আজকে মোরে বোলো না কাজ করতে,যাব আমি দেখাশোনার নেপথ্যে আজ

হার মানালে গো, ভাঙিলে অভিমান হায় হায়।ক্ষীণ হাতে জ্বালা ম্লান

নমি নমি চরণে,নমি কলুষহরণে॥সুধারসনির্ঝর হে,নমি নমি চরণে।নমি চিরনির্ভর হেমোহগহনতরণে॥নমি চিরমঙ্গল

মন্দিরে মম কে আসিলে হে!সকল গগন অমৃতগমন,দিশি দিশি গেল মিশি

যারে নিজে তুমি ভাসিয়েছিলে দুঃখধারার ভরা স্রোতেতারে ডাক দিলে আজ

মোরা ভাঙব তাপস, ভাঙব তোমার কঠিন তপের বাঁধন–এবার এই আমাদের

কেমনে রাখিবি তোরা তাঁরে লুকায়েচন্দ্রমা তপন তারা আপন আলোকছায়ে॥হে বিপুল

নব আনন্দে জাগো আজি নবরবিকিরণেশুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে ॥উৎসারিত

তুমি যে আমারে চাও আমি সে জানি।কেন যে মোরে কাঁদাও

কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো!বিরহানলে জ্বালো রে তারে জ্বালো।রয়েছে দীপ

পুষ্প দিয়ে মারো যারে চিনল না সে মরণকে।বাণ খেয়ে যে

ডাকিছ কে তুমি তাপিত জনে তাপহরণ স্নেহকোলে ॥নয়নসলিলে ফুটেছে হাসি,ডাক

পেয়েছি অভয়পদ, আর ভয় কারে–আনন্দে চলেছি ভবপারাবারপারে ॥মধুর শীতল ছায়

আমার যে আসে কাছে, যে যায় চলে দূরে,কভু পাই বা

ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে– আয় গো আয়।কাঁচা রোদখানি পড়েছে

আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা।নীল

প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়েমোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ।তব ভুবনে

রাজপুরীতে বাজায় বাঁশি বেলাশেষের তান।পথে চলি, শুধায় পথিক ‘কী নিলি

গায়ে আমার পুলক লাগে, চোখে ঘনায় ঘোর–হৃদয় মোর কে বেঁধেছে

নমো, নমো, নমো।নমো, নমো, নমো।তুমি ক্ষুধার্তজনশরণ্য,অমৃত-অন্ন-ভোগধন্য করো অন্তর মম॥

জয় ভৈরব, জয় শঙ্কর !জয় জয় জয় প্রলয়ঙ্কর, শঙ্কর শঙ্কর॥জয়

শুষ্কতাপের দৈত্যপুরে দ্বার ভাঙবে ব’লে,রাজপুত্র, কোথা হতে হঠাৎ এলে চলে॥সাত-সমুদ্র-পারের

বসন্তে-বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক–যায় যদি সে যাক॥রইল তাহার বাণী

আমার না-বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝেতোমার ভাবনা তারার মতন বাজে

আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে।সকল অহংকার

ইচ্ছা যবে হবে লইয়ো পারে,পূজাকুসুমে রচিয়া অঞ্জলিআছি ব’সে ভবসিন্ধু-কিনারে ॥যত

আঘাত করে নিলে জিনে,কাড়িলে মন দিনে দিনে ॥সুখের বাধা ভেঙে

শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী

আজ কি তাহার বারতা পেল রে কিশলয় ।ওরা কার কথা

এসে শরতের অমল মহিমা, এসো হে ধীরে।চিত্ত বিকাশিবে চরণ ঘিরে॥বিরহতরঙ্গে

ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়।তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি

তিমিরবিভাবরী কাটে কেমনেজীর্ণ ভবনে, শূন্য জীবনে–হৃদয় শুকাইল প্রেম বিহনে ॥গহন

মহারাজ, একি সাজে এলে হৃদয়পুরমাঝে !চরণতলে কোটি শশী সূর্য মরে

জানি জানি তোমার প্রেমে সকল প্রেমের বাণী মেশে,আমি সেইখানেতেই মুক্তি

এই আসা-যাওয়ার খেয়ার কূলে আমার বাড়ি।কেউ বা আসে এ পারে,

হে মহাজীবন, হে মহামরণ, লইনু শরণ, লইনু শরণ ॥আঁধার প্রদীপে

রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারেতোমায় আমায় দেখা হল সেই

শুক্‌নো পাতা কে যে ছড়ায় ওই দূরে উদাস-করা কোন্‌ সুরে॥ঘরছাড়া

হে নিখিলভারধারণ বিশ্ববিধাতা,হে বলদাতা মহাকালরথসারথি॥তব নামজপমালা গাঁথে রবি শশী তারা,অনন্ত

আমার মিলন লাগি তুমি আসছ কবে থেকে!তোমার চন্দ্র সূর্য তোমায়

কার মিলন চাও বিরহী–তাঁহারে কোথা খুঁজিছ ভব-অরণ্যেকুটিল জটিল গহনে শান্তিসুখহীন

ভয় হতে তব অভয়মাঝে নূতন জনম দাও হে ॥দীনতা হতে

জয় হোক, জয় হোক নব অরুণোদয় ।পূর্বদিগঞ্চল হোক জ্যোতির্ময়॥এসো অপরাজিত

ডুবি অমৃতপাথারে– যাই ভুলে চরাচর,মিলায় রবি শশী ॥নাহি দেশ, নাহি

এই কথাটা ধরে রাখিস– মুক্তি তোরে পেতেই হবে।যে পথ গেছে

সেই তো আমি চাই–সাধনা যে শেষ হবে মোর সে ভাবনা

আর নাই যে দেরি, নাই যে দেরি।সামনে সবার পড়ল ধরা

আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসারপরানসখা বন্ধু হে আমার॥আকাশ কাঁদে হতাশ-সম,

বল দাও মোরে বল দাও, প্রাণে দাও মোর শকতিসকল হৃদয়

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছিআমি ডুবতে রাজি

পুষ্প ফুটে কোন্‌ কুঞ্জবনেকোন্‌ নিভৃতে ওরে, কোন্‌ গহনে।মাতিল আকুল দক্ষিণবায়ু

নীল আকাশের কোণে কোণে ওই বুঝি আজ শিহর লাগে আহা।শাল-পিয়ালের

নাথ হে, প্রেমপথে সব বাধা ভাঙিয়া দাও।মাঝে কিছু রেখো না,

এক হাতে ওর কৃপাণ আছে, আর-এক হাতে হার।ও যে ভেঙেছে

পথিক হে,ওই-যে চলে, ওই-যে চলে সঙ্গী তোমার দলে দলে॥অন্যমনে থাকি

দিন অবসান হল।আমার আঁখি হতে অস্তরবির আলোর আড়াল তোলো॥অন্ধকারের বুকের

নিবিড় মেঘের ছায়ায় মন দিয়েছি মেলে,ওগো প্রবাসিনী, স্বপনে তবতাহার বারতা

ওলো শেফালি, ওলো শেফালি,আমার সবুজ ছায়ার প্রদোষে তুই জ্বালিস দীপালি॥তারার

শিউলি-ফোটা ফুরোল যেই ফুরোল শীতের বনেএলে যে–আমার শীতের বনে এলে

সবার মাঝারে তোমারে স্বীকার করিব হে।সবার মাঝারে তোমারে হৃদয়ে বরিব

মোরে বারে বারে ফিরালে।পূজাফুল না ফুটিল দুখনিশা না ছুটিল,না টুটিল

একি করুণা করুণাময়!হৃদয়শতদল উঠিল ফুটি অমল কিরণে তব পদতলে ॥অন্তরে

বীণা বাজাও হে মম অন্তরে ॥সজনে বিজনে, বন্ধু, সুখে দুঃখে