Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কল্যাণী || Jibanananda Das

কল্যাণী || Jibanananda Das

রায়চৌধুরী মশাই নানারকম কথা ভাবছিলেন : প্রথমতঃ জমিদারীটা কোর্ট অব ওয়ার্ডসে দিলে কেমন হয়?

ভাবতে গিয়ে তিনি শিহরিত হয়ে উঠলেন। অবস্থাটা অত খারাপ হয়নি।

কোনোদিনও যেন না হয়—ও রকম অবস্থা!

কোর্ট অব ওয়ার্ডসের কথা তিনি ভুলে যেতে চাইলেন।

হাতের চুরুটটা নিভে গিয়েছিল—

রায়চৌধুরী মশাই জ্বালিয়ে নিলেন।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। শালিখবাড়ির নদীর পাশে অর দরদালানটা—রায়চৌধুরীদের তেতলা জমিদার বাড়ি; সেই ক্লাইভের আমলে তৈরি আধ——ইংরেজি আধ—মুসলমানী ধরণে একটা মস্ত বড় ধূসর পুরীর মতো; চারদিককার আকাশ, মাঠ, ধানের ক্ষেত, নদী, নদীর বাঁক, খাড়ি, মোহানা, চরগুলোকে উপভোগ করবার এমন একটা গভীর সহায়তা করছে দ্বৈত্যরাজের উঁচু কাঁধের মত এই প্রগাঢ় বাড়িখানা।

তেতলার পশ্চিম দিকে বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে চৌধুরী মশাই দেখছিলেন সব— উত্তর দিকে ন্যাওতার মাঠ—ধূ ধূ করে অনেক দূরে ভিলুন্দির জঙ্গলে গিয়ে মিশেছে। এই মাঠে কত কি যে ব্যাপার কতবার হয়ে গেল—নিজের চক্ষেও চৌধুরী কত কিছু দেখলেন!

তারপর এল শান্তি—মাঠটা স্কুল কলেজের ছেলেদের ফুটবল গ্রাউন্ড হল, কখনো বা মীটিং হয় এখানে, কংগ্রেসের ক্যাম্প বসে, ডিস্ট্রিক্ট টিচারদের, মুসলমানদের, মাহিষ্য নমশূদ্রদের কনফারেন্স হয়; বেদিয়ারা আসে, বৈষ্ণববৈষ্ণবীদের আখড়া হয়ে ওঠে।

এই সমস্ত শান্তির (উন্নতি অবসরের) জিনিস। আগেকার অনেক গ্লানি পাপ কলঙ্কের ওপর এগুলো ঢের সান্ত্বনার মত।

(মাঠটার প্রায় সমস্ত জায়গাই এখন উলুঘাসে ভ’রে আছে—আর কাশে। কিন্তু ফুটবল খেলা আরম্ভ হবার আগেই মাঠের দক্ষিণ দিকটা বেশ পরিষ্কার করে নেওয়া হবে।)

বর্ষার মুখে শালিখবাড়ির নদীটা পেটোয়া হয়ে উঠেছে।

ইলিশ মাছের জালে জালে নদীটা ভরে গেছে; পশ্চিম মুখে নদীর কোলঘেঁষা একটা সরু লাল রাস্তার দিকে তাকালেন চৌধুরী—বিশ পঞ্চাশটা ইলিশের নৌকা জমা হয়ে গেছে ওখানে—আধ ঘণ্টার মধ্যেই সমস্ত টাউনটার নাড়ীনক্ষত্রে ইলিশের চালান শুরু হবে।

কুড়ি পঁচিশটা স্টিমার তিন চারটা বড় বড় জেটির কিনার ঘেঁষে নদীর (ঘাটের কাছাকাছি) ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে; দু’একটা কয়লাঘাটার দিকে ধীরে ধীরে যাচ্ছে; সবসময়ই এমনি অনেকগুলো স্টিমার এই ঘাটে মোতায়েন হয়ে থাকে; এখানকার এ স্টিমার স্টেশন এ অঞ্চলে খুব বড়।

কলকাতার এক্সপ্রেস স্টিমার ছাড়ল।

চৌধুরী মশায়ের চুরুট জ্বলতে জ্বলতে নিভে গিয়েছে আবার।

জ্বালালেন তিনি।

জমিদারবাড়ির তেতলার কাছের আকাশটা ঘিঁষে কাকগুলো ভিলুন্দির জঙ্গলের দিকে চল্ল। পশ্চিমের গোলাপী পিঁয়াজী মেঘের ভিতর নলচের মত কালো কালো ঠোঁট মুখ পাখা নিচে সবুজ নাকি নীল জঙ্গল ধানক্ষেত রূপোর পৈছের মত নদী—শকুনের মেটে পাকা চিলের সাদা পেট সোনালি ডানা—রাত গাঢ় হয়ে নামবার আগে এইগুলো রঙের খেলা— রসের খেলাও বটে।

কিন্তু দু-এক মুহূর্তের শুধু-—

শঙ্খচিলটা অন্তর্হিত হ’ল।

খানিকক্ষণ পরে পৃথিবী একটু চিমসে জ্যোৎস্না জোনাকী আর লক্ষ্মীপেঁচার দেশে এসে হাজির হয়েছে। (মন্দ নয়।) নিভন্ত চুরুটটা আবার জ্বালানো গেল।

চৌধুরী ভাবছিলেন : বড় ছেলেটা বিলেত থেকে ফিরবে না আর তা হ’লে? আই-সি—এস পড়তে গিয়েছিল; কিন্তু আই-সি-এস পাস করবার মতো চোপা তো তার নয়; একটা টেকনিক্যাল কিছু শিখে এলে পারত; কিন্তু তাও তো এল না; এই আট বছরের ভিতর ফেরবার নামটি অব্দি করছে না; আগে খুলে লিখত টিখত; এখন হদ্দ লুকোচুরি করছে। তাকে আর টাকা পাঠাবেন তিনি?

গুণময়ীর জন্যই–নাহ’লে দু-তিন বছর আগেই তিনি টাকা বন্ধ করে দিতেন।

ছেলেটা হয়তো বিলেতে বিয়ে করেছে; তার স্ত্রী ছেলেপুলের ফটোও নাকি কারু কারু কাছে পাঠায় সে—

না, টাকা আর তাকে পাঠাবেন না তিনি।

ছোট ছেলেটা হয়েছে কলকাতার এক লজ্জা; এদ্দিনে বি-এস-সি হয়ে যেত। কিন্তু এখনো সেকেন্ড ইয়ারে রয়েছে; বাপের টাকায় সুখের পায়রার অনেক সুখই মেটাচ্ছে সে কিন্তু গোলাপের তোড়া হাতে থিয়েটারের গ্রিনরুমে ঢুকে শালিখবাড়ির ছোট কর্ত্তা না কি…ভাবতে ভাবতে চৌধুরী বেকুল হয়ে পড়লেন।

কিন্তু মেজ ছেলেটির কথা ভাবলে মন বিধাতার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে—সে এখানে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে প্র্যাকটিস করছে—বছরখানেক ধরে। এরি ভিতর জমিয়ে নিয়েছে।

চৌধুরী বলেছিলেন : হাইকোর্টে যাবে?

একটু সবুর কর বাবা।

একটু সবুর করে প্রসাদ হাইকোর্টে যাবে—হয়তো পিউনী জজ হবে। চৌধুরীর মন পরিতৃপ্তিতে ভরে উঠল।

(তারপর তিনি) নিজের মেয়েটির কথা ভাবতে লাগলেন; কল্যাণী এবার চোখের অসুখের জন্য আই-এ দিতে পারল না। তিনিই নিষেধ করেছেন দিতে! আর কেন? পড়বার সখ—তা সে কুড়িয়ে বাড়িয়ে ঢের হয়েছে—ঢের—এইবার মেয়েটার একটা কিছু স্থির করতে হবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
Pages ( 1 of 20 ): 1 23 ... 20পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress