রজনীর শেষ তারা, গোপনে আঁধারে আধো-ঘুমেবাণী তব রেখে যাও প্রভাতের

লহো লহো তুলি লও হে ভূমিতল হতে ধূলিম্লান এ পরান–রাখো

চিরদিবস নব মাধুরী, নব শোভা তব বিশ্বে–নব কুসুমপল্লব, নব গীত,

কী গাব আমি, কী শুনাব, আজি আনন্দধামে।পুরবাসী জনে এনেছি ডেকে

বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা—বিপদে আমি না

তপের তাপের বাঁধন কাটুক রসের বর্ষণে ।হৃদয় আমার, শ্যামল-বঁধুর করুণ

যে থাকে থাক-না দ্বারে, যে-যাবি যা-না পারে ॥যদি ওই ভোরের

আমার এ ঘরে আপনার করে গৃহদীপখানি জ্বালো হে।সব দুখশোক সার্থক

দাও হে আমার ভয় ভেঙে দাও।আমার দিকে ও মুখ ফিরাও॥কাছে

ওই আলো যে যায় রে দেখা–হৃদয়ের পুব-গগনে সোনার রেখা ॥এবারে

ধীরে ধীরে ধীরে বও ওগো উতল হাওয়া ।নিশীথরাতের বাঁশি বাজে–

চরণধ্বনি শুনি তব, নাথ, জীবনতীরেকত নীরব নির্জনে কত মধুসমীরে ॥গগনে

আজ কিছুতেই যায় না মনের ভার,দিনের আকাশ মেঘে অন্ধকার– হায়

তোমা লাগি, নাথ, জাগি জাগি হে–সুখ নাহি জীবনে তোমা বিনা

আজ নবীন মেঘের সুর লেগেছে আমার মনে।আমার ভাবনা যত উতল

আমার নয়ন-ভুলানো এলে,আমি কী হেরিলাম হৃদয় মেলে॥শিউলিতলার পাশে পাশে ঝরা

আজি নাহি নাহি নিদ্রা আঁখিপাতে।তোমার ভবনতলে হেরি প্রদীপ জ্বলে,দূরে বাহিরে

হে মহাপ্রবল বলী,কত অসংখ্য গ্রহ তারা তপন চন্দ্রধারণ করে তোমার

খেলার ছলে সাজিয়ে আমার গানের বাণীদিনে দিনে ভাসাই দিনের তরীখানি

আলো যে আজ গান করে মোর প্রাণে গো।কে এল মোর

এমনি করে ঘুরিব দূরে বাহিরে,আর তো গতি নাহি রে মোর

জড়ায়ে আছে বাধা, ছাড়ায়ে যেতে চাই,ছাড়াতে গেলে ব্যথা বাজে।মুক্তি চাহিবারে

সেই তো তোমার পথের বঁধু সেই তো।দূর কুসুমের গন্ধ এনে

শুষ্কতাপের দৈত্যপুরে দ্বার ভাঙবে ব’লে,রাজপুত্র, কোথা হতে হঠাৎ এলে চলে॥সাত-সমুদ্র-পারের

শ্রাবণবরিষন পার হয়ে কী বাণী আসে ওই রয়ে রয়ে।গোপন কেতকীর

ধরণী দূরে চেয়ে কেন আজ আছিস জেগেযেন কার উত্তরীয়ের পরশের

শুধু কি তার বেঁধেই তোর কাজ ফুরাবেগুণী মোর, ও গুণী!বাঁধা

তোমার আনন্দ ওই এল দ্বারে, এল এল এল গো। ওগো

ওগো বধূ সুন্দরী, তুমি মধুমঞ্জরী,পুলকিত চম্পার লহো অভিনন্দন–পর্ণের পাত্রে ফাল্গুনরাত্রে

এ আবরণ ক্ষয় হবে গো ক্ষয় হবে,এ দেহমন ভূমানন্দময় হবে

অন্ধকারের উৎস-হতে উৎসারিত আলোসেই তো তোমার আলো!সকল দ্বন্দ্ববিরোধ-মাঝে জাগ্রত যে

নিভৃত প্রাণের দেবতা যেখানে জাগেন একা,ভক্ত, সেথায় খোলো দ্বার– আজ

মন মোর মেঘের সঙ্গী,উড়ে চলে দিগ্‌দিগন্তের পানেনিঃসীম শূন্যে শ্রাবণবর্ষণসঙ্গীতেরিমিঝিম রিমিঝিম

চিরবন্ধু চিরনির্ভর চিরশান্তিতুমি হে প্রভু–তুমি চিরমঙ্গল সখা হে তোমার জগতে,চিরসঙ্গী

জয় তব বিচিত্র আনন্দ, হে কবি,জয় তোমার করুণা।জয় তব ভীষণ

আবার শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে,মেঘ-আঁচলে নিলে ঘিরে॥সূর্য হারায়, হারায় তারা

বাণী তব ধায় অনন্ত গগনে লোকে লোকে,তব বাণী গ্রহ চন্দ্র

আমায় মুক্তি যদি দাও বাঁধন খুলেআমি তোমার বাঁধন নেব তুলে

চেনা ফুলের গন্ধস্রোতে ফাগুন-রাতের অন্ধকারেচিত্তে আমার ভাসিয়ে আনে নিত্যকালের অচেনারে॥একদা

ভুবনেশ্বর হে,মোচন কর’ বন্ধন সব মোচন কর’ হে ॥প্রভু, মোচন

ওই অমল হাতে রজনী প্রাতে আপনি জ্বালোএই তো আলো– এই

আমি শ্রাবণ-আকাশে ওই দিয়েছি পাতিমম জল-ছলো-ছলো আঁখি মেঘে মেঘে।বিরহদিগন্ত পারায়ে

মধ্যদিনে যবে গান বন্ধ করে পাখি,হে রাখাল, বেণু তব বাজাও

ছাড়্‌ গো তোরা ছাড়্‌ গো,আমি চলব সাগর-পার গো॥বিদায়-বেলায় একি হাসি,

তুমি এ-পার ও-পার কর কে গো ওগো খেয়ার নেয়ে?আমি ঘরের

বকুলগন্ধে বন্যা এল দখিন হাওয়ার স্রোতে।পুষ্পধনু, ভাসাও তরী নন্দনতীর হতে॥পলাশকলি

বাদল-ধারা হল সারা, বাজে বিদায়-সুর।গানের পালা শেষ ক’রে দে রে,

আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়েআমার ভয়ভাঙা এই

আঁধার রাতে একলা পাগল যায় কেঁদে।বলে শুধু, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে

দিনশেষে বসন্ত যা প্রাণে গেল ব’লেতাই নিয়ে বসে আছি, বীণাখানি

এই করেছ ভালো, নিঠুর,এই করেছ ভালো।এমনি করে হৃদয়ে মোরতীব্র দহন

আঁধার রজনী পোহালো, জগত পূরিল পুলকে।বিমল প্রভাতকিরণে মিলিল দ্যুলোকে ভূলোকে

আমি যখন তাঁর দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই তখন যাহা পাইসে

জানি গো, দিন যাবে এ দিন যাবে।একদা কোন্‌ বেলাশেষে মলিন

তোমার সোনার থালায় সাজাব আজ দুখের অশ্রুধার।জননী গো, গাঁথব তোমার

এসো এসো হে তৃষ্ণার জল, কলকল্‌ ছলছল্‌–ভেদ করো কঠিনের ক্রূর

একি এ সুন্দর শোভা ! কী মুখ হেরি এ !আজি