Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গারোপাহাড়ের পথে – কিছু অচেনা মানুষ আর অজানা ইতিহাসের খোঁজে || Nitish Burman

গারোপাহাড়ের পথে – কিছু অচেনা মানুষ আর অজানা ইতিহাসের খোঁজে || Nitish Burman

ভারতে বসবাসকারী মানুষ এবং তাদের ভাষা, ধর্ম এত ভিন্ন ভিন্ন যা আর কোথাও দেখা যায় না। প্রতিটি অঞ্চল, পাহাড়-নদী এবং মানুষের ভাষার স্বতন্ত্র কিছু ঐতিহ্য আছে, তাদের সৃষ্টির কিছু ইতিহাস আছে। কোথাও সেগুলো ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে আবার কোথাও অজানা থেকে গেছে। তেমনই এক অজানা পাহাড়ের মানুষ এবং তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এ লেখায়। উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্য মেঘালয়ের ছোট জেলা গারোপাহাড়ে নিয়ে যাচ্ছি আপনাদের। গারোপাহাড় গারো উপজাতির আদি বাসস্থান। অনেকের ধারণা তাদের নাম অনুসারে গারোপাহাড়ের নাম হয়েছে। গারোপাহাড় আগে একটা জেলা ছিল, বর্তমানে ভেঙে তিনটে হয়েছে। পশ্চিম, পূর্ব এবং দক্ষিণ গারোপাহাড় জেলা। গারোপাহাড়ে গারো ছাড়াও কোচ, হাজং, বানাই, ডালু প্রভৃতি উপজাতির বাস। সেইসব উপজাতির উৎস, সংস্কৃতি প্রভৃতি নিয়ে কিছু অজানা কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া গারোপাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের কিছু পুরনো সভ্যতাও থাকছে এ লেখায়। উত্তর- পূর্বাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদীর গা ঘেঁষে যে পুরনো সভ্যতার জন্ম নিয়েছিল তার কিছুটা আঁচ করা যাবে। উত্তর- পূর্বাঞ্চলে গারোদের বসবাস কোচবিহার জেলাতেও কিছুটা বিদ্যমান, তাছাড়া বাংলাদেশের ভিতরেও কয়েকটা গ্রাম আছে। কোচবিহার জেলাতে গারোপাড়া নামে গ্রাম আছে, কতিপয় গারো উপজাতি সেখানে মূলত কৃষির উপরেই নির্ভর করে বেঁচে আছে। গারোপাহাড়ের উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদী যা অসমের ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে, দক্ষিণ- পশ্চিমে বাংলাদেশ সীমান্ত। কোচবিহার থেকে বাসে ধুবড়ি এবং ধুবড়ি থেকে লঞ্চে বা স্পিড বোটে ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে গারোপাহাড়ে পৌঁছনো যায়। নদী পার হতে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লাগে। ওপারে ফুলবাড়ি শহর পাওয়া যাবে, সেখান থেকে পশ্চিম গারোপাহাড়ের সদর শহর ‘তুরা’তে পৌঁছে যাওয়া যায় তিন ঘণ্টায়। দূরত্ব ৮৫ কিঃমিঃ। তাছাড়া গুয়াহাটি থেকে বাসে ছয় ঘণ্টায় তুরা পৌঁছনো যায়। দূরত্ব ২২০ কিঃমিঃ। তুরা এক ছোট্ট পাহাড়ি শহর। দেখতে খুব সুন্দর। পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালে সব ঘরবাড়ি, ছবির পটে যেন আঁকা।ফুলবাড়ি থেকে তুরা আসার পথে ১৮ কিমি দূরে ‘ভাইটবাড়ি’ নামে একটি গ্রাম পাওয়া যায়। এই ‘ভাইটবাড়ি’তে এক পুরনো সভ্যতার কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। তার কিছুটা ইতিহাস তুলে ধরছি। ১৯৯২ সালে দিল্লির প্রত্নতাত্ত্বিক দলের নির্দেশক শ্রী এ.কে. শর্মার নেতৃত্বে এখানে খননকার্য শুরু হয়েছিল। তাঁদের মতে, মাত্র দশ শতাংশ উৎখননের কাজ তারা করেছিলেন। বাকি নব্বই শতাংশ এখনো মাটির নিচে। এ খননের ফলে দেখা যায় প্রায় কুড়ি বর্গ কিঃমিঃ অঞ্চল জুড়ে এখানে পুরনো কোনো দুর্গ ছিল। যার চারদিকে ছিল উঁচু মাটির দেওয়াল এবং তার বাইরের দিকটা ছিল ইঁটের তৈরি প্রাকার। মাটির দেওয়ালের উপর দিয়ে যাতায়াতের পথ ছিল। ইঁটের উঁচু দেওয়ালের অপর পাশে ছিল গভীর, জলপূর্ণ প্রশস্ত পরিখা। রাজধানীকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে এ এক বিশাল ব্যবস্থা। তাছাড়া প্রাকারের চারপাশে পরিখাতে নিয়মিত জল প্রবাহের উদ্দেশ্যে এগুলো সংযুক্ত ছিল নদী এবং ঝর্ণার সাথে। অনুমান করা হত ব্রহ্মপুত্র প্রবাহিত হত এ দুর্গের পাশ দিয়ে, তা প্রায় একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত। পরবর্তী বন্যা ও ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্র প্রায় ১২ কিঃমিঃ সরে গেছে উত্তরে। কিন্তু কোন বংশের রাজা এ পুরী তৈরি করেছিলেন তার সদুত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। নানা মহল নানাভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে একটি বৌদ্ধ স্তূপ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এ স্তূপ প্রায় দু’ হাজার বছর পুরনো। জোড়া ইঁট এবং মাটি দিয়ে তৈরি এই স্তূপটি। তাছাড়া এই অঞ্চলে বারোটি প্রচীন দীঘির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। এই দীঘিগুলোর মধ্যে একটি দৈর্ঘ্যে, প্রস্থে ও গভীরতায় অতিশয় বিরাট। এর আয়তন ও আকার কোচবিহারের সাগরদীঘির মতো। অন্যান্য দীঘিগুলোও কোচবিহারের অন্যান্য দীঘিগুলোর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বাকি খননকার্য মেঘালয় সরকারের আগ্রহের অভাব এবং অন্যান্য রাজনীতি কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে দীঘিগুলো প্রায় ভরাট এখন। তবে মূল দীঘির মাঝখানে এখনো গভীর কালো জল দেখা যায়, আর তার ওপর দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ঘাসের এক পুরু কার্পেট। সে কার্পেট এত পুরু যে, মানুষ গবাদি পশু তার ওপর দিয়ে দীঘি পেরিয়ে চলে যেতে পারে। তবে এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়ালে ক্রমশ নিচু হতে থাকে ঘাসের কার্পেট, কালো জল উঠতে থাকে নিচ থেকে। একটা পঞ্চকোণাকৃতি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তাছাড়া অষ্টভুজ মন্দির, যাতে আটটি শিবলিঙ্গ স্থাপিত আছে। মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে অসংখ্য টেরাকোটা মূর্তি। পোড়ানো টালিতে অসংখ্য দেবমূর্তি। গণেশ, শিব, কালী, নর্তকী এবং তা অত্যন্ত দক্ষ হাতের তৈরি। ভগ্ন মৃৎপাত্র প্রচুর পাওয়া গেলেও কোনোরকম পুঁথি বা লিপি এখনো পাওয়া যায়নি। যা থেকে প্রকৃত ই ইতিহাস বা সময় নির্ণয় করা সম্ভব। তবে মূর্তিগুলো প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে গুপ্তযুগ থেকে পাল যুগের মধ্যকার সময়ের। টেরাকোটা মূর্তিগুলোতে পাল যুগের ছাপ সুস্পষ্ট। গণেশ মূর্তির গঠন এবং তার মাথার মুকুটের বৈশিষ্ট্য থেকেও এ কথাই প্রমাণিত হয়। স্থানটিতে অসংখ্য পাথরের তৈরি শিবলিঙ্গ পাওয়া যায়।এ থেকে মোটামুটি প্রমাণিত এটা কোনো হিন্দু রাজার রাজধানী ছিল। উৎখননের সময় প্রাপ্ত মাটিতে বন্যার ঘূর্ণিস্রোতের পলির চিহ্ন প্রভৃতি থেকে অনুমান করা যেতে পারে এ রাজধানীর পতন সম্ভবত ব্রহ্মপুত্রের ভয়ঙ্কর বন্যা বা ভূমিকম্পের প্রকোপেই ঘটেছিল। অনেকের ধারণা কোনো শক্তিশালী রাজা এখানে এই দুর্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাদের মতে ভাস্কর বর্মার সময়কার কামরূপ বা প্রাচীন প্রাগজ্যোতিষপুরের অবস্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ এখনো কোনো একক সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। হিউয়েন-সাং কামরূপ এসেছিলেন এবং তাঁর বিবরণীর সাথে যার অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে এর প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য সমস্ত বাধা পেরিয়ে আবার শুরু হবে, এই আশা করি এবং গারোপাহাড়ের এসব অনামি গ্রাম ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিক এবং তার সভ্যতা, কৃষ্টি যে পুরনো তা তুলে ধরুক পৃথিবীর বুকে।ভাইটবাড়ি থেকে একটু এগোলেই পাহাড়ি রাস্তা শুরু হয়ে যায়। আঁকাবাঁকা পথে পৌঁছে যাওয়া যায় তুরা। এই তুরা আগে অবিভক্ত গারোপাহাড়ের সদর শহর ছিল। বর্তমানে পশ্চিম গারোপাহাড়ের সদর শহর। মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের পরই তুরার স্থান। এই শহরে মূলত গারো উপজাতির বাস। গারোরা মাতৃতান্ত্রিক জাতি। মেয়েরাই সব সম্পত্তির মালিক হয়।তুরার সুউচ্চ শৃঙ্গ হল ‘ নোকরেক ‘ পাহাড়। কথিত আছে এই নোকরেক পাহাড়ে অম্বিকা নামে এক বনদেবী বাস করতেন। দেবী মন্দির ছিল সেখানে একটা। তার ঔরসজাত সন্তানের নাম ‘ডুরা বীর’। সে কোচদের বীর ছিল। দেহের গঠন ছিল অস্বাভাবিক। ব্রিটিশ শাসন আসার পরই ব্রিটিশরা তুরা দখল করার ষড়যন্ত্র করেন। ব্রিটিশ সরকার দু’ হাজার সৈন্য-সহ বরলাট লেফট উইলিয়ামসনকে সহকারী কমিশনার পদে নিযুক্ত করে ‘তুরা’ দখলের জন্য পাঠিয়ে দেন। দু’ হাজার সৈনিকের মধ্যে দু’জন কোচ সম্প্রদায়ের লোক ছিল। জানারু কোচ এবং সিংবিন হাওয়ালদার (কোচ) ওরফে সিকেন কোচ। প্রথমে তারা শিঙ্গিমারীতে (সিংহমারী) জাহাজ থেকে অবতরণ করে কিছুদিন ওখানেই থাকেন। ক্রমে দুর্লঙ্ঘ জঙ্গল অতিক্রম করে এক পাহাড়ের উঁচু জায়গায়, যেখানে ডেভিট স্কট সাহেব ক্যাম্প বানিয়েছিলেন সেখানে সুন্দর বাংলো, ফুলের বাগান এবং পুকুর বানিয়েছিলেন। সেখান থেকে পূর্ব- দক্ষিণ কোণের দিকে ‘নোকরেকের ‘ নিচে ‘ডুরা বীর’-এর ছাউনি তাদের চোখে পড়ল। দুর্গম পাহাড় জঙ্গল অতিক্রম করে পাহাড়ের পাদদেশে উপস্থিত হয় সৈন্যরা। তখন লম্বা ও ভীষণ আকারের মস্তক সমন্বিত একজন তাদের বাধা প্রদান করল। তখন প্রত্যেকেই জানতে পারল এই সেই ডুরা বীর। দু’ পক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ সৈন্যরা কোনওমতে তাকে পরাভূত করে বন্দী করতে পারল না। দিনের পর দিন এভাবে যুদ্ধ চলার ফলে বহু সৈন্য প্রাণ হারাল। শেষে বড়লাট লেঃ উইলিয়মস ঠিক করলেন ডুরা বীরকে বন্দুকের গুলিতে হত্যা করে তুরা দখল করবেন। তাই তারপর দিন আদেশ হল বন্দুকের গুলিতে ডুরা বীরকে হত্যা করে তুরা দখল করার। কথিত আছে জানারুরাস কোচের হাতে ডুরা বীর-এর মৃত্য হয়।ব্রিটিশরা ‘ডুরা’ উচ্চারণ করতে ‘তুরা’ বলত। তখন থেকেই পক্ষান্তরে ‘ডুরা’ নাম ‘তুরা’ হয়। এ কথা সত্য যে, আজও বয়স্ক লোকেরা তুরার পরিবর্তে ‘ডুরা’ উচ্চারণ করে।গারোপাহাড়ের ‘জুম’ চাষের কার্পাস তুলো বিশ্বের উন্নতমানের কার্পাস তুলো, তখন এই তুলো বিশ্ববিখ্যাত হওয়ায় অনেকে ‘তুলা’ বলত জায়গাটাকে। এই ‘তুলাপাহাড়’ পরবর্তীতে ‘তুরা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। আবার অনেকের মতে, নোকরেক পাহাড়ে ‘ডুরামা ইস্কামা’নামে এক দেবী বাস করতেন। এই ডুরামা’ থেকেই ডুরা এবং পরবর্তীতে ‘তুরা’ হয়েছিল। নাম বা ইতিহাসের তাৎপর্য যাই হোক না কেন, গারোরা মূলত মঙ্গোলিয়া বংশোদ্ভূত। পূর্ববর্তী গারোরা ‘সাংসারিক’ ছিল। তাদের
নিয়মকানুন হিন্দুদের সাথে মিল আছে। তারা বনদেবীর পূজা করত। আদি গারোরা তাদের শরীরে প্রচুর গয়না পরতে ভালবাসত। পরবর্তীতে অধিকাংশ খ্রীস্ট ধর্মে পরিবর্তিত হয়। কৃষিই তাদের মূল জীবিকা। ‘জুম’ চাষ করে নানারকম ফসল ফলায়। ফসল কাটার সময় তারা নাচ-গান-আনন্দ উৎসব করে থাকে। এই উৎসবকে তারা ‘ওয়াঙ্গালা’ উৎসব বলে থাকে। ওয়াঙ্গালা উৎসব এখানকার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের উৎসব। এই উৎসবকে মেঘালয় সরকার পর্যটন উৎসব হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। বর্তমানে এই উৎসবটি অনেক প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। নাচ, গান, পান, ভোজন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে ‘ওয়াঙ্গালা’ এক মহামিলনের উৎসব হিসেবে পালিত হয়। ‘ওয়াঙ্গালা’ উৎসবের আগের দিন এক ভাবগম্ভীর ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘রুগালা’ পালন করা হয়ে থাকে। মাঠের মাঝখানে এই অনুষ্ঠান করা হয়। গ্রামের প্রধান ‘নকমা’ সবাইকে নিমন্ত্রণ জানায় মাঠে আসার জন্য। মাঠে সবাই একত্রিত হয়ে ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে সমৃদ্ধির কামনায় সর্বশক্তিমানের নিকট প্রার্থনা করে। পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে এবং নিজেদের তৈরি মদ পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব ‘রুগালা’, অনুষ্ঠানের পরদিন অর্থাৎ ‘ওয়াঙ্গালা’ উৎসবের দিন ভোররাতে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের ঘরে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়, যাকে ‘সাসাত সোয়া’ বলা হয়। এই অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে ধূপ-ধুনো, বাদ্যিবাজনা, স্তবগীতি সহকারে সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করা হয়। তারপর নতুন ধানের চালের গুঁড়ো এবং ভাতপানি (রাইস বিয়ার) নতুন ফসলের উপর ছিটিয়ে ইষ্টদেবতাকে সম্মান জানানো হয়। ‘সাসাত-সোয়া’ এই ‘ওয়াঙ্গালা’ উৎসবের এক বিশেষ আকর্ষণ। এটা সাধারণত করা হয় ফসলের সার্বিক সমৃদ্ধির কামনায়। এরপর শুরু হয়ে যায় অসীম উল্লাস ও আনন্দ নৃত্যের উৎসব ‘ওয়াঙ্গালা’। অংশগ্রহণকারী ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ সবাই এই উৎসবে তাদের চিরাচরিত নতুন পোশাক পরে। পানড্রা (নাচের পোশাক), কঙ্কন, কণ্ঠী, কেয়ূর, বেসর, মঞ্জীর এবং মাথায় ধানের শিস ও পাখির পালক লাগিয়ে ডিম্বাকৃত এক বিশেষ ধরনের ঢোল, বাঁশি, শিঙা (গরু বা মোষের শিং দিয়ে তৈরি) বাজিয়ে সারিবদ্ধভাবে এই নাচ তথা ‘ওয়াঙ্গালা’ উৎসব পালিত হয়। গারো ছাড়া এই ‘ওয়াঙ্গালা’ উৎসবে এখন অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা অংশগ্রহণ করেন।

গারো উপজাতি ছাড়া তুরা তথা গারোপাহাড়ে ‘কোচ’ উপজাতির বাস। ভাষাবিদদের মতে ‘তিব্বত- বর্মী ভাষার সাথে কোচদের মিল পাওয়া যায়। তাদের মতে ‘তি’ প্রত্যয়যুক্ত ভৌগোলিক স্থান কোচদের আদি বাসস্থান। কোচদের ভাষায় ‘তি’ মানে জল। কানিংহাম মহাশয়ের মতে এই ‘তি’ প্রত্যয়যুক্ত নদীর নামগুলোতে তিব্বত-বর্মী এবং অস্ট্রিক ভাষীর সাথে সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। ভূসংস্থানের নামগুলো অধ্যয়ন করলে পরিষ্কার বোঝা যায় নামগুলো বেশিরভাগই জলের প্রতিশব্দ দ্বারা গঠিত। কোচগণ তিব্বত ভাষাগোষ্ঠীর লোক। তিব্বতের সঙ্গে কোচদের অজ্ঞাতে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সংযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের সৃষ্টি খণ্ডে কোচদের সৃষ্টি কাহিনিতে ‘তিবর’কে কোচদের পূর্বপুরুষ বলে চিহ্নিত করেছে। রাজমোহন নাথ মহাশয়ের মতে ‘কোচবত’ বা ‘কোচবর্ষ’ তিব্বতের উত্তরে অবস্থিত, তাদের এই আদি বাসস্থানের নাম হিসেবে কোচ জাতির নাম হয়েছে। রাজমোহন নাথ মশায়ের ‘কোচবত’ বা ‘কোচবর্ষ’ আছে কি না জানা নেই, তবে চিনের অন্তর্গত সূর্যদেশে ‘কুচদেশ’ বা নগর এখনো বিদ্যমান। যা প্রাচীনকালে বিখ্যাত ‘সিল্ক বোট’ নামে পরিচিত। কুচদেশ যদি কোচদের আদি বাসস্থান হয়ে থাকে তবে তিব্বতে কোচদের বাসস্থানও অস্বাভাবিক নয়। কোচেরা কখন এবং কোন পথে ভারতে প্রবেশ করেছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। পণ্ডিতগণ মনে করেন, কোচগণ মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত এবং তাদের ভাষা তিব্বত-বর্মী আর্যই বলা হয়েছে। তাদের মতে, তিব্বত নদীর পার ধরে কোচরা চীনের ‘য়ুনান’ প্রদেশে উপস্থিত হয় এবং সেখান থেকে ইরাবতী, চালউইন, মেকং, মেনাম নদীর পারে পারে এসে উত্তর- পূর্ব ভারতে প্রবেশ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব বিহার পর্যন্ত অগ্রসর হয়। কোচেরা যে ভারতবর্ষের উত্তর- পশ্চিম সীমান্ত হয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছে তা এই আলোচনা হতে কিছুটা বোঝা যায় এবং তা থেকে দেখা যায় প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মঙ্গোলি ও কোচ ইত্যাদি ভারতে ছিল এবং আর্যদের দ্দ্বারা বিতাড়িত হয়ে তারা উত্তর-পূর্ব সীমান্তে এসে বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করে, ‘বর্তমান সময়ে কোচের নিজের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতিকে ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। কোচেরা যারা অসমিয়াদের সংস্পর্শে আসে, তারা অসমিয়া ভাষা, সংস্কৃতি গ্রহণ করে চলেছে এবং যারা বাঙালির সংস্পর্শে আসে তারা বাংলা ভাষা এবং বাঙালিদের আচার, নিষ্ঠা, পূজা প্রভৃতি ধরে নিয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক শুধু নিজেদের ভাষায় কথা বলে। নিজেদের এই ভাষা কোচদের মতে প্রায় লুপ্তির পথে। অল্পসংখ্যক লোক যারা তাদের এই ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে আছে তারা শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত নয়। গারোপাহাড়ের এই কোচ ভাষাকে রক্ষা করার জন্য আশা করি সরকার এগিয়ে আসবে। উপযুক্ত শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে আগামীতে বাঁচিয়ে রাখবে এই উপজাতিকে, বাঁচিয়ে রাখবে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে।

কোচ ছাড়া ‘হাজং’ উপজাতির বাস এই গারোপাহাড়ে। হাজংরাও অনেকটা কোচদের মতোই নিজেদের সংস্কৃতি, ভাষা নিয়ে আঁকড়ে আছে। কোচ ও হাজং দুটোই হিন্দুপ্রধান জাতি। পূজা-পার্বণ, আচারবিধি অনেকটা অসমের অসমিয়া তথা কামরূপী উপভাষা এবং গোয়ালপারীর উপভাষার সাথে সাদৃশ্য। এদের বর্তমান প্রধান আবাস হচ্ছে মেঘালয় ও অসম। তাছাড়া বাংলাদেশের শ্রীহট্ট, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, জামালপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হাজংদের নিজেদের ভাষাকে ‘হাজং’ ভাষাই বলে থাকে। এই ভাষা যে কতকাল আগের তার সুস্পষ্ট কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। এই প্রসঙ্গে পলিটিকল করেসপন্ডেন্ট অব ‘বেঙ্গল গভর্নমেন্ট’ মিঃ এ. মেকেঞ্জি সাহেবের ‘দি নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে তাঁর ১৮৮১ সনের লোকগণনা প্রতিবেদনে হাজংদের অর্ধ হিন্দু- গারো বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হাজং ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে হাজং ভাষা এখনো জীবন্ত কথ্য ভাষা। এই ভাষার আবার অঞ্চল হিসেবে পার্থক্য আছে। যেমন সুসুংঙী, দশকানীয়া, কড়াইবাড়িয়া এবং সেচপাড়িয়া, পূর্ব- পশ্চিম খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ অংশ, উত্তর ময়মনসিংহের নিতাই নদী পর্যন্ত সুসংঙী হাজং ভাষা প্রচলিত। এই অঞ্চলে ‘শ’ ‘স’ ‘ষ’-র পরিবর্তে অসমিয়ার ‘হ’ উচ্চারণ বিশেষভাবে প্রচলিত। নিতাই নদীর পশ্চিম তীর থেকে আমপাতি অঞ্চল পর্যন্ত দশকানীয়া হাজং ভাষার অঞ্চল। আমপাতি থেকে ভাইটবাড়ি ও গোয়ালগাঁও পর্যন্ত কড়াইবাড়িয়া হাজং ভাষার অঞ্চল এবং টিক্রিকিলা অঞ্চলে সেচপাড়িয়া হাজং ভাষা প্রচলিত। হাজং ভাষাকে উন্নতি, অগ্রগতি এবং প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০০০ সনে ‘হাজং সাহিত্যসভা’ গঠিত হয়। তবে সেই সাহিত্যসভা হাজং ভাষা, হাজং সংস্কৃতি, কৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য এখনো তেমন কোনো ভূমিকা পালন করেনি। আশা করি আগামী দিনে গারো পাহাড়ের হাজং সম্প্রদায় তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে আসবেন। হাজং সম্প্রদায়ের মত অতিস্বল্প এক হিন্দু উপজাতি গোষ্ঠী ‘বানাই’ আছে। তুরা থেকে ষাট কিঃমিঃ দূরে বর্তমান যাত্রাকোণা গ্রামে এবং বাংলাদেশের কিছু প্রান্তে তারা বসবাস করছেন।কৃষিই তাদের একমাত্র ভরসা। হাজং ভাষার সাথে তাদের মিল আছে।আগামীতে সরকার এগিয়ে না আসলে এইসব উপজাতি পৃথিবীর বুক থেকে অচিরেই লোপ পেয়ে যাবে। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি সব হারিয়ে যাবে।

তুরা থেকে পঞ্চাশ কিঃমিঃ দক্ষিণে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় ‘ডালু’ নামে এক শহরে। বাংলাদেশ সীমান্তে এই শহর। এই শহরে ‘ডালু’ নামে এক উপজাতির বাস। তাদের ভাষাকেও ‘ডালু’ ভাষা বলে। তাদের এই নাম অনুসারেই এই শহরের নাম ‘ডালু’ হয়েছে। কথিত আছে ‘ঢালজি’ যখন মণিপুরের রাজা ছিলেন তখন অসমের রাজা ছিলেন ভগদত্ত। ঢালজি অর্জুনের পুত্র বব্রুবাহনের বংশধর ছিলেন। একবার ভগদত্ত মণিপুর রাজ্য আক্রমণ করেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ঢালজি সদলবলে পলায়ন করেন। ঢালজির বংশধরগণ প্রাণের ভয়ে ছত্রভঙ্গভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজা ভগদত্ত মণিপুর জয় করে নিশ্চিন্ত থাকেননি। গুপ্তচর প্রেরণ করে ঢালজির বংশধরকে ধরে এনে হত্যা করতেন।প্রাণের ভয়ে ঢালজির বংশধরগণ ছদ্মবেশে বিভিন্ন উপাধি ধারণ করে বসবাস আরম্ভ করেন। যারা অসমে রয়ে গেছেন তারা ‘সিংহ’ উপাধি ধারণ করে আজও বসবাস করছেন। একদল ঢালজির সাথে অসমের পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে বর্তমান মেঘালয় রাজ্যের গারোপাহাড় জেলায় প্রবেশ করেন। তারা তাদের নেতা ‘ঢালজি’ থেকে ‘ডালু’ উপাধি গ্রহণ করেন। এই ডালুতে বর্তমানে ডালু সম্প্রদায়ের এই উপজাতি বসবাস করছেন। তাদের এক অংশ অবশ্য সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে নাকুগাঁও গ্রামে বাস করছেন। ডালুদের এক অংশ অসমের কাছাড় জেলায় চলে যান এবং ‘ডালু’ উপাধি ধারণ করেই বসবাস করছেন। ডালু জাতি প্রথমে ‘ডালুগাঁও’-এ বসবাস শুরু করেন। জায়গাটি পাহাড়ময় ছিল। কৃষি উপযোগী জমির খুব অভাব ছিল, অভাব ছিল পানীয় জলেরও। তারপর ভগদত্তের গুপ্তচরদের ভয় ছিল। সেইজন্য সহজ জীবিকার জন্য এবং গুপ্তচরদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা অধিকাংশ ডালুগাঁও ছেড়ে চার কিলোমিটার পূর্বে ‘ভোগাই’ নদীর তীরে চলে আসেন। সেখানে কৃষির উপযোগী সমতল ভূমি ছিল এবং ভোগাই নদী পাশে থাকায় জলের কোনো অভাব ছিল না। তারা ভোগাই নদীর ধারে একটা ‘কিল্লা’ বা দুর্গ তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। সেই ‘কিল্লা’ থেকেই জায়গাটির নাম হয় ‘ডালু কিল্লাপাড়া’। ডালুগাঁও গ্রামে যারা অবশিষ্ট ছিলেন তারাও ক্রমে নিজেদের জায়গা জমি হাজং, কোচদের হাতে বিক্রি করে একে একে ডালুকিল্লা হতে চার কিমি দক্ষিণে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার নালিতাবাড়ি থানার অন্তর্গত হাতিপাগাড় গ্রামে বসবাস করতে শুরু করেন। ঢালজির সময়ে মণিপুরের প্রায় সকল আদিবাসীরাই ছিল বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। ঢালজি নিজেও ছিলেন একজন পরম বৈষ্ণব। তাঁর সাথে যারা এসে ডালু কিল্লাপাড়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন তারা সকলেই বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তাদের বংশধরগণই ডালু কিল্লাপাড়ায়, ভোগাই নদীর পারে গোপাল মন্দির নির্মাণ করে গোপাল পূজা শুরু করেন। আজও ‘ডালু গোপাল বাড়ি’ ভোগাই নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। ডালু জাতি সকলেই যে পূজাটি বিশেষভাবে করেন তা হল কার্তিকপূজা। ডালুগাঁও-এ বর্তমানে কামাখ্যা মায়ের বিগ্রহ ও মন্দির আছে, সেটাও ডালুদের দ্বারাই প্রথমে প্রতিষ্ঠিত। ডালুগণ ডালুগাঁও ছেড়ে যাওয়ার সময় বর্তমানে বসবাসকারী হাজং এবং কোচগণের পূর্বপুরুষগণের হাতে কামাখ্যার পূজার ভার দিয়ে যান। তারপর থেকে ডালু, কোচ, হাজং এই তিন জাতির সহায়তায় ডালু গোপাল বাড়ির গোপাল এবং ডালুগাঁও-এর কামাখ্যার পূজা চিরাচরিত প্রথায় সম্পন্ন হচ্ছে। গারোপাহাড়ের এই তিন উপজাতি পরস্পর নিজেদের ভিতর ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলে বসবাস করছেন। ডালু জাতির ভাষা বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণে নতুন ভাষার রূপ নিয়েছে। বাংলা, অসমিয়া ভাষার প্রভাব আছে তাদের এই ভাষায়। এই ডালু জাতি কিছুটা অলস প্রকৃতির। তাদের ভিতর শিক্ষার প্রসার তেমন ঘটেনি। তাদের অধিকাংশই চাষবাস এবং দিনমজুরি করে দিন কাটায়। এই ক্ষয়িষ্ণু জাতি ক্রমশ অবলুপ্তির পথে। সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলে এই উপজাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে বাঁচানো যাবে।

ভ্রমণপিপাসু যারা গারোপাহাড়ে আসেন তারা অবশ্যই একটা জায়গা না ঘুরে যাননা। সেটা হল ‘বালফাকরাম জাতীয় পার্ক’। ভারতের বৃহত্তম অভয়ারণ্যের মধ্যে এটি একটি। রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় এই অভয়ারণ্যের উদ্বোধন করেছিলেন। তুরা থেকে ১৬০ কিঃমিঃ দূরে, বাঘমারা হয়ে যেতে হয়। তাছাড়া দীর্ঘতম ‘সিজু’ গুহা, সেটাও বাঘমারার অদূরে। বাঘমারা দক্ষিণ গারোপাহাড়ের সদর শহর এবং উইলিয়ামনগর পূর্ব গারোপাহাড়ের সদর শহর। বালফাকরাম জাতীয় পার্কে বুনো হাতি, হরিণ, বাঘ প্রভৃতি প্রচুর জীবজন্তু আছে। তাছাড়া আছে নানা প্রজাতির সাপ ও নানারকম ফুলের সমাহার। মার্চ-এপ্রিল বালফাকরাম ঘোরার উপযুক্ত সময়। তখন নানারকম ফুল ফোটে।

ইতিহাসের পাতা ওল্টালে গারাপাহাড়ের এসব অজানা কথা হয়তো পাওয়া যাবে না, তবে গারোপাহাড়ের পাহাড়ি সহজ সরল মানুষগুলো তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি নিয়ে আনন্দেই আছে। তাদের প্রতিনিয়ত কোনো প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। গারোপাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। তার খননকার্য চলছে। তাছাড়া ন্যাচরাল গ্যাস, অন্যান্য খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। আসুন সবাই মিলে গারোপাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করি। এখানকার আদিবাসীদের সাথে মিলে ঘুরে বেড়াই এই বনপাহাড়ির পথে পথে। খুঁজে বেড়াই হারিয়ে যাওয়া কিছু ই ইতিহাস।

অনুসন্ধান সূত্র : ১) ডুরা হতে তুরা- উপেন্দ্রহারী কোচ। (২) ‘তি’ ক প্রত্যয়যুক্ত ভৌগোলিক নামের চ’ জন্মবৃত্তান্ত – শিবেন্দ্রনারায়ণ কোচ। । (৩) ইতিহাসের হারানো পাতা: রাজপুর – অলক সাহা। (৪) ডালু জাতির ইতিহাস – প্রফুল্ল সরকার। (৫) হাজংদের ভাষা- বীরেন হাজং। (৬) ওয়াঙ্গালা উৎসব – বিশ্বজিৎ নন্দী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *