মনে পড়ে কত স্মৃতি
পনেরো অগষ্ট উপলক্ষে রোজ কুচকাওয়াজ প্র্যাকটিস চলছে, ‘নওযোয়ান নওযোয়ান’ গান বা ‘চল চল চল’, কি উন্মাদনা, বিনু ভোর বেলা উঠে জুতো জামা পড়ে প্র্যাকটিসে যায় । বাবা মা, মাস্টারমশাই সবাই দেশের প্রতি স্বদেশীদের প্রতি শ্রদ্ধাভাব আনার চেষ্টা। কি বলিদানে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেটা জানাতে হবে, খাওয়ানোর সময়, নেতাজী, ক্ষুদিরাম, বিনয়, বাদল, দীনশের গল্প শুনতে শুনতে খাওয়া চাই। বিনুর মা নিজের কাকা নীরেন্দ্র চন্দ্র দাশগুপ্তর ফাঁসি যাওয়ার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলতো। বারবার শুনতে চাইত মা বল, ললিতমোহন দাশগুপ্তর মেজো ছেলে নীরেন্দ্র চন্দ্র দাশগুপ্ত আমার মেজো কাকা, বাঘাযতীনের সাথে পাঁচজন বুড়ি বালাম তীরে উড়িষ্যাতে ইংরেজদের সাথে ঘোর লড়াই। ধরা পরে গেল। পরে ইংরেজ 22শে নভেম্বর 1915 সালে ফাঁসি দিয়ে দিল।
মা তোমরা স্বদেশী ছিলে, হ্যাঁ বাবা তখন সকলেই নিজের দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে স্বদেশের জন্য কাজ করেছে। মাষ্টারদা সূর্য সেনের গল্প বলেছি, গান্ধী বুড়ির কথা বলেছি।
চিত্তরঞ্জন দাস, অরবিন্দ সকলেই দেশের জন্য কাজ করেছে। আজকে এখন শুয়ে পড়, কাল ভোরে উঠতে হবে। বন্দে মাতরম গাইতে হবে। কালকে আবার বলবো আর একজনের কথা।
পরের দিন ছোট্ট বিনু প্যারেড করে যাবে বাড়ির সামনে দিয়ে লেফট রাইট লেফট রাইট, ফ্ল্যাগ হোস্টিং, তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন, বন্দে মাতরম , স্যালুট, এখনো গায়ে শিহরণ লাগে, বুলেটের গুলিতে তাজা খুন, কত প্রাণ পথে লুটিয়ে, বিনুর মায়ের চোখে ভাসে, পিস্তলের খোঁজে গোরা পুলিশ বাড়ি ঘর লণ্ডভণ্ড কোথাও পায় নি। পাবে কিকরে, বিনুর মা ডাব কাটার আছিলায় পিস্তল নিয়ে সোজা নারকেল গাছে উঠে লুকিয়ে রেখেছিল। ডাবের জল খেয়ে সেবার পুলিশ বিদায় নিয়েছিল।
মনে পড়ে কত স্মৃতি, এখনকার প্রজন্ম কিছুই জানেনা, ওদের বাবা মাও কি ছাই সেভাবে জানে। আহা রবিঠাকুর এর গান ভেসে আসছে।
“ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা”