Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিদায় || Samarpita Raha

বিদায় || Samarpita Raha

ব্যারাকপুর কোর্টের জজ সাহেবের নিবাস ব্যারাকপুর সদরবাজারে। বাড়ির থেকে অটো রিক্সা গেলে পাঁচ মিনিট।এই সামান্য পথ হেঁটে ও যাওয়া যায়। তবুও জজসাহেব বলে কথা গাড়িতেই যাতায়াত করেন।বেশ কিছুদিন গাড়ির চালক কে ছুটি দিয়েছেন, কেননা চালকের পিত্তথলি অপারেশন হয়েছে।এই কদিন তিনি ভিতরের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায় বলে এক রিক্সাওয়ালা কে বলে রেখেছেন।এই রিক্সাতে একমাত্র মেয়ে বিয়ের আগে সর্বত্র যাতায়াত করত।এখন সে কানাডায় আছে।মা হারা মেয়ের আর বাবার কথা মনে পড়ে না।পড়তে গিয়ে , ওখানে বিয়ে করে সংসার ও অফিস করছে।জজ সাহেব ভাবতে থাকেনএর জন্য আমি হয়ত দায়ী।মা মরা মেয়েটি একা একা বড়ো হয়ে পরের বাড়িতে চলে গেল। আপত্তি সত্ত্বেও একাই নিজ মনোনিত সাহেব পাত্রকে বিয়ে করে নিল। সেই থেকে বাপ ও মেয়ের ছাড়াছাড়ি।এখন খুব কঠিন কাজ,যে যার ইগো নিয়ে আছেন।
জজ সাহেব আজ কাজের ইস্তফা দিয়ে বাড়ি ফিরছেন।এখনো তো মুক্ত জীবন। মেয়ের কাছে যাবেন কিনা ভেবেছেন। কিন্তু ঠিকানা কোথায়!ফোন তো করত আগে, বাবা হয়ে সে ফোন ধরেন নি।তবে মাঝে মাঝে একটা ফোন আসে,হ্যালো করলে কোনো উত্তর পান না তিনি। একবার সাহস করে বলতে হবে কেমন আছিস মা!
অন্যমনস্ক হয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রিক্সা একটা ভ্যানে সংঘর্ষ হতেই জজ সাহেব রাস্তায় টড়ে যান। রিক্সা ওয়ালা কোনো রকমে রিক্সাতে বসিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।ছেলে ছুটে এসে হাত পায়ে স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়। একতলা বাড়ি , একটা ঘর , রান্না ঘর। ছেলে এই ঘরে থাকে , বাবা ও মা বারান্দায় শোয়।
তাই খাট ভরে বই।আইন নিয়ে পড়ছে।জজ সাহেব বলে আজ তোমার বাড়িতে থাকতে দেবে। তোমার ছেলের দায়িত্ব আমি নিলাম। সেদিন আপ্রায়ণে খুব খুশি হলেন।রাত বারোটা নাগাদ রিক্সা চেপে নিজের শূন্য বাড়িতে অমিতাভ কে সঙ্গে করে আসেন। তারপর থেকে অমিতাভ জজ সাহেবের বাড়িতে।
সমস্ত পড়াশোনা দেখে নেয় নতুন বাবার কাছে।এক বছর আরো পড়তে লাগবে।
জজ সাহেব এখন খুব খুশি। একাকিত্ব লাগে না। অমিতাভ কলেজ থেকে ফিরলে দুজনে চা খেতে খেতে অনেক গল্প করে।বেশির ভাগই ভবিষ্যত নিয়ে কথা।
হঠাৎ টেলিফোন। ফোনটা অমিতাভ ধরে।গলা অন্য দেখে মৌপ্রিয়া বলে আপনি কে ধরেছেন?
অমিতাভ দিদির ব্যাপারে কিছু জানত না। ভেবেছিল নতুন বাবা বিয়ে করেন নি।
ও বলে ফেলে আপনি তো আমার বাড়িতে ফোন করেছেন,আমি কে প্রশ্ন করছেন কেন?
অমতাভকে বলে বাবা তোমাকে কাজের লোক হিসাবে রেখেছে।বেশ কথাবার্তা বেয়াদব তো!
অমিতাভ বলে আপনার কাকে চাই!
আমার বাবা জজ জ্যোতিপ্রকাশ বাবুকে চায়।
অমিতাভ বলে বাবার মেয়ে আছে!কখনো শুনিনি তো!
জজ ফোন ধরে বলে আমার ছেলের কাছে কি জানতে চাইছেন!
তারপর বাবা ও মেয়ের অনেক কথা অনেক কান্নাকাটি চলে। ততক্ষণে অমিতাভ ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে। বাবার মেয়ে আছে !তাহলে এ ধন সম্পত্তি কিছু আমার নয়। সোজা বাড়ি আসে। বাবা ও মা শুনে বলে কি বলছিস অমিতাভ। ওনার মেয়েকে আমি স্কুল কলেজে দিয়ে আসতাম।আসলে তুই ভীষণ ছোট ছিলি।তোর এত লোভ। তোকে পড়াশোনা করাচ্ছেন এই!
বাবা ও মেয়ের কথা মাঝ রাত অবধি চলে।টনক নড়তে দেখে সারা বাড়িতে কেউ নেই। অমিতাভ চলে গেছে। খাঁচার পাখি উড়ে গেছে। শূন্য খাঁচা। মেয়ে পরশু ইন্ডিয়া আসছে।প্রাক্তন জজসাহেব খুব ব্যস্ত। অমিতাভ কে ফোন করলে ধরে না।
জজ সাহেব ভাবে পর কখনো আপন হয় না।মেয়েকে নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারমধ্যে নাতি টকটক করে বাংলা বলে। সাহেবের মুখে বাংলা শুনতে দারুণ লাগে। এইভাবে দিন পনেরো পর রিক্সাওয়ালা আসে দুঃসংবাদ দেয় তার ছেলে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে জেলে গেছে। তার নাকি অনেক অনেক টাকা দরকার।আইন পড়া ছেলের এই অধঃপতন।যার বাবা এত সৎ। রিক্সাচালক বলে এর থেকে শুনতাম ছেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছে ,সুখী হতাম।হয়তো আপনার বাড়িতে ডাকাতি করত।আপনাকে মেরে সব আত্মসাৎ করার ইচ্ছে ছিল।তাই আপনার মেয়ে আছে শুনে মর্মাহত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল।
জজ সাহেব মেয়ের সাথে বিদেশ চলে যাচ্ছে।যাবার আগে অমিতাভর সাথে দেখা করে বলে , এরকম করলি কেন! ভবিষ্যতটা পুরো নষ্ট করে ফেললি। আমি বাড়ি ঘর বেচে দিয়ে দিদির বাড়িতে চললাম। ভালো থাকিস। খুব কঠিন কাজ ,এসব ছেড়ে চলে যাওয়া। তোকে বড্ড ভালো বেসে ফেলেছিলাম।পর কখনো আপন হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress