Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিবাগী পাখি || Bibagi Pakhi by Ashapurna Devi » Page 4

বিবাগী পাখি || Bibagi Pakhi by Ashapurna Devi

আসর থেকে ফিরে আসতেই

আসর থেকে ফিরে আসতেই কুঞ্জ লিলিকে প্রায় কোলে করে নেচেছিল। দলের সবাই অভিনন্দন জানিয়েছিল।…এমন কি নাক-উঁচু বরুণও হঠাৎ ওর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে

শুধু বাসমতী আর নববালা মুখ বাঁকিয়ে বলেছিল, ওসব মেডেল হচ্ছে রূপের, আর হাততালি

কিন্তু সে তো বলেছিল আড়ালে। লিলি যেন আহ্লাদে, গর্বে বিস্ময়ে, বৈকল্যে কেমনধারা হয়ে গিয়েছিল! এ যেন লিলি স্বপ্ন দেখছে।

লিলির মধ্যে এত ক্ষমতা ছিল! লিলির মধ্যে এমন আশ্চর্য শক্তি! ভাগ্যিস চারুর জ্বর হয়েছিল!

অভিভূত ভাবটা কাটলে লিলি হঠাৎ অন্য দিক দিয়ে ভাবতে শুরু করল। আর তখন লিলির মনে হল, ওই অধিকারী তার পরম শত্রু। কাউকে বুঝতে দিচ্ছিল না। এমন কি কুঞ্জকেও না। ছেলেবেলায় ধুতি পরিয়ে পরিয়ে বেটা ছেলে সাজাত, বড়ো হয়ে অবধি আর সাজতেই দেয় না। শুধু খুকি। সাজিয়ে রেখে দেয়। আবার বিয়ের জন্য ব্যস্ত।

তার মানে লিলির এই মস্ত গুণটাকে ফুটতে না দেবার ইচ্ছে। তবে? শত্রু ছাড়া আর কি? নেহাত চারুহাসিনী জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে, তাই বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে! তাই সেই একদিনের জন্যেই।

আগে থেকেই গাওনা হচ্ছে—একটা দিন করে দে, ভয় খাসনে। ভয় কি?

মুখের সামনে হাত-আয়না ধরে অনেকক্ষণ নিজের মুখটা দেখল লিলি। তারপর পনেরো বছরের লিলি ভাবল, এত রূপ গুণ থাকতে আমি কেন বেচারীর মতো পড়ে থাকিব? প্রোপাইটার যেন দয়া করে রেখেছে। দয়ার কি ধার ধারি?

এই তো নিজগুণেই বাজার মাৎ করে ফেললাম। ওই লেখক মুখপোড়া তো দুচক্ষের বিষ দেখে আমায়, কিন্তু যেই আমার নাম-যশ হয়েছে, অমনি সোধে সোধে গায়ে পড়তে এসেছে।

হাসিতে পেট ফুলে উঠল।…আসবে, সবাই আসবে।—ভালো ভালো পার্টি লুফে নিতে চাইবে। সেখানে কত মান, কত যশ, কত টাকা! এই তো চারুহাসিনীর কত মাইনে! লিলির আরও বেশি হবে, কারণ লিলির রূপ আছে।

কিন্তু এই স্বার্থপর কুঞ্জ দাসের কাছে পড়ে থাকলে? একটি পয়সাও না। এই তো আগে কত পার্ট করেছে। হোক গে ছেলের পার্ট, হোক গে একটুখানি, তবু পার্ট তো? কই তার দরুণ দিয়েছে একটা পয়সাও লিলিকে? দেবে কে? লিলি যে তীর কেনা! কেন? তিন বছরের একটা মেয়েকে পুষে তার মাথাটা জন্মের মতো কিনে নিয়েছেন! স্বার্থপর! বেহায়া! কুটিল!

লিলি আর এই স্বার্থপরতা সহ্য করতে পারবে না। লিলি পথ দেখবে। লিলি সেই পথ দেখার চেষ্টায় নিমাইকে ধরে পড়ে। বলে, নিমাইদা, কলকাতার রাজবাড়িতে আর দরকার নেই, চল—ভোগে পড়ি এইবেলা।

নিমাই পাকা-চোকা ছেলে। নিমাই ওর হাত ধরে বলে, কী সাজই সেজেছিলি, বাস্তবিক মনে হচ্ছিল পরী!।

বাচ্চা লিলি চোখমুখ ঘুরিয়ে বলে, আহা, সাজ তো কতা! পাগলিনী!

ওতেই তো আসরসুদ্ধ লোককে পাগল করে দিয়েছিলি বাবা! যে করে গিলছিল সবাই, মনে হচ্ছিল আমার জন্যে আর কিছু রাখবে না।

ভাগ ছোটোলোক! লিলি বাসমতীদের মতো ভঙ্গি করে।

তারপর ওরা বিচার করে সিদ্ধান্ত করে, এত গুণ নিয়ে এখানে পড়ে থাকার কোনো মানে হয় না। এখানে প্ৰাণপাত করেও বড়োজের দুখানা মেডেল, আর দুটো তোয়াজী কথা! তার বেশি নয়। তাছাড়া ভবানী অপেরার পালার বহরে তো শুধু ওই, পাগলিনী সাজ! লাভ নেই, রস নেই, সাজাগোছা নেই। অথচ অন্য অন্য পাটিতে? রানি সাজো, মহারানি সাজো, প্রেমিকা সাজো। যাত্রার আসরের প্রেমিকা আর রানি মহারানি ছাড়া আর অন্য কিছুই ভাবতে পারে না লিলি নিজেকে।

অতএব ঠিক হল, নিমাই আর লিলি নিজেরাই একটা দল খুলবে। ব্রজটাকে ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, লোকটা অধিকারীকে মোটেই দেখতে পারে না। বলা যায় না, জগাও যেতে পারে। অধিকারী বলবে অকৃতজ্ঞ? বললে তো বড়ো বয়েই গেল।— নিজে যে এতো স্বার্থপর?

বিবেকমুক্ত হল লিলি। নিমাই তো হয়েই ছিল।

কলকাতার কম্পিটিশন পর্যন্ত আর ধৈর্য ধরছে না। তাদের। তাছাড়া—লিলি বায়না ধরেছে আগে তাদের বিয়েটা সারা হয়ে যাক, তারপর যা হয় হবে।

প্রথমটা অবশ্য নিমাই বলেছিল, বিয়ে করলে তো বৌ হয়ে গেলি। ঘরের বৌকে কি আমি আসরে নাচাবা?

লিলি রেগে উঠে বলেছিল, তবে বিয়েটা কার সঙ্গে হবে শুনি? না কি হবেই না? তবে আমি তোমার সঙ্গে যাবই না।

অতএব বিয়ে। কালীঘাটে গিয়ে সিঁদুর নেওয়া। সে জানে, ব্ৰজ সব রকম সাহায্য করবে।

রাত্তিরে আর ফেরা সম্ভব হল না। রাতটা হাওড়া স্টেশনে খেয়ে আর শুয়ে সকালের গাড়িটা ধরল। কুঞ্জ-মেদিনীপুরের। পাঁশকুড়া থেকে বাসে তমলুক, তমলুক থেকে মহিষাদল।

রাত্রে খেয়ে আর শুয়ে হঠাৎ আশ্চর্যভাবে চিন্তার ধারাটা ঘুরে গেল কুঞ্জর। সমস্ত রাগ ঘৃণা ধিক্কার ঝাপসা হয়ে গিয়ে ভয়ানক একটা লজ্জায় যেন ঝুলে পড়ল কুঞ্জ। কী করে এসেছে সে! মড়ার ওপর খাড়ার ঘা দিয়ে এসেছে! ভুল মানুষেরই হয়, ওরাও হয়েছিল, কিন্তু সেই ভুলের খেসারতও দিতে হয়েছে কম নয়!

কুলত্যাগ করে চলে গিয়েও বিপদে পড়ে যে তার স্বামীকে মনে পড়েছিল, এতে কি বোঝায়? অথচ আজ কুঞ্জ সেই বিশ্বস্ত প্ৰাণটাকে পায়ে মাড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়ে এল!

কুঞ্জ টাকার খোঁটা দিল। ছিছি! এত নীচ কি করে হল কুঞ্জ? যদি এই ধিক্কারে ও টাকায় খেয়ে আর বেঁচে দরকার নেই ভেবে আত্মঘাতী হয়। উমা? হতে পারে। চিরকালের অভিমানিনী। মরবেই হয়তো। তাহলে বলতেই হবে, কুঞ্জ লোকটা খুনী! একটা মানুষের মৃত্যুর কারণ মানেই খুনী!

এখন কুঞ্জ যত ভাবতে থাকে, তার নিজের দিকের পাল্লাটা ততই অপরাধের ভারে বুকে পড়ে। মনের অগোচর পাপ নেই, লিলির সেদিনের সাফল্যে কুঞ্জ পূর্বের সমস্ত সংকল্প বিসর্জন দিয়ে ভাবেনি কি, বরাবরের মতো নায়িকার অভাব মিটাল কুঞ্জর? আর চারু ফারুর তোেয়াজ করতে হবে না।.তার মানেই উমা যা বলেছে তাই।

ওকে সময়ে বিয়ে দিয়ে সংসারী করার ইচ্ছেটা আমার ছিল। যেই স্বার্থের গন্ধ পেয়েছি সেই ছল উড়ে গেছে।

হঠাৎ একটা অসমসাহসিক প্রতিজ্ঞা করে বসে কুঞ্জ দাস। হ্যাঁ, দুএকদিন পরেই লিলিকে নিয়ে তার মায়ের কাছে যাবে কুঞ্জ, কিন্তু এক লিলিকে নিয়ে নয়, জোড়ো নিয়ে। দেখিয়ে দেবে উমাকে সবটাই তার ছিল ছিল না।—বরুণের কাছে হাতজোড় করে বলবে, এই বিয়েটা না হলে একটা লোক আত্মঘাতী হবে। এ তোমাকে করতেই হবে।

কুঞ্জ যখন পৌঁছল, তখন সকালের সূর্য মধ্যাহ্ন আকাশে। কুঞ্জ বসে পড়ে বলল, এক গেলাস জল!

জল দিল বাসমতী। দুচক্ষে যাকে দেখতে পারে না কুঞ্জ।

জলটা তক্ষুনি চৌ-ৰ্চো করে খেয়ে না নিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল, লিলি কোথায়?

বাসমতী খনখনে গলায় বলে উঠল, সেই সকালে উঠে কোথায় কি কালীঠাকুর আছে, সেখানে নাকি নরবলি হত, তাই দেখতে গেছে।

কুঞ্জ আঁৎকে ওঠে, একলা?

একলা কেন? বাসমতীর গলা আরও খনখনায়, পেরাণের বন্ধু নিমাইদা গেছেন সঙ্গে—

থামো, চুপ করো। কুঞ্জ ওর বিরক্ত চিত্তের ভাবটা এটা প্রচণ্ড ধমকের মধ্যে দিয়ে কিছুটা লাঘব করে নিয়ে বলে, এলে আগে আমার কাছে আসতে বলবে।

তারপর কুঞ্জ ও-বাড়ি চলে যায়। যে বাড়িতে বরুণ আছে।

যারা ভবানী অপেরাকে এনেছিল তাদের মেয়াদ মিটে গেছে, তবে পাশের পাড়ায় আর একটা বায়না জুটেছে বলে কুঞ্জর দলকে এরা থাকতে দিয়েছে। কিছু লোককে কাছারি বাড়িতে, কিছু লোককে বসতবাড়ির বৈঠকখানায়। সেই কাছারি বাড়ির দোতলাতে বিরুণের স্থিতি। কুঞ্জ সেখানে গিয়ে বসে।

বরুণ হাতের কাজ রেখে বলে, মিস্টার দাস এসে গেছেন? কতক্ষণ? সুন্নানটান হয়নি এখনও?

কুঞ্জ অগ্রাহ্যুভরে বলে, নাঃ! মরুকগে স্নান। দুটো কথা শোনার সময় হবে তোমার, বরুণ?

বরুণ একটু চমকায়।

কুঞ্জ কখনো বরুণ বলে ডাকে না।

তবু বরুণ সে প্রশ্ন তুলল না। শুধু বলল, কী আশ্চর্য, সময়ের অভাব কি? বলুন।

বরুণ, কুঞ্জ আবেগের গলায় বলে, আমার ওই মেয়েটাকে তোমায় নিতে হবে বরুণ!

এবার বরুণ চমকায়।

আর প্রায় রুক্ষ গলায় বলে ওঠে, কী বলছেন?

হ্যাঁ, জানি তুমি চমকে উঠবে, কুঞ্জ ওর হাতটা চেপে ধরে বলে, তবু তোমাকে এটি করতেই হবে। নচেৎ একটা মানুষ আত্মঘাতী হবে।

বরুণ অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।…লোকটা কি অসময়ে নেশা-টেশা করে এল নাকি! আস্তে বলে, আমি আপনার কথার মানে ঠিক বুঝতে পারছি না।

কুঞ্জ জেদের গলায় বলে, মানে পরে বুঝো, তুমি আগে কথা দাও।

তাই কখনও সম্ভব, মিস্টার দাস-আপনিই বলুন?

কিন্তু অসম্ভবই বা কিসে বরুণ? লিলি দেখতে বলতে গেলে সুন্দরী, আর ধরে নাও আমার নিজেরই মেয়ে। কাজে কাজেই আমরা সর্বস্বই ওর, মানে তোমার হবে। জীবনের আর কোনো চিন্তা থাকবে না, তুমি শুধু নিজমনে লিখবে, সুখে স্বচ্ছন্দে থাকবে।

বরুণ হেসে ফেলে। বলে, সুখে থাকব কি না জানি না, তবে স্বচ্ছন্দে থাকতে পাব তা ঠিক। এখন যেমন রয়েছি। রাস্তায় রাস্তায় না-খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, আপনি—আপনার সেই দয়ার ঋণ শোধ দেবার নয়। কিন্তু একটা কথা জিগ্যেস করি, আপনার সর্বস্ব পণ দিয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে হাতে তুলে দেবার মতো এমন কি দামি পাত্র আমি?

দামি! দামি! কোহিনুর হীরে! কুঞ্জ আতিশয্য দেখায়, চিনেছি বলেই বলছি। মেয়েটাকে বড্ড ভালোবাসি বলেই বলছি বরুণ! তা ছাড়া ও একজনার গচ্ছিত ধন, ওর যদি ভালো ব্যবস্থা না করি, ধর্মের কাছে পতিত হতে হবে। আমায়।

কিন্তু আমি যদি বলি— বরুণ দৃঢ় গলায় বলে আমার মতো একটা রাস্তার লোক, যার জািত-জন্মের ঠিক আছে কি নেই, তার হাতে তুলে দেওয়াটাও আপনার এমন কিছু ধর্ম হবে না।

সে আমার ভাবনা।

কুঞ্জ আত্মস্থ গলায় বলে, জাতের পরিচয় কি তার গায়ে লেখা থাকে লেখক? থাকে, তার আচরণে। ওই সনা ব্যাটা তো বামনা। ভট্টচায্যি বামুনের ছেলে। ওর আচরণটা ভাবো? মনে হয়। চাঁড়াল। আর এই আমি? কায়েতের ঘরের ছেলে, কী আচরণ আমার? ওসব জাত-ফগত ছেড়ে দাও।

তা না হয় ছেড়ে দিলাম— বরুণ কঠিন গলায় বলে, কিন্তু জন্ম? সেটা ছাড়তেও আপত্তি নেই আপনার—আমি ভালো পালা লিখতে পারি বলে?

কুঞ্জ এতক্ষণ ওর হাত ধরে রেখেছিল, এবার আস্তে ছেড়ে দেয়। কুঞ্জর মুখে একটা ঝাপসা রহস্যের হাসি ফুটে ওঠে। কুঞ্জর কপালে শুকিয়ে-ওঠা ঘামের চিহ্নগুলো আবার ফুটে ওঠে। কুঞ্জ কেঁচার খুঁট তুলে ঘাম মুছতে মুছতে বলে, তবে—তোমাকে একটা কাহিনি শোনাই লেখক, শোনো। হয়তো তোমার একটা নাটকের প্লট হয়ে যাবে।

বরুণ বাধা দিয়ে বলে, কিন্তু তারও আগে আপনি স্নান আহার করে নিলে হত না?

নাঃ, ওসব আপদ বালাই এখন থাক বরুণ, আমার মনের মধ্যে এখন সমুদুর উথলোচ্ছে। এই গল্পটা আগে শোনাই তোমাকে, তারপর বুঝতে পারবে কেন তোমায় অকস্মাৎ অমন কথাটা বলে ফেললাম!

বরুণ খাতা-পত্ৰ সরিয়ে রেখে বলে, বলুন!

কুঞ্জ তার চেহারার সঙ্গে বেমানান আবেগের গলায় বলে, দেশটার নাম করব না, শুধু বলি। এক দেশে একটা বাঁদরের গলায় একটা মুক্তোর মালা ছিল। মালাটা জুটেছিল বাঁেদরটার ঘরে কিছু পয়সা ছিল বলে। তা হতভাগা বাঁদর বৈ তো নয়? সে ওই রাজার গলার উপর্যুক্ত মুক্তোর মালার মর্ম বুঝত না, তাকে ঘরে ফেলে রেখে পাড়ায় এক সখের থিয়েটারের দল খুলে সেখানেই রাতদিন পড়ে থাকত। কখনও গোফ কমিয়ে মেয়ে সাজত, কখনও গোফ লাগিয়ে ডাকাত সাজিত।

ঘরে ভাত ছিল, তাই পেটের ধান্ধা ছিল না। কিন্তু ওদিকে দরজা-খোলা ঘরে মুক্তোর মালা পড়ে, চোখের দৃষ্টি পড়বে সেটা আশ্চয্যির নয়। বল লেখক, আশ্চয্যি?

বরুণ মাথা নাড়ে।

হঠাৎ কুঞ্জ সন্দিগ্ধ গলায় বলে, গল্পটা তুমি ধরতে পারছ তো, লেখক?

বরুণ ওর দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে বলে, পারছি।

হ্যাঁ, কি বলছিলাম? সেই চোরের দৃষ্টি, না? তা সেই চোরের দৃষ্টি পড়ার পর যা হয় তাই হল।

মুক্তোর মালা হাওয়া হয়ে গেল! বুঝলে নাট্যকার? বাঁেদরটা ঘরে এসে দেখে ঘর খালি। তখন বুঝলে, তখন সেই শূন্য ঘর দেখে বাঁদরটা টের পেল তার কী ছিল! তখন বুঝল। কিন্তু তখন আর উপায় কি? হতভাগাটা তখন—

কুঞ্জর গলাটা বসে আসে। আর সেই বসা গলায় সে এক হতভাগা বাউণ্ডুলের কাহিনি বলে চলে, যা পালাকার বিরুণের বুঝতে অসুবিধে হয় না।—অসুবিধে হয় না, সে শুধু বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে শুনে চলে একটা অবোধ প্রেম-কাহিনি! যে প্রেমিক জানে না সে ভালোবাসছে। যে শুধু ভেবে এসেছে, না করলে চলবে কেন, মানুষ বৈ তো জানোয়ার নয়। সে!

আশ্চর্য, অধিকারী কুঞ্জ দাস, রািগচটা রূঢ়ভাষী নিতান্ত গ্রাম্য চেহারার এই লোকটা, সে এমন কবিত্বের ভাষা পেল কোথায়? জীবনভোর যাত্ৰা-গান করে আর দেখে? নাকি এই ঘর-ছাড়া বরুণটা তার এই উন্নতি সাধন করেছে?

ভাবের সন্ধান দিয়েছে, তাই ভাষা এসেছে তার পিছু পিছু! সেই ভাষা আসছে কুঞ্জ অধিকারীর জিভো, চোরটা আবার আর এক বঁদের। বুঝি বাঁেদরও নয়, ভালুক। তাই মুক্তোর মালাটা নিয়ে গলায় না। পরে তাকে ছিঁড়ে ছড়িয়ে ফেলে মাড়িয়ে নিজে মিরাল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress