নির্যাতন
বাপ মা মরা অনাথ একাকিনী সব্জিওয়ালিকে বিয়ে করাটা যে খুব ভুল সিদ্ধান্ত হয়নি রতনের তা এখন প্রতি মূহুর্তে সে পরম তৃপ্তির সঙ্গে অনুভব করছে সে।যদিও এই বিয়েতে সে একটা নয়া পয়সাও পায়নি।কিন্তু সে যখন তার মায়াবী হাসিমাখা প্রতিশ্রুতি বাক্যের মধ্যে এমন এক অমোঘ যাদুঢালা সৌন্দর্য ও দৃঢ়তা দিয়ে তাকে বশীভূত করেছিল,যে রতন তখন প্রায় নেশাচ্ছন্ন হয়ে কিছুমাত্র বিবেচনা না করেই তাকে হঠাৎ সোজা বিয়েই করে ফেলল।ব্যাপারটা একটু গোড়া থেকেই বলি, পাঁড় মাতাল হিসেবে রতন এলাকায় কুখ্যাত।যখন তখন…সে ভোরের আলো ফোটার সময় হোক,কি ভরদুপুর…কিংবা রাত্তির…সে পথেঘাটে,পুকুরপাড়ে এমনকি মাছের বাজারের ক্যাঁচাকেঁচির মাঝখানেও হাতে মদের বোতল নিয়ে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে থাকে আর জুয়া খেলে।আর পতিতাপল্লীর সাথে তো তার মামার বাড়ি মাসির বাড়ির মতোই চিরকালীন আত্মীয়তা।তার বাপ মা একটু শোধরানোর আকুতি নিয়ে ছেলের পায়ে পড়ে করতে করতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।আর বাপ মা মরার পর তো এখন তার পোয়াবারো।বাপ মা মরা অনাথ ছেলেটা এখন লম্পট পাঁড় মাতাল হলেও টাকা পয়সা জমিজমা আর সম্পত্তির পরিমাণ দেখেশুনে এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তার হাতেই মেয়ের বৈঠা তুলে দিয়েছিলেন,কিন্তু সেই বৌ তার জুলুমের হাত থেকে রেহাই পায়নি।আগে রতন মদ আর খাওয়া পরার খরচাপাতি চালানোর জন্য টুকিটাকি কাজ করত কিন্তু বিয়ের পর সে একেবারে সাপের পাঁচ পা দেখল।সে সংসারের যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে টাকা উপার্জন করে আনা,পুরো দায়িত্বটাই বৌএর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মদের ঠেক আর পতিতাপল্লী নিয়ে মেতে থাকত,আর প্রতিদিন রাতেই হাড়ভাঙা খাটুনি সেরে পরিশ্রান্ত বিদ্ধস্ত স্ত্রীর উপরে পরদিনের মদ খাওয়ার টাকা চাওয়ার জন্য চড়াও হত।পিঠ জুড়ে দাগড়া দাগড়া কালশিটের চাষ সেরে হাতে যা পেত তা পুরোটাই পকেটে পুরে বৌএর রেঁধে রাখা ভাত তরকারী নিজে বেড়ে নিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকা বৌএর পাশেই পরম নিশ্চিন্তে রাতের আহার সেরে নিত।আর তারপর রাতে শুতে যাবার সময় “হাল্কা” টান দিত বৌএর শাড়িতে।এমন রুটিন চালু ছিল নয় নয় করে প্রায় দুই বছরের মতো।কিন্তু রতনের এমন সুখ বুঝি ওপরওয়ালার আর বেশিদিন সইল না।আবার সে একা হয়ে গেল আগের মতো।পাড়া প্রতিবেশীরা তার সামনেই তাকে কটাক্ষ করত।”মেয়েটার বাপের অ্যাদ্দিন বাদে তাহলে সুমতি হল যে তোমার কাছ থেকে মেয়েটাকে নিয়ে গেল জন্মের মতো…
অবশ্য সব ধরণের কটাক্ষ বা বিদ্রুপ তার আজকের পাহাড় প্রমাণ দুঃখের কাছে ফিকে হয়ে যেত।এখন আবার হাত পুড়িয়ে রান্না করতে হচ্ছে। আবার নতুন কোনো কাজের সন্ধানে মাথা খারাপ করতে হচ্ছে,আর সবথেকে আপশোষের বিষয় হল প্রতি রাতে ফোকটে আনন্দ দেওয়ার মত আজ আর কেউ নেই।কাজেই মানুষজন কি ভাবছে বা কি বলছে সেইসব মাথায় না নিয়ে সে আরেকটা বিয়ে করবে বলে মনঃস্হির করল।এমনই সময়,এক ঝড়জলের রাত্রে হঠাৎ দরজায় করাঘাত শুনে সে শশব্যস্ত হয়ে দরজা খুলতেই দেখল,এক সিক্ত বসনা লাস্যময়ী “স্বর্ণমৃগ” বাইরে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় কাঁপছে।এমন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে রতনের চোখে আর মনে যেন বহুদিনের উপোসি তৃষ্ণার লাল ঝরতে লাগল।দরজার ওপারে নেশা ধরানো কামুক নারীকন্ঠ সুমিষ্ট স্বরে বলল,
—বাবু…আজ রাত্তিরটুকু আপনার ঘরে আশ্রয় দিলে বড়ো উপকার হয়।ঘর আমার প্রায় ঘন্টাদুয়েকের পথ দূরে।এই শিলাবৃষ্টিতে আর হাঁটতে পারছি নে।
চকচক করে উঠল রতনের উপোসি চোখ।এ বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করাটা তো পুরোপুরি অর্থহীন।সে সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে গেল।সাদরে তাকে ডেকে নিল নিজের বাড়ির ভিতর।ঢুকিয়ে নিল শোবার ঘরে।চোখের ভাষার বিনিময়ের কোটা পূর্ণ হওয়ার পরে রতন এই বাপ মা হারা সব্জি বেচে পেট চালানো অসহায় মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল সেই রাতেই।পরদিন সকালেই নিজে সব ব্যবস্হাপনা করে প্রায় দুদিনের মধ্যেই সে পুরোহিত ডেকে বিয়ে সেরে নিল।মেয়েটি তার পড়শী বা আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করার ফুরসতটুকু পর্যন্ত পেল না।কিন্তু কি আশ্চর্য,ফোকটে পাওয়া বৌ যে এতটা বাধ্য ও লক্ষী হতে পারে,যে সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।রতন ঠিক যেমনটা চায়,হঠাৎ এক ঝড়জলের রাতে উপরওয়ালা তাকে যেন ছপ্পর ফুঁড়ে তাই দিয়ে ভরিয়ে দিলেন।রতনকে এখন আর কাজ খোঁজার কথা ভাবতে হয় না।বৌ নীরা নিজেই কাকভোরে উঠে ঘরের সব ফাইফরমাশ খেটেখুটে দিয়ে কয়েক বাড়ি ঝিগিরি খাটতে যায়।তারপর রতনের পছন্দের বাজার সেরে ভারী থলে হাতে সন্ধ্যায় ফেরে রোজ।পিদিম জ্বালে।তারপর সুন্দর হাসিমুখে ঘরের বাকি সব কাজ একা হাতে সেরে সে বসে যায় রাতের রান্নার যোগাড় নিয়ে।বৌএর একার পয়সায় দুইবেলা পেট ঠেসে প্রতিদিন পেটপূজোটা দারুণ চলছে রতনের।উপরন্তু সেই কাকভোর থেকে চালু হওয়া রক্ত মাংসের এই মেশিনটির মধ্যে কোনো শব্দ,কোনো শোরগোল নেই।সবসময়ই মুখে অদ্ভুত এক প্রশান্তির ছাপ।রতন যখন যেমন ইচ্ছা দুমদাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে,ঘরে ঢুকছে মর্জিমতো।এই নিয়ে কোনো অসন্তোষ নেই।যখনই সে ঘরে ঢুকছে সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যাচ্ছে পছন্দসই খাবার। এমনকি রাতে ফিরে বৌএর কাছে পরদিনের মদ খাওয়ার টাকা না চাইতেই বৌ এসে ঠিক পরিমাণ টাকা এসে তার দুইহাত টেনে ধরে তার হাতের তালুতে গুঁজে দিয়ে নিজে পিছন ঘুরে আঁচল সরিয়ে তার প্রহার নেওয়ার জন্য উন্মুক্ত করে দেয় নিজের নগ্ন পিঠ।স্ফূর্তি যখন এভাবে তার সামনে সীমাহীন প্রশ্রয়ের আত্মসমর্পণে ভিজিয়ে দেয় তার পাশবিক সত্ত্বা কে,তখন সে ও স্ফূর্তির সেই উদ্দাম স্রোতের তালের সাথে তাল বরাবর ঠিক রেখে কোমর থেকে খুলে নেয় বেল্ট।মারতে মারতে বিদ্ধস্ত হয়ে ঘেমে স্নান করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর নীরা ততক্ষণ পর্যন্ত পিঠ পেতে দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়। ক্রমশ নীরার পিঠের তাজা তাজা চাপ চাপ রক্ত ও কালশিটেগুলো যেন তাকে বিদ্রুপ করে।যেন ঘর ফাটিয়ে অট্টহাস্য করে বলে,”কি? এইটুকুতেই দম ফুরিয়ে গেল বুঝি?”
জবাব দেওয়ার জন্য বেল্ট হাতে আবার উঠতে গিয়ে যখন আর পারে না,তখন নীরা ঘুরে দাঁড়ায়।তার দুইহাতে প্রায় টেনে টেনে রতনকে নিয়ে গিয়ে খাবার জন্য পাতা আসনে বসায়।তারপর রান্না করা ভাত,মাছ,মাংস,তরিতরকারি নিজে হাতে বেড়ে দেয়।রতন নিশ্চুপে বসে বসে খাবারগুলো আঙুল চেটে চেটে গিলতে থাকে।তারপর হাত ধুয়ে আচিয়ে নিয়ে ঘরে চলে যায় শুতে।নীরা তখন এঁটো বাসন ধুয়ে মেজে পরিষ্কার করে নিয়ে চলে আসে শোবার ঘরে।বিছানার কাছে এসে সে খুলে ফেলে দেয় নিজের শাড়ি,সব অন্তর্বাস।তারপর নিজেকে মোলায়েমভাবে ঢুকিয়ে দেয় এক বিকৃত পাশবিকতার নগ্ন হাঁ এর ভিতরে।তারপর জ্বলতে থাকে…পুড়তে থাকে…ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে প্রতিরাতে। নিঃশব্দে।
দিনগুলো রতনের দারুণ কাটছে এখন।মেলা খুঁজে,হ্যাপা পুইয়ে,টাকা খরচ করেও বিয়ে করে এমন সুখ দুনিয়াতে যে কোনো পুরুষ মানুষই যে আজ অব্দি পায়নি,এ কথাটা সে বুক চিতিয়ে বলতে পারে।তবুও মাঝেমধ্যে সে অবাক হয়।একটা রক্ত মাংসের শরীর নামমাত্র দুটো খাবার পেটে দেয় কি দেয় না তার অর্ধেক দিনই কোনো ঠিক ঠিকানা থাকে না।রাতের শেষে কাক ডাকার সাথে সাথেই সে মেশিন চালু হয়ে যায় আর তারপর সারাটা দিন বিনা বিরতিতে এই সৃষ্টিছাড়া সংসারের জন্য অমানুষিক খাটুনি খেটে সারাটা দিন পার করার পর সে কিভাবে ফের প্রত্যেক দিন নিয়ম করে তার সামনে পিঠ পেতে কাঠের মতো দাঁড়িয়ে থাকে,আর দিনের শেষে কিভাবেই বা তার ওই বন্য নৃশংস উন্মত্ততার সামনে তার সবটুকু নগ্নতা নিয়ে থুতুদানির মতো তার তলায় এসে অকাতরে এমন আত্মসমর্পণ করে,মাঝে মাঝে তার কোনো কূলকিনারা খুঁজে পায় না রতন।তবে নিষ্প্রয়োজন চিন্তা করে বেশিক্ষণ সময় নষ্ট করে না সে।মাথা থেকে মূহুর্তের মধ্যেই সব ঝেড়ে ফেলে সে তার নিজের কাজে মনোনিবেশ করে।দিন চলছে বেশ।
কিন্তু ক্রমশ রতনের মধ্যে এক অদ্ভুত অসন্তোষ জন্ম নিতে শুরু করেছে।এ তো মেয়ে নয়…যেন পাথর।মাঝে মাঝে মনে হয়,লোহার হামানদিস্তায় ফেলে পিষলেও এর অভিব্যক্তি সমস্বরে বলে উঠবে…
“কি?এইটুকুতেই দম ফুরিয়ে গেল বুঝি?”
এত অমানুষিক অত্যাচারেও সাত চড়ে রা নেই।নেই কোনো ক্ষোভ।আর শরীরটাও যেন লোহা দিয়ে গড়া।সেটা নিয়ে প্রতিরাতে যতবারই আখ পেষার খেলায় মাতে,সেই শরীর যেন ততবার ধিক্কার দেয়…”এইটুকুতেই সব শক্তি শেষ হয়ে গেল?কত রস টইটম্বুর করছে আর তুই হাঁপাচ্ছিস কুকুরের মতো?”
আজকাল মদের নেশা আর যেন ঘন হতে চায় না।সবসময় কোনো এক অজানা কৌতূহল ও এক চূড়ান্ত অতৃপ্তি যেন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে রতনকে।হঠাৎ এক রাতে সে লক্ষ করল,বেল্টের প্রহারে আর কোনো দাগই উৎপন্ন হচ্ছে না নীরার পিঠে।শুধুমাত্র একটা কালো কালশিটের দাগ উৎপন্ন করার জন্য বেল্ট হাতে প্রহার করতে করতে সে নিজেই ঘেমেনেয়ে জিভ বার করে মেঝেয় পড়ে ভয়ংকর হাঁপাতে লাগল।কদিন ধরে শুধুমাত্র অবসাদে,দুশ্চিন্তায় সে খাওয়াদাওয়া প্রায় বন্ধই করে বসেছে বলা চলে।মদ খাওয়াও বন্ধ করেছে সপ্তাহখানেক হল।সবসময় একা পুকুরপাড়ে বসে কি যেন গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে সারা দিনমান। এইভাবে রতনের চেহারা ভেঙ্গে একেবারে কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছে। তার চোখের কোলজুড়ে কালি পড়েছে। সে ভুল বকতে পর্যন্ত শুরু করেছে একা একা।এখন তো মানুষজন তাকে পাগল বলে ঢিল মেরে তাড়ায়।উস্কোখুস্কো চুল,গালভাঙ্গা হাড্ডিসার রতনকে তুলে নিয়ে ধরে খাওয়ার জায়গা পর্যন্ত নিয়ে বসানোর কাজটা এখন একটা দশ বছরের প্যাঁকাটি বাচ্চাও পারবে। কাজেই নীরার পক্ষে তার প্রতিদিনকার রুটিন সম্পাদন করাটা মোটেই খুব কষ্টসাধ্য নয়।রতন বসল একথালা ভাত,সব্জি ডাল,গোল আলু আর পটল ভাজা,পাঁঠার মাংসের ঝোল,ফুলকপি কারী,চাটনী আর দুটো সন্দেশ দিয়ে পরিপূর্ণ থালার সামনে বসল বটে কিন্তু খেতে পারল না কিছুই।ভাতের গায়ে আঙুল দিয়ে কয়েকটা দাগ ফুটিয়ে সে খালি পেটেই উঠে চলে গেল শোবার ঘরে।
যথা সময় বাসনটাসন ধুয়ে নীরা এসে কাপড়চোপড় সব খুলে তার পাশে এসে শুল্ক।এই প্রথমবার রতন পশুর মতো নীরার উপরে না ঝাঁপিয়ে অত্যন্ত সংকোচনের সঙ্গে তার হাতের উপরে নিজের হাতটা রাখল।মনে তার প্রশান্ত গভীর প্রশ্ন ও বিস্ময়।কিন্তু মুখে কি যে বলবে তার কোনো থই পেল না সে।ব্যাপারটা যেন বুঝতে পারল নীরা।সে নিজের হাত দিয়ে রতনের হাতে আলতো চাপ দিয়ে বলল,”চেষ্টা করো,ঠিক পারবে।”
কথায় যেন আত্মবিশ্বাস হঠাৎ চলকে উঠল রতনের।তার ভিতরের ঝিমিয়ে থাকা নেকড়েটা হঠাৎ তেড়েফুঁড়ে উঠল যেন।দপ করে জ্বলে উঠল প্রদীপের ম্রিয়মান শিখা।সে তার ভগ্নপ্রায় কঙ্কালসার রুক্ষ শরীরে সেই বন্য আদিমতা যতটুকু সম্ভব জড়ো করে ঝাঁপিয়ে পড়ল উন্মুক্ত মাংসপিন্ডের ওপরে।কিন্তু ক্রমেই যেন তার শরীর এই মারাত্মক ধকলে কাহিল হয়ে বীরুৎলতার ন্যায়ে নুয়ে পড়তে লাগল।মনে হতে লাগল,শক্তি প্রয়োগ করতে করতে তার প্রাণটাই না বেরিয়ে যায়…
হঠাৎ সে তার পৌরুষত্বে এক অনির্বাচনীয় তীব্র গালি অনুভব করল।সে মনস্হির করে নিল,যা হয় হবে…এর শেষ দেখে তবে ছাড়বে সে।রতন তার দুই হাতের ধারালো নখ দিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ফালাফালা করতে গেল নীরার পিঠ।দাঁত দিয়ে খুবলে নিতে চাইল নীরার বুকের মাংস।নীরার শরীরে এক ভয়াবহ লৌহকাঠিন্য অনুভব করল যাকে বোধহয় হাঁসুয়ার আঘাতেও কিছুই করা সম্ভব নয়।মরিয়া হয়ে উঠল রতন।তার রোখ চেপে গেছে।আজ সে সবকিছুর শেষ দেখে তবে ছাড়বে।সে নীরার উরুসন্ধিতে তার সমস্ত পৌরুষ এবং অবশিষ্ট ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকু ক্ষ্যাপা সিংহের মতো উন্মত্ত হয়ে ঢালতে লাগল।কিন্তু সেখানেও শুধুমাত্র লৌহকাঠিন্য আর শীতলতা ছাড়া আর কিছুই সে পেল না।সে বুঝতে পারল তার জীবনীশক্তি প্রায় শেষের মুখে।আর বেশিক্ষণ সে বাঁচবে না।উত্তাল ঝড়ে মাঝসমুদ্রে হাল ছেড়ে দেওয়া শ্রান্ত নাবিকের মতো হাঁপাতে হাঁপাতে অস্ফুট স্বরে শুধু বলে উঠল,”কে?কে তুমি”
—আমি রানি।তোমার প্রথম বৌ।মনে পড়ে?আমার কথা?বাপ আমায় তোমার ঘাড়ে গুছিয়ে দিয়ে আর খোঁজ নেয়নি আর। পিটিয়ে পিটিয়ে তুমি আমার লাশ পুঁতেছ এই ভিটেরই বাগানে।এই ঘর…এই সংসার ছেড়ে আমি কোথায় যাব বলো তো?”
আতঙ্কে বিস্ফারিত হয়ে উঠল রতনের কোটরগত চোখগুলি।কি যেন বলতে গিয়েও আর পারল না।বিস্ফারিত লাল চোখ মুখের ওই হাঁ টি হঠাৎ হয়ে গেল জড়পদার্থের ন্যায়ে স্হির।রতনের নিজের সমস্ত পাপ নিজেকেই বুমেরাং হয়ে এমন মোক্ষম ঘা দিল যে তার প্রাণশক্তি যেটুকু অবশিষ্ট ছিল,সেটুকুও বেরিয়ে গেল।দুই হাত…দুই পা ছড়িয়ে বিস্ফারিত চোখে হাঁ হয়ে থাকা আতঙ্কগ্রস্হ মুখ নিয়ে রতনের উলঙ্গ দেহটি বিছানা জুড়ে বিকৃত কদাকার ভঙ্গিতে পড়ে রইল আর তার দেহের তলা দিয়ে আস্তে আস্তে করে কালো ধোঁয়ার মত বাতাসে মিশে যেতে থাকল রানির অপার্থিব দেহখানি….