Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিলাতি ঘোড়ার বাচ্চা || Kazi Nazrul Islam

বিলাতি ঘোড়ার বাচ্চা || Kazi Nazrul Islam

স্বামী : অ গিন্নী! বলি ও গ্যাদারের মা! আরে হুনছনি? চিঁহি চিঁহি, চিঁহি চিঁহি, চিঁহি।
স্ত্রী : গ্যাদাইয়্যা রে। ছুইট্যা আয়রে, ছুইট্যা আয়। আরে ঘরে ঘোড়া ঢুকছে! হেই, হেই।
স্বামী : আরে, আরে – ঘোড়া না, ঘোড়া না। আরে আমি, আমি। তা দেখ, হে হে! আজক্যা বাড়িতে আসনের সময় দুইটা টাকা দিয়া একটা লটারির টিকিট কিনছি।
স্ত্রী : কী কও? লেখার চিঠি? লেখার চিঠি কিইন্যা দুইটা টাকা জলে দিছ?
স্বামী : না রে আমার পোড়া কপাল! আরে লেখার চিঠি না, লটারির টিকিট! বিলাতের ময়দানে ঘোড়দৌড় হইব। এই টিকিটের যেই ঘোড়া, হেয় যদি ফাস্ট হয় তবে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা পামু।
স্ত্রী : পঞ্চাশ হাজার টাকা?
স্বামী : হ্যাঁ।
স্ত্রী : কয় দশে পঞ্চাশ হাজার টাকা হয় গো? আর ঘোড়া ফাস্ট হইব? অ! বিলাতের ঘোড়া বুঝি ইস্কুলে পড়ে?
স্বামী : আ আমার পোড়া কপাল। আরে ঘোড়ায় ইস্কুলে পড়ব ক্যান? দৌড় দিয়া যদি আমার ঘোড়া হগগলের আগে যায় তবেই হেই ঘোড়া ফাস্ট হইব।
স্ত্রী : ও সে জানি বুঝলাম; তা তোমার ঘোড়া ফাস্ট হইব কেমন কইরা, তুমি রইলা এই দ্যাশে, ঘোড়া রইল বিলাতে – অরে খেদাইয়া লইয়া যাইব কেডা?
স্বামী : আ আমার পোড়া কপাল। আরে হেই দেশে সাহেব ঘোড়ার সব সাহেব সহিস আছে, হেরাই ঘোড়া খেদাইয়া লইয়া যাইব। দেখো, আজকে অফিসে বইসা বইসা একটা ঘোড়া-পূজার গান লিখছি। শোনবা, শোনবা নাকি? তা শোনো। দেখো, এই প্রথমে গাই ঘোড়া-পূজার মন্ত্র, দেখো :

 ওঁ নমস্তে শ্রী বিলাতি অশ্ব সায়েব হর্স নমোনমঃ
 চতুষ্পদ একপুচ্ছ শৃঙ্গহীন জীব আদর্শ
        সায়েব হর্স নমোনমঃ॥

অ্যাই, আরে পঙ্খিরাজের বাচ্চা আমার ঘোড়া ছুইট্যা যাও।
ক্যাতরাইয়া দুই চক্ষুরে ঘোড়া ছ্যাতরাইয়া তাজ পাও॥
স্বর্গপানে ল্যাজ উঠাইয়া, (ছোট) চিঁহি চুঁহু চিঁহি চুঁহু ডাইক্যা
আমরা দুজন রাত্র জাগুম ছোলা ভিজাইয়া রাইখ্যা (রে)
ফাস্ট যদি না হও ঘোড়া, (তোমার) ঘোড়ানীর মাথা খাও
(হালা) পট পটাইয়া খাও॥
স্ত্রী : দেখো, ঘোড়ার টাকা পাইলে আমি একশো ভরি সোনা দিয়া গহনা গড়ামু।
স্বামী : কী কও? না, না তা হইব না, তা হইব না। আগে আমি জমি কিনুম, জায়গা কিনুম, বাড়ি করুম, ঘর করুম, তারপর সব।
স্ত্রী : কিছুতেই না, আমি যদি একবাপের বিটি হই, তবে আমার গয়না আগে হইব। তারপর অন্য কিছু।
স্বামী : কিছুতেই না, কিছুতেই না। আমি যদি এক বাপের ব্যাটা হই তবে এক লাঠি দিয়া তোমার মাথা ভাইঙ্গা…..
স্ত্রী : অ! আর একটা বউ ঘরে আনবা, না? এই তোমার লেখার চিঠি রইল আমার আঁচলে বান্ধা – ওরে উনানে দিয়া পুড়াইয়া ছাইভস্ম কইর‍্যা দুই পা দিয়া মাড়াইয়া……
স্বামী : দেখো, দেখো, দেখো – ভালো হইব না, ভালো হইব না। টিকিট দাও, টিকিট দাও, শিগগির টিকিট দাও।
স্ত্রী : মা গো! বাবা গো! গেছি গো! ওগো কে কোথায় আছ গো! দৌড় দিয়া আহ গো! ওগো মাইর‍্যা ফেলাইল গো। ওরে, গ্যাদাইরা রে, ছুইট্যা আয় রে, ছুইট্যা আয়। ওরে তোর বাপেরে বিলাতি ঘোড়ার ভূতে পাইছে রে, বিলাতি ঘোড়ার ভূতে পাইছে।
স্বামী : কেডা রে? কেডা রে? বাইরে কান্দে কেডা পোলারে।
একটি বাচ্চা ছেলে : আমি। আমি বিলাতি ঘোড়ার বাচ্চা – গ্যাদাইরা।
স্বামী : ও? ঘোড়ার বাচ্চা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress