই বুঝতে পারছেন না। আপনি জানেন তো আমার শালা কোচ্‌লুকে। কী রকম সে গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ায়। পয়সা জোটে কোথা থেকে। কাজটি করছেন তিনি, আর গিন্নি সেটাকে বেমালুম চাপা দিয়েছেন।

তুমি জানলে কী করে।

হ্যাঁ হ্যাঁ, এ কি জানতে বাকি থাকে।

কখনো তাকে নিতে দেখেছ?

যে এমন কাজ করে সে কি দেখিয়ে দেখিয়ে করে। এ দিকে দেখুন-না, পুলিশ আছে চোখ বুজে, তারা যে বখরা নিয়ে থাকে। এই-সব উৎপাত আরম্ভ হয়েছে যখন থেকে দেখা দিয়েছেন ঐ আপনাদের গান্ধিমহারাজ।

এর মধ্যে তিনি আবার এলেন কোত্থেকে।

ঐ যে তাঁর অহিংস্র নীতি। ধড়াধড় না পিটলে চোরের চুরি রোগ কখনো সারে? তিনি নিজে থাকেন কপ্‌নি প’রে। এক পয়সা সম্বল নেই। এ-সব লম্বাচওড়া বুলি তাঁকেই সাজে। আমরা গেরস্থ মানুষ, শুনে চক্ষুস্থির হয়ে যায়। এ দিকে আর-এক নতুন ফন্দি বেরিয়েছে জানেন তো? ঐ যে যাকে আপনারা বলেন চাঁদা। তার মুনফা কম নয়। কিন্তু সেটা তলিয়ে যায় কোথায় তার হিসেব রাখে কে। মশায়, সেদিন আমারই ঘরে এসে উপস্থিত অনাথ-হাসপাতালের চাঁদা চাইতে। লজ্জা হয়, কী আর বলব। খাতা হাতে যিনি এসেছিলেন আপনারা সবাই তাঁকে জানেন। ডাক্তার— আর নাম করে কাজ নেই, কে আবার তাঁর কানে ওঠাবে।

তিনি যে মাঝে মাঝে আসেন আমাদের ঘরে নাড়ী টিপতে। সিকি পয়সা দিতে হয় না বটে, তেমনি সিকি পয়সার ফলও পাই নে। তবু হাজার হোক, এম.বি. তো বটে। এমনি হাল আমলের তাঁর চিকিৎসা যে রোগীরা তাঁর কাছে ঘেঁষে না। কাজেই টাকার টানাটানি হয় বৈকি।

ছি ছি, কী বলছ তুমি।

তা মশায়, আমি মুখফোড় মানুষ। সত্যি কথা আমার বাধে না। ওঁর মুখের সামনেই শুনিয়ে দিতে পারতুম। কিন্তু কী বলব, আমার ছেলেটাকে আদায়ের কাজে রেখে আমার মুখ বন্ধ করেছেন। তার কাছ থেকেও মাঝে মাঝে ইশারা পাই। দক্ষিণহস্ত বেশ চলছে ভালো। বুঝছেন তো? আমাদের দেশে আজকালকার ইতরামি যে কী রকম অসহ্য, তার-একটা নমুনা আপনাকে শোনাই।

কী রকম।

আমাদের পাড়ায় আছে একটা গোমুখ্য যাকে ওরা নাম দিয়েছে কবিবর। তাকে দিয়ে দেখুন আমার নামে কী লিখিয়েছে। ঘোর লাইবেল। নিন্দুকেরা দল পাকিয়েছে। পাড়ায় কান পাতবার জো নেই। খ্যাঁক্‌শিয়ালি বলে চেঁচাচ্ছে আমার পিছনে পিছনে। এত সাহস হত না যদি-না এদের পিছনে থাকত নামজাদা মুরুব্বি সব গান্ধিজির চেলা।

দেখি দেখি কী লিখেছে। মন্দ হয় নি তো। লোকটার হাত দোরস্ত আছে।—
আলো যার মিট্‌মিটে,
স্বভাবটা খিট্‌খিটে,
বড়োকে করিতে চায় ছোটো,
সব ছবি ভুষো মেজে
কালো ক’রে নিজেকে যে
মনে করে ওস্তাদ পোটো,
বিধাতার অভিশাপে,
ঘুরে মরে ঝোপে ঝাপে,
স্বভাবটা যার বদ্‌‍খেয়ালি,
খ্যাঁক্‌ খ্যাঁক্‌ করে মিছে
সব তাতে দাঁত খিঁচে,
তারে নাম দিব খ্যাঁক্‌শেয়ালি।

ও কী ও, আপনার দরজায় পুলিস যে।
ব্যাপারটা কী।

চণ্ডীবাবুর ছেলের নামে কেস এসেছে।

হ্যাঁ, কিসের কেস।

অনাথ-হাসপাতালের চাঁদার টাকা তিনি ভেঙে বসেছেন।

মিথ্যে কথা। আগাগোড়া পুলিসের সাজানো। আপনি তো জানেন, আমার ছেলে এক সময় আহার নিদ্রা ছেড়ে গান্ধির নামে দরজায় দরজায় চাঁদা ভিক্ষে করে বেড়িয়েছিল, সেই অবধি বরাবর তার উপর পুলিসের নজর লেগে আছে। কিছু না, এটা পলিটিক্যাল মামলা।

দাদামশায়, তোমার এই গল্পটা আমার একটুও ভালো লাগল না।

যেমন পাজি তেমনি বোকা,
গোবর-ভরা মাথা,
লোকটা কে-যে ভেবে পাচ্ছি না তা।
কবে যে কী বলেছিল ঠিক তা মনে নাই,
আচ্ছা ক’রে মুখের মতো জবাব দিতে চাই;
কী যে জবাব, কার যে জবাব যদি মনে পড়ে—
প্রাণ ফিরে পাই ধড়ে।
হাতে পেলে দেওয়াই নাকে খত,
স্ত্রীর ছিঁড়ে দিই নথ।
রাস্কেল সে, পাজির অধম, শয়তান মিট্‌মিটে;
দিনরাত্তির ইচ্ছে করে, ঘুঘু চরাই ভিটেয়।
বদ্‌মাশকে শিক্ষা দেব— অসহ্য এই ইচ্ছে
মনকে নাড়া দিচ্ছে।
লোকটা কে-যে পষ্ট তা নয়, এই কথাটাই পষ্ট—
অতি খারাপ, নিতান্তই সে নষ্ট।
পথের মোড়ে যদি পেতেম দেখা,
মনের ঝালটা ঝেড়ে নিতেম যদি থাকত একা।
বুকটা ভরে অকথ্য সব জমে উঠছে ঢের,
লক্ষ্য মনে না পড়ে তো কাগজ করব বের,
যেখানে পাই নাম একটা করব নির্বাচন—
খালাস পাবে মন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress